বালু তোলার ৩৫ ড্রেজারে হুমকির মুখে পাঁচ কিলোমিটার অঞ্চল

- আপডেট টাইম : ০৬:৩৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
- / ৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ধনাগোদা নদীর একাংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছবি:সময়ের কন্ঠ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ধনাগোদা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ষাটনল, কালিপুর থেকে কালির বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অঞ্চল হুমকির মুখে পড়েছে। এর প্রভাবে ওই অঞ্চলের আশপাশে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, বাজার, বসতি বিলীনের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া ষাটনল সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে ধনাগোদা নদীর প্রবেশমুখের চরকালিপুরা ও ষোলআনী এলাকা মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দিচ্ছে। যা মতলবের সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় ষাটনল, কালিপুর, বেলতলীসহ বেশ কিছু অঞ্চলের নদী ভাঙ্গন আরও জোরালো রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরজমিনে এই ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গন ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর মোহনার ষাটনলের কয়টি অঞ্চলে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ষাটনল অঞ্চল দিয়ে মেঘনা নদী থেকে শাখা নদী ধনাগোদা নদীটি মতলব উত্তর ও গজারিয়া উপজেলার মধ্যখান দিয়ে প্রবাহিত। কম প্রশস্ততার এই ধনাগোদা নদীর ষাটনল, কালিপুর, চান্দ্রাকান্দি, বেলতলী, কালির বাজার, নবীপুর, হাপানিয়ার বেশ কয়েকটি স্পটে নদীর ভাঙন দেখা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাঙন কবলিত এই ৫ কিলোমিটার অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ৩০ থেকে ৩৫টি ড্রেজার দিয়ে দিনে রাতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হয়। প্রশাসনিক তৎপরতার কারণে দিনের বেলায় কখনও কখনও বালি উত্তোলন বন্ধ থাকে। তবে রাত নামেই এই নদী চলে যায় সশস্ত্র বালু উত্তোলনকারীদের দখলে। এই প্রভাবশালী বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা এ অঞ্চলের মানুষ এ বিষয়ে ‘টু’ শব্দ করতেও ভয় পায়।
এরই ধারাবাহিকতায় অঞ্চলের অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মতলব উত্তর থানার সামনে গত ২৯ ডিসেম্বর সকালে একটি মানববন্ধন আয়োজন থাকলেও তা অদৃশ্য কারণে স্থগিত করা হয়। পরে দুটি সংগঠন মানববন্ধনের জন্য থানার সামনে হাজির হতেই তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন।
কালিপুর বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জানায়, এই এলাকায় নদী ভাঙনের ফলে বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় বসতি, কালিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালিপুর সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফয়েহ আহম্মেদ মেমোরিয়াল হাসপাতাল বিলীনের শঙ্কায় পড়েছে। এই অঞ্চলের মানুষরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম বলেন, ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল, কালিপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সঙ্গে পাশ্ববর্তী এলাকায় বালু মহলের নামে ইজারা দেওয়া কারণে এলাকাটি হুমকির মুখে পড়েছে।
মেঘনা ধনাগোদা পানি ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী শহীন জানান, ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে দেশের ২য় বৃহৎ ধনাগোদা সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে। ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ঘেষা ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি অঞ্চলে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ি ও ফসলি জমি।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের (পাউবো’র) নির্বাহী প্রকৌশলীর মো. সেলিম শাহেদ বলেন, ধনাগোদা নদীর কালিপুর, খাগুরিয়া, হাপানিয়া, নবীপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিলে আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে নদীর তীর ও সেচ প্রকল্প বাঁধ রক্ষায় ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ জানাবো।
প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ধনাগোদা নদী অঞ্চলে অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে গেল ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৪ মাসের ৪টি অভিযানে ১৭টি ড্রেজার, ১১টি বাল্কহেড, ২টি স্পিডবোট, ২টি ইঞ্জিন চালিত নৌকাসহ ৪০জনকে আটক করা হয়। অভিযানে ধরপাকড়ের এই তথ্য জানান দিচ্ছে ভয়াবহতার চিত্র।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করছি। ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও এর তীর রক্ষায় এই নদীতে অবৈধ বালু কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।