ঢাকা ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
রায়পুরে দেশীয় শিল্প ও পণ্য মেলায় ভ্রাম্যমান আদালত, নগদ অর্থদণ্ড কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উঠান বৈঠক ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  মোংলায় জলবায়ু ন্যায্যতার গণসংলাপে বক্তারা : সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা দিন অভিনব কায়দায় কুমড়া শাকের আড়ালে গাঁজা পাচারকালে ডিএনসি- কুমিল্লার হাতে ১৩ কেজি গাঁজাসহ আটক ০২ নারী মঠবাড়ীয়া সাফলেজা কচুবাড়ীয়া বসত ঘর ভাঙচুর লুটপাট ও যখম এর অভিযোগ আঃ খালেক হাওলাদার গংদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আখড়া বরগুনার পাসপোর্ট অফিস, দালাল ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট কাশেমপুর থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে বিট্টিমরাই স্কুল ছাত্র মোঃ রাব্বি নিজ খালাকে আটকিয়ে ? ওসি সাইফুল ইসলাম মোটা অংকের টাকার বিনিময় তাদের আসামি করে গ্রেফতার দেখান আনন্দবাজারকে ডা. শফিকুর রহমান কোনও রাজনৈতিক দলকে খারিজ বা সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই রাজনৈতিক দলগুলো যদি বলে যে তারা সংস্কার চায় না, তাহলে এখনই নির্বাচন দিয়ে দেবো: ড. ইউনূস দেশবাসীকে ফের কাঁদালেন শহিদ নাফিজের মা

নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে রাজনীতি করলে সমাজ ও রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়বে!

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০১:০৩:৫৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট ২০২১
  • / ২৮৯ ৫০০০.০ বার পাঠক

নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে রাজনীতি করলে সমাজ রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়বে!

রাজনীতি হচ্ছে প্রাচীনতম একটি শিল্প; যে শিল্প অনন্তকাল ধরে পৃথিবীতে আজ অব্দি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। যে কারণে আমরা অনেকেই রাজনীতি অনেক পছন্দ করি আবার অনেকেই খুব বেশী পছন্দ করি না। আসলে সব কিছুরই ভালো খারাপ দিক আছে । ঠিক তেমনি পলিটিক্স/রাজনীতিরও ভালো খারাপ দুই দিক আছে। এই ভালো খারাপ উভয় দিক নিয়ে বিভিন্ন লেখক ও কবিরা বিভিন্ন কথা বা উক্তি করেছেন। তার মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন- রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ৪টি জিনিসের প্রয়োজন, তা হচ্ছে: নেতৃত্ব, আদর্শ, নিঃস্বার্থ কর্মী এবং সংগঠন। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ৪টি বিষয়ের একটিও পরিলক্ষিত হয় না।

নেতৃত্বঃ সঠিক নেতৃত্বের প্রভাবে একটি পরিবার, প্রতিষ্ঠান, দেশ এমনকি বিশ্বও বদলে যেতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাস আসলে নেতৃত্বের ইতিহাস। একজন যোগ্য নেতা ও তাঁর নেতৃত্বের হাত ধরে একটি নতুন সভ্যতার জন্ম হতে পারে, শুরু হতে পারে নতুন যুগ। একজন মানুষের মাঝে যদি সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী থাকে তবে একদল অযোগ্য লোককেও তিনি অনেক বড় অর্জনের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। এটা এমন একটা বিষয় যেটির মাধ্যমে সংগঠন ও সমাজ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। নেতৃত্বগুনেই সমাজ ও রাষ্ট্রের নানাবিধ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অথচ বিংশ শতাব্দীর নেতৃত্ব দিচ্ছে কারা? যাদের দ্বারা সমস্যার সমাধান তো দূরেই থাক, তারা নিজেরাই বিভিন্নভাবে সমাজের সমস্যা সৃষ্টি করে রেখেছে। তাদের নেতৃত্বে যারা সমাজের সমাজপতি  তারাও নয়-ছয় করে সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এসব অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে নাগরিকদের ক্ষতি এবং দুর্ভোগের শেষ নেই। অযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে সমাজ ব্যবস্থা পরিচালিত হলে এর চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। এহেন পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই শিক্ষিত, মার্জিত এবং সাংগঠনিক দূরদর্শিতা সম্পূর্ণ নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।

