ঢাকা ০১:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

বাঘা উপজেলার বাউসা ইউপিতে ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম।

  • আপডেট টাইম : ১২:৩১:৫৫ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২৭ আগস্ট ২০২১
  • / ২২১ ৫০০.০০০ বার পাঠক

রাজশাহী প্রতিনিধি।।

অন্যের জমিতে জরাজীর্ণ একটি বাড়ি। অসুস্থ বাবা, প্রতিবন্ধী (অবিবাহিত)বোন, মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে মোট ৭ সদস্যের জাহিদুলের সংসার। জীর্ণশীর্ণ বাড়িতেই কাটছে তাদের জীবন। চক্ষু লজ্জায় পারেন না পাততে অন্যের কাছে হাত। সাত সদস্যের এই পরিবারে একমাত্র উপার্জনশীল ছেলে জাহিদুল। সেও শারীরিক ভাবে অসুস্থ। আয়ের একমাত্র সম্বল বলতে রয়েছে ব্যাটারী চালিত একটি ভ্যানগাড়ী। শরীর সুস্থ না থাকায় জাহিদুল ঠিকমত ভ্যান চালাতেও পারেন না। তবে যা রোজগার হয় তা দিয়েই কোনমতে চলে তাদের সংসার। হঠাৎই একদিন জাহিদুলের মনে হয় টানাপড়নের সংসারে যদি সরকারি কোন সুবিধা পাই তবে একটু উপকার হয়। ভাবনা থেকেই তিনি যোগাযোগ করেন স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশের সাথে। ওই গ্রাম পুলিশের সহযোগীতায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ভ্যান চালক জাহিদুলের বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। জাহিদুল ইসলাম রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তেঁতুলিয়া জুলাপার গ্রামের মসলেম উদ্দিনের ছেলে। সে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

জানা যায়, ভিজিডি কার্ড প্রদানের জন্য ভিটেমাটিহীন ভ্যানচালক জাহিদুল ও তার স্ত্রীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা নেওয়া হয়। অবশেষে ভিজিডি কার্ড সম্পন্ন হয়। ওই কার্ডধারীর নাম মোসাঃ পলি আক্তার(৩২), স্বামীঃ জাহিদুল ইসলাম, জাতীয় পরিচয় পত্র নং – ১৯৮৮৮১১১০২৩৩৩৮১৭৯ ব্যবহার করা হয়। যা ভুক্তভোগী জাহিদুলের স্ত্রী’র নয়। ভিজিডি কার্ড নং- বাউসা/০৯/৩৪। বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক , উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা /প্রোগ্রাম অফিসার পঙ্কজ কুমার দাস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ভিজিডি কার্ডের উপকার ভোগীর তালিকা ভুক্তি করা হয় ২৭/১২/২০২০ ইং তারিখে এবং কার্ড বিতরণ করা হয় ৩০/১২/ ২০২০ ইং তারিখে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম বলেন, কার্ডটি আমার বলে প্রথম দফায় ০৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্দ আলী আমাকে চাল দেন। ঐ দিন আমি বাড়িতে চলে আসি কিন্তুু পরের দিন সকালেই গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে চাল ফেরত চাওয়া হয়। আমি চাল ফেরত না দিলে মেম্বর আমাকে বলে এই কার্ড তোমার নয়, কার্ডটি তেঁথুলিয়া
কান্দিপাড়ার মৃত জমশেদ আলীর ছেলে জাহিদুলের। প্রতিউত্তরে জাহিদুল মেম্বার কে বলেন, কার্ড আমার না হলে কর্ডের উপর আমার স্ত্রীর ছবি কেন? ভ্যান চালক জাহিদুল অভিযোগ করে বলেন, গত ১৮ আগস্ট আমি কাউন্সিলে যায় এবং আমার ভিজিডি কার্ডের চাল দাবি করলে আমার উপর চড়াও হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় এই ইউপি সদস্য ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে আওয়ামী প্রেমি ৩ জন প্রবীণ ব্যাক্তি জাহিদুলের হয়ে সুপারিশ করতে গেলে বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক দাম্ভিকতার সাথে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। আটটি মাস অতিবাহিত হলেও কপালের ফেরে অসহায় পরিবারটির ভিজিডি কর্ডটির হয়নি কোন পরিবর্তন ও সংশোধন। এদিকে কার্ডধারী জাহিদুল একজন সচ্ছল ব্যাবসায়ী বলে জানা যায়। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই সরকারী অনুদানের ভিজিডি,ভিজিএফ,বয়ষ্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানে রয়েছে অসংগতি। সরকারী সকল সুবিধা টাকায় বিক্রি হচ্ছে এমনটাই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে কিছু লোক জনের কাছে।স্থানীয় সচেতন মহল জানান, মোহাম্মদ মেম্বার সকল জায়গায় শুধু টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বয়স্ক মহিলা বলেন, আমার স্বামী নেই, আমি খুব অসহায় মানুষ। আমার বয়স্ক ভাতা কার্ড করার জন্য এই মোহাম্মদ মেম্বর ৩ হাজার টাকা নিয়েছে।

