ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কবর দেওয়ার জায়গা নেই গাজায় পাশে নেই ইরান Logo শরণখোলার রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসের ধাক্কায় রাশিদা বেগম (৫০) নামের এক নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে Logo চসিকের নতুন পরিচ্ছন্নতা ছক: চলবে না আর ময়লার নামে লুটপাট Logo জলবায়ু হুমকি, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও মানবসম্পদ রপ্তানিতে টরন্টো-চট্টগ্রাম কৌশলগত সংলাপ: মেয়র ডা. শাহাদাত Logo শরণখোলা-খুলনা রুটে মানসম্মত যানবাহনের দাবিতে যাত্রীদের মানববন্ধন Logo জাতীয় সংস্কারক’ উপাধি পেতে ইচ্ছুক নন ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo সাকিব অন্য গ্রহ থেকে এসেছে’ Logo ধরাছোঁয়ার বাইরে দুর্নীতি ধামাচাপার তিন ‘কারিগর’ এম বদিউজ্জামান (বামে), সৈয়দ ইকবাল মাহমুদ ও মঈনউদ্দীন আবদুল্লা Logo একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার Logo যে কারণে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ৮ কর্মকর্তাঢ়

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ অব্যাহত

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:০৬:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • ৫২ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৪ জুলাই ছিল বৃহস্পতিবার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়, জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা রায়সাহেব মোড়, শেরেবাংলা কৃষির শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-বরিশাল এবং খুলনা-ঢাকা, খুলনা-যশোর, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে এসব সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ট্রেন থামিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এদিন তারা তিন দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা যেন আন্দোলনে না যেতে পারেন, সেজন্য একাধিক হলে তালা দিয়ে পাহারা বসায় সংগঠনটির নেতারা। একই দিন বরিশালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে আন্দোলনরত তিন শিক্ষার্থী আহত হন।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে আলাদা মিছিল নিয়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে সম্মিলিত মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে দুপুর সোয়া ১২টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ‘সংবিধানের মূল কথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৬টার দিকে কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ চত্বর ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউই কোটা চায় না। তাহলে কোন অদৃশ্য শক্তি এই কোটা চায়। নির্বাহী বিভাগ আমাদের আদালতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আদালতের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন নয়। আমরা চাই জনপ্রশাসন বিভাগ এই সমস্যার সমাধান করুক। আগামী শুক্রবার অনলাইনে কোটাবিরোধী প্রচারণা চলবে, শনিবার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হবে এবং রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট।

এদিকে আন্দোলনে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বিজয় একাত্তর হল ও জহুরুল হক হল গেটে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলের শিক্ষার্থীরা যেন কোটা আন্দোলনে যেতে না পারেন সেজন্য সূর্যসেন হলের গেটে তালা লাগানো হয়। জসীমউদ্দীন হলের চারতলায় আটকে রাখা হয় কিছু শিক্ষার্থীকে। হলে কোটা আন্দোলনকারীরা প্রচারণা করতে গেলে তাদের বের করে দেওয়া হয়।

দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে কয়েকশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সদরঘাটগামী সড়কের আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানে ১ ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা রায়সাহেব মোড় অবরোধ করেন। এ সময় গুলিস্তান ও বাবুবাজার থেকে সদরঘাট ও যাত্রাবাড়ীগামী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা আধা ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

দুপুর ১২টায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকসংলগ্ন আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুই রুটে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর দেড়টায় অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল ফের স্বাভাবিক হতে থাকে। এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় হয়ে আগারগাঁও মোড়ে যায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে দুদিকে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি ছেড়ে দিতে দেখা যায়। এর আগে বেলা ১১টায় চবির শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন তারা। আন্দোলনের শুরু থেকেই বৃষ্টি হানা দেয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আবাসিক হল ও মেসের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হন। পরে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্বরোড অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে তারা পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পরে ময়নামতি জাদুঘরসংলগ্ন সড়ক দিয়ে কোটবাড়ী বিশ্বরোডে অবস্থান নেন তারা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে অন্তত পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরাতে ঘটনাস্থলে যান ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম। শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহারে রাজি না হয়ে জানান, দেশব্যাপী চলমান এ আন্দোলন একসঙ্গে প্রত্যাহার হবে। এরপর উপাচার্য ও প্রক্টর চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের এক নেতা মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে চেষ্টা করলে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের চড়-ঘুসি দেয় ববি ছাত্রলীগ নেতা আবুল খায়ের আরাফাত ও আল সামাদ শান্ত। এতে শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম ও আবু ওবায়দাসহ তিনজন আহত হন।

