ঢাকা ০৮:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

রাজশাহী বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে।।

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৬:১৮ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১
  • / ২৭১ ৫০০০.০ বার পাঠক

মোঃ আলমঙ্গীর হোসেন বাঘা রাজশাহী প্রতিনিধি।।

ভাঙনের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর গ্রাম। এই
গ্রামের নামেই নামকরণ হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের। উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলােমিটার দূরে
ইউনিয়নটি। গত দুই মাসের ভাঙনে ইউনিয়নের ৯টির মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকা
নদীতে বিলীন হয়েছে। আর ৪ নম্বর চক রাজাপুর ওয়ার্ডের পুরােটি গিলে
নিয়েছে পদ্মা ।
ভাঙনে পাল্টে যাওয়া চকরাজাপুরের মানচিত্রে আবারও
আঘাত হেনেছে প্রমত্তা পদ্ম। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে । বিলীন হচ্ছে
ফসলিজমি, পাছপালা।
বর্তমানে ভাঙনের তীব্রতা চলছে নতুন করে জেগে ওঠা পদ্মার চরের লক্ষ্মীনগর কালিদাশখালী এলাকায়। ভাঙন থেকে ১৫ মিটার দূরে রয়েছে কালিদাশখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারের দেওয়া ভূমিহীন বাহের আলীর পাকা বাড়ি।
বাহের আলীর বাড়ি ও কালিদাশখালী বিদ্যালয়-সংলগ্ন পাকা সড়কটির প্রায়
এক কিলােমিটার নদীতে চলে গেছে। এ বছর ভাঙনের কবলে পড়লে কালিদাশখালী গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও পরিষদ সংলগ্ন চেয়ারম্যানের বসতবাড়ি ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ইউনিয়নটির চার গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি,আম বাগানসহ কয়েক একর ফসলি
জমি, কাঁচা-পাকা সড়ক পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে
কেউ অন্য জায়গায় আবার কেউ জমি লিজ নিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন চরেই। পরিবার নিয়ে স্থানীয় একটি
বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এখন অন্য জায়গায় বাড়ি তুলছেন। ভাঙনের
কবলে পড়লে চর এলাকার ১১৫টি বিদ্যুতের পুল তােলা হয়েছে বলেজানান নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২এর বাঘা জোনাল অফিসের জিএম
সুবির কুমার। গত বছরের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি, আবাদি জমি
গাছপালা। দীর্ঘদিনের ভাঙনে চলে গেছে চকরাজাপুর গ্রাম। ইউনিয়নের তিন ভাগের একভাগ চলে গেছে। নদীতে। এভাবে ভাঙতে থাকলে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে
যাবে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। লক্ষ্মীনগর এলাকার সােবাহান ও
হাজেরা বেগম বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে বড় হয়েছেন এই চরে । জন্মভূমির প্রতি ভালােবাসায় এলাকা ছাড়তে পারছেন না। ভাঙনের কবলে
পড়ে চকরাজাপুর হাইস্কুলের পাশে একজনের জমিতে বসতি গড়েছেন গ্রাম পুলিশ সদস্য নূর মােহাম্মদ।
তিনি বলেন, জমির মালিক তার নামে. মামলা করেছেন। জমির ন্যায্য
ইজারা মূল্য দিতে চাইলেও মালিক মানছেন না।
চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন,গত বহর ভাঙনের কবলে পড়ে
বিদ্যালয়টি। সেখান থেকে দুই কিলােমিটার দূরে সরিয়ে নেওয়া
হয়েছে। এ বছর আবার ভাঙনেরকবলে পড়েছে। তিনি বলেন,
প্রতিবছর পদ্মার ভাঙন কমবেশি লেগেই আছে। আর জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষার চেষ্টা করছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বাের্ড।
ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতপাড়া থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগরের শেষ মাথা পর্যন্ত
নদীশাসনের আওতায় আনার একটি প্রকল্প হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত
হলে পদ্মার প্রান্ত নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, গত
তিন দশকের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরাজাপুরসহ
পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের
নদী-তীরবর্তী এলাকার হাজারাে বিঘা ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হার্টবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ
মসজিদ ও কবরস্থান। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বাের্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, নদী শাসনের জন্য
চারঘাট-বাঘার পয়েন্টে কাজের প্রস্তুতি রয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মধ্যে বাঘার ১৩ কিলােমিটার নদী ড্রেজিং রয়েছে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহী বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে।।