আদর্শঃ আপনি হয়-তো রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। রাজনীতি করছেন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। রাজনৈতিক মানুষগুলো এমনই হয়, নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েও কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করে যায়। যারা এই পথের পথিক তাঁরাই আদর্শবান আদর্শিক নেতা। যে কারণে বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছেন আদর্শ ছাড়া রাজনীতি করা অসম্ভব। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রে আদর্শের উপস্থিতি তেমন একটা নেই বললেই চলে। ছোট থেকে বড়, কেন্দ্র থেকে ইউনিট কমিটির নেতাদের নব্বই ভাগের মধ্যেই আদর্শ নামক মহান শব্দের যোগাযোগ নেই। আদর্শের পথে উৎসাহ দিতে অবশ্যই  সঠিক সিদ্ধান্ত, নিয়মিত সভা-সেমিনার এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর উপহার বা বনাস দেওয়া যেতে পারে। এই সিদ্ধান্ত যুগের সাথে চাহিদা সম্পন্ন সিদ্ধান্ত হবে বলে আমি মনে করি।

নিঃস্বার্থ কর্মীঃ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দেশ শাসন করতে হলে নিঃস্বার্থ কর্মী প্রয়োজন। হাওয়া-কথায় চলে না। সেদিন ছাত্ররা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তাদের বলেছিলাম, আত্মসমালোচনা করো। মনে রেখো, আত্মসমালোচনা করতে না পারলে নিজেকে চিনতে পারবা না। তারপর আত্মসংযম করো, আর আত্মশুদ্ধি করো। তাহলেই দেশের মঙ্গল করতে পারবা।’ এমন আত্মসমালোচক-দেশপ্রেমিক নেতা সবার কাছে শ্রদ্ধার, ভালোবাসার ও আত্মশক্তির প্রতীক হয়ে থাকবেন চিরকাল। যিনি নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জনগণের জন্য যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেই বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনে নিঃস্বার্থ কর্মীর উপাধি অলংকৃত করেছেন। কেননা বাঙালিকে অধিকার সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা অপরিসীম। হাজার বছর ধরে শোষিত বাঙালিকে তিনি শুধু স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নই দেখাননি; সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করেছেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে বঙ্গবন্ধুকে বারবার নির্যাতিত হতে হয়েছে, কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু এরপরও তিনি মনোবল হারাননি; বরং প্রতিবারই আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাংগঠনিক দক্ষতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতা বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রই উপহার দেয়নি; অপ্রতিরোধ্য সোনার বাংলা গড়ে তোলার পথও দেখিয়েছে। যে দেশের জন্য তিনি ছাত্রজীবন থেকে দিয়ে গেছেন সেই তাঁকেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা তাকে হত্যার মাধ্যমে হত্যা করতে চেয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শকে, পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিল মৌলবাদ আর স্বৈরাচারকে। কিন্তু জাতির পিতা তার কর্মের মাধ্যমেই কোটি বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। হাজার চেষ্টা করেও তা মুছে ফেলা যাবে না। কিন্তু বর্তমানকালে নিঃস্বার্থ কর্মীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে বহুগুণ। নিঃস্বার্থ কর্মী ছাড়া সংগঠন টিকিয়ে রাখা বা শক্তিশালী করা অসম্ভব। শীর্ষ নেতৃত্ব তার কর্মীর প্রতি দায়িত্ববান, যত্নশীল এবং সহনশীল আচরণ করলেই নিঃস্বার্থ কর্মী বৃদ্ধি পাবে।