বেলা ১২টায় বিভিন্ন হল থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চে এসে সমবেত হন। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি কেআর মার্কেট হয়ে পুনরায় মুক্তমঞ্চের সামনে দিয়ে এসে শেষ হয় আব্দুল জব্বার মোড়ে। এ সময় ঢাকা থেকে জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসছিল। শিক্ষার্থীরা ট্রেনটি অবরোধ করেন। প্রায় ২ ঘণ্টা (১টা ১০ থেকে ৩টা ১০) ধরে ট্রেনটি আটকে রাখেন তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন (ডেইরি গেট) ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা। এতে সড়কের উভয় লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায় বহাল রাখায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কবর দেওয়ার জায়গা নেই গাজায় পাশে নেই ইরান

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ অব্যাহত

আপডেট সময় ০১:০৬:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৪ জুলাই ছিল বৃহস্পতিবার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়, জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা রায়সাহেব মোড়, শেরেবাংলা কৃষির শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-বরিশাল এবং খুলনা-ঢাকা, খুলনা-যশোর, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে এসব সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ট্রেন থামিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এদিন তারা তিন দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা যেন আন্দোলনে না যেতে পারেন, সেজন্য একাধিক হলে তালা দিয়ে পাহারা বসায় সংগঠনটির নেতারা। একই দিন বরিশালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে আন্দোলনরত তিন শিক্ষার্থী আহত হন।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে আলাদা মিছিল নিয়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে সম্মিলিত মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে দুপুর সোয়া ১২টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ‘সংবিধানের মূল কথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৬টার দিকে কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ চত্বর ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী কেউই কোটা চায় না। তাহলে কোন অদৃশ্য শক্তি এই কোটা চায়। নির্বাহী বিভাগ আমাদের আদালতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আদালতের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন নয়। আমরা চাই জনপ্রশাসন বিভাগ এই সমস্যার সমাধান করুক। আগামী শুক্রবার অনলাইনে কোটাবিরোধী প্রচারণা চলবে, শনিবার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হবে এবং রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট।

এদিকে আন্দোলনে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বিজয় একাত্তর হল ও জহুরুল হক হল গেটে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলের শিক্ষার্থীরা যেন কোটা আন্দোলনে যেতে না পারেন সেজন্য সূর্যসেন হলের গেটে তালা লাগানো হয়। জসীমউদ্দীন হলের চারতলায় আটকে রাখা হয় কিছু শিক্ষার্থীকে। হলে কোটা আন্দোলনকারীরা প্রচারণা করতে গেলে তাদের বের করে দেওয়া হয়।

দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে কয়েকশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সদরঘাটগামী সড়কের আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানে ১ ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা রায়সাহেব মোড় অবরোধ করেন। এ সময় গুলিস্তান ও বাবুবাজার থেকে সদরঘাট ও যাত্রাবাড়ীগামী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা আধা ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

দুপুর ১২টায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকসংলগ্ন আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুই রুটে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর দেড়টায় অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল ফের স্বাভাবিক হতে থাকে। এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় হয়ে আগারগাঁও মোড়ে যায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে দুদিকে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি ছেড়ে দিতে দেখা যায়। এর আগে বেলা ১১টায় চবির শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন তারা। আন্দোলনের শুরু থেকেই বৃষ্টি হানা দেয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আবাসিক হল ও মেসের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হন। পরে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্বরোড অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে তারা পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পরে ময়নামতি জাদুঘরসংলগ্ন সড়ক দিয়ে কোটবাড়ী বিশ্বরোডে অবস্থান নেন তারা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে অন্তত পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরাতে ঘটনাস্থলে যান ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম। শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহারে রাজি না হয়ে জানান, দেশব্যাপী চলমান এ আন্দোলন একসঙ্গে প্রত্যাহার হবে। এরপর উপাচার্য ও প্রক্টর চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের এক নেতা মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে চেষ্টা করলে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের চড়-ঘুসি দেয় ববি ছাত্রলীগ নেতা আবুল খায়ের আরাফাত ও আল সামাদ শান্ত। এতে শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম ও আবু ওবায়দাসহ তিনজন আহত হন।

বেলা ১২টায় বিভিন্ন হল থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চে এসে সমবেত হন। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি কেআর মার্কেট হয়ে পুনরায় মুক্তমঞ্চের সামনে দিয়ে এসে শেষ হয় আব্দুল জব্বার মোড়ে। এ সময় ঢাকা থেকে জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসছিল। শিক্ষার্থীরা ট্রেনটি অবরোধ করেন। প্রায় ২ ঘণ্টা (১টা ১০ থেকে ৩টা ১০) ধরে ট্রেনটি আটকে রাখেন তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন (ডেইরি গেট) ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা। এতে সড়কের উভয় লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের রায় বহাল রাখায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।


প্রিন্ট