ঢাকা ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ঠাকুরগাঁওয়ে নারীদের ভূমি অধিকার ও কৃষি ভূমি সংষ্কার বিষয়ক সমাবেশ কালিয়াকৈরে ধর্ষণের অভিযোগে বাড়ির মালিক গ্রেফতার পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত কঠিন সময়ে কীভাবে পাশে ছিলেন স্ত্রী, জানালেন কোহলি ইতালিতে জি৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনার তালিকায় নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে আরো যা ‘পদক্ষেপ’ নিতে বললেন নূরুল কবির মেগা মানডে’: ৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী অর্থের লোভ দেখিয়ে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ ব্যর্থ চেষ্টা, নেপথ্যে কারা? ইমরান খানের হাজারো সমর্থক গ্রেপ্তার প্রতারক বাবু যেন কাশিমপুর থানার একচ্ছত্র অধিপতি

রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার রাজস্ব তহবিল শুন‍্য

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ১০:৫০:৩১ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১ অক্টোবর ২০২১
  • / ৩৭১ ৫০০০.০ বার পাঠক

রাজশাহী ব‍্যুরো।।
রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার রাজস্ব তহবিল শুন্য। এডিপি ফান্ডেও  নেই  কোন টাকা। তিন মাস থেকে বেতন ভাতা বঞ্চিত কর্মকর্তা  কর্মচারী ও কাউন্সিলরগন।  জ্বালানি  তেলের বকেয়া  ৩ লক্ষ ২ হাজার  টাকা, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া  ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। পি এফ  গ্রাচুইটির  দেনা  প্রায়  ৩০ লাখ। মুক্তিযোদ্ধা সাতভূমি খাতে বকেয়া ৪ বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। রাজস্ব খাতে  আয়ের  টাকা  জমা বাঁকি  প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ। অপরোশোধিত ঠিকাদারি বিল  প্রায় ৫০ লক্ষাধিক।  নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত   প্রথম  শ্রেণীর পৌরসভায় এখন সামান্যতম নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে।ড্রেনেজ ও পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার  বেহাল দশা। দীর্ঘদিন  সংস্কার না  করায় পৌরসভার  অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা করুণ। বিভিন্ন  এলাকার লাইটিং ব্যবস্থাও নাজুক। সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা ধরে রাখায় এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে  রাজশাহীর বাঘা  পৌরসভার। এমতাবস্থায় পৌরসভায়  জনবল বৃদ্ধিতে মরিয়া  হয়ে উঠেছেন পৌর মেয়র আব্দুর  রাজ্জাক। সমস্যার সমাধান না করে  পৌরসভায়  জনবল  বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় হতভম্ব হয়ে পড়েছে পৌর স্টাফসহ সচেতন নাগরিক ।
করোনাকালিন সময়ের মধ্যেও মেয়র কেন   পৌরসভায় নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠলেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছে নানান  প্রশ্ন, চলছে জল্পনা পর্যালোচনা। সচেতন নাগরিকদের  দাবি, শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই দেনায় জর্জরিত অবস্থাতেও পৌরসভায়  বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে চাই মেয়র  ।
পৌরসভার তিন নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি মেয়রের সমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরসহ আদালতে অভিযোগ করেছি। এজন্য গত ১১ মাস থেকে মেয়র আমার ভাতা বন্ধ করে  রেখেছেন ।  আমাকে মাসিক  মিটিং  এ  ডাকা হয়না। এমন কি, আমার এলাকার  উন্নয়ন মুলক কাজ  থেকেও  বঞ্চিত করা হচ্ছে।
শুধু আমি না,  মেয়রের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রকল্প দাখিল করে বিল উত্তোলন, হাট-বাজার ও  পৌর মার্কেট ইজারার অর্থ  লোপাট, এডিপি  প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, বিমান ট্রাভেল এজেন্সিতে বাকি পরিশোধ না করা, ডেঙ্গু ও চলমান করোনা সংকটের নামে ভুয়া ভাউচার দাখিল এবং  তৎকালীন সময়ে চলমান ৬  কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬টি কাজে অনিয়মের  অভিযোগের কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন ও  জেলা  প্রশাসকসহ  বেশ কয়েকটি দপ্তরে  এর আগে অভিযোগ করেছেন  স্থানীয় সচেতন নাগরিক  ফোরামের  নেতা  সৈকত মাহমুদ ও স্থানীয় এক ঠিকাদার।
তাদের অভিযোগেও  মেয়রের ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র  তুলে ধরা হয়। তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন,  পৌরসভার দায়িত্ব পাওয়ার পর  থেকেই পৌর  প্রকৌশলীর মাধ্যমে সীমাহীন  অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছেন  মেয়র রাজ্জাক। মেসার্স রিপা এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারি রবিউল ইসলাম  ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কদমতলা ডাব্লিউ বিএম রাস্তার উন্নয়ন কাজ না করেই  ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং একটি বিপি  কোটেশন কাজে ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা ভুয়া বিল উত্তোলনের  প্রতিবাদ  করায় মেয়র তাকে হুমকি দিলে সে  থানায়  জিডি করেন। যার নাম্বার – ৮।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-২০১৯ এবং ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পৌরসভার  চণ্ডিপুর গরুহাট,  মেয়র তার নিজস্ব ঠিকাদারকে ১  কোটি ৩১ লাখ টাকায় ইজারা  দেন। ওই  ইজারার ৬০  লক্ষ টাকা রাজস্ব তহবিলে জমা হয়নি। অনুরূপভাবে বাঘার হাট দুইবারে ৮০ লক্ষ টাকায় ইজারা  দেয়া হলেও অনাদায়ী রয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা।
অন্যদিকে বাঘা বাজারে  পৌরসভার অর্থায়নে  পৌর মার্কেট নির্মাণের পর ২৩টি  দোকান বাবদ ১  কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া  গেলেও ব্যাংকে জমা হয়েছে মাত্র ৬০ লক্ষ টাকা। বাকি ৪০ লক্ষ  টাকা  মেয়র আব্দুর রাজ্জাক তার নিজ  প্রয়োজনে খরচ করেছেন  বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এডিপি  প্রকল্পের আওতায় ১  কোটি ৫০ লাখ টাকার ভুয়া বিল দাখিল করে সরকারি টাকা আত্মসাতসহ যে সব লাইসেন্স নবায়ন  নেই এ রকম ৬টি লাইসেন্সে  প্রায় ১৫ লাখ টাকার ভুয়া  কোটেশন  প্রকল্প  দেখিয়ে  আংশিক কাজ করে অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগ করা হয়।
মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টুর সঙ্গে মেয়রের ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। যার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। কিন্তু, পরে  প্যানেল  মেয়র পিন্টু নিরব হয়ে যান।
জানা যায়, পৌরসভায় জনবল বৃদ্ধির জন্য  মেয়র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের  প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ গত ২০  ফেব্রুয়ারি (২০২০) স্বারক নাম্বার-৪৬.০০.০০০০.০৬৩.১১.০২৩.১৯.১৮৯  প্রথম বার নিয়োগ দানের  অনুমতি  প্রদান করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট  মেয়াদের মধ্যে নিয়োগ দানে ব্যর্থ হয়। পুনরায়  মেয়রের আবেদনের  প্রেক্ষিতে সময় বৃদ্ধি করে দ্বিতীয়বার পত্র  প্রেরণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু  নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের জন্য দ্বিতীয় বারেও নিয়োগ দানে ব্যর্থ হয়  মেয়র। ফলে  মেয়রের সময় বৃদ্ধিও আবেদনের প্রেক্ষিতে সর্বশেষ গত ২৯ আগষ্ট (২০২১)  তৃতীয় বার নিয়োগ  প্রদানের  অনুমতি পত্র দেয়া হয়।
নাম  প্রকাশ না করার  শর্তে  পৌরসভার  একাধিক কাউন্সিলর বলেন,  মেয়রের দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুললেই রোষানলে পড়তে হয়। তাই আমরা এসব বিষয়ে  কথা বলতে চাইনা। পৌর  মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এত অভিযোগের পরেও  কেন  তদন্ত  করা হচ্ছেনা  সে বিষয়েও তারা   বিষ্ময়  প্রকাশ করেছেন।
পৌরসভার  বকেয়া বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর বাঘা সাব   জোনাল অফিসের  ডিজিএম  সুবির কুমার দত্ত বলেন, গত  জুন মাসে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য  পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তারা বিল পরিশোধ না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
পৌরসভার কাছে টাকা পাওনা থাকার বিষয়ে বাঘা পেট্রলিয়াম  এজেন্সির সত্তাধিকারি লুৎফর রহমান বলেন, পৌরসভার নিকট  ৩ লাখ টাকা পাব। বারবার বলার পরেও মেয়র টাকা পরিশোধ না করায় বাধ্য হয়ে  তেল  দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
পৌরসভার একাধিক সচেতন নাগরিকের দাবি, মেয়র  যেন আর  কোনো ধরনের দুর্নীতি কার্যক্রম করতে না পারেন,  সে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ এই এলাকার  উন্নয়নের রুপকার, বাঘা চারঘাটের  অবিভাবক পররাষ্ট্র  প্রতিমন্ত্রী  আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলমের  প্রতি  আহবান জানান ।
পৌরসভার এক প্রবিন ব্যাক্তি বলেন, এখন যারা কর্মরত আছেন, তাদের   বেতন-ভাতা নিয়মিত  পরিশোধ করাই দুরুহ হয়ে পড়েছে। তার উপর ১০ টি পদে নতুন করে নিয়োগ দেবার  প্রক্রিয়ায় রয়েছেন মেয়র। বিভিন্ন পদের জন্য ১২  থেকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে মেয়রের বিরুদ্ধে।
এ সব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে   পৌরসভার হিসাব রক্ষক হাসান আলী ও   প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম  কে পৃথক পৃথকভাবে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তারা  বলেন,  এসব বিষয়ে  আমরা  কোন কথা বলতে পারবনা। কিছু জানার থাকলে  মেয়রের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনিই  সব  প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে  মেয়রের  মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন,  কোন  বিষয় জানার থাকলে  অফিস চলাকালীন সময়ে আসবেন।  বলেই সংযোগ  কেটে  দেন।
পৌর সূত্র মতে,  পৌরসভায় এখন নিয়মিত কর্মচারী রয়েছে ১৮ জন।  মাস্টার  রোলে রয়েছেন ২২ জন কর্মচারী।
আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার রাজস্ব তহবিল শুন‍্য

আপডেট টাইম : ১০:৫০:৩১ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১ অক্টোবর ২০২১
রাজশাহী ব‍্যুরো।।
রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার রাজস্ব তহবিল শুন্য। এডিপি ফান্ডেও  নেই  কোন টাকা। তিন মাস থেকে বেতন ভাতা বঞ্চিত কর্মকর্তা  কর্মচারী ও কাউন্সিলরগন।  জ্বালানি  তেলের বকেয়া  ৩ লক্ষ ২ হাজার  টাকা, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া  ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। পি এফ  গ্রাচুইটির  দেনা  প্রায়  ৩০ লাখ। মুক্তিযোদ্ধা সাতভূমি খাতে বকেয়া ৪ বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। রাজস্ব খাতে  আয়ের  টাকা  জমা বাঁকি  প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ। অপরোশোধিত ঠিকাদারি বিল  প্রায় ৫০ লক্ষাধিক।  নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত   প্রথম  শ্রেণীর পৌরসভায় এখন সামান্যতম নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে।ড্রেনেজ ও পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার  বেহাল দশা। দীর্ঘদিন  সংস্কার না  করায় পৌরসভার  অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা করুণ। বিভিন্ন  এলাকার লাইটিং ব্যবস্থাও নাজুক। সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা ধরে রাখায় এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে  রাজশাহীর বাঘা  পৌরসভার। এমতাবস্থায় পৌরসভায়  জনবল বৃদ্ধিতে মরিয়া  হয়ে উঠেছেন পৌর মেয়র আব্দুর  রাজ্জাক। সমস্যার সমাধান না করে  পৌরসভায়  জনবল  বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় হতভম্ব হয়ে পড়েছে পৌর স্টাফসহ সচেতন নাগরিক ।
