ঢাকা ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
পুলিশ প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন হলেও এসআই মিজানের অসাধু নীতির পরিবর্তন হয়নি ঠাকুরগাঁওয়ে নারীদের ভূমি অধিকার ও কৃষি ভূমি সংষ্কার বিষয়ক সমাবেশ কালিয়াকৈরে ধর্ষণের অভিযোগে বাড়ির মালিক গ্রেফতার পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত কঠিন সময়ে কীভাবে পাশে ছিলেন স্ত্রী, জানালেন কোহলি ইতালিতে জি৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনার তালিকায় নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে আরো যা ‘পদক্ষেপ’ নিতে বললেন নূরুল কবির মেগা মানডে’: ৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী অর্থের লোভ দেখিয়ে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ ব্যর্থ চেষ্টা, নেপথ্যে কারা? ইমরান খানের হাজারো সমর্থক গ্রেপ্তার

উচ্চ আদালতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি এক বছর আটকা

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৯:২৯ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১
  • / ২৬১ ৫০০০.০ বার পাঠক

  • নিয়মিত আদালতে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মামলার শুনানি হবে

মিন্টু  হোসেন ॥

করোনার কারণে উচ্চ আদালতে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর শুনানি এক বছর ধরে আটকে আছে। শুধু অতীব গুরুত্বপূর্ণ মামলার ভার্চুয়াল শুনানি হচ্ছে। এদিকে দেশের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার ক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স)সহ গুরুত্ব মামলার শুনানি আটকে আছে। ভার্চুয়ালি নয় করোনার পরিস্থিতি উন্নতি শেষে শারীরিক উপস্থিতিতে নিয়মিত আদালতে এসব মামলার শুনানি হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তালিকা বাতিল সংক্রান্ত আপীলের রিভিউ শুনানির অপেক্ষায়। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেই নিয়মিত আদালতে এ সমস্ত মামলার শুনানি হবে। এর আগে মামলাটির রিভিউ শুনানি শুরু হলে ও করোনার কারণে তা আটকে যায়। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা রিভিউ শুনানির জন্য প্রস্তুত। বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলাগুলো শুনানি স্থগিত রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত আদালত চালু হলেই আমরা এ মামলার রিভিউ শুনানির উদ্যোগ নিব।

এদিকে শুধু রাষ্ট্রীয় ও আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম বা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স প্রয়োগ হবে। এজন্য ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের এক নম্বর নোটস প্রতিস্থাপন করে ২০২০ সালের জুলাই মাসে গেজেট প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতদিন ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের এক নম্বর নোটস-এ বলা ছিল, রাষ্ট্রীয় ও আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের অন্যসব ক্ষেত্রেও এটি পালন করা হবে। সেই নোটসটি প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, এটি শুধু রাষ্ট্রীয় ও আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে পালন করা হবে। ‘সরকারের অন্যসব ক্ষেত্রে’ কথাটি বাদ দেয়া হয়েছে। ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব রেফারেন্স দিয়ে সামারি তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্ট মামলার রিভিউ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, করোনা সময়ে মামলা শুনানি করা অসম্ভব। বিচারপতিদের যেমন অসুবিধা তেমনি আইনজীবীদেরও অসুবিধা। কোন মামলাই এ পরিস্থিতিতে শুনানি করা সম্ভব নয়। সবাইকে এ বিষয়ে ধৈর্য ধরতে হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই নিয়মিত আদালত চালু হবে। সে সময় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্টসহ অন্য মামলাগুলোর ও শুনানির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, করোনার কারণে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি বন্ধ আছে। শুধু ভার্চুয়াল আদালতে এখন বিচার চলছে। পূর্ণাঙ্গ আদালত চালু হলেই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স রিভিউটি শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স কেবিনেট থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে। আপীল বিভাগের রায়ে এ্যাটর্নি জেনারেলের পদটি ১৫ নম্বরে রাখা হয়েছে। এটি সাংবিধানিক পদ। কাজেই আরও আগে আসা উচিত ছিল। এছাড়া ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল গণ রাষ্ট্রের দায়িত্বপূর্ণ কাজ পালন করে থাকে। তাদের বিষয়টি উল্লেখ নেই। কাজেই আমি মনে করি এ বিষয়গুলোও থাকা উচিত। রিভিউ শুনানির সময় এ বিষয়গুলো তুলেধরা হবে। তিনি আরও বলেন, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলমের সময় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের রিভিউ শুনানি শুরু হয়েছিল। এর পর করোনার প্রকোপ দেখা দেয়। করোনার কারণে এ মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি বন্ধ রয়েছে।

এ রায়টি পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে রাষ্ট্রপক্ষ একটি রিভিউ আবেদন করে। এর পর প্রায় চার বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু রিভিউ আবেদনটির নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ কিছু সংশোধন ও পরিমার্জনসহ বহাল রাখে। প্রায় দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১০ নবেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপীল বিভাগ। এর মূল রায়টি লেখেন বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন।

