ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
বরিশালে দুই মাস পর খুলে দেওয়া হলো খলিলের মাংসের দোকান সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে চোরাইকৃত মিশুকের যন্ত্রাংশ উদ্ধার,তিন গাড়ি চোর গ্রেফতার ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে ইবি ছাত্রলীগের বিক্ষোভ-সমাবেশ রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন জুতার দোকানের কর্মচারী রাস্তাতে ধরে মাদক মামলায় ফাসালেন পুলিশ অভিযোগ করেন ফরিদ এই মাসে ঘূর্ণিঝড়ের ইঙ্গিত আবহাওয়া অফিসের রাজধানীর যেসব এলাকায় বসবে কুরবানির হাট এমপিদের চেয়ে এগিয়ে চেয়ারম্যানরা অবৈধ সম্পদ বেশি অপকর্ম ঢাকতে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক পুলিশের হাতে তুলে ধরা হল ছাতা গুলোকজ, তোয়ালে জামালপুরে নিরাপদ বিষমুক্ত ঝিঙ্গেঁ চাষ বাড়ছে

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের ৪ পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

  • সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৩:১০:০২ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
  • ২২৩ ০.০০০ বার পাঠক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্বণ নিঃসরণ কমানো, জলবায়ুর ক্ষতি প্রশমন ও পুনর্বাসনে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির দিকে বেশি মনোযোগী হওয়াসহ চারটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ বিশ্ব নেতাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডো বাইডেন আয়োজিত জলবায়ু বিষয়ক দুই দিনব্যাপী ‘লিডারস সামিট’-এর উদ্বোধনী সেশনে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এসব পরামর্শ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জন বিশ্ব নেতাকে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রেরিত ভাষণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে তাৎক্ষণিক ও উচ্চবিলাসী এ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও প্রশমন ব্যবস্থার দিকে অধিক মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও এবং ভাইস- প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস উদ্বোধন করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্বের ৩৯ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং ইউরোপীয় প্রেসিডেন্টকে দুইদিনের এ ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ‘রেইজিং আওয়ার ক্লাইমেট এম্বিশন’ শীর্ষক অধিবেশন-১ এ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এক দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য নাগালের মধ্যে রাখার তাগিদ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে ‘সিওপি’-এর দায়িত্বশীল সদস্য রাষ্ট্র ও সিভিএফ এর চেয়ার হিসেবে আরও কিছু পরামর্শ দিতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিশ্ব নেতাদের কাছে দ্বিতীয় দফা পরামর্শ তুলে ধরে বলেন, বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল নিশ্চিত করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদানের মাধ্যমে এই তহবিলের ৫০ শতাংশ অভিযোজন ও ৫০ শতাংশ প্রশমনের জন্য সমানভাবে কাজে লাগাতে হবে। এই তহবিলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর ক্ষয়-ক্ষতি পূরণে বিশেষ দৃষ্টি দেবে।

তৃতীয় পরামর্শ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উদ্ভাবন এবং জলবায়ু অর্থায়নে (কনসেসনাল ক্লাইমেট ফাইন্যান্সিং) বড় অর্থনীতির দেশ, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সেক্টরগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন, প্রধান অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে। চতুর্থ পরামর্শ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবুজ অর্থনীতি এবং কার্বন প্রশমন প্রযুক্তিগুলোর উপর দৃষ্টি দিতে হবে। এ লক্ষ্যে দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির বিনিময় করতে হবে।

জলবায়ু ইস্যুগুলো সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বৈশ্বিক সঙ্কট শুধুমাত্র সবার সম্মিলিত দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমেই মোকাবেলা করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম- সিভিএফ এবং ভি২০ (ভালনারেবল টুয়েন্টি) এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ সমুন্নত রাখা।

সম্মেলন আয়োজনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার আগ্রহকে বাংলাদেশ প্রশংসা করে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, গ্লোবাল সেন্টার অন এ্যাডাপটেশন-এর দক্ষিণ আঞ্চলিক অফিস বাংলাদেশে। বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টেকসইভাবে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি প্রচার করছে।

সম্পদের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অভিযোজন এবং প্রশমনে বিশ্বে বাংলাদেশের সফলতার কথা সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে। যা আমাদের জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এসব অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবেলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করি।

এছাড়াও সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এক দশমিক এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীল বাংলাদেশে আশ্রয় এবং এর ফলে পরিবেশের ক্ষতির কথাও বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা আমাদের প্রতিবেশকে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন-এসডিসি বৃদ্ধিতে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন সহনীয় টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা বিদ্যমান জ্বালানী, শিল্প ও পরিবহণ খাতের পাশাপাশি নতুন খাত অন্তর্ভূক্ত করেছি। এভাবে আমরা কার্বন হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়াও ২০২১ সাল নাগাদ উচ্চাভিলাষী এনডিসি পেশের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছে। আমরা দেশব্যাপী ৩০ মিলিয়ন গাছের চারা রোপনের পরিকল্পনা করেছি এবং কম-কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপ্যারিটি প্ল্যান; প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে এ শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়ালী যোগ দেন। জলবায়ু সম্পর্কিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরি ঢাকায় গত ৯ এপ্রিল শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন এবং প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে অংশ নিতে তাঁর সম্মতির কথা জানান।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভার্চুয়ালী জাতিসংঘের মহাসচিব এন্থোনিও গুতেরেসে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমীর পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জার্মান কাউন্সিলর এঞ্জেলা মর্কেল, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জেই-ইন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপি এরদোগান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিদি সুগা, অস্ট্রেলিয়ার প্রাইম মিনিস্টার স্কট মরিসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসন,

