তাসকিনের বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ
- আপডেট টাইম : ০৫:৪৮:২৫ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১
- / ২৮৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।
ক্যান্ডির পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথমদিন শেষে অস্বস্তিতে ভরপুর ছিল বাংলাদেশ দলের তাঁবু। মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান তোলা শ্রীলঙ্কার পরিকল্পনা রানের পাহাড় গড়ে তোলা। সারাদিন ঘাম ঝরানো বোলিংয়ের পরও ব্যর্থ মনোরথ বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা দ্বিতীয়দিন লঙ্কানদের কম রানের মধ্যে আটকে রাখার। গতির ঝড় তুলে দলের সেই আশা পূরণ করেছেন ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয়দিন শেষে ৬ উইকেটে ৪৬৯ রান নিয়ে মাঠ ছেড়েছে শ্রীলঙ্কা। অবশ্য বৃষ্টির ধাক্কা ও আলোর স্বল্পতায় দিনের ২৪.১ ওভার খেলা হয়নি। এর আগে একাই ৩ উইকেট নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন তাসকিন। তিনিসহ বাংলাদেশী বোলারদের দারুণ লাইন-লেন্থে করা বোলিংয়ে এদিন আরও ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৭৮ রান যোগ করতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। নিশ্চিতভাবেই দ্বিতীয়দিন বোলিং সাফল্যে উজ্জ্বল বাংলাদেশ ভালভাবেই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিরোশান ডিকভেলা ৬৪ ও রমেশ মেন্ডিস ২২ রানