একপর্যায়ে গান শুনতে চাইলে বাউলের শিষ্য বশিরউদ্দিন সরকার নিজের লেখা একটি গান গেয়ে শোনান। গানটি ছিল এমন, ‘কী খেলা খেলতেছেন বাবা করিম শায়/ গাড়ি চলে না চলে না বলে চালাচ্ছেন মৌলায়॥ আস্তে আস্তে কথা বলেন/ কাছের মানুষ চিনতে পারেন/ সালাম আদাব গ্রহণ করেন আগের মতো প্রায়॥’ এ গান শুনে তিনি হাসেন। পরে শাহ আবদুল করিমের লেখা ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইল’ গানটি বশিরউদ্দিন তাঁর ওস্তাদজিকে গেয়ে শোনান। এ গান শুনে করিমের চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। করিমের চোখে পানি দেখে সবাই তখন বশিরউদ্দিনকে দোষারোপ করেন, কেন তিনি এ গান শোনালেন! করিম বিষয়টা লক্ষ করে সবাইকে ইশারায় বশিরউদ্দিনকে দোষারোপ করতে নিষেধ করেন।
৯ সেপ্টেম্বর শাহ আবদুল করিম খাওয়াদাওয়া করেন। ধীরে ধীরে কথাবার্তা বলছিলেন। একপর্যায়ে গান শুনতে চাইলে বাউলের শিষ্য বশিরউদ্দিন সরকার নিজের লেখা একটি গান গেয়ে শোনান। গানটি ছিল এমন, ‘কী খেলা খেলতেছেন বাবা করিম শায়/ গাড়ি চলে না চলে না বলে চালাচ্ছেন মৌলায়॥/ আস্তে আস্তে কথা বলেন/ কাছের মানুষ চিনতে পারেন/ সালাম আদাব গ্রহণ করেন আগের মতো প্রায়॥’ এ গান শুনে তিনি হাসেন। পরে শাহ আবদুল করিমের লেখা ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইল’ গানটি বশিরউদ্দিন তাঁর ওস্তাদজিকে গেয়ে শোনান। এ গান শুনে করিমের চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। করিমের চোখে পানি দেখে সবাই তখন বশিরউদ্দিনকে দোষারোপ করেন, কেন তিনি এ গান শোনালেন! করিম বিষয়টা লক্ষ করে সবাইকে ইশারায় বশিরউদ্দিনকে দোষারোপ করতে নিষেধ করেন। ১৯৮৫ সালে শাহ আবদুল করিমের শিষ্যত্ব গ্রহণকারী বশিরউদ্দিন সেদিনের বর্ণনা দেন এভাবে, ‘হাসি-কান্নার পর তিনি (শাহ আবদুল করিম) নির্লিপ্ত হয়ে পড়েন। আর কোনো সাড়াশব্দ শোনা যায়নি। কোনো কথাও বলেননি। কেবল ইশারায় কিছু বলার চেষ্টা করতেন। এক দিন পর তাঁকে লাইফ সাপোর্টে দিয়ে রাখা হয়। ওই দিন গান শোনানোর একফাঁকেই বাবা (শাহ আবদুল করিম) হাত মুঠো করে প্রতীকী কিছু একটা আমার হাতে দিয়ে বলেছিলেন, “তোমার ঠেখন নাই (তুমি আটকাবে না)।” আমিও হাত পেতে প্রতীকী বিষয়টা গ্রহণ করে পকেটে রেখে দিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত বাবার দোয়ায় ঠেকিনি কোথাও।’
শাহ আবদুল করিমের নির্লিপ্ত হওয়ার পরের ঘটনার স্মৃতিচারণা পাওয়া যায় করিমের প্রধান শিষ্যদের একজন হিসেবে সুপরিচিত বাউলশিল্পী আবদুর রহমানের ভাষ্যে। আবদুর রহমান ১৯৭৭ সালে করিমের শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন। আদর করে করিম তাঁকে ডাকতেন ‘রহমান সাধু’। করিমের সেই রহমান সাধু বলেন, ‘বাবা (শাহ আবদুল করিম) কথা বলতে চাইতেন। কিন্তু তাঁর কণ্ঠ অস্পষ্ট ছিল। কিছুই বোঝা যেত না। কেবল ইশারায় ডাকতেন, কথা বলতেন। আমরা ঠারেটুরে সেসব বুঝতাম। তিনি বলতেন, “কই বেটাইন, তোমরা কই? মানুষ আনো, গফ (গল্প) করি। আর দরজাটা লাগাও (বন্ধ করো)।” কেন এমন কথা তিনি বলতেন, সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।’