ঢাকা ০৪:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৯০ ইলা লালালালা: সবুজ ঘাসের লাল দ্রোহের সুর যার কন্ঠে তরুণ আইনজীবী সাইফুলকে যেভাবে হত্যা করা হয় গাজীপুরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতিত অতিষ্ঠ জনসাধারণ সমাবেশে গিয়ে টাকা না পেয়ে বাড়ি ঘেরাও, ৫ প্রতারক আটক অভিনব সিন্ডিকেট: সয়াবিন তেলের সঙ্গে চাল-ডাল কেনা বাধ্যতামূলক! সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন হাসনাত ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়েও নার্সিং ইনস্টিটিউট ব্যবসা নিলুফার ইয়াসমিনের অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তলব পুলিশ প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন হলেও এসআই মিজানের অসাধু নীতির পরিবর্তন হয়নি

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ মহাম্মদপুরে কাজের ভয়ে স্কুলে যেতে চায়না শিক্ষার্থীরা

মোঃ শফিকুল ইসলাম, মহাম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি :
  • আপডেট টাইম : ১২:২৪:৫৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১০৩ ৫০০০.০ বার পাঠক

মাগুরার মহাম্মদপুর উপজেলা সদরে ঢুষরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

কাজের ভয়ে স্কুলে যেতে চায়না, স্কুলে গেলেই তাদেরকে দিয়ে নানা ধরণের কাজ করানো হয়। গত কয়েক দিন আগে ক্লাস না নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে স্কুলের ছাদ থেকে ইট নিচে নামানো হয়েছে, এতে প্রায় শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। কাজ না করলে তাদেরকে মারধর করা হয়। ২০১৩ সালে রেজিষ্ট্রার স্কুল থেকে সরকারি করণ হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল হান্নান। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থাকায় নিজের ইচ্ছা মত স্কুলে আশা যাওয়া ও কাজকর্ম করে থাকেন বলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ করেন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গেলে, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, এলাকাবাসী ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা নানা অভিযোগ করেন, তারা বলেন, স্কুল চলাকালীন সময়ে
শিক্ষার্থীদের ক্লাস না নিয়ে প্রধান শিক্ষক তাদেরকে দিয়ে স্কুলের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কাজ করিয়ে থাকেন। এতে প্রায় শিক্ষার্থীই অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না।

দেখা যায়, হাজিরা খাতা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীতে ১৬জন শিক্ষার্থী থাকলেও ক্লাসে মাত্র দুইজন ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত। তবে প্রধান শিক্ষক ১১জন ছাত্র-ছাত্রীর কথা বলেন। বাকী ৫জন অন্য স্কুলে চলে
গেছে বলে জানান। কিন্তু চলে যাওয়া ৫জনের উপস্থিতি হাজিরা খাতায় মাঝে মধ্যে দেখানো হয়েছে। এটা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন এটা ভুলবশত হয়েছে। তবে শ্রেণী শিক্ষক এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

৪র্থ শ্রেনির ছাত্রী সামিয়া বলে, গত (১৮ই সেপ্টেম্বর) ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্লাস না করিয়ে আমাদের কে স্কুলের নিচ থেকে অনেকগুলি ইট স্কুলের দোতালায় স্থানান্তর করিয়াছেন, আবার দোতলা থেকে নিচতলায় স্থানান্তর করিয়াছেন। তখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় কষ্ট হচ্ছিল বিধায় সামনের দোকান থেকে একটি বিস্কুট কিনে খেতে থাকি, তখন স্যার বলেন এক হাত দিয়ে বিস্কুট খাও আর এক হাত দিয়ে ইট টানো আমি আদেশ করছি। ৫ম শ্রেনির ছাত্র হাসান ও মুশফিকাসহ অনেকে বলে, হেড স্যার আমাদের দিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন কাজ করান, এতে আমাদের
স্কুলে যেতে মন চায় না।

অভিভাবক মোঃ ওয়ালিদ মোল্লা, মোঃ কোবাদ হোসেন, মোঃ কামাল শেখ ও গ্রামবাসী মোঃ মাজেদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, ঠিকমতো ক্লাস করান না এবং স্কুলে উপস্থিত থাকেন না, তিনি তার ব্যবসা নিয়ে ব্যাস্থ্য থাকেন। ছেলে মেয়েদেরকে অন্যত্র পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছি। কি করবো ছেলেমেয়েরা তো লেখাপড়ার বদলে কাজ করার ভয়ে স্কুলে যেতে নারাজ।

দাতা সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম মিলন বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান ছাত্র-ছাত্রীদেরকে লেখাপড়ায় উৎসাহিত না করে তাদের দিয়ে কাজকর্ম করান এবং নিজেও বভিন্ন রকম স্কুলের দুর্নীতির সাথে জড়িত। গত এক বছর আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অর্থ দূর্ণীতির অভিযোগ করা হয়েছিল প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষকের কারণে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে, তাই প্রধান শিক্ষককে পরিবর্তন কারার দাবী জানাই।

সভাপতি মোহাম্মদ তবিবুর রহমান বলেন, স্কুলের লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এটা আমাদের এলাকার জন্য অসম্মানের। তাই এই শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করে আমাদের স্কুলের সম্মান বাঁচাতে এবং মান সম্মত লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অন্য একজন প্রধান শিক্ষকের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান জানান, আমি কিছু কাজ করিয়েছি ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে। তবে অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা ও বিত্তিহীন এবং আমার বরিুদ্ধে এটা চক্রান্ত বলে আমি মনে করি। চলে যাওয়া ৫ম শ্রেনির শিক্ষার্থীর হাজিরা কেন করা হচ্ছে, জানতে চাইলে এটা ভুলবশত হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানান।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ওয়াহিদুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের দিয়ে পরিস্কার
পরিচ্ছন্ন কাজ করানো যাবে, কিন্তু ভারি কোন কাজ করানো যাবেনা বিষয়টি নিয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষার্থী হাজিরা খুবই কম। সাথে সাথে আমি ক্লাস্টার অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি এবং প্রধান শিক্ষকের সাথেও কথা বলে জানিয়েছি অভিভাবক সমাবেশের
মাধ্যমে সমাধান করে নিতে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ মহাম্মদপুরে কাজের ভয়ে স্কুলে যেতে চায়না শিক্ষার্থীরা