আপডেট টাইম : ০৭:০৬:১৮ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১

মোঃ আলমঙ্গীর হোসেন বাঘা রাজশাহী প্রতিনিধি।।

ভাঙনের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর গ্রাম। এই
গ্রামের নামেই নামকরণ হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের। উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলােমিটার দূরে
ইউনিয়নটি। গত দুই মাসের ভাঙনে ইউনিয়নের ৯টির মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকা
নদীতে বিলীন হয়েছে। আর ৪ নম্বর চক রাজাপুর ওয়ার্ডের পুরােটি গিলে
নিয়েছে পদ্মা ।
ভাঙনে পাল্টে যাওয়া চকরাজাপুরের মানচিত্রে আবারও
আঘাত হেনেছে প্রমত্তা পদ্ম। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে । বিলীন হচ্ছে
ফসলিজমি, পাছপালা।
বর্তমানে ভাঙনের তীব্রতা চলছে নতুন করে জেগে ওঠা পদ্মার চরের লক্ষ্মীনগর কালিদাশখালী এলাকায়। ভাঙন থেকে ১৫ মিটার দূরে রয়েছে কালিদাশখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারের দেওয়া ভূমিহীন বাহের আলীর পাকা বাড়ি।
বাহের আলীর বাড়ি ও কালিদাশখালী বিদ্যালয়-সংলগ্ন পাকা সড়কটির প্রায়
এক কিলােমিটার নদীতে চলে গেছে। এ বছর ভাঙনের কবলে পড়লে কালিদাশখালী গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও পরিষদ সংলগ্ন চেয়ারম্যানের বসতবাড়ি ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ইউনিয়নটির চার গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি,আম বাগানসহ কয়েক একর ফসলি
জমি, কাঁচা-পাকা সড়ক পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে
কেউ অন্য জায়গায় আবার কেউ জমি লিজ নিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন চরেই। পরিবার নিয়ে স্থানীয় একটি
বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এখন অন্য জায়গায় বাড়ি তুলছেন। ভাঙনের
কবলে পড়লে চর এলাকার ১১৫টি বিদ্যুতের পুল তােলা হয়েছে বলেজানান নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২এর বাঘা জোনাল অফিসের জিএম
সুবির কুমার। গত বছরের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি, আবাদি জমি
গাছপালা। দীর্ঘদিনের ভাঙনে চলে গেছে চকরাজাপুর গ্রাম। ইউনিয়নের তিন ভাগের একভাগ চলে গেছে। নদীতে। এভাবে ভাঙতে থাকলে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে
যাবে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। লক্ষ্মীনগর এলাকার সােবাহান ও
হাজেরা বেগম বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে বড় হয়েছেন এই চরে । জন্মভূমির প্রতি ভালােবাসায় এলাকা ছাড়তে পারছেন না। ভাঙনের কবলে
পড়ে চকরাজাপুর হাইস্কুলের পাশে একজনের জমিতে বসতি গড়েছেন গ্রাম পুলিশ সদস্য নূর মােহাম্মদ।
তিনি বলেন, জমির মালিক তার নামে. মামলা করেছেন। জমির ন্যায্য
ইজারা মূল্য দিতে চাইলেও মালিক মানছেন না।
চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন,গত বহর ভাঙনের কবলে পড়ে
বিদ্যালয়টি। সেখান থেকে দুই কিলােমিটার দূরে সরিয়ে নেওয়া
হয়েছে। এ বছর আবার ভাঙনেরকবলে পড়েছে। তিনি বলেন,
প্রতিবছর পদ্মার ভাঙন কমবেশি লেগেই আছে। আর জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষার চেষ্টা করছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বাের্ড।
ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতপাড়া থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগরের শেষ মাথা পর্যন্ত
নদীশাসনের আওতায় আনার একটি প্রকল্প হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত
হলে পদ্মার প্রান্ত নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, গত
তিন দশকের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরাজাপুরসহ
পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের
নদী-তীরবর্তী এলাকার হাজারাে বিঘা ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হার্টবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ
মসজিদ ও কবরস্থান। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বাের্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, নদী শাসনের জন্য
চারঘাট-বাঘার পয়েন্টে কাজের প্রস্তুতি রয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মধ্যে বাঘার ১৩ কিলােমিটার নদী ড্রেজিং রয়েছে।