ঢাকা ০৮:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
সারাদেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একটি মডেল উদ্ভাবন করেছেন কাজী আবেদ হোসেন নিখোঁজ সংবাদ  ঠাকুরগাঁওয়ে নাগরিক প্লাটফর্মের ত্রৈমাসিক সভা ও জেলা কমিটি পুনর্গঠন মানুষের তৈরি মতবাদ আল্লাহর আইনের সাথে চ্যালেঞ্জ করার শামিল – ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগ নেতার দখলের চেষ্টা।এই বিষয়ে সময়ের কন্ঠস্বরে নিউজ প্রকাশের পর এসিল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞা ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সমগ্র বাংলাদেশ) পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখা কমিটির সকলকে সনদ প্রদান ও আলোচনা সভা ২৫২ বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রামে এই প্রথম নারী ডিসি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পদায়ন ফরিদা খানম গাজীপুর জেলা মহানগর কাশিমপুরে স্বাধীন মত প্রকাশের জেরে থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার গন্জেরহাটি গ্রামের সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রনব বনিকের দখলের চেষ্টা নরসিংদীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে আহত সাংবাদিকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

ট্রাকে ট্রলারে আসছে কোরবানির পশু

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৫:৪১:০৮ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১
  • / ২৮৭ ৫০০০.০ বার পাঠক

  • রাজধানীর ১৮ হাট বসবে ১৭ জুলাই থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে আগামী ১৭ জুলাই থেকে রাজধানীতে পশুর হাটের নির্র্দেশনা থাকলেও ইতোমধ্যেই কিছু হাট বসতে শুরু করেছে। ট্রাকে ট্রাকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এবার ঢাকার ২টি সিটি কর্পোরশনে মোট ১৮টি গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয়ে পশুর হাট চলবে ঈদের দিন ২১ জুলাই সকাল পর্যন্ত। গবাদি পশু ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মূলত ঈদের তিন দিন আগে হাটগুলো পুরোপুরি জমে উঠবে। করোনা সংক্রমণরোধে অনলাইনে ও ডিজিটাল পশুর হাট এরই মধ্যে জমে উঠেছে। অনলাইন ও ডিজিটাল হাটের আয়োজকরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে দুই লাখের বেশি পশু অনলাইন হাটের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে। কোরবানির ঈদে জবাই হওয়া পশুর বর্জ্য অপসারণে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ঈদের প্রথম দিনে উৎপন্ন বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অপসারণে এবারও লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া কোরবানির চামড়া কিনতে প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যানারিগুলো। পোস্তার চামড়ার আড়তদার ব্যবসায়ীরা তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য বা অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী যানবাহন না থামানোর জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ।

জানা গেছে, কোরবানি সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যাপারীরা শত শত ট্রাকভর্তি করে ও ট্রলারে গরু নিয়ে ঢাকার পথে রয়েছেন। ঢাকার ১৮টি হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন গরুর ব্যাপারীরা। ভাল দামের প্রত্যাশা করছেন গরুর ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে কঠোর লকডাউন শিথিল করে হাটগুলো পুরোদমে চালু করার সুযোগ দেয়ায় নগরবাসী কোরবানি দেয়ার ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কেউ একা এবং কেউ কেউ শেয়ারিং করে গরু কোরবানি করবেন। এজন্য আপনজনদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা। এর পাশাপাশি করোনা থেকে নিরাপদে থাকতে নগরবাসীর একটি বড় অংশ ডিজিটাল হাট থেকে পশু কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন জমে উঠবে কোরবানির পশুর হাট।

বুধবার দুপুরে গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ব্যবসায়ী গরু ছাগল নিয়ে বসে আছেন। তবে আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছেন না। ওই হাটে খালেক মিয়া নামের এক পশু ব্যবসায়ী বলেন, এবার আমি ১৫টি গরু নিয়ে এখানে এসেছি মঙ্গলবার রাতে। এবার একটু আগেভাগেই এসেছি। যদি দামে মিলে যায়, তাহলে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে বাড়ি চলে যাবো। গরুর দাম জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি যে গরু নিয়ে এসেছি সেগুলোর দাম ১ লাখ ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এত দাম দিয়ে গরু কেনার মতো ক্রেতা এখনও হাটে আসেনি। কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন জব্বার হোসেন। তিনি বলেন, আমি ৮টি গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে একটি গরু আকারে অনেক বড়। অনেকেই সেটা দেখতে আসছেন। তবে হাটে এসে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, হাটে এখনও বেশি গরু না আসায় বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকছেন।

গাবতলীতে গরু কিনতে আসা মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, হাট এখনও পুরোপুরি জমেনি। করোনার মধ্যেও এসেছি, কারণ কোরবানি তো দিতেই হবে। তাই হাট পুরোপুরি জমে ওঠার আগেই যদি সম্ভব হয়, তাহলে গরু কিনে ফেলব। কারণ শেষদিকে মানুষ অনেক বেশি হবে। তখন করোনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে। এখানে এসে দেখি বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম চাইছেন। এখনও হাটে বেশি গরু আসেনি। গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন জানান, গাবতলীতে বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই গরু পাওয়া যায়। তবে ঈদকে ঘিরে চলে ভিন্ন রকম আয়োজন। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, ক্রেতা ততই বাড়বে।

গাবতলীর পাশাপাশি ঢাকার অস্থায়ী হাটগুলোতেও গরু আসতে শুরু করেছে। ঢাকার গোলাপবাগ-ধলপুর, শাজাহানপুর ও আফতাবনগরসহ অন্য হাটগুলোতে গরু আসা শুরু হয়েছে। ইজারাদাররা বাঁশ খুঁটি দিয়ে গরু বাধার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। এছাড়া হাসিল আদায়ে হাটগুলোতে সামিয়ানা টানিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ২ জুলাই থেকে জেলাভিত্তিক এ্যাপ, ফেসবুক পাতা ও বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমে পশু বিক্রি শুরুর উদ্যোগ নেয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। শুরুতে কোভিড-১৯ এর ব্যাপকতার কারণে কোরবানির হাট ভার্চুয়ালি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকাতে হাট বসার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসির জানিয়েছেন, সারুলিয়ায় ১টি স্থায়ী ও ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আরও ১০টি অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দক্ষিণ সিটির অস্থায়ী হাটগুলো হলো হাজারীবাগ এলাকার ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তাগোলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আফতাবনগরের (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গা। অন্যদিকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের যে ৯টি এলাকায় অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে, সেগুলো হলো- বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদ নগর হাউজিং (আবাসিক) প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) অস্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ৩০০ ফুট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল লিমিটেড ও যমুনা হাউজিং কোম্পানি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন খালি জায়গায় পশুর হাট বসানো হবে।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন কয়েকটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাটে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবান রাখতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। হাটে প্রবেশকারীকে গøাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে প্রবেশ করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। এছাড়া হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক গেট করতে হবে। নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ-বের হতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা যাতে হাটে প্রবেশ করতে না পারেন, সেই বিষয়টি ইজারাদারদের নিশ্চিত করতে হবে। এসব শর্ত না মানলে ইজারা বাতিলও হতে পারে।

পশু খামার মালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি শাহ ইমরান এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানির পশু অয়োাজন করে হাটে গিয়ে কেনার সংস্কৃতি বাংলাদেশে রয়েেেছ। তবে কোভিডের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই চর্চা থেকে বাইরে এসে মানুষ অনলাইন থেকে গরু কিনছে। গতবারের তুলনায় এ বছর অন্তত পাঁচ গুণ বেশি পশু এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