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জে ব্লিনকেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরিসহ বিশ্বের অন্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে তাঁদের বক্তব্যে উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

বরিশালে দুই মাস পর খুলে দেওয়া হলো খলিলের মাংসের দোকান

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের ৪ পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

আপডেট টাইম : ০৩:১০:০২ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্বণ নিঃসরণ কমানো, জলবায়ুর ক্ষতি প্রশমন ও পুনর্বাসনে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির দিকে বেশি মনোযোগী হওয়াসহ চারটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ বিশ্ব নেতাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডো বাইডেন আয়োজিত জলবায়ু বিষয়ক দুই দিনব্যাপী ‘লিডারস সামিট’-এর উদ্বোধনী সেশনে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এসব পরামর্শ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জন বিশ্ব নেতাকে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রেরিত ভাষণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে তাৎক্ষণিক ও উচ্চবিলাসী এ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও প্রশমন ব্যবস্থার দিকে অধিক মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও এবং ভাইস- প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস উদ্বোধন করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্বের ৩৯ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং ইউরোপীয় প্রেসিডেন্টকে দুইদিনের এ ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ‘রেইজিং আওয়ার ক্লাইমেট এম্বিশন’ শীর্ষক অধিবেশন-১ এ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এক দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য নাগালের মধ্যে রাখার তাগিদ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে ‘সিওপি’-এর দায়িত্বশীল সদস্য রাষ্ট্র ও সিভিএফ এর চেয়ার হিসেবে আরও কিছু পরামর্শ দিতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিশ্ব নেতাদের কাছে দ্বিতীয় দফা পরামর্শ তুলে ধরে বলেন, বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল নিশ্চিত করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদানের মাধ্যমে এই তহবিলের ৫০ শতাংশ অভিযোজন ও ৫০ শতাংশ প্রশমনের জন্য সমানভাবে কাজে লাগাতে হবে। এই তহবিলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর ক্ষয়-ক্ষতি পূরণে বিশেষ দৃষ্টি দেবে।

তৃতীয় পরামর্শ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উদ্ভাবন এবং জলবায়ু অর্থায়নে (কনসেসনাল ক্লাইমেট ফাইন্যান্সিং) বড় অর্থনীতির দেশ, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সেক্টরগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন, প্রধান অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে। চতুর্থ পরামর্শ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবুজ অর্থনীতি এবং কার্বন প্রশমন প্রযুক্তিগুলোর উপর দৃষ্টি দিতে হবে। এ লক্ষ্যে দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির বিনিময় করতে হবে।

জলবায়ু ইস্যুগুলো সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বৈশ্বিক সঙ্কট শুধুমাত্র সবার সম্মিলিত দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমেই মোকাবেলা করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম- সিভিএফ এবং ভি২০ (ভালনারেবল টুয়েন্টি) এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ সমুন্নত রাখা।

সম্মেলন আয়োজনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার আগ্রহকে বাংলাদেশ প্রশংসা করে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, গ্লোবাল সেন্টার অন এ্যাডাপটেশন-এর দক্ষিণ আঞ্চলিক অফিস বাংলাদেশে। বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টেকসইভাবে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি প্রচার করছে।

সম্পদের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অভিযোজন এবং প্রশমনে বিশ্বে বাংলাদেশের সফলতার কথা সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে। যা আমাদের জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এসব অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবেলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করি।

এছাড়াও সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এক দশমিক এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীল বাংলাদেশে আশ্রয় এবং এর ফলে পরিবেশের ক্ষতির কথাও বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা আমাদের প্রতিবেশকে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন-এসডিসি বৃদ্ধিতে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন সহনীয় টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা বিদ্যমান জ্বালানী, শিল্প ও পরিবহণ খাতের পাশাপাশি নতুন খাত অন্তর্ভূক্ত করেছি। এভাবে আমরা কার্বন হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়াও ২০২১ সাল নাগাদ উচ্চাভিলাষী এনডিসি পেশের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছে। আমরা দেশব্যাপী ৩০ মিলিয়ন গাছের চারা রোপনের পরিকল্পনা করেছি এবং কম-কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপ্যারিটি প্ল্যান; প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে এ শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়ালী যোগ দেন। জলবায়ু সম্পর্কিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরি ঢাকায় গত ৯ এপ্রিল শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন এবং প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে অংশ নিতে তাঁর সম্মতির কথা জানান।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভার্চুয়ালী জাতিসংঘের মহাসচিব এন্থোনিও গুতেরেসে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমীর পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জার্মান কাউন্সিলর এঞ্জেলা মর্কেল, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জেই-ইন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপি এরদোগান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিদি সুগা, অস্ট্রেলিয়ার প্রাইম মিনিস্টার স্কট মরিসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসন,

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জে ব্লিনকেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরিসহ বিশ্বের অন্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে তাঁদের বক্তব্যে উপস্থাপনের কথা রয়েছে।