সংগঠনঃ সংগঠনের সমৃদ্ধির জন্য যে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে হলে নেতৃত্বকে দূরদর্শী হতে হয়। সে নেতাই দূরদর্শী যিনি ভবিষ্যৎকে পরিষ্কার দেখতে পান, বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ফলাফল অর্জনে লক্ষ্য স্থির করতে পারেন। যেমন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সুস্পষ্ট স্বাধীনতা দেখতে পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নামক সংগঠনের লক্ষ্য (ভিশন) এবং উদ্দেশ্য (মিশন) স্পষ্ট ধারণা ছিলো বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো। লক্ষ্য বা ভিশন হচ্ছে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বক্তব্য যা একটি সংগঠন মধ্যবর্তী বা দীর্ঘমেয়াদে অর্জন করতে চায়। আর উদ্দেশ্য বা মিশন হচ্ছে লক্ষ্য পূরণে সংগঠনটি মধ্যবর্তী মেয়াদে বা দীর্ঘমেয়াদে কী কী কাজ সম্পাদন করবে। সহজ কথায় ভিশন হচ্ছে স্বপ্ন দেখা আর মিশন হচ্ছে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়তার সঙ্গে কিছু কাজ সম্পাদন করা। এ স্বপ্নটা কিন্তু কোনো ব্যক্তির বা বহিঃপ্রেরণাকারীর স্বপ্ন নয়; এ স্বপ্ন দেখতে হবে সংগঠনের সবাই মিলে, ফলে তার বাস্তবায়নও হবে সবার অংশীদারিত্বে। কাজেই একটি সংগঠনের ভিশন ও মিশন ঠিক করতে সব সদস্যর অংশগ্রহণ জরুরি। কিন্তু বর্তমান সময়ে সংগঠনের সভাপতি এবং সম্পাদক যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই সবাইকে মেনে চলতে হয়; অন্যান্য সদস্যদের মতামতের কোন প্রয়োজন বা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

একটি সংগঠনে নানান পেশার মানুষ থাকতে পারে এবং তাদের মনে নানান রকমের প্রশ্ন থাকতে পারে। প্রশ্ন জাগে না তো স্বপ্নও জাগে না, স্বপ্ন নাই তো আপনি একটি নাবিকহীন বা বৈঠাহীন নৌকা। আপনার লক্ষ্য নাই তো আপনার গন্তব্যও নাই। ফলে সংগঠন গড়ে তোলার মূলেই রয়েছে সবার অংশীদারিত্বে ভিশন ও মিশন স্থির করা। সবার অংশগ্রহণে যখন সংগঠনের ভিশন ও মিশন তৈরি করা হয় তখন সেটি পূরণে সব একযোগে কাজ করে যেহেতু সবাই স্বপ্নপূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। এক্ষেত্রে সংগঠনের সকল সদস্যরা মিলে কর্মপদ্ধতি তৈরী করা জরুরী। আমরা জেনো সভাপতি আর সম্পাদক মুখি হয়ে না পড়ি, সবার মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারলেই সংগঠন শক্তিশালী হবে। আমাদের উচিৎ ব্যক্তির চেয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা। তবে আধুনিক রাজনীতিতে এটি হচ্ছে না বললেই চলে। এসব অনিয়মকে নিয়মে পরিবর্তন করা এখন সকলের দাবি।

