আলাস্কা বৈঠকে বসে যুক্তরাষ্ট্র-চীন তুমুল বাগযুদ্ধ
- আপডেট টাইম : ০৬:২৬:০৮ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১৯ মার্চ ২০২১
- / ২৬৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ও চীনের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেশ দুটির কর্মকর্তারা তুমুল বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন।
আলাস্কায় বৃহস্পতিবার তারা একে অপরকে তীব্র তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে বিঁধেছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এদিন চীনা কর্মকর্তারা `যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে চীন আক্রমণে উসকে দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন; আর মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন অন্যকে চমকে দিয়ে নিজের সুবিধা হাসিল করার উদ্দেশ্য নিয়েই আলোচনায় এসেছে।
গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের এ দুই শীর্ষ অর্থনীতির দেশের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে।
আলাস্কার অ্যাংকরেজে উত্তেজনাপূর্ণ এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান; তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন চীনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইয়াং জিয়েচি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
সূচনা বক্তব্যে ব্লিংকেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বৈঠকে শিনজিয়াং, হংকং, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা, আমাদের মিত্রদের সঙ্গে অর্থনৈতিক জবরদস্তিসহ চীনের বিভিন্ন পদক্ষেপে সৃষ্ট উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করবে। তাদের এসব পদক্ষেপের প্রত্যেকটিই বিশ্বকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ।
এর জবাবে ইয়াং যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি ও আর্থিক আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে অন্য দেশগুলোকে দমিয়ে রাখছে বলে অভিযোগ করেন।
“তথাকথিত জাতীয় নিরাপত্তার ধারণার অপব্যবহারের মাধ্যমে তারা স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় বাধা সৃষ্টি করছে এবং কিছু কিছু দেশকে চীন আক্রমণে উসকে দিচ্ছে,” বলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এ পলিটব্যুরো সদস্য।
ইয়াং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকারের অবস্থা খুবই বাজে, দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের কচুকাটা করা হয়।
এর প্রত্যুত্তরে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান বলেন, তারা চীনের সঙ্গে সংঘাত চান না।
“তবে আমরা সবসময় আমাদের জনগণ, মিত্র ও নীতির পক্ষে দাঁড়াবো,” বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে দুই পক্ষের এ কথার লড়াই এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল চীনের বিরুদ্ধে দুই পক্ষের জন্য সূচনা বক্তব্যে দুই মিনিটের বেশি কথা না বলার যে নিয়ম ঠিক হয়েছিল, তা লংঘনের অভিযোগ আনেন।
চীনের প্রতিনিধিদলকে দেখে মনে হচ্ছে তারা নাটুকেপনার মাধ্যমে নিজেদের সুবিধা হাসিলের লক্ষ্য নিয়ে এসেছে,” বলেছেন বাইডেন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এরপরও যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পনা অনুযায়ী আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অতিরঞ্জিত কূটনৈতিক উপস্থাপনা প্রায়ই নিজের দেশের দর্শকদের উদ্দেশ্যে করা হয়।
পরে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেশটির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, তারা নন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাই সূচনা বক্তব্যে দুই মিনিটের বেশি বলে নিয়ম লংঘন করেছেন।
চীনা কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতির উপর ‘ভিত্তিহীন আক্রমণেরও’ অভিযোগ করেন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ইয়াংয়ের একটি ইতিবাচক মন্তব্যও ছাপা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সেখানে চীনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, অতীতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যে গুরুতর সমস্যাগুলো ছিল, তা অব্যাহত থাকা উচিত নয়।
আর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, গঠনমূলক আলোচনা ফের শুরু করতে বেইজিং প্রস্তুত।