এতে স্বাক্ষর করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। প্রকাশিত রায়ে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, ওইসব দেশের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) বাংলাদেশ থেকে আলাদা।

২০১৬ সালের ১০ নবেম্বর ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তালিকা বাতিল সংক্রান্ত আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আপীল বিভাগরে পূর্ণাঙ্গ রায়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদক্রমে (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) জেলা জজরা সাংবিধানিক পদমর্যাদাসম্পন্ন বিবেচনায় সরকারের সচিবদের সঙ্গে ১৬ নম্বর ক্রমিকের মর্যাদায় অবস্থান করবেন। অর্থাৎ সচিবের মর্যাদা পাবেন জেলা জজগণ। বর্তমানে তারা জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ২৪ ক্রমিকে আছেন। ৬২ পৃষ্ঠার রায়টি সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীল নিষ্পত্তি করে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি এই রায় দিয়েছিল। তার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন আহমেদ চৌধুরী মানিক।

রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধান যেহেতু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, সেহেতু রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদাধিকারীদের গুরুত্ব অনুসারে রাখতে হবে। জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যরা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের ২৪ নম্বর থেকে ১৬ নম্বরে সরকারের সচিবদের সমমর্যাদায় উন্নীত হবেন। অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যদের অবস্থান হবে জেলা জজদের ঠিক পরেই, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের ১৭ নম্বরে। রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম কেবল রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্র বা অন্য কোন কার্যক্রমে যেন এর ব্যবহার হয় না।

১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মোঃ আতাউর রহমান একটি রিট আবেদন করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় জেলা জজদের পদমর্যাদা সচিবদের নিচে দেখানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়ে আটটি নির্দেশনা দেয়। সে অনুসারে নতুন তালিকা তৈরি করতে সরকারকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত তা মঞ্জুর করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপীলের সুযোগ দেয়। নিষ্পত্তির পর ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আপীল বিভাগের ওয়েবসাইটে বলা হয়, সংশোধন, পরিমার্জন ও পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করা হলো। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হওয়ার পর তৎকালীন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়টি মোডিফাই করে আপীল বিভাগের প্রকাশিত রায় দেয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, পূর্ণাঙ্গ রায়ে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে নতুন কয়েকটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্তদের ‘যথাযথ সম্মান’ দিতে বলা হয়েছে। ‘আরেকটা বিষয় বলা হয়েছে। যারা সাংবিধানিক পদাধিকারী, তাদেরকে যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয় অন্যান্য পদের উপরে।’ রাষ্ট্রপক্ষ আপীল বিভাগের এ রায়ের রিভিউ চাইবে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায় পুরোপুরি পর্যালোচনা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রিভিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ আপীল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানি করেছিলেন আইনজীবী আব্দুর রব চৌধুরী। হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও মোঃ আসাদুজ্জামান।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

উচ্চ আদালতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি এক বছর আটকা

আপডেট টাইম : ০৫:৫৯:২৯ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১
  • নিয়মিত আদালতে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মামলার শুনানি হবে

মিন্টু  হোসেন ॥

করোনার কারণে উচ্চ আদালতে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর শুনানি এক বছর ধরে আটকে আছে। শুধু অতীব গুরুত্বপূর্ণ মামলার ভার্চুয়াল শুনানি হচ্ছে। এদিকে দেশের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার ক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স)সহ গুরুত্ব মামলার শুনানি আটকে আছে। ভার্চুয়ালি নয় করোনার পরিস্থিতি উন্নতি শেষে শারীরিক উপস্থিতিতে নিয়মিত আদালতে এসব মামলার শুনানি হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তালিকা বাতিল সংক্রান্ত আপীলের রিভিউ শুনানির অপেক্ষায়। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেই নিয়মিত আদালতে এ সমস্ত মামলার শুনানি হবে। এর আগে মামলাটির রিভিউ শুনানি শুরু হলে ও করোনার কারণে তা আটকে যায়। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা রিভিউ শুনানির জন্য প্রস্তুত। বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলাগুলো শুনানি স্থগিত রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত আদালত চালু হলেই আমরা এ মামলার রিভিউ শুনানির উদ্যোগ নিব।

