তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা, কবিতা মহাকাব্য রচনায় পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পিএইচডি করে তার লেখা বইয়ের উপর
- আপডেট টাইম : ০৭:৪৪:০৭ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ৪ আগস্ট ২০২১
- / ২৮৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
শেখ সিরাজুল ইসলাম।।
আপনাদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে জ্ঞান কি, তাহলে আপনারা এটার কি সংজ্ঞা দেবেন? তবে এটা নিশ্চিত যে, বেশিরভাগ লোকই বইয়ের শিক্ষাকেই জ্ঞান বলে অভিহিত করবেন। কিন্তু জ্ঞান বইয়ের শিক্ষার চেয়েও অনেক বেশি। জ্ঞান মানুষের ভিতরেই অন্তর্নিহিত থাকে। বই এবং স্কুলগুলি হল এটি প্রকাশের একটি মাধ্যম মাত্র। আপনি বইয়ের পৃষ্ঠাগুলি ছেড়ে উপরে উঠে দেখুন,
তাহলে আপনি এক বিস্মৃত সমুদ্রের মতো জ্ঞান পাবেন।
আজ আমরা আপনাদেরকে যে ব্যক্তির গল্প বলতে যাচ্ছি, সে নিজেও একজন সত্য জ্ঞানের সংজ্ঞা। তিনি স্কুলশিক্ষা অর্জন করতে পারেননি। তবে যখন তিনি একটি কলমের মাধ্যমে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা জ্ঞান প্রকাশ করলেন, তখন লোকেরা তার এই প্রতিভা দেখে অবাক হয়ে উঠলো। 2016 সালে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে,
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে দেশের অসামান্য প্রতিভাদের সম্মান করেছিলেন। তখন সেই পুরস্কারের তালিকায় 66 বছর বয়সী ওড়িশার কবি হলধর নাগও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি তার প্রতিভা দিয়ে বিশ্বকে বলেছিলেন যে, জ্ঞান কেবল বইতে ছাপা হয় না, জন্ম থেকেই তা ব্যক্তির মধ্যেই অন্তর্নিহিত থাকে। তার কাছ থেকেই জ্ঞানের নতুন সংজ্ঞার উদ্ভব ঘটেছিল। ওড়িশায় বসবাসরত কবি হলধর নাগের জীবনের গল্প খুবই অনুপ্রেরণামূলক।
তিনি কৌসলী ভাষার কবি ছিলেন এবং তিনি এখনও পর্যন্ত 20 টি মহাকাব্যসহ অনেকগুলি কবিতাও লিখেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি যা যা লিখেছেন তার প্রতিটি অক্ষর তিনি মনে রেখেছিলেন। সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি হলধর রচিত একটি সংকলন ‘হলধর গ্রন্থাবলী-2’ পাঠক্রমের অংশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে, এটি তার একটি বড় অর্জন। তার প্রতিভা কোনো বইয়ের উপর নির্ভরশীল নয়, এটা তার জন্মগত। তিনি এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি তৃতীয় শ্রেণীতেই পড়াশোনা ছেড়েদেন। তবে বর্তমানে পাঁচ গবেষক তার ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। হলধর যখন 10 বছরের ছিলেন তখন তার বাবা মারা যায়। তার বাবার মৃত্যুর পর পুরো পরিবারের দায়িত্বভার এসে পড়ে হলধরের উপর। এই কারণেই তৃতীয় শ্রেণীর পরে তাকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। এরপরে তিনি অল্প বয়সেই স্থানীয় মিষ্টির দোকানে কাজ শুরু করেন।
তার 2 বছর পরে, তার গ্রামের একজন ভদ্রলোক তাকে হাইস্কুলে নিয়ে যান, সেখানে তিনি হাইস্কুলের রান্নার কাজ শুরু করেছিলেন। এভাবে পুরো 16 বছর বিদ্যালয়ে রান্নার কাজ চালিয়ে গেলেন হলধর। এরপরে, হলধরের সাথে এক ব্যাংকারের দেখা হয়। তিনি তার কাছ থেকে 1000 টাকা ঋণ নেন এবং একটি ছোট্ট দোকান খোলেন। সেখানে তিনি বাচ্চাদের স্কুলের আইটেম এবং খাবারের জিনিস রাখতেন।
তারপরই হলধর নাগ তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভার সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। 1990 সালে তিনি তার প্রথম কবিতা রচনা করেছিলেন। যার নাম ছিল, ‘ধোডো বারগাচ’। তিনি এই কবিতাটি স্থানীয় একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছিলেন এবং পরে আরও চারটি কবিতা পাঠিয়েছিলেন। তাঁর পাঠানো সমস্ত কবিতাই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। লোকেরা কবি হালধারের কবিতা খুব পছন্দও করেছিল এবং প্রত্যেকেই তার প্রশংসা করেছিল।
যা তার উৎসাহকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। হলধর ওড়িশা রাজ্যে লোককবি রত্ন নামে পরিচিত। তার কবিতার থিমগুলি প্রকৃতি, সমাজ, পুরান এবং ধর্ম সম্পর্কিত। তার কবিতা মানুষকে সচেতন করে এবং সমাজে ছড়িয়ে পড়া কুফলকে নির্মূল করে একটি সভ্য সমাজ গঠন করতে চায়। প্রতিদিন কবি হলধর 3-4 টি অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং এতে তাঁর কবিতা আবৃতি করে মানুষকে আনন্দিত করেন। হলধর খুবই সরল জীবনযাপন করত।
এমনকি তিনি এখনও পর্যন্ত কোনো চপ্পল পরেননা। তাকে সনাক্ত করার জন্য কেবল একটা ধুতিই যথেষ্ট। তিনি নিজেই তার মধ্যে অন্তর্নিহিত প্রতিভা আবিষ্কার করেছিলেন এবং এটিকে একটি অমূল্য ধন হিসেবে খোদাই করেছিলেন, যা মানুষকে জীবনের বাস্তবতা এবং সত্য জীবনের পথ দেখায়। আমরা সকলেই পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত কবি হলধর নাগের প্রশংসা করি। যার কাছ থেকে আজকের তরুণ প্রজন্ম শেখে যে, প্রতিভা কখনো কোনও অভাব বা বন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ হয় না।।