মহাদেবপুরে সংখ্যালঘু পরিবার কে একঘরে করলো ইউপি মেম্বার
- আপডেট টাইম : ১১:৪৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪
- / ৮৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
নওগাঁর মহাদেবপুরে মিথ্যা অভিযোগে সংখ্যালঘু পরিবারের এক গৃহবধূকে একঘরে করায় ওই গৃহবধূ বাপের বাড়ি পালিয়ে গেলে এবার তার বয়োবৃদ্ধ শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকেও একঘরে করলো এক ইউপি মেম্বর। দীর্ঘ তিন সপ্তাহ ধরে একঘরে করে রাখায় ওই পরিবারটি এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের গাহলি গ্রামের মৃত শ্রীচরণ ডাক্তারের ছেলে শ্রী ভূগোল চন্দ্র বর্ম্মণ অভিযোগ করেন যে, গত ১২ মার্চ দিবাগত রাত ১০টার দিকে হাতুড় ইউপি মেম্বার শ্রী পরিমল চন্দ্র, কথিত মাতব্বর খোরশেদ আলম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল হোসেনসহ কয়েকজন তার বাড়ির সামনের পাকা রাস্তা থেকে পাশর্^বর্তী মির্জাপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম ওরফে সুধীর পাগলার ছেলে রুবেল হোসেন ওরফে আব্দুল কুদ্দুসকে আটক করে নিয়ে আসে। তারা দাবি করে যে আব্দুল কুদ্দুসের সাথে ভূগোল চন্দ্রের পুত্রবধূর অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এই অপবাদ দিয়ে তাদের দুজনকেই মারধর করে। এরপর আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু সে টাকার কোন ভাগ তার পুত্রবধূকে দেয়নি। বরং তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার ও গ্রামের সব লোককে খাওয়ানোর নির্দেশ দেয়। যতদিন খাওয়া না দিবে ততদিন তাকে একঘরে করে রাখারও নির্দেশ দেয়। এসময় তার ছেলে সঞ্জিত কুমার বর্ম্মণ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে তার ছেলে বাড়ি আসলে তাকেও হুমকি দেয়া হয়। ভয়ে তারা তার ছেলের শ^শুড় বাড়ি জেলার পোরশা উপজেলার পলাশবাড়ি গ্রামে পালিয়ে যায়। কিন্তু মাতব্বররা এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়। তারা পালিয়ে যাওয়ায় এবার পরিমল মেম্বার, মাতব্বর প্রেমলাল বর্ম্মণ ও তাদের লোকেরা ভূগোল ও তার স্ত্রী ভক্তি রাণীকে একঘরে করার নির্দেশ দেয়। গত রোববার ওই গ্রামে ভূগোলের মাসি দুফরি রাণী মারা গেলে তার সৎকার কাজে অংশ নিতে গেলে মাতব্বর প্রেমলাল তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। তাদেরকে একঘরে করা হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় মন্দিরেও যেতে নিষেধ করা হয়।
সরেজমিনে ওই গ্রামে গেলে ভূগোল ও তার স্ত্রী ভক্তি রাণীকে তাদের টিনের ছাওয়া মাটির ছোট্ট বাড়ির দাওয়ায় বসে থাকতে দেখা যায়। ভূগোল জানান, তিনি হোমিও ডাক্তারি করে কোন রকমে দিনাতিপাত করেন। গ্রামের লোকদের খাওয়ানোর মত সামর্থ তার নেই। তার পুত্রবধূর সাথে ওই ছেলের কোন সম্পর্ক নেই বলেও তিনি জানান। তার মতে মিথ্যা অভিযোগে ওই ছেলেকে আটকে রেখে বিচার করে মারপিট করে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ায় পরিমল মেম্বারকেই একঘরে করা উচিৎ। তার স্ত্রী ভক্তি রাণী জানান, তাদের সাথে গ্রামের লোকেরা কোন কথাবার্তা বলেন না। কেউ তাদের বাড়িতে আসেন না। তাদেরকেও কারও বাড়িতে যেতে দেন না। তাদের বাড়িতে টিউবওয়েল আছে জন্য কারো বাড়িতে না গিয়েও তারা তাদের নিজের বাড়িতে থাকতে পারছেন। তবে বিনা দোষে তাদেরকে এরকম কষ্ট দেয়া উচিৎ হয়নি।
জানতে চাইলে পরিমল মেম্বার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, অনৈতিক কাজের বিচার করে তাদেরকে একঘরে করা হয়েছে। অনৈতিক কাজের বিচার কিংবা একঘরে করার এখতিয়ার তার আছে কিনা এই প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দিতে পারেননি।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন জানান, এ বিষয়ে মহাদেবপুর দর্পণে সংবাদ প্রকাশিত হলে থানার এসআই জাহিদকে এলাকায় পাঠানো হয়। এসআই জাহিদ জানান, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরআগেও ওই এলাকায় থানা পুলিশ এক শিশু ধর্ষণ মামলার আসামীকে ধরতে গেলে ওই মেম্বার পালিয়ে দেয়। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও ওসি জানান।