রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড/তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, শঙ্কিত শিক্ষা বোর্ডে কর্মরতরা
- আপডেট টাইম : ০৩:০৪:২৫ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১
- / ৫৩৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
রাজশাহী অফিস।।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সচিবের রুমে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সেই তদন্ত কমিটি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এসে তদন্ত শেষ করেছেন। পক্ষপাত দূষ্টতার অভিযোগ তুলে সেই তদন্ত কমিটি নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সচিব কক্ষে ঘটে যাওয়া ঘটনায় চেয়ারম্যান কর্তৃক তৎক্ষণাৎ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলেও পরে শুধুমাত্র একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয় আবারও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছেন। যা সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন’র দ্বারা প্রভাবিত কমিটি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চেয়ারম্যান কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার পরে আবারও আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন হওয়া নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাঃ মোকবুল হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। উক্ত ঘটনায় ১৩ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষ লিখিত অভিযোগ দিলে আমি বোর্ডের বাহিরের তিনজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমস্বয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আনিসুর রহমানকে আহ্বায়ক করে সদস্য সচিব এডভোকেট ইয়াহিয়া ও বগুড়া সরকারী শাহ সুলতাল কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পুঙখানুপুঙখভাবে বিচার বিশ্লেষণ করাসহ সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন ও মাউশি হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগের উপ পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তবে চেয়ারম্যান আরও বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চপদস্থ যে তদন্ত কমিটি এসেছে, আশা করি তাঁরা সার্বিক দিক বিবেচনায় সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি মুনজুর রহমান খান ও শিক্ষা বোর্ড কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবির লালু অভিযোগ করে বলেন, বোর্ডে অর্ডিন্যান্স-৬১ অনুযায়ী চেয়ারম্যান সকল ক্ষমতার অধিকারি। তিনি শিক্ষা বোর্ড সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধান ও তদন্ত সাপেক্ষে যে কোন বিষয়ের জন্য চুড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী।
গেল মাসের ১২ তারিখে বোর্ড সচিবের কক্ষে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার সাপেক্ষে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠণ করলেও অভিযুক্ত সচিব নিজের দোষ ও অপরাধ ঢাকার জন্য ঢাকাতে গিয়ে লবিং গ্রুপিং করে মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটি গঠণের জন্য সুপারিশ করেন। এছাড়াও শিক্ষা বোর্ডে ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে তিঁনি শিক্ষা ক্যাডার সমিতিকেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবহার করছেন নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বলেও অভিযোগ বোর্ডে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের।
উল্লেখ্য, গেল সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে নয়জন কর্মকর্তার বেতন স্কেল নির্ধারণ বিবরণী ও গোপনীয় কাগজপত্র বোর্ড চেয়ারম্যানের অনুমতি ব্যতিরেকে অনৈতিক পন্থায় ফটোকপি করার প্রতিবাদ করায় দুই কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি বেআইনি ভাবে তাঁদেরকে প্রায় এক ঘন্টা সচিবের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ঐদিন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী দুই কর্মকর্তাসহ বোর্ড সচিবও চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অপরদিকে গত ১১ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিকে শিক্ষাবোর্ড সচিব ড. মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন’র বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও বোর্ড কর্মকর্তা কর্মচারিদের সাথে অসদাচরণ করার উদাহরণ তুলে ধরে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়ন।
তদন্তের নিরপেক্ষতার প্রশ্নে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পাঠানো তদন্ত কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ খাঁন বলেন, আমাদেরকে কোন পক্ষ কোনভাবেই প্রভাবিত করতে পারবেনা।’ তিনি আরো বলেন, উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাগুলোও আমাদের কাছে আছে। এছাড়া তিনি আরো জানান, উক্ত ঘটনার সাথে যারা সম্পৃক্ত ও প্রত্যক্ষদর্শী তাদের প্রত্যেকের বক্তব্যই শুধু শোনা হবে না; বস্তুনিষ্ঠতার জন্য প্রতিটি বক্তব্যের বিপরীতে কাগজীয় ডকুমেন্টও আমাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। আমরা কারো ‘মিত্র না, আবার শত্রুও না’। তাই তদন্ত নিয়ে কারো দুশ্চিন্তা করার কোন অবকাশ এখানে নেই। ঘটনার প্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ তদন্ত করার পর সেটি নিয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ সাপেক্ষে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।