সাংবাদিক”এই পেশাগত পরিচয়টিই এখন হতাশার
- আপডেট টাইম : ০২:৪১:১২ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১১ আগস্ট ২০২১
- / ৩৮১ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক।।
“সাংবাদিক”-
এই পেশাগত পরিচয়টিই এখন আমার জন্য সবচেয়ে বড় হতাশার কারন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে, গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মোহাম্মদ মশিউর রহমানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও ,গাজীপুর অংশের রাজউক পূর্বাচলের মুল অধিবাসী ক্যাটাগরিতে প্লট বরাদ্দের অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ এবং গাজীপুর জেলার যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত তালিকা বাতিলের জন্য, মহামান্য হাইকোর্টে রিটের পিটিশন, সবকিছু মিলিয়ে এক মাফিয়া প্রতারক চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার
অত:পরঃ
আমার বিরুদ্ধে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নামে বাছ-বিচারহীনভাবে ব্যক্তি চরিত্র হনন করে, অত্যন্ত অসংবেদনশীল ভাষায় দেশের অনলাইন পোর্টাল ও কিছু সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ দেখে হতাশ হয়েছি ।
প্রায় বছর দুই আগে, সাংবাদিকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করেছিলাম, শিক্ষনীয় বিষয় ঃ–
সংবাদে সাংবাদিকতার শুরুতে সংবাদ সম্পাদক প্রশিক্ষক, বজলুর রহমান আমাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন,একজন পেশাদার সাংবািদকের জন্য জরুরী বিষয় হচ্ছে দু’টি।
একটি হচ্ছে , ’সংবেদনশীলতা’
এবং অন্যটি হচ্ছে ’সচেতনতা’।
এ দু’টি গুন না থাকলে কারও পক্ষে পেশাদার সাংবাদিক হওয়া সম্ভব নয়।
————————————
হ্যাঁ তিনি শিখিয়েছিলেন, একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বেশী সচেতন থাকা জরুরী কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে খবর প্রকাশে। যথাযথ অনুসন্ধান, তথ্য-প্রমাণ এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য ছাড়া কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করা যাবে না। এমনকি কেউ সংবাদ সম্মেলন করে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও সেটি সঠিক কি’না তার অনুসন্ধান করতে হবে, অন্ততপক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য নিতেই হবে শিখিয়েছিলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শুরুটা করতে হবে প্রাথমিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার খোঁজের মধ্য দিয়ে।
এমনকি কোন তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসলেও এই তদন্ত প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ ছিল এবং উদ্দেশ্যমূলক ছিল কি’না সেটা আগে নিশ্চিত হতে হবে। আরও শিখিয়েছিলেন, একজন সাংবাদিককে ’সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার শক্তি অর্জন করতে হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে সাদা কে সাদা বলা সহজ, কিন্তু কালো কে কালো সহজে বলা যাবে না। সেটি সত্যিই কালো কি’না সেটা অবশ্যই যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে। কারন একবার ভুল করে কালো বলার মধ্য দিয়ে কারও গায়ে কালিমা লেপে দিলে সেই দাগ এবং দায় মোছা যায় না।
আজ হতাশটা এই কারনেই যে, সাংবাকিতায় এই সাধারন রীতি এবং নীতি ভীষণভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। সাংবাদিকতার নামে অবলীলায় যা কিছুই লিখে দেওয়া হচ্ছে। অজ্ঞাত কিংবা বায়বীয় সূত্রের বরাত দিয়ে কোন ধরনের অনুসন্ধান ছাড়াই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যা খুশী তাই লেখা হচ্ছে। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্যটুকুও নেওয়া হচ্ছে না। অফিসে বসে এক-দুইবার ফোন করে কিংবা না করেই বলা হচ্ছে, ’তার সঙ্গে যো্গাযোগ করে পাওয়া যায়নি’। এসব রিপোর্টের ভাষা পড়লেও যে কোন সচেতন, শিক্ষিত মানুষের এখনকার সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা সম্পর্কে খুব খারাপ ধারনা হয়ে যায়। এমনকি এক সংবাদ মাধ্যমে আর এক সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদকের নামে খবর ছাপা হচ্ছে বায়বীয় সূত্র দিয়ে, অত্যন্ত রুচিহীন ভাষায়। এটা কোন আন্ডারগ্রাউন্ড কিংবা নাম-পরিচয়হীন সম্পাদকের সংবাদ মাধ্যমে হলে বুঝতাম। কিন্তু এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে, যে সংবাদমাধ্যমগুলোর সম্পাদকরা আমাদের শ্রদ্ধেয় জন, পেশাগত মুরুব্বি কিংবা নেতা।হতাশাটা এ কারনেই। পেশাগত আঙিনায় মুরুব্বি বলে মেনে চলার মত, সম্মান করার মত, অনুসরণ করার মত, নির্ভর করার মত দায়িত্বশীল চরিত্রের অনুপস্থিতি তীব্র হয়ে উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে আদর্শ পেশাগত অবস্থানের ক্ষেত্রে ’সাংবাদিকতা’ যেমন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তেমনি পেশাগত মর্যাদা নিয়ে যারা সাংবাদিকতা করতে চান, তাদের সামনেও পরিস্থিতিটা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন হয়ে উঠছে।এর নিট ফলাফল হতে পারে, সত্যিকারের শিক্ষিত, আত্ম মর্যাদা সম্পন্নরা আগামীতে এ পেশায় আসতে ভীষণভাবে কুন্ঠিত হবেন। এটাও আশংকা রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে ’সাংবাদিকতা’ মর্যাদা সম্পন্ন পেশাগত অবস্থান নিয়ে থাকবে না, তৃতীয় শ্রেণীর একটা চাকরি হিসেবে বিবেচিত হবে মাত্র। তীব্র হতাশার জায়গাটা এখানেই।
লেখক।।হান্নান মোল্লা