এদিকে শুধু রাষ্ট্রীয় ও আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম বা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স প্রয়োগ হবে। এজন্য ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের এক নম্বর নোটস প্রতিস্থাপন করে ২০২০ সালের জুলাই মাসে গেজেট প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতদিন ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের এক নম্বর নোটস-এ বলা ছিল, রাষ্ট্রীয় ও আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের অন্যসব ক্ষেত্রেও এটি পালন করা হবে। সেই নোটসটি প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, এটি শুধু রাষ্ট্রীয় ও আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে পালন করা হবে। ‘সরকারের অন্যসব ক্ষেত্রে’ কথাটি বাদ দেয়া হয়েছে। ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব রেফারেন্স দিয়ে সামারি তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্ট মামলার রিভিউ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, করোনা সময়ে মামলা শুনানি করা অসম্ভব। বিচারপতিদের যেমন অসুবিধা তেমনি আইনজীবীদেরও অসুবিধা। কোন মামলাই এ পরিস্থিতিতে শুনানি করা সম্ভব নয়। সবাইকে এ বিষয়ে ধৈর্য ধরতে হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই নিয়মিত আদালত চালু হবে। সে সময় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্টসহ অন্য মামলাগুলোর ও শুনানির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, করোনার কারণে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি বন্ধ আছে। শুধু ভার্চুয়াল আদালতে এখন বিচার চলছে। পূর্ণাঙ্গ আদালত চালু হলেই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স রিভিউটি শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স কেবিনেট থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে। আপীল বিভাগের রায়ে এ্যাটর্নি জেনারেলের পদটি ১৫ নম্বরে রাখা হয়েছে। এটি সাংবিধানিক পদ। কাজেই আরও আগে আসা উচিত ছিল। এছাড়া ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল গণ রাষ্ট্রের দায়িত্বপূর্ণ কাজ পালন করে থাকে। তাদের বিষয়টি উল্লেখ নেই। কাজেই আমি মনে করি এ বিষয়গুলোও থাকা উচিত। রিভিউ শুনানির সময় এ বিষয়গুলো তুলেধরা হবে। তিনি আরও বলেন, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলমের সময় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের রিভিউ শুনানি শুরু হয়েছিল। এর পর করোনার প্রকোপ দেখা দেয়। করোনার কারণে এ মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি বন্ধ রয়েছে।

এ রায়টি পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে রাষ্ট্রপক্ষ একটি রিভিউ আবেদন করে। এর পর প্রায় চার বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু রিভিউ আবেদনটির নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ কিছু সংশোধন ও পরিমার্জনসহ বহাল রাখে। প্রায় দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১০ নবেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপীল বিভাগ। এর মূল রায়টি লেখেন বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন।

এতে স্বাক্ষর করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। প্রকাশিত রায়ে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, ওইসব দেশের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) বাংলাদেশ থেকে আলাদা।

২০১৬ সালের ১০ নবেম্বর ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তালিকা বাতিল সংক্রান্ত আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আপীল বিভাগরে পূর্ণাঙ্গ রায়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদক্রমে (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) জেলা জজরা সাংবিধানিক পদমর্যাদাসম্পন্ন বিবেচনায় সরকারের সচিবদের সঙ্গে ১৬ নম্বর ক্রমিকের মর্যাদায় অবস্থান করবেন। অর্থাৎ সচিবের মর্যাদা পাবেন জেলা জজগণ। বর্তমানে তারা জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ২৪ ক্রমিকে আছেন। ৬২ পৃষ্ঠার রায়টি সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীল নিষ্পত্তি করে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি এই রায় দিয়েছিল। তার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন আহমেদ চৌধুরী মানিক।

রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধান যেহেতু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, সেহেতু রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদাধিকারীদের গুরুত্ব অনুসারে রাখতে হবে। জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যরা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের ২৪ নম্বর থেকে ১৬ নম্বরে সরকারের সচিবদের সমমর্যাদায় উন্নীত হবেন। অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যদের অবস্থান হবে জেলা জজদের ঠিক পরেই, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের ১৭ নম্বরে। রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম কেবল রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্র বা অন্য কোন কার্যক্রমে যেন এর ব্যবহার হয় না।

১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মোঃ আতাউর রহমান একটি রিট আবেদন করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় জেলা জজদের পদমর্যাদা সচিবদের নিচে দেখানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়ে আটটি নির্দেশনা দেয়। সে অনুসারে নতুন তালিকা তৈরি করতে সরকারকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত তা মঞ্জুর করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপীলের সুযোগ দেয়। নিষ্পত্তির পর ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আপীল বিভাগের ওয়েবসাইটে বলা হয়, সংশোধন, পরিমার্জন ও পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করা হলো। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হওয়ার পর তৎকালীন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়টি মোডিফাই করে আপীল বিভাগের প্রকাশিত রায় দেয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, পূর্ণাঙ্গ রায়ে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে নতুন কয়েকটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্তদের ‘যথাযথ সম্মান’ দিতে বলা হয়েছে। ‘আরেকটা বিষয় বলা হয়েছে। যারা সাংবিধানিক পদাধিকারী, তাদেরকে যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয় অন্যান্য পদের উপরে।’ রাষ্ট্রপক্ষ আপীল বিভাগের এ রায়ের রিভিউ চাইবে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায় পুরোপুরি পর্যালোচনা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রিভিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ আপীল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানি করেছিলেন আইনজীবী আব্দুর রব চৌধুরী। হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও মোঃ আসাদুজ্জামান।