চলতি সময়ে লোভ লালসার যে রাজনীতি চলছে সেটাকে আমরা সাংগঠনিক রাজনীতি বলতে পারি না। সমাজের সমস্যা খুঁজে বের করে সঠিক নির্ণয়ের মাধ্যমে নিঃস্বার্থভাবে সমাধান করার নামই রাজনীতি এবং এটাই প্রতিষ্ঠিত রাজনীতি বিজ্ঞান। সকল রাজনৈতিক কর্মী ও সংগঠনের এই পথেই হাটা উচিৎ, এতেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল বিন্যাস হবে। নিয়ম-নীতির বাইরে যারাই রাজনীতি করবেন তারা সংগঠনের প্রতি দায়িত্ববান নয় বলেই এমনটা করতে পারেন আর যারা সংগঠনের জন্য নিবেদিত তাঁরা কখনোই নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তাও করবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শ অধ্যায়ন করলে আপনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশ ও জনগণকে সেবা দিতে পারবেন অফুরন্ত। যেমনটি মহান নেতা বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন সমগ্র বাঙ্গালী জাতির জন্য। যেটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ন অক্ষরে মুর্দিত থাকবে-

“যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান

ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখকঃ বোরহান হাওলাদার( জসিম)

চেয়ারম্যান  জাতীয় বঙ্গ লীগ

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে রাজনীতি করলে সমাজ ও রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়বে!

আপডেট টাইম : ০১:০৩:৫৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট ২০২১

নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে রাজনীতি করলে সমাজ রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়বে!

রাজনীতি হচ্ছে প্রাচীনতম একটি শিল্প; যে শিল্প অনন্তকাল ধরে পৃথিবীতে আজ অব্দি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। যে কারণে আমরা অনেকেই রাজনীতি অনেক পছন্দ করি আবার অনেকেই খুব বেশী পছন্দ করি না। আসলে সব কিছুরই ভালো খারাপ দিক আছে । ঠিক তেমনি পলিটিক্স/রাজনীতিরও ভালো খারাপ দুই দিক আছে। এই ভালো খারাপ উভয় দিক নিয়ে বিভিন্ন লেখক ও কবিরা বিভিন্ন কথা বা উক্তি করেছেন। তার মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন- রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ৪টি জিনিসের প্রয়োজন, তা হচ্ছে: নেতৃত্ব, আদর্শ, নিঃস্বার্থ কর্মী এবং সংগঠন। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ৪টি বিষয়ের একটিও পরিলক্ষিত হয় না।

নেতৃত্বঃ সঠিক নেতৃত্বের প্রভাবে একটি পরিবার, প্রতিষ্ঠান, দেশ এমনকি বিশ্বও বদলে যেতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাস আসলে নেতৃত্বের ইতিহাস। একজন যোগ্য নেতা ও তাঁর নেতৃত্বের হাত ধরে একটি নতুন সভ্যতার জন্ম হতে পারে, শুরু হতে পারে নতুন যুগ। একজন মানুষের মাঝে যদি সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী থাকে তবে একদল অযোগ্য লোককেও তিনি অনেক বড় অর্জনের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। এটা এমন একটা বিষয় যেটির মাধ্যমে সংগঠন ও সমাজ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। নেতৃত্বগুনেই সমাজ ও রাষ্ট্রের নানাবিধ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অথচ বিংশ শতাব্দীর নেতৃত্ব দিচ্ছে কারা? যাদের দ্বারা সমস্যার সমাধান তো দূরেই থাক, তারা নিজেরাই বিভিন্নভাবে সমাজের সমস্যা সৃষ্টি করে রেখেছে। তাদের নেতৃত্বে যারা সমাজের সমাজপতি  তারাও নয়-ছয় করে সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এসব অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে নাগরিকদের ক্ষতি এবং দুর্ভোগের শেষ নেই। অযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে সমাজ ব্যবস্থা পরিচালিত হলে এর চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। এহেন পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই শিক্ষিত, মার্জিত এবং সাংগঠনিক দূরদর্শিতা সম্পূর্ণ নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।