আইজিপির নির্দেশ ॥ কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য বা অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী যানবাহন না থামানোর জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। বুধবার বিকেলে ঈদ-উল-আজহাকে কেন্দ্র করে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। তিনি সডক ও নৌপথে পশুবাহী ট্রাক বা লঞ্চে নির্দিষ্ট হাটের নাম উল্লেখ করে ব্যানার টানানো এবং এক হাটের পশুবাহী গাড়ি অন্য হাটে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হাট কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানান। মহামারী করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানোরও অনুরোধ জানান আইজিপি। এছাড়াও তিনি করোনাকালীন সরকারী বিধিনিষেধ শিথিলকালে আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে মহাসডক ও সড়কে হাইওয়ে জেলা পুলিশ এবং নৌপথে নৌ পুলিশকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ট্রাকে ট্রলারে আসছে কোরবানির পশু

আপডেট টাইম : ০৫:৪১:০৮ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১
  • রাজধানীর ১৮ হাট বসবে ১৭ জুলাই থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে আগামী ১৭ জুলাই থেকে রাজধানীতে পশুর হাটের নির্র্দেশনা থাকলেও ইতোমধ্যেই কিছু হাট বসতে শুরু করেছে। ট্রাকে ট্রাকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এবার ঢাকার ২টি সিটি কর্পোরশনে মোট ১৮টি গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয়ে পশুর হাট চলবে ঈদের দিন ২১ জুলাই সকাল পর্যন্ত। গবাদি পশু ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মূলত ঈদের তিন দিন আগে হাটগুলো পুরোপুরি জমে উঠবে। করোনা সংক্রমণরোধে অনলাইনে ও ডিজিটাল পশুর হাট এরই মধ্যে জমে উঠেছে। অনলাইন ও ডিজিটাল হাটের আয়োজকরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে দুই লাখের বেশি পশু অনলাইন হাটের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে। কোরবানির ঈদে জবাই হওয়া পশুর বর্জ্য অপসারণে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ঈদের প্রথম দিনে উৎপন্ন বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অপসারণে এবারও লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া কোরবানির চামড়া কিনতে প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যানারিগুলো। পোস্তার চামড়ার আড়তদার ব্যবসায়ীরা তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য বা অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী যানবাহন না থামানোর জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ।

জানা গেছে, কোরবানি সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যাপারীরা শত শত ট্রাকভর্তি করে ও ট্রলারে গরু নিয়ে ঢাকার পথে রয়েছেন। ঢাকার ১৮টি হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন গরুর ব্যাপারীরা। ভাল দামের প্রত্যাশা করছেন গরুর ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে কঠোর লকডাউন শিথিল করে হাটগুলো পুরোদমে চালু করার সুযোগ দেয়ায় নগরবাসী কোরবানি দেয়ার ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কেউ একা এবং কেউ কেউ শেয়ারিং করে গরু কোরবানি করবেন। এজন্য আপনজনদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা। এর পাশাপাশি করোনা থেকে নিরাপদে থাকতে নগরবাসীর একটি বড় অংশ ডিজিটাল হাট থেকে পশু কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন জমে উঠবে কোরবানির পশুর হাট।

বুধবার দুপুরে গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ব্যবসায়ী গরু ছাগল নিয়ে বসে আছেন। তবে আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছেন না। ওই হাটে খালেক মিয়া নামের এক পশু ব্যবসায়ী বলেন, এবার আমি ১৫টি গরু নিয়ে এখানে এসেছি মঙ্গলবার রাতে। এবার একটু আগেভাগেই এসেছি। যদি দামে মিলে যায়, তাহলে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে বাড়ি চলে যাবো। গরুর দাম জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি যে গরু নিয়ে এসেছি সেগুলোর দাম ১ লাখ ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এত দাম দিয়ে গরু কেনার মতো ক্রেতা এখনও হাটে আসেনি। কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন জব্বার হোসেন। তিনি বলেন, আমি ৮টি গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে একটি গরু আকারে অনেক বড়। অনেকেই সেটা দেখতে আসছেন। তবে হাটে এসে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, হাটে এখনও বেশি গরু না আসায় বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকছেন।