স্থানীয় একজন ব্যাক্তি প্রতিবেদক কে অভিযোগ করে বলেন,আমার মেয়ের জন্ম নিবন্ধন কার্ড সংশোধন করার জন্য ২০০/- টাকা নিয়েছে এই মেম্বার কিন্তুু কোন কাজ করে দেয়নি।
এই রকম অনেক অভিযোগ রয়েছে এ-ই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ।

উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী অস্বীকার করে বলেন, এই ভিজিডি কার্ড আমার মাধ্যমে করা হয়নি। স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতার মাধ্যমে করা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আমি তেমন কিছুই জানিনা।

এ বিষয়ে বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক ভিজিডি কার্ডের অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, একটু গড়মিল হয়ে গেছে দ্রুত সংশোধন করে দেব। তবে ঐ কার্ডের সুবিধা ভোগ করছে স্থানীয় সাইদুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি।

ভিজিডি কার্ডের সুবিধা ভোগী সাইদুল ইসলাম বলেন, জমশেদের ছেলে জাহিদুলের স্ত্রীর নামে যে ভিজিডি কার্ড রয়েছে আমি সেই কার্ডের সুবিধা ভোগ করি। আমি এই কার্ডের বিনিময়ে তেঁথুলিয়া নওদাপাড়া গ্রামের স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতা লালা কে নগদ ৪ হাজার টাকা দিয়েছি। সাইদুল ইসলামের পাকা ইটের বাড়ী, স্বচ্ছল জীবন যাপন করে আসছেন বলেও জানান।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার দাস মুঠোফোনে বলেন,এ ব্যাপারে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বররা ভালো জানে। আমার অফিসে সকল ডকুমেন্ট রয়েছে।

সকলেই দায়িত্বপূর্ণ জায়গা থেকে এড়িয়ে গেলেও চলমান এ সকল অসংগতির দায় কার?
আসছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন — আগামী পর্বে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাঘা উপজেলার বাউসা ইউপিতে ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম।

আপডেট টাইম : ১২:৩১:৫৫ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২৭ আগস্ট ২০২১

রাজশাহী প্রতিনিধি।।

অন্যের জমিতে জরাজীর্ণ একটি বাড়ি। অসুস্থ বাবা, প্রতিবন্ধী (অবিবাহিত)বোন, মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে মোট ৭ সদস্যের জাহিদুলের সংসার। জীর্ণশীর্ণ বাড়িতেই কাটছে তাদের জীবন। চক্ষু লজ্জায় পারেন না পাততে অন্যের কাছে হাত। সাত সদস্যের এই পরিবারে একমাত্র উপার্জনশীল ছেলে জাহিদুল। সেও শারীরিক ভাবে অসুস্থ। আয়ের একমাত্র সম্বল বলতে রয়েছে ব্যাটারী চালিত একটি ভ্যানগাড়ী। শরীর সুস্থ না থাকায় জাহিদুল ঠিকমত ভ্যান চালাতেও পারেন না। তবে যা রোজগার হয় তা দিয়েই কোনমতে চলে তাদের সংসার। হঠাৎই একদিন জাহিদুলের মনে হয় টানাপড়নের সংসারে যদি সরকারি কোন সুবিধা পাই তবে একটু উপকার হয়। ভাবনা থেকেই তিনি যোগাযোগ করেন স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশের সাথে। ওই গ্রাম পুলিশের সহযোগীতায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ভ্যান চালক জাহিদুলের বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। জাহিদুল ইসলাম রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তেঁতুলিয়া জুলাপার গ্রামের মসলেম উদ্দিনের ছেলে। সে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

