ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধ ভাটায় পুড়ছে ইট, নিরব প্রশাসন
- আপডেট টাইম : ০১:৪৭:০৭ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২২
- / ২২৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি।। জেলা ইটভাটা সমিতির হিসাব অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে মোট ইটভাটা রয়েছে ৯৮টি। বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, যেখানে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর এ কাঠের জোগান দিতে গিয়ে দেদার কাটা হচ্ছে সড়ক ও বনের গাছ।
সরেজমিন দেখা গেছে, সদর উপজেলার গড়েয়া, রুহিয়া, জগন্নাথপুর, আকচা, মোহাম্মদপুর, রহমানপুর, ভুল্লি ও বেগুনবাড়িসহ অন্যান্য উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদিত চিমনি নেই। একই সঙ্গে ফসলি জমিতে গড়ে তোলা বিভিন্ন ইটভাটায় ওই জমিরই মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ইটভাটার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমরা লক্ষ করেছি, জেলা সদরেই প্রায় ৫০টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটা পরিবেশের পাশাপাশি কৃষি জমির ক্ষতি করছে। এ অবস্থায় জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটা মালিকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ও আবাসিক এলাকায়ও ইটভাটা স্থাপন করেছেন। এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফলে ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। তাছাড়া ভাটায় কাঠ সরবরাহের জন্য গড়ে উঠেছে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। তারা রাস্তার পাশের ও বনের গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন, যা জেলার সার্বিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। তাছাড়া ভাটা মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তৈরীকৃত ইটের ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন। ফলে পরিবেশের তো ক্ষতি হচ্ছেই, ইটের দামে ঠকছেন গ্রাহকরাও। দীর্ঘদিন ধরে এ অনিয়ম চললেও প্রশাসন তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আর এ সুযোগে দিন দিন গড়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা।
তারা আরো বলেন, সারা দেশেই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ অভিযান চলমান রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঠাকুরগাঁও। এ জেলায় ইটভাটা মালিকরা কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের দূষণ করে ইট তৈরি ও বিক্রি করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অফিস নেই। ফলে অনেকেই পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে চাইলেও দীর্ঘসূত্রতার কারণে নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় জেলার ইটভাটা মালিকরা শুধু প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে ইট তৈরির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলায় ৯৮টি ইটভাটা থাকলেও পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে সর্বোচ্চ ৪৮টির। যেসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, সেসব ভাটার বিরুদ্ধে তিনি পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে। এ জন্য প্রয়োজনে প্রশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলায় প্রায় ১০০ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে। শিগগিরই এ জেলায়ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।