আদর্শঃ আপনি হয়-তো রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। রাজনীতি করছেন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। রাজনৈতিক মানুষগুলো এমনই হয়, নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েও কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করে যায়। যারা এই পথের পথিক তাঁরাই আদর্শবান আদর্শিক নেতা। যে কারণে বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছেন আদর্শ ছাড়া রাজনীতি করা অসম্ভব। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রে আদর্শের উপস্থিতি তেমন একটা নেই বললেই চলে। ছোট থেকে বড়, কেন্দ্র থেকে ইউনিট কমিটির নেতাদের নব্বই ভাগের মধ্যেই আদর্শ নামক মহান শব্দের যোগাযোগ নেই। আদর্শের পথে উৎসাহ দিতে অবশ্যই  সঠিক সিদ্ধান্ত, নিয়মিত সভা-সেমিনার এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর উপহার বা বনাস দেওয়া যেতে পারে। এই সিদ্ধান্ত যুগের সাথে চাহিদা সম্পন্ন সিদ্ধান্ত হবে বলে আমি মনে করি।

নিঃস্বার্থ কর্মীঃ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দেশ শাসন করতে হলে নিঃস্বার্থ কর্মী প্রয়োজন। হাওয়া-কথায় চলে না। সেদিন ছাত্ররা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তাদের বলেছিলাম, আত্মসমালোচনা করো। মনে রেখো, আত্মসমালোচনা করতে না পারলে নিজেকে চিনতে পারবা না। তারপর আত্মসংযম করো, আর আত্মশুদ্ধি করো। তাহলেই দেশের মঙ্গল করতে পারবা।’ এমন আত্মসমালোচক-দেশপ্রেমিক নেতা সবার কাছে শ্রদ্ধার, ভালোবাসার ও আত্মশক্তির প্রতীক হয়ে থাকবেন চিরকাল। যিনি নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জনগণের জন্য যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেই বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনে নিঃস্বার্থ কর্মীর উপাধি অলংকৃত করেছেন। কেননা বাঙালিকে অধিকার সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা অপরিসীম। হাজার বছর ধরে শোষিত বাঙালিকে তিনি শুধু স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নই দেখাননি; সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করেছেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে বঙ্গবন্ধুকে বারবার নির্যাতিত হতে হয়েছে, কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু এরপরও তিনি মনোবল হারাননি; বরং প্রতিবারই আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাংগঠনিক দক্ষতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতা বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রই উপহার দেয়নি; অপ্রতিরোধ্য সোনার বাংলা গড়ে তোলার পথও দেখিয়েছে। যে দেশের জন্য তিনি ছাত্রজীবন থেকে দিয়ে গেছেন সেই তাঁকেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা তাকে হত্যার মাধ্যমে হত্যা করতে চেয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শকে, পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিল মৌলবাদ আর স্বৈরাচারকে। কিন্তু জাতির পিতা তার কর্মের মাধ্যমেই কোটি বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। হাজার চেষ্টা করেও তা মুছে ফেলা যাবে না। কিন্তু বর্তমানকালে নিঃস্বার্থ কর্মীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে বহুগুণ। নিঃস্বার্থ কর্মী ছাড়া সংগঠন টিকিয়ে রাখা বা শক্তিশালী করা অসম্ভব। শীর্ষ নেতৃত্ব তার কর্মীর প্রতি দায়িত্ববান, যত্নশীল এবং সহনশীল আচরণ করলেই নিঃস্বার্থ কর্মী বৃদ্ধি পাবে।

