করোনার থাবা ॥ যে ছবি নাড়া দিয়েছে শেরপুরবাসীকে
- আপডেট টাইম : ০১:৪২:৫২ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২ আগস্ট ২০২১
- / ৩৩৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ শেরপুর ॥‘করোনার ছোবল কত ভয়ানক, কত নিষ্ঠুর, কত নির্মম, নির্দয়। প্রিয় ভাই আবু নাসের আরজু’র চলে যাওয়াটা বিশ্বাস করতে পারছি না। হাস্যোজ্জ্বল, সদালাপী অমায়িক মানুষিকতার প্রিয় ভাইটির বিয়োগ ব্যথা আমাকে এতটাই ব্যাকুল করেছে যে, অন্য কারো পোস্টে ইন্নালিল্লাহ বাক্যটি লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মহা অনুশোচনায় বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হচ্ছে। হায়রে নিয়তি! ওপারে ভালো থাকবেন ভাই, দোয়া করি।’- শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে করোনার ভয়াল থাবায় ২৫ বছর বয়সী প্রাণোচ্ছ্বল শিক্ষিত ও ব্যবসায়ী যুবক আবু নাসের আরজুর অকাল মৃত্যুতে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে কষ্টের এমনই অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন শিক্ষক রাশেদুজ্জামান তৌহিদ। মোহাম্মদ রাজীব আবসার নামে তার এক ভাতিজা মেয়েসহ আরজুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমার জীবনের সন্নিকটে আমাদের ছেড়ে চলে গেছো। না পারছি মনকে বোঝাতে। ওপারে মহান আল্লাহ পাক তোমাকে ভালো রাখুক। সবাই আমার কাকার ছোট্ট মেয়েটার জন্য দোয়া করবেন। আমার ছোট বোনকে যেনো আল্লাহ পাক বাবা হারানোর সুখ বয়ে নিতে পারে, যে মেয়েটা বাবা ছাড়া কিছু বুঝতো না।’
আর রাকিবুল হাসান শিমুল নামে এক ছাত্রলীগ নেতা লিখেছেন, ‘প্রতিটি দিনকে যদি জীবনের শেষ দিন মনে করে চলতে পারতাম তাহলে আর এই মিছে দুনিয়ার মায়ায় পরে কারোর সাথে ঝগড়া, বিবাদ হানাহানিতে লিপ্ত হতাম না। আর কখনো তোমার মুখ থেকে ভাইয়ু ডাক শোনা হবে না। ক্ষমা করে দিও ভাই আমায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মোকাম দান করুক।’ অলিদ আহাম্মেদ নিসাত নামে আরও একজন লিখেছেন, ‘ভাই উপজেলার সামনে আর কোনদিন আপনার মুখ থেকে নিসাত ডাক শুনতে পারমু না। আপনার সম্পর্কে শুধু তারাই জানে, যারা আপনার সাথে চলাফেরা করছে। ওপারে ভালো থাকেন….।’ কেবল তৌহিদ, রাজীব, শিমুল ও নিসাতই নয়, আরজুর বন্ধু-আত্মীয় ও শোভাকাঙ্খীসহ হাজারও ফেসবুক ব্যবহারকারী তার ওই মৃত্যুকে নিয়ে প্রায় একই ধরনের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। শোক প্রকাশের পাশাপাশি আরজুর নানা অঙ্গন আর কর্মকা-ের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন- যা হাজার হাজার পেইজে শেয়ার হয়ে রূপ নিয়েছে ভাইরালে। আর সেই ছবি ও মৃত্যুই অবনতিশীল করোনা পরিস্থিতিতে খোদ শেরপুরবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে, তুলেছে ভাবিয়ে।
ঝিনাইগাতী তামাগাঁও এলাকার অধিবাসী যুবক আরজু সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশার কনিষ্ঠ পুত্র। পড়াশোনা শেষ করে ঝিনাইগাতী সদরে কাপড়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন বছর তিনেক আগে। প্রায় একই সময়ে বিয়ে করেন স্মৃতি পারভীনকে। দাম্পত্য জীবনে আসে ফারিয়া নামে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের সবার প্রিয় ও আদরের ছিলেন আরজু। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও তারুণ্যদীপ্ত আরজু কেবল বন্ধু-বান্ধব নয়, সবার সাথেই চলতেন মিলেমিশে। পারিবারিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি নিজের পরিচিতি ও অবস্থানও গড়ে তুলেছিলেন। এমনই অবস্থায় হঠাৎ কয়েকদিন আগে মা আফরোজা বেগম ও বড়ভাই আরিফুর রহমানসহ করোনায় আক্রান্ত হন আরজুও। এক পর্যায়ে ভর্তি হন স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু ১ আগস্ট বিকেলে হঠাৎ সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন চলমান থাকাবস্থায় ওই হাসপাতালেই মা ও বড়ভাইকে রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আরজু। ভাই আরিফ বিষয়টি জানলেও এখনও জানেন না ও জানানো হয়নি হতভাগিনী মাকে। করোনায় মৃত্যুর খবর জানার পরও রাতে স্থানীয় তামাগাঁও ঈদগাঁ মাঠে নামাজে জানাজায় শরিক হন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক রুবেল ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমসহ হাজারও মানুষ। সেখানে পিতা আমিনুল ইসলাম বাদশার ছেলে হারানোর আবেগে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন উপস্থিত প্রায় সকলেই। আর এ নিয়ে সোমবার পর্যন্ত দু’দিন ধরেই শেরপুর অঞ্চলের মানুষের ব্যবহার হওয়া ফেসবুকে চলছে করোনার ভয়াল থাবায় হারিয়ে যাওয়া তাজা প্রাণ আরজুকে নিয়ে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ২ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত জেলায় করোনায় মোট ৭৪ জনের মৃত্যু হলেও তাদের অধিকাংশই পঞ্চাশোর্ধ এবং ২৫/২৬ বছর বয়সীর মধ্যে আবু নাসের আরজু ও শেরপুর সদরের সোনাবরকান্দা সোহাগসহ ৩/৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।