জানা যায়, ভিজিডি কার্ড প্রদানের জন্য ভিটেমাটিহীন ভ্যানচালক জাহিদুল ও তার স্ত্রীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা নেওয়া হয়। অবশেষে ভিজিডি কার্ড সম্পন্ন হয়। ওই কার্ডধারীর নাম মোসাঃ পলি আক্তার(৩২), স্বামীঃ জাহিদুল ইসলাম, জাতীয় পরিচয় পত্র নং – ১৯৮৮৮১১১০২৩৩৩৮১৭৯ ব্যবহার করা হয়। যা ভুক্তভোগী জাহিদুলের স্ত্রী’র নয়। ভিজিডি কার্ড নং- বাউসা/০৯/৩৪। বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক , উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা /প্রোগ্রাম অফিসার পঙ্কজ কুমার দাস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ভিজিডি কার্ডের উপকার ভোগীর তালিকা ভুক্তি করা হয় ২৭/১২/২০২০ ইং তারিখে এবং কার্ড বিতরণ করা হয় ৩০/১২/ ২০২০ ইং তারিখে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম বলেন, কার্ডটি আমার বলে প্রথম দফায় ০৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্দ আলী আমাকে চাল দেন। ঐ দিন আমি বাড়িতে চলে আসি কিন্তুু পরের দিন সকালেই গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে চাল ফেরত চাওয়া হয়। আমি চাল ফেরত না দিলে মেম্বর আমাকে বলে এই কার্ড তোমার নয়, কার্ডটি তেঁথুলিয়া
কান্দিপাড়ার মৃত জমশেদ আলীর ছেলে জাহিদুলের। প্রতিউত্তরে জাহিদুল মেম্বার কে বলেন, কার্ড আমার না হলে কর্ডের উপর আমার স্ত্রীর ছবি কেন? ভ্যান চালক জাহিদুল অভিযোগ করে বলেন, গত ১৮ আগস্ট আমি কাউন্সিলে যায় এবং আমার ভিজিডি কার্ডের চাল দাবি করলে আমার উপর চড়াও হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় এই ইউপি সদস্য ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে আওয়ামী প্রেমি ৩ জন প্রবীণ ব্যাক্তি জাহিদুলের হয়ে সুপারিশ করতে গেলে বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক দাম্ভিকতার সাথে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। আটটি মাস অতিবাহিত হলেও কপালের ফেরে অসহায় পরিবারটির ভিজিডি কর্ডটির হয়নি কোন পরিবর্তন ও সংশোধন। এদিকে কার্ডধারী জাহিদুল একজন সচ্ছল ব্যাবসায়ী বলে জানা যায়। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই সরকারী অনুদানের ভিজিডি,ভিজিএফ,বয়ষ্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানে রয়েছে অসংগতি। সরকারী সকল সুবিধা টাকায় বিক্রি হচ্ছে এমনটাই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে কিছু লোক জনের কাছে।স্থানীয় সচেতন মহল জানান, মোহাম্মদ মেম্বার সকল জায়গায় শুধু টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বয়স্ক মহিলা বলেন, আমার স্বামী নেই, আমি খুব অসহায় মানুষ। আমার বয়স্ক ভাতা কার্ড করার জন্য এই মোহাম্মদ মেম্বর ৩ হাজার টাকা নিয়েছে।

স্থানীয় একজন ব্যাক্তি প্রতিবেদক কে অভিযোগ করে বলেন,আমার মেয়ের জন্ম নিবন্ধন কার্ড সংশোধন করার জন্য ২০০/- টাকা নিয়েছে এই মেম্বার কিন্তুু কোন কাজ করে দেয়নি।
এই রকম অনেক অভিযোগ রয়েছে এ-ই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ।

উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী অস্বীকার করে বলেন, এই ভিজিডি কার্ড আমার মাধ্যমে করা হয়নি। স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতার মাধ্যমে করা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আমি তেমন কিছুই জানিনা।

এ বিষয়ে বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক ভিজিডি কার্ডের অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, একটু গড়মিল হয়ে গেছে দ্রুত সংশোধন করে দেব। তবে ঐ কার্ডের সুবিধা ভোগ করছে স্থানীয় সাইদুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি।

ভিজিডি কার্ডের সুবিধা ভোগী সাইদুল ইসলাম বলেন, জমশেদের ছেলে জাহিদুলের স্ত্রীর নামে যে ভিজিডি কার্ড রয়েছে আমি সেই কার্ডের সুবিধা ভোগ করি। আমি এই কার্ডের বিনিময়ে তেঁথুলিয়া নওদাপাড়া গ্রামের স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতা লালা কে নগদ ৪ হাজার টাকা দিয়েছি। সাইদুল ইসলামের পাকা ইটের বাড়ী, স্বচ্ছল জীবন যাপন করে আসছেন বলেও জানান।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার দাস মুঠোফোনে বলেন,এ ব্যাপারে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বররা ভালো জানে। আমার অফিসে সকল ডকুমেন্ট রয়েছে।

সকলেই দায়িত্বপূর্ণ জায়গা থেকে এড়িয়ে গেলেও চলমান এ সকল অসংগতির দায় কার?
আসছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন — আগামী পর্বে।