আপডেট টাইম : ১২:২৪:৫৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মাগুরার মহাম্মদপুর উপজেলা সদরে ঢুষরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

কাজের ভয়ে স্কুলে যেতে চায়না, স্কুলে গেলেই তাদেরকে দিয়ে নানা ধরণের কাজ করানো হয়। গত কয়েক দিন আগে ক্লাস না নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে স্কুলের ছাদ থেকে ইট নিচে নামানো হয়েছে, এতে প্রায় শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। কাজ না করলে তাদেরকে মারধর করা হয়। ২০১৩ সালে রেজিষ্ট্রার স্কুল থেকে সরকারি করণ হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল হান্নান। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থাকায় নিজের ইচ্ছা মত স্কুলে আশা যাওয়া ও কাজকর্ম করে থাকেন বলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ করেন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গেলে, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, এলাকাবাসী ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা নানা অভিযোগ করেন, তারা বলেন, স্কুল চলাকালীন সময়ে
শিক্ষার্থীদের ক্লাস না নিয়ে প্রধান শিক্ষক তাদেরকে দিয়ে স্কুলের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কাজ করিয়ে থাকেন। এতে প্রায় শিক্ষার্থীই অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না।

দেখা যায়, হাজিরা খাতা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীতে ১৬জন শিক্ষার্থী থাকলেও ক্লাসে মাত্র দুইজন ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত। তবে প্রধান শিক্ষক ১১জন ছাত্র-ছাত্রীর কথা বলেন। বাকী ৫জন অন্য স্কুলে চলে
গেছে বলে জানান। কিন্তু চলে যাওয়া ৫জনের উপস্থিতি হাজিরা খাতায় মাঝে মধ্যে দেখানো হয়েছে। এটা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন এটা ভুলবশত হয়েছে। তবে শ্রেণী শিক্ষক এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

৪র্থ শ্রেনির ছাত্রী সামিয়া বলে, গত (১৮ই সেপ্টেম্বর) ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্লাস না করিয়ে আমাদের কে স্কুলের নিচ থেকে অনেকগুলি ইট স্কুলের দোতালায় স্থানান্তর করিয়াছেন, আবার দোতলা থেকে নিচতলায় স্থানান্তর করিয়াছেন। তখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় কষ্ট হচ্ছিল বিধায় সামনের দোকান থেকে একটি বিস্কুট কিনে খেতে থাকি, তখন স্যার বলেন এক হাত দিয়ে বিস্কুট খাও আর এক হাত দিয়ে ইট টানো আমি আদেশ করছি। ৫ম শ্রেনির ছাত্র হাসান ও মুশফিকাসহ অনেকে বলে, হেড স্যার আমাদের দিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন কাজ করান, এতে আমাদের
স্কুলে যেতে মন চায় না।

অভিভাবক মোঃ ওয়ালিদ মোল্লা, মোঃ কোবাদ হোসেন, মোঃ কামাল শেখ ও গ্রামবাসী মোঃ মাজেদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, ঠিকমতো ক্লাস করান না এবং স্কুলে উপস্থিত থাকেন না, তিনি তার ব্যবসা নিয়ে ব্যাস্থ্য থাকেন। ছেলে মেয়েদেরকে অন্যত্র পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছি। কি করবো ছেলেমেয়েরা তো লেখাপড়ার বদলে কাজ করার ভয়ে স্কুলে যেতে নারাজ।

দাতা সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম মিলন বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান ছাত্র-ছাত্রীদেরকে লেখাপড়ায় উৎসাহিত না করে তাদের দিয়ে কাজকর্ম করান এবং নিজেও বভিন্ন রকম স্কুলের দুর্নীতির সাথে জড়িত। গত এক বছর আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অর্থ দূর্ণীতির অভিযোগ করা হয়েছিল প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষকের কারণে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে, তাই প্রধান শিক্ষককে পরিবর্তন কারার দাবী জানাই।

সভাপতি মোহাম্মদ তবিবুর রহমান বলেন, স্কুলের লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এটা আমাদের এলাকার জন্য অসম্মানের। তাই এই শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করে আমাদের স্কুলের সম্মান বাঁচাতে এবং মান সম্মত লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অন্য একজন প্রধান শিক্ষকের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান জানান, আমি কিছু কাজ করিয়েছি ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে। তবে অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা ও বিত্তিহীন এবং আমার বরিুদ্ধে এটা চক্রান্ত বলে আমি মনে করি। চলে যাওয়া ৫ম শ্রেনির শিক্ষার্থীর হাজিরা কেন করা হচ্ছে, জানতে চাইলে এটা ভুলবশত হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানান।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ওয়াহিদুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের দিয়ে পরিস্কার
পরিচ্ছন্ন কাজ করানো যাবে, কিন্তু ভারি কোন কাজ করানো যাবেনা বিষয়টি নিয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষার্থী হাজিরা খুবই কম। সাথে সাথে আমি ক্লাস্টার অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি এবং প্রধান শিক্ষকের সাথেও কথা বলে জানিয়েছি অভিভাবক সমাবেশের
মাধ্যমে সমাধান করে নিতে।