ঢাকা ০৭:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের সম্ভাবনা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চামড়া শিল্পের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে সারাদেশে ব্যক্তিগতভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছি’ গ্রেটা থুনবার্গের জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ আটকের কারণ কী, যা বলছে ইসরাইল ঢাকা রাজধানী খিলগাঁও, ঈদুল আযহারের তৃতীয় দিনে ডিপুর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে প্রেরণামূলক দেখা সাক্ষাৎ। কাউন্সিলর পতপ্রার্থী বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলস, গাড়িতে আগুন বিক্ষোভ চলাকালে গাড়িতে আগুন ২ মেয়েকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যার চেষ্টা নির্বাচনে ভিন্ন কোনো দেশের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়: জামায়াত আমির এইবারে ঈদুল আযহারঃকুরবানির পশু চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত আশুলিয়ার জিরাবো বাজারে কাপড়ের দোকানে আগুন ফিরতি যাত্রায় সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের

নওগাঁ জেলার সকল উপজেলায় ঈদকে সামনে রেখে ক্লান্তিতে মুখরিত কামার শিল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা:
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুলাই ২০২১
  • / ৩৪৯ ১৫০.০০০ বার পাঠক

নওগাঁ জেলার সকল উপজেলায় ঈদকে সামনে রেখে ক্লান্তিতে মুখরিত কামার শিল্প

-নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প আজ নানা সংকটে থাকলেও টিকে আছে সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে।

 

প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরদের মজুরী বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টিল সামগ্রী আমদানিসহ চরম আর্থিক সংকট ও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে আত্রাই উপজেলার

 

কামার শিল্প বর্তমানে অনেকটা সংকটময় সময় পার করছেন।কিন্তু পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের কামাররা দেশী প্রযুক্তির দা, কুড়াল, বটি, খুন্তা ও কাটারী বানাতে বেশ উৎসব মুখর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

 

হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই গ্রামের লোকজন গরু, মহিষ, ছাগল জবাই ও মাংস তৈরির কাজের জন্য কামারীদের কাছে প্রয়োজনীয় ধারালো দেশী তৈরি চাকু, বটি, কাটারি ও ছুরি তৈরির আগাম অর্ডার দেওয়া শুরু করায় কামার পল্লীগুলোতে টুংটুং শব্দে এখন মুখরিত।

 

আধুনিকতার উৎকর্ষ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে নানাবিধ সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের গ্রাম-বাংলার মানুষের প্রিয় শিল্পটি। এক সময় আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক কর্মকার পরিবার থাকলেও তাদের তৈরি পণ্যসামগ্রী প্রযুক্তির ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকতে না পারাই বেশকিছু পরিবার তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে পরিবারের অভাব-অনাটন ও চাহিদার তাগিদে লাভজনক অন্য পেশায় চলে গেছে।

 

বর্তমানে উপজেলার মির্জাপুর-ভবানীপুর, বজ্রপুর, বান্ধাইখাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩০টি পরিবারের কর্মকাররা তাদের পৈত্রিক পেশা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে হলেও দুমুঠো ভাতের আশায় তারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যতটুকু লাভ হোক না কেন কোন রকম দিন চললেই তারা বেজাই খুশি অন্য পেশায় যেতে তারা নারাজ। আহসানগঞ্জ হাট, নওদুলী হাট, ভবানীপুর-মির্জাপুর হাট, শাহাগোলা স্টেশন বাজার, বজ্রপুর হাট, বান্দাইখাড়া হাট, কুশাতলা হাট, কাশিয়াবাড়ি হাট, আত্রাই সদরসহ প্রতিটি হাট-বাজারে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কামার কারিগররা সারা বছরের তুলনায় বর্তমানে রাতদিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এখানকার কামারদের নিপুণ হাতে তৈরি বটি, ছুরি, কাটারি, দা, বেকি, কুঠার, খুন্তা ও লাঙ্গলের ফালসহ বিভিন্ন ধরণের যাবতীয় প্রয়োজনীয় লৌহজাত দ্রব্য তৈরি করেন।

 

আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কার্তিক কর্মকার ও সূর্য কর্মকার জানান, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা আমার পেশা, বাপ-দাদার পৈত্রিক সূত্রে আমি এই পেশায় জড়িত। একটি মাঝারি ধরণের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ৩শ’ ৫০টাকা থেকে ৬শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। সাড়া দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে আদি এই পেশা আমি ধরে রেখেছি। তবে সাড়া বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে আমাদের কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সাড়া বছর এই রকম কাজ থাকলে ভালই হত।

 

জতিষ চন্দ্র কর্মকার জানান, আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ওই সূত্রে ধরে আমার জীবনেরও শেষ মুহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। সাড়া দিন চাকু, বটি তৈরি করে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে বাঁচি। কেন না এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভাল পেশায় যাব এই রকম আর্থিক সংগতি আমার নেই। তবে সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের আত্রাইয়ের কামারদেরকে সুদ মুক্ত ঋণ দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুরে দাঁড়াবে।

 

বান্দাইখাড়ার শ্রী সঞ্জয় কামার বলেন-আমি প্রায় এই পেশায় ২০ বছর ধরে আছি। আমি আমার মামার কাছ থেকে কাজ শিখেছি। তবে আমরা ছেলের এই পেশায় নিয়ে আসার ইচ্ছে নেই । কারণ এখানে পরিশ্রমের তুলনায় আয় অনেক কম।

