বহুমুখী প্রতারকের গল্প দৈনিক হাজিরার কর্মচারী চলেন ওডি গাড়িতে!
- আপডেট টাইম : ১০:০৪:১৪ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪
- / ১৯০ ৫০০০.০ বার পাঠক
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারী তিনি। কাজ থাকলে বেতন; না থাকলে নাই। পোষাকে আসাকে ক্রেতা দুরস্ত সেই লোক চলেন হাল আমলের অত্যাধুনিক ‘ওডি’ ব্রান্ডের গাড়িতে। যা কোটিপতি বাবার ছেলেরাও কল্পনা করতে পারেন না। আছে একাধিক সশস্ত্র বডিগার্ড। বিদেশী এয়ার লাইন্সের বিজনেস ক্লাসে নিয়মিত চলা ফেরা তার। গুলশান, বনানীর অভিজাত সীসা বারে নিয়মিত সীসা সেবন করেন। প্রতি সপ্তাহে তার সঙ্গে দেখা যায় নতুন নতুন বান্ধবী। তার এত টাকার ব্যয়ের উৎস কি? সেই সম্পর্কে গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। মূলত: প্রতারণা জালিয়াতি, অন্যকে ঠকিয়ে অর্থ আদায় এর মাধ্যমেই এসব করেন তিনি। প্রতারণা জালিয়াতির জন্য খ্যাতি পাওয়া এই ব্যক্তির নাম শরীফ আল জাওয়াদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শরীফ আল জাওয়াদ জাল শিক্ষা সনদ দিয়ে এক বিএনপি নেতার প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। চাকরি নেওয়ার সময় নিজেকে আমেরিকার কলারোডার স্কুল অব মাইনসএর ডিগ্রিধারি পরিচয় দেন। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শেষ করার আগেই ইভটিজিং ও সহপাঠিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে জেলে যেতে হয়। পরে আমেরিকান সরকার তাকে স্থায়ী বহিস্কারাদেশ দিয়ে আমেরিকা থেকে বের করে দেয়।
রাহাদ শরীফ নামে রাজধানীর উত্তরার এক বাসিন্দা জাওয়াদের প্রতারণার কাহিনী তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত ৩ মার্চ মিরপুরের বাউনিয়ায় ৫ দশমিক ৯৪ কাঠা জমি বিক্রয় করেন। এই জমির তিন ভাগের এক ভাগের মালিক ছিলেন রাহাদ। জমি কেনা থেকে শুরু বিভিন্ন সময় জাওয়াদ তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়। জমিতে রাহাদের ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকার কথা। কিন্তু কাগজে কলমে থাকে করা হয় তিনের একাংশ। জমির মোট মূল্য আসে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। রাহাদ বলেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে জাওয়াদ আমাকে বুঝায় যে, ভাগে মোট ৮৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা পড়েছে। এরমধ্যে ৪৫ লাখ টাকা পে-অর্ডার দিয়ে বাকি ৪১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা নগদ দিবে বলে দলিলে স্বাক্ষর নেয়। জাওয়াদ নগদে সমুদয় টাকা ক্রেতার কাছ থেকে বুঝে নেয়। জাওয়াদ আমাদের টাকা না দিয়ে রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে কৌশলে চলে যায় এবং ফোনে বলে, ‘‘পে-অর্ডারে একটু সমস্যা আছে, পে-অর্ডারটা ব্যাংকে জমা দিও না এবং তোমার সব টাকা নগদে দিয়ে দিবো।’’ এর পর থেকে জাওয়াদ আমার সঙ্গে প্রতারণা করতে থাকে।
পরে আমি তার দেওয়া পে-অর্ডারটি যাচাই করার জন্য ট্রাস্ট ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে পে-অর্ডারটি ভুয়া। আমি টাকা চাইতে গেলে সে দেই দিচ্ছি বলে তালবাহানা করতে থাকে। এরিমধ্যে গত ৬ মার্চ এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশি এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসের দুবাই চলে গেছে। গত ১০ মার্চ সে পুলিশ হত্যা মামলার পলাতক আসামী আরাভ খানের সঙ্গে বৈঠক করার খবরও আমরা পেয়েছি। জানা গেছে, জাওয়াদের ব্যবহৃত ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-৮২১৩ গাড়িতে ওডি ব্রান্ডের। এই অডি গাড়িটি গুলশানের এক শিল্পপতির কাছ থেকে প্রতারণা করে নিয়ে নেন। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আয় করা অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেন দুবাইতে। সেখানে কুখ্যাত আরাভ খানের পার্টনার তিনি।
তার প্রতারণা এখঅনেই শেষ নয়, নিজের মা বাবা ও শ্বশুরের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেও প্রতারণা করেন তিনি। জাওয়াদের মা একজন নার্স। অথচ তার মায়ের পরিচয় দেন লেফটেনেন্ট কর্নেল ডাক্তার হিসেবে। শ্বশুর আতিক একজন ঠিকাদার ছিলেন। অথচ তার পরিচয় ব্যবহার করেন ডিআইজি আতিক। পরিচয় দিয়ে বেড়ান ডিআইজি আতিকের এমমাত্র মেয়ের জামাতা তিনি। জাওয়াদ নিজেকে গাড়ি ব্যবসায়ী দাবী করেন। তিনি পরিচয় দেন স্বনামধন্য বিজে কারের ৫০ শতাংশ শেয়াহোল্ডার তিনি। যামূলত ভুয়া। বিজে কারের প্রকৃত মালিক সাকুরা ছাবের বলেন, জাওয়াদ কোন কালেই বিজে কারের অংশীদার ছিল না। তার প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু গাড়ি বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে কমিশন নিয়েছে। এছাড়া জাওয়াদ করোনা কালে এক ব্যবসায়ীরা কাছ থেকে মাস্ক তৈরির কারখানা বসানোর কথা বলে দুই কোটি টাকা নেন। পরে ৩০ লাখ টাকার মেশিন এনে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন। জাওয়াদের আছে একাধিক বডিগার্ড। মোটা অংকের বেতনে বডিগার্ডও পোষেন তিনি। অথচ নিজেই চাকরি করেন একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম কর্মচারি হিসেবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ আল জাওয়াদ বলেন, ‘রাহাদ শরীফ সম্পর্কে আমার চাচাতো ভাই। আমি ভালো থাকি সেটা তার সহ্য হয় না। তাই নানা কথা চড়াচ্ছে।’
শরীফ আল জাওয়াদের বিষয়ে অভিযোগ জমা হয়েছে দুর্নীতি কমিশনে (দুদক)। কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা অভিযোগটি যাচাই বাছাই করে দেখছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের উপরিচালক আখতার হোসেন বলেন, অভিযোগ জমা হয়েছে। কমিশন বিষয়টি যাচাই করছে।