সাধারণ বীমার এমডি শাহরিয়ারের আর্শীবাদে রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটে বেপরোয়া ডিজিএম বারেক
- আপডেট টাইম : ০১:১০:১৭ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২
- / ২২১ ৫০০০.০ বার পাঠক
এম.ডি.এন.মাইকেলঃ
রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটকারী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে শাস্তি না দিয়ে বরং তাকে নির্দোষ প্রমাণের পক্ষে লিখিত সুপারিশ করে নিজেই ফেঁসে গেছেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। কর্পোরেশনের ডিজিএম আব্দুল বারেক সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি গ্রহণের জন্য সাবীক চেয়ারম্যান বরাবর এক লিখিত আদেশনামা প্রেরন করে আইডিআরএ। কিন্তু শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা বরং তাকে রক্ষা করতে তার পক্ষেই আইডিআরের কাছে সরাসরি লিখিত সুপারিশ করেন সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুর্নীতিবাজ এই ডিজিএম এর দুর্নীতিকে সরাসরি প্রশ্রয় দিয়ে এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বীমা কর্পোরেশন শিল্পের ইতিহাসে এখন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে শোনা যাচ্ছে, দুর্নীতিবাজ ডিজিএম আব্দুল বারেকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এমডি নিজেই ফেঁসে যাবেন। কারণ এমডি শাহরিয়ার আহসানের হাতের স্পর্শেই ডিজিএম আব্দুল বারেক দপ্তরের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন।আর এসব তথ্য কোনভাবেই যেন সংবাদ কর্মীদের হাতে পৌঁছাতে না পারে সে কারণে তিনি বীমা কর্পোরেশনের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে সংবাদকর্মীদের যোগাযোগে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে রেখেছেন। বীমা কর্পোরেশনের গেইটে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকজন কোন সংবাদকর্মীদের তাদের অনুমোদন ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে দেন না এবং এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান নিজেও কোন সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেন না। তার কাছে লিখিত বক্তব্য পাওয়ার আবেদন করেও দিনের পর দিন অপেক্ষা করে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এমনকি তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিজিএম আব্দুল বারেক ও তার স্ত্রী ডিজিএম শাহানা গনি চাকুরী বিধিমালা বহির্ভূতভাবে বীমা কর্পোরেশনের গৃহ নির্মাণ অগ্রিম ঋণ সেল থেকে ১কোটি ১০ লাখ টাকা তসরুপ করেন। তিনি প্রভাব বিস্তার করে একজন সিনিয়র এজিএম কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে নিজের স্ত্রীর পদোন্নতি বাগিয়ে নেন, দপ্তরের গাড়ি ক্রয়, মেরামত সংক্রান্ত ও লিফট ক্রয়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য করেন, তিনি কেন্দ্রীয় মোটরপুলে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ফুয়েল সরবরাহের ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। সম্প্রতি তিনি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের আউটসোর্সিং এমএলএসএস কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অংকের কমিশনের বিনিময়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছেন।
এমন সব অভিযোগের ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে আব্দুল বারেক ও তার সহযোগী নাজিম উদ্দিন আলমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাবীক কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) মোঃ সফিউদ্দিন স্মারক নং-৫৩.০৩.০০০০.০৭২.৫৬.০২২.২১.০৫, তারিখ-৫ জানুয়ারি ২০২২ মূলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু চিঠি প্রেরণের পর আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান উক্ত বিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শোনা যাচ্ছে আব্দুল বারেক ও নাজিম উদ্দিন আলম মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে উর্ধ্বতন এই কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে নিয়েছে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশে উল্লেখ রয়েছে, ডিজিএম আব্দুল বারেক ও তার স্ত্রী ডিজিএম শাহানা গনি ফ্ল্যাট ক্রয় করার পূর্বে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন থেকে গৃহ নির্মাণ অগ্রীম ঋণ গ্রহণ করেছিলেন এবং সেই ঋণ পরিশোধিত না হওয়ায় পরেও নতুন করে ঋণের আবেদন করেন এবং তা পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদন নিয়ে পূর্বের ঋণের সাথে সমন্বয় করে ১কোটি ১০ লাখ টাকা পুনরায় অগ্রিম ঋণ গ্রহণ করার বিষয়টি বিধিসম্মত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
চাকুরি প্রবিধানমালা-১৯৯৪ এর লংঘন বিধায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ডিজিএম আব্দুল বারেক ও এজিএম নাজিম উদ্দিন আলম সহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে কর্পোরেশনের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
গাড়ি মেরামত সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকা ও সিলেট অঞ্চলে বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করায় তাদের বিরুদ্ধে কর্পোরেশনের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার শাহ মোঃ সানোয়ার আলম তদন্ত কমিটিতে আব্দুল বারেক ও নাজিম উদ্দিন আলমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে যেসব দলিলাদি উপস্থাপন করেন, তাতে তারা সন্দেহাতীতভাবে অপরাধী প্রমাণিত হয়। উক্ত অনিয়মের বিষয়ে ডিজিএম আবদুল বারেক ও তার সহযোগী এজিএম নাজিম উদ্দিন আলমের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেন। অথচ সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলেই নিচ্ছেন না। তবে অপরাধ অপকর্ম যাই হোক সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ অপরাধী আব্দুল বারেকের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়, কারণ আব্দুল বারেকের অপকর্মগুলো আমলে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দুয়েকজন কর্মকর্তা ফেঁসে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছ। আর এই ধাপে এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান পুরোপুরি ফেঁসেও গেছেন। কারণ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে অধীনস্থ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেখানে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, সেখানে তা না করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পক্ষেই লিখিত সুপারিশ করেছেন। এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান ও ডিজিএম আব্দুল বারেক দূর্নীতির ক্ষেত্রে একাত্মায় পরিনত হয়েছে গেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন দুর্নীতি করে ধরা পড়লেও তাদের কোন বিচার হবেনা।