 

তিনি আরও বলেন, ঈদের সিজনে ভালো ইনকাম হয়। ঈদের ১৩-১৪ দিন আগে থেকে ঈদ পর্যন্ত দৈনিক ১ হাজার থেকে ১২০০ শত টাকা আয় করা যায়। অন্য সময়ে খেয়েপরে কোন রকমে বেঁচে থাকি।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নওগাঁ জেলার সকল উপজেলায় ঈদকে সামনে রেখে ক্লান্তিতে মুখরিত কামার শিল্প

আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুলাই ২০২১

নওগাঁ জেলার সকল উপজেলায় ঈদকে সামনে রেখে ক্লান্তিতে মুখরিত কামার শিল্প

-নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প আজ নানা সংকটে থাকলেও টিকে আছে সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে।

 

প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরদের মজুরী বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টিল সামগ্রী আমদানিসহ চরম আর্থিক সংকট ও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে আত্রাই উপজেলার

 

কামার শিল্প বর্তমানে অনেকটা সংকটময় সময় পার করছেন।কিন্তু পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের কামাররা দেশী প্রযুক্তির দা, কুড়াল, বটি, খুন্তা ও কাটারী বানাতে বেশ উৎসব মুখর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

 

হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই গ্রামের লোকজন গরু, মহিষ, ছাগল জবাই ও মাংস তৈরির কাজের জন্য কামারীদের কাছে প্রয়োজনীয় ধারালো দেশী তৈরি চাকু, বটি, কাটারি ও ছুরি তৈরির আগাম অর্ডার দেওয়া শুরু করায় কামার পল্লীগুলোতে টুংটুং শব্দে এখন মুখরিত।

 

আধুনিকতার উৎকর্ষ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে নানাবিধ সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের গ্রাম-বাংলার মানুষের প্রিয় শিল্পটি। এক সময় আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক কর্মকার পরিবার থাকলেও তাদের তৈরি পণ্যসামগ্রী প্রযুক্তির ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকতে না পারাই বেশকিছু পরিবার তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে পরিবারের অভাব-অনাটন ও চাহিদার তাগিদে লাভজনক অন্য পেশায় চলে গেছে।

 

বর্তমানে উপজেলার মির্জাপুর-ভবানীপুর, বজ্রপুর, বান্ধাইখাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩০টি পরিবারের কর্মকাররা তাদের পৈত্রিক পেশা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে হলেও দুমুঠো ভাতের আশায় তারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যতটুকু লাভ হোক না কেন কোন রকম দিন চললেই তারা বেজাই খুশি অন্য পেশায় যেতে তারা নারাজ। আহসানগঞ্জ হাট, নওদুলী হাট, ভবানীপুর-মির্জাপুর হাট, শাহাগোলা স্টেশন বাজার, বজ্রপুর হাট, বান্দাইখাড়া হাট, কুশাতলা হাট, কাশিয়াবাড়ি হাট, আত্রাই সদরসহ প্রতিটি হাট-বাজারে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কামার কারিগররা সারা বছরের তুলনায় বর্তমানে রাতদিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এখানকার কামারদের নিপুণ হাতে তৈরি বটি, ছুরি, কাটারি, দা, বেকি, কুঠার, খুন্তা ও লাঙ্গলের ফালসহ বিভিন্ন ধরণের যাবতীয় প্রয়োজনীয় লৌহজাত দ্রব্য তৈরি করেন।

 

আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কার্তিক কর্মকার ও সূর্য কর্মকার জানান, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা আমার পেশা, বাপ-দাদার পৈত্রিক সূত্রে আমি এই পেশায় জড়িত। একটি মাঝারি ধরণের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ৩শ’ ৫০টাকা থেকে ৬শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। সাড়া দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে আদি এই পেশা আমি ধরে রেখেছি। তবে সাড়া বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে আমাদের কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সাড়া বছর এই রকম কাজ থাকলে ভালই হত।

 

জতিষ চন্দ্র কর্মকার জানান, আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ওই সূত্রে ধরে আমার জীবনেরও শেষ মুহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। সাড়া দিন চাকু, বটি তৈরি করে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে বাঁচি। কেন না এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভাল পেশায় যাব এই রকম আর্থিক সংগতি আমার নেই। তবে সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের আত্রাইয়ের কামারদেরকে সুদ মুক্ত ঋণ দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুরে দাঁড়াবে।

 

বান্দাইখাড়ার শ্রী সঞ্জয় কামার বলেন-আমি প্রায় এই পেশায় ২০ বছর ধরে আছি। আমি আমার মামার কাছ থেকে কাজ শিখেছি। তবে আমরা ছেলের এই পেশায় নিয়ে আসার ইচ্ছে নেই । কারণ এখানে পরিশ্রমের তুলনায় আয় অনেক কম।

 

তিনি আরও বলেন, ঈদের সিজনে ভালো ইনকাম হয়। ঈদের ১৩-১৪ দিন আগে থেকে ঈদ পর্যন্ত দৈনিক ১ হাজার থেকে ১২০০ শত টাকা আয় করা যায়। অন্য সময়ে খেয়েপরে কোন রকমে বেঁচে থাকি।