ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ইইউ রাষ্ট্রদূতের Logo জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর Logo ডিম-পেঁয়াজ-কাঁচামরিচ আমদানির বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত Logo হাজার হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে ফুলবাড়ীতে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত Logo ফুলবাড়ীতে বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত Logo অজ্ঞাত হ্যাকার বাগেরহাটে সক্রিয়, পরিচিতদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি-থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক আবুল হাসনাত তুহিন পেলেন ট্রাস্টের সম্পাদকীয় দায়িত্ব Logo ঠাকুরগাওয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা Logo সাভারে অবৈধ আইসক্রিম কারখানায় অভিযান, দুইজনের কারাদণ্ড Logo বিএসসি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে ঢাবি শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন

পাথরঘাটায় নদীর তীর কেটে মাটি নিচ্ছে ইটভাটা, হুমকিতে বাঁধ।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনচটকি এলাকায় বিষখালী নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে মাটি নিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটার মালিক। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় প্রায় ৬৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের অনুমোদন নেই। অধিকাংশ ভাটা নদীতীরবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠায় মালিকরা নদীর চর থেকে মাটি কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহার করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, গত এক মাস ধরে কাকচিড়া ও বাইনচটকি এলাকায় আরএসবি ও আল মামুন এন্টারপ্রাইজের চারটি ইটভাটায় ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে। নদী থেকে বেকু দিয়ে মাটি কাটার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, আরএসবি ইটভাটার একটি বার্জে বেড়িবাঁধ থেকে মাত্র ২০০–৩০০ ফুট দূরে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছিল। গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হওয়ায় মাটি কাটা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উসকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ভাটা মালিক কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে।

নদীর তীরে গভীর গর্ত করে মাটি তুলে পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রকল্পের নামে মাছ চাষ দেখিয়ে প্রশাসনকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে ভাটা মালিকরা। তাছাড়া উল্লেখিত ইনভাটার পাশেই রয়েছে (মাঝেরচর) ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নামে একটি বনায়ন যাহাতে রয়েছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও নানান প্রজাতির গাছগাছালি, যদিও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আইনে রয়েছে বনয়ান অথবা বন অঞ্চলের এক কিলোমিটার আওতাধীন কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না ইট ভাটার মালিকগণ এসব আইনের কোন তোয়াক্কা না মেনে দীর্ঘদিন ধরে ইট তৈরি করে আসছিল এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর তীর থেকে কিসলু মিয়া মাটি কেটে নিচ্ছেন। এতে ভাঙন হলে আমরা গরিব মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাব।’
অন্য বাসিন্দা সুজন হাওলাদার জানান, ‘আমাদের এলাকা ভাঙনকবলিত। ভাটা মালিকরা নদীর পাড় কেটে নিলে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে সময় লাগবে না।’

এছাড়া, কবরস্থানের জায়গা দখল করে ইটভাটা তৈরির অভিযোগ উঠেছে কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, নদীর তীরের ১৫–২০টি কবরের ওপরে ইটের স্তুপ ফেলে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতাও মিলেছে।

অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. লিটন বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি নিচ্ছি তা ক্রয়কৃত। এটি সরকারের জমি নয়।’
বরগুনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আরএসবি ইটভাটার মালিক আবদুর রাজ্জাক কিসলু দাবি করেন, ‘যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তা রেকর্ডীয় জমি। দলিল ও খতিয়ান দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’

তবে পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান বলেন, ‘নদীতীর কেটে মাটি নেওয়ায় ভাঙন বাড়ছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে পরিবেশ, মৎস্যসম্পদ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের নীরবতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ ইটভাটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা দ্রুত ইটভাটা উচ্ছেদ ও নদী দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

বরগুনা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক নির্মল কুমার রায় বলেন, ‘নদীর তীর কেটে মাটি নেওয়া হলে তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অভিযান চলছে। কেউ নদীর চর থেকে মাটি কাটায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ইইউ রাষ্ট্রদূতের

পাথরঘাটায় নদীর তীর কেটে মাটি নিচ্ছে ইটভাটা, হুমকিতে বাঁধ।

আপডেট সময় ০৬:০৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনচটকি এলাকায় বিষখালী নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে মাটি নিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটার মালিক। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় প্রায় ৬৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের অনুমোদন নেই। অধিকাংশ ভাটা নদীতীরবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠায় মালিকরা নদীর চর থেকে মাটি কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহার করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, গত এক মাস ধরে কাকচিড়া ও বাইনচটকি এলাকায় আরএসবি ও আল মামুন এন্টারপ্রাইজের চারটি ইটভাটায় ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে। নদী থেকে বেকু দিয়ে মাটি কাটার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, আরএসবি ইটভাটার একটি বার্জে বেড়িবাঁধ থেকে মাত্র ২০০–৩০০ ফুট দূরে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছিল। গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হওয়ায় মাটি কাটা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উসকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ভাটা মালিক কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে।

নদীর তীরে গভীর গর্ত করে মাটি তুলে পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রকল্পের নামে মাছ চাষ দেখিয়ে প্রশাসনকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে ভাটা মালিকরা। তাছাড়া উল্লেখিত ইনভাটার পাশেই রয়েছে (মাঝেরচর) ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নামে একটি বনায়ন যাহাতে রয়েছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও নানান প্রজাতির গাছগাছালি, যদিও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আইনে রয়েছে বনয়ান অথবা বন অঞ্চলের এক কিলোমিটার আওতাধীন কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না ইট ভাটার মালিকগণ এসব আইনের কোন তোয়াক্কা না মেনে দীর্ঘদিন ধরে ইট তৈরি করে আসছিল এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর তীর থেকে কিসলু মিয়া মাটি কেটে নিচ্ছেন। এতে ভাঙন হলে আমরা গরিব মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাব।’
অন্য বাসিন্দা সুজন হাওলাদার জানান, ‘আমাদের এলাকা ভাঙনকবলিত। ভাটা মালিকরা নদীর পাড় কেটে নিলে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে সময় লাগবে না।’

এছাড়া, কবরস্থানের জায়গা দখল করে ইটভাটা তৈরির অভিযোগ উঠেছে কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, নদীর তীরের ১৫–২০টি কবরের ওপরে ইটের স্তুপ ফেলে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতাও মিলেছে।

অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. লিটন বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি নিচ্ছি তা ক্রয়কৃত। এটি সরকারের জমি নয়।’
বরগুনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আরএসবি ইটভাটার মালিক আবদুর রাজ্জাক কিসলু দাবি করেন, ‘যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তা রেকর্ডীয় জমি। দলিল ও খতিয়ান দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’

তবে পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান বলেন, ‘নদীতীর কেটে মাটি নেওয়ায় ভাঙন বাড়ছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে পরিবেশ, মৎস্যসম্পদ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের নীরবতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ ইটভাটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা দ্রুত ইটভাটা উচ্ছেদ ও নদী দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

বরগুনা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক নির্মল কুমার রায় বলেন, ‘নদীর তীর কেটে মাটি নেওয়া হলে তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অভিযান চলছে। কেউ নদীর চর থেকে মাটি কাটায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


প্রিন্ট