ছাগলের খামার করে কোটিপতি রাছেল ঢালী
- আপডেট টাইম : ০৯:৪৩:২৩ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১
- / ৪৪৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
রায়পুর, লক্ষ্মীপুর রিপোর্ট ॥
বিশ হাজার টাকায় কেনা একটি মাত্র ছাগল দিয়ে খামারী রাছেল ঢালী আজ কোটি টাকার মালিক। ১২ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন নিজের এ শখের খামার। শখ পূরণ হয়ে এটি এখন বাণিজ্যি পর্যায়ে এসে পৌঁচেছে। একটি থেকে শুরু হয়ে আজ তিনি ৭৫টি গরু-ছাগলের মালিক। রাছেল ডেইরী ফার্মটি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী গ্রামের সিআইপি বেড়িবাধের পাশে অবস্থিত।
রাছেল ঢালী জানান, তিনি ওই এলাকার ঢালী বাড়ির আব্দুল খালেক ঢালী ও পেয়ারা বেগম দম্পত্তির ২য় সন্তান। ছোট বেলা থেকেই তিনি ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। বাবার কাছ থেকে ১০/২০ করে টাকা করে জমিয়ে ২০ হাজায় টাকায় একটি ছাগল কিনি। ওই ছাগল থেকে ৩টি বাচ্চা হয়। বাচ্ছা বিক্রি করি প্রায় এক লাখ টাকা। সেখান থেকে আরো কিছু জমানো দিয়ে ২ লাখ টাকা দিয়ে একটি শংকর জাতের গাভী ও দুটি ছাগল কেনা হয়। সেই থেকে গরু ও ছাগল পালনের যাত্রা শুরু। ১২ বছরে আগের শখ থেকে নেশা। নেশাকে জয় করে বর্তমানে খামারের মূল্য কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। রয়েছে ৫০টি ছাগল ও ২৫টি গরু। খামারের নাম দিয়েছি ‘রাছেল ডেইরি ফার্ম। কিন্তু কোথাও কোনো সাইনবোর্ড এখনো লাগানো হয়নি। গরু পালন, দুধ বিক্রি, গোবর, বায়োগ্যাস প্লান্ট, কেঁচো দিয়ে জৈবসার প্রস্তুত করেই চলছে খামারের কার্যক্রম।
সরেজমিন ডেইরি ফার্মে দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ জমির উপরে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধের সাথে খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। মনোরোম পরিবেশে সারি সারি বাঁধা রয়েছে বকনা গরু ও ছাগল। প্রতিদিন ১০০ লিটার দুধ দেয় হয় এখানে। দুধের রয়েছে নির্দিষ্ট ক্রেতাও। গাভীর বাছুরগুলোকে যতেœ রাখা হয়েছে যেন কোনো রোগবালাই না হয়। ফার্মে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ছাগল দেখা গেছে। নিজ বাড়িতে তিনি দেশীয় জাতের ব্লাক ব্যাঙ্গল ছাগল, মোরগ-মুরগি, কবুতর পালনও শুরু করেছেন। আরো বড় পরিসরে খামার বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাছেল ।
গরু ও ছাগলের সফল খামারি রাছেল ঢালী বলেন, ইচ্ছে ছিল ব্যাংকার হবো। কিন্তু মেডিকেল লাইনে পড়তে গিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। এখন খামারের পরিধি অনেক বেড়েছে। খামারে গর্ভবতী গরুর সংখ্যাই বেশি। ১৫টি গাভী থেকে ১শ লিটার দুধ বিক্রি করা হয় ১৫ হাজার টাকা। খামারের বাছুরই হলো লাভের অংশ। বছর শেষে ৪০টি বাচ্চা হয় সাধারণত। বাছুর থেকে আয় হয় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে সর্বসাকুল্য তার দেড় কোটি টাকার গরু ও ছাগল রয়েছে। খামারে বোয়ার, তোতাপুরি, হারিয়ানা, বিটল, শিরহি ও যমুনাপারি নামের জাতের ছাগল রয়েছে। আমার খামারে পিতা-মাতা, স্ত্রী ও ভাই সহযোগিতা করছেন। কাজ করছেন ৫ জন কর্মচারি। ২০১০ সালে ফিজিয়ান জাতের একটি গাভী থেকেই প্রজনন সম্প্রসারণ শুরু করি। বর্তমানে খামারে ২টি ষাঁড়, ১৫টি গাভি ও ১০টি বাছুর সহ ২৫টি গরু রয়েছে। এখানে একই জাতের গরু, অন্য কোনো জাত নেই। বর্তমানে দুধ দিচ্ছে ১৫টি গাভী। সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার ছাগল-গরু রয়েছে ঢালীর খামারে।
রায়পুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, রাছেল ঢাকায় একটি প্যাথলজিতে চাকুরির পাশাপাশি দু’দিন বাড়ীতে থেকে গরু ও ছাগলের খামার করা অসাধারণ। আমরা মুগ্ধ। প্রায় প্রতিদিনই তার খামারের খোঁজ নেয়া হয়। গরু ও ছাগলগুলোকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। তার দেখায় অনেক যুবকও হাসপাতালে এসে পরামর্শ নিয়েছেন। সরকারের কাছ থেকে রাছেলকে সহযোগিতার জন্য আমরাও চেষ্টা করবো।