গাবতলীতে গরু কিনতে আসা মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, হাট এখনও পুরোপুরি জমেনি। করোনার মধ্যেও এসেছি, কারণ কোরবানি তো দিতেই হবে। তাই হাট পুরোপুরি জমে ওঠার আগেই যদি সম্ভব হয়, তাহলে গরু কিনে ফেলব। কারণ শেষদিকে মানুষ অনেক বেশি হবে। তখন করোনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে। এখানে এসে দেখি বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম চাইছেন। এখনও হাটে বেশি গরু আসেনি। গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন জানান, গাবতলীতে বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই গরু পাওয়া যায়। তবে ঈদকে ঘিরে চলে ভিন্ন রকম আয়োজন। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, ক্রেতা ততই বাড়বে।

গাবতলীর পাশাপাশি ঢাকার অস্থায়ী হাটগুলোতেও গরু আসতে শুরু করেছে। ঢাকার গোলাপবাগ-ধলপুর, শাজাহানপুর ও আফতাবনগরসহ অন্য হাটগুলোতে গরু আসা শুরু হয়েছে। ইজারাদাররা বাঁশ খুঁটি দিয়ে গরু বাধার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। এছাড়া হাসিল আদায়ে হাটগুলোতে সামিয়ানা টানিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ২ জুলাই থেকে জেলাভিত্তিক এ্যাপ, ফেসবুক পাতা ও বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমে পশু বিক্রি শুরুর উদ্যোগ নেয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। শুরুতে কোভিড-১৯ এর ব্যাপকতার কারণে কোরবানির হাট ভার্চুয়ালি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকাতে হাট বসার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসির জানিয়েছেন, সারুলিয়ায় ১টি স্থায়ী ও ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আরও ১০টি অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দক্ষিণ সিটির অস্থায়ী হাটগুলো হলো হাজারীবাগ এলাকার ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তাগোলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আফতাবনগরের (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গা। অন্যদিকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের যে ৯টি এলাকায় অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে, সেগুলো হলো- বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদ নগর হাউজিং (আবাসিক) প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) অস্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ৩০০ ফুট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল লিমিটেড ও যমুনা হাউজিং কোম্পানি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন খালি জায়গায় পশুর হাট বসানো হবে।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন কয়েকটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাটে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবান রাখতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। হাটে প্রবেশকারীকে গøাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে প্রবেশ করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। এছাড়া হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক গেট করতে হবে। নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ-বের হতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা যাতে হাটে প্রবেশ করতে না পারেন, সেই বিষয়টি ইজারাদারদের নিশ্চিত করতে হবে। এসব শর্ত না মানলে ইজারা বাতিলও হতে পারে।

পশু খামার মালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি শাহ ইমরান এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানির পশু অয়োাজন করে হাটে গিয়ে কেনার সংস্কৃতি বাংলাদেশে রয়েেেছ। তবে কোভিডের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই চর্চা থেকে বাইরে এসে মানুষ অনলাইন থেকে গরু কিনছে। গতবারের তুলনায় এ বছর অন্তত পাঁচ গুণ বেশি পশু এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

আইজিপির নির্দেশ ॥ কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য বা অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী যানবাহন না থামানোর জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। বুধবার বিকেলে ঈদ-উল-আজহাকে কেন্দ্র করে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। তিনি সডক ও নৌপথে পশুবাহী ট্রাক বা লঞ্চে নির্দিষ্ট হাটের নাম উল্লেখ করে ব্যানার টানানো এবং এক হাটের পশুবাহী গাড়ি অন্য হাটে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হাট কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানান। মহামারী করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানোরও অনুরোধ জানান আইজিপি। এছাড়াও তিনি করোনাকালীন সরকারী বিধিনিষেধ শিথিলকালে আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে মহাসডক ও সড়কে হাইওয়ে জেলা পুলিশ এবং নৌপথে নৌ পুলিশকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।