সংগঠনঃ সংগঠনের সমৃদ্ধির জন্য যে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে হলে নেতৃত্বকে দূরদর্শী হতে হয়। সে নেতাই দূরদর্শী যিনি ভবিষ্যৎকে পরিষ্কার দেখতে পান, বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ফলাফল অর্জনে লক্ষ্য স্থির করতে পারেন। যেমন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সুস্পষ্ট স্বাধীনতা দেখতে পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নামক সংগঠনের লক্ষ্য (ভিশন) এবং উদ্দেশ্য (মিশন) স্পষ্ট ধারণা ছিলো বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো। লক্ষ্য বা ভিশন হচ্ছে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বক্তব্য যা একটি সংগঠন মধ্যবর্তী বা দীর্ঘমেয়াদে অর্জন করতে চায়। আর উদ্দেশ্য বা মিশন হচ্ছে লক্ষ্য পূরণে সংগঠনটি মধ্যবর্তী মেয়াদে বা দীর্ঘমেয়াদে কী কী কাজ সম্পাদন করবে। সহজ কথায় ভিশন হচ্ছে স্বপ্ন দেখা আর মিশন হচ্ছে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়তার সঙ্গে কিছু কাজ সম্পাদন করা। এ স্বপ্নটা কিন্তু কোনো ব্যক্তির বা বহিঃপ্রেরণাকারীর স্বপ্ন নয়; এ স্বপ্ন দেখতে হবে সংগঠনের সবাই মিলে, ফলে তার বাস্তবায়নও হবে সবার অংশীদারিত্বে। কাজেই একটি সংগঠনের ভিশন ও মিশন ঠিক করতে সব সদস্যর অংশগ্রহণ জরুরি। কিন্তু বর্তমান সময়ে সংগঠনের সভাপতি এবং সম্পাদক যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই সবাইকে মেনে চলতে হয়; অন্যান্য সদস্যদের মতামতের কোন প্রয়োজন বা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

একটি সংগঠনে নানান পেশার মানুষ থাকতে পারে এবং তাদের মনে নানান রকমের প্রশ্ন থাকতে পারে। প্রশ্ন জাগে না তো স্বপ্নও জাগে না, স্বপ্ন নাই তো আপনি একটি নাবিকহীন বা বৈঠাহীন নৌকা। আপনার লক্ষ্য নাই তো আপনার গন্তব্যও নাই। ফলে সংগঠন গড়ে তোলার মূলেই রয়েছে সবার অংশীদারিত্বে ভিশন ও মিশন স্থির করা। সবার অংশগ্রহণে যখন সংগঠনের ভিশন ও মিশন তৈরি করা হয় তখন সেটি পূরণে সব একযোগে কাজ করে যেহেতু সবাই স্বপ্নপূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। এক্ষেত্রে সংগঠনের সকল সদস্যরা মিলে কর্মপদ্ধতি তৈরী করা জরুরী। আমরা জেনো সভাপতি আর সম্পাদক মুখি হয়ে না পড়ি, সবার মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারলেই সংগঠন শক্তিশালী হবে। আমাদের উচিৎ ব্যক্তির চেয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা। তবে আধুনিক রাজনীতিতে এটি হচ্ছে না বললেই চলে। এসব অনিয়মকে নিয়মে পরিবর্তন করা এখন সকলের দাবি।

চলতি সময়ে লোভ লালসার যে রাজনীতি চলছে সেটাকে আমরা সাংগঠনিক রাজনীতি বলতে পারি না। সমাজের সমস্যা খুঁজে বের করে সঠিক নির্ণয়ের মাধ্যমে নিঃস্বার্থভাবে সমাধান করার নামই রাজনীতি এবং এটাই প্রতিষ্ঠিত রাজনীতি বিজ্ঞান। সকল রাজনৈতিক কর্মী ও সংগঠনের এই পথেই হাটা উচিৎ, এতেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল বিন্যাস হবে। নিয়ম-নীতির বাইরে যারাই রাজনীতি করবেন তারা সংগঠনের প্রতি দায়িত্ববান নয় বলেই এমনটা করতে পারেন আর যারা সংগঠনের জন্য নিবেদিত তাঁরা কখনোই নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তাও করবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শ অধ্যায়ন করলে আপনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশ ও জনগণকে সেবা দিতে পারবেন অফুরন্ত। যেমনটি মহান নেতা বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন সমগ্র বাঙ্গালী জাতির জন্য। যেটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ন অক্ষরে মুর্দিত থাকবে-

“যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান

ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখকঃ বোরহান হাওলাদার( জসিম)

চেয়ারম্যান  জাতীয় বঙ্গ লীগ