করোনাকালিন সময়ের মধ্যেও মেয়র কেন   পৌরসভায় নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠলেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছে নানান  প্রশ্ন, চলছে জল্পনা পর্যালোচনা। সচেতন নাগরিকদের  দাবি, শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই দেনায় জর্জরিত অবস্থাতেও পৌরসভায়  বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে চাই মেয়র  ।
পৌরসভার তিন নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি মেয়রের সমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরসহ আদালতে অভিযোগ করেছি। এজন্য গত ১১ মাস থেকে মেয়র আমার ভাতা বন্ধ করে  রেখেছেন ।  আমাকে মাসিক  মিটিং  এ  ডাকা হয়না। এমন কি, আমার এলাকার  উন্নয়ন মুলক কাজ  থেকেও  বঞ্চিত করা হচ্ছে।
শুধু আমি না,  মেয়রের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রকল্প দাখিল করে বিল উত্তোলন, হাট-বাজার ও  পৌর মার্কেট ইজারার অর্থ  লোপাট, এডিপি  প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, বিমান ট্রাভেল এজেন্সিতে বাকি পরিশোধ না করা, ডেঙ্গু ও চলমান করোনা সংকটের নামে ভুয়া ভাউচার দাখিল এবং  তৎকালীন সময়ে চলমান ৬  কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬টি কাজে অনিয়মের  অভিযোগের কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন ও  জেলা  প্রশাসকসহ  বেশ কয়েকটি দপ্তরে  এর আগে অভিযোগ করেছেন  স্থানীয় সচেতন নাগরিক  ফোরামের  নেতা  সৈকত মাহমুদ ও স্থানীয় এক ঠিকাদার।
তাদের অভিযোগেও  মেয়রের ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র  তুলে ধরা হয়। তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন,  পৌরসভার দায়িত্ব পাওয়ার পর  থেকেই পৌর  প্রকৌশলীর মাধ্যমে সীমাহীন  অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছেন  মেয়র রাজ্জাক। মেসার্স রিপা এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারি রবিউল ইসলাম  ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কদমতলা ডাব্লিউ বিএম রাস্তার উন্নয়ন কাজ না করেই  ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং একটি বিপি  কোটেশন কাজে ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা ভুয়া বিল উত্তোলনের  প্রতিবাদ  করায় মেয়র তাকে হুমকি দিলে সে  থানায়  জিডি করেন। যার নাম্বার – ৮।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-২০১৯ এবং ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পৌরসভার  চণ্ডিপুর গরুহাট,  মেয়র তার নিজস্ব ঠিকাদারকে ১  কোটি ৩১ লাখ টাকায় ইজারা  দেন। ওই  ইজারার ৬০  লক্ষ টাকা রাজস্ব তহবিলে জমা হয়নি। অনুরূপভাবে বাঘার হাট দুইবারে ৮০ লক্ষ টাকায় ইজারা  দেয়া হলেও অনাদায়ী রয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা।
অন্যদিকে বাঘা বাজারে  পৌরসভার অর্থায়নে  পৌর মার্কেট নির্মাণের পর ২৩টি  দোকান বাবদ ১  কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া  গেলেও ব্যাংকে জমা হয়েছে মাত্র ৬০ লক্ষ টাকা। বাকি ৪০ লক্ষ  টাকা  মেয়র আব্দুর রাজ্জাক তার নিজ  প্রয়োজনে খরচ করেছেন  বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এডিপি  প্রকল্পের আওতায় ১  কোটি ৫০ লাখ টাকার ভুয়া বিল দাখিল করে সরকারি টাকা আত্মসাতসহ যে সব লাইসেন্স নবায়ন  নেই এ রকম ৬টি লাইসেন্সে  প্রায় ১৫ লাখ টাকার ভুয়া  কোটেশন  প্রকল্প  দেখিয়ে  আংশিক কাজ করে অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগ করা হয়।
মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টুর সঙ্গে মেয়রের ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। যার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। কিন্তু, পরে  প্যানেল  মেয়র পিন্টু নিরব হয়ে যান।
জানা যায়, পৌরসভায় জনবল বৃদ্ধির জন্য  মেয়র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের  প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ গত ২০  ফেব্রুয়ারি (২০২০) স্বারক নাম্বার-৪৬.০০.০০০০.০৬৩.১১.০২৩.১৯.১৮৯  প্রথম বার নিয়োগ দানের  অনুমতি  প্রদান করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট  মেয়াদের মধ্যে নিয়োগ দানে ব্যর্থ হয়। পুনরায়  মেয়রের আবেদনের  প্রেক্ষিতে সময় বৃদ্ধি করে দ্বিতীয়বার পত্র  প্রেরণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু  নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের জন্য দ্বিতীয় বারেও নিয়োগ দানে ব্যর্থ হয়  মেয়র। ফলে  মেয়রের সময় বৃদ্ধিও আবেদনের প্রেক্ষিতে সর্বশেষ গত ২৯ আগষ্ট (২০২১)  তৃতীয় বার নিয়োগ  প্রদানের  অনুমতি পত্র দেয়া হয়।
নাম  প্রকাশ না করার  শর্তে  পৌরসভার  একাধিক কাউন্সিলর বলেন,  মেয়রের দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুললেই রোষানলে পড়তে হয়। তাই আমরা এসব বিষয়ে  কথা বলতে চাইনা। পৌর  মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এত অভিযোগের পরেও  কেন  তদন্ত  করা হচ্ছেনা  সে বিষয়েও তারা   বিষ্ময়  প্রকাশ করেছেন।
পৌরসভার  বকেয়া বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর বাঘা সাব   জোনাল অফিসের  ডিজিএম  সুবির কুমার দত্ত বলেন, গত  জুন মাসে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য  পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তারা বিল পরিশোধ না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
পৌরসভার কাছে টাকা পাওনা থাকার বিষয়ে বাঘা পেট্রলিয়াম  এজেন্সির সত্তাধিকারি লুৎফর রহমান বলেন, পৌরসভার নিকট  ৩ লাখ টাকা পাব। বারবার বলার পরেও মেয়র টাকা পরিশোধ না করায় বাধ্য হয়ে  তেল  দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
পৌরসভার একাধিক সচেতন নাগরিকের দাবি, মেয়র  যেন আর  কোনো ধরনের দুর্নীতি কার্যক্রম করতে না পারেন,  সে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ এই এলাকার  উন্নয়নের রুপকার, বাঘা চারঘাটের  অবিভাবক পররাষ্ট্র  প্রতিমন্ত্রী  আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলমের  প্রতি  আহবান জানান ।
পৌরসভার এক প্রবিন ব্যাক্তি বলেন, এখন যারা কর্মরত আছেন, তাদের   বেতন-ভাতা নিয়মিত  পরিশোধ করাই দুরুহ হয়ে পড়েছে। তার উপর ১০ টি পদে নতুন করে নিয়োগ দেবার  প্রক্রিয়ায় রয়েছেন মেয়র। বিভিন্ন পদের জন্য ১২  থেকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে মেয়রের বিরুদ্ধে।
এ সব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে   পৌরসভার হিসাব রক্ষক হাসান আলী ও   প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম  কে পৃথক পৃথকভাবে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তারা  বলেন,  এসব বিষয়ে  আমরা  কোন কথা বলতে পারবনা। কিছু জানার থাকলে  মেয়রের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনিই  সব  প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে  মেয়রের  মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন,  কোন  বিষয় জানার থাকলে  অফিস চলাকালীন সময়ে আসবেন।  বলেই সংযোগ  কেটে  দেন।
পৌর সূত্র মতে,  পৌরসভায় এখন নিয়মিত কর্মচারী রয়েছে ১৮ জন।  মাস্টার  রোলে রয়েছেন ২২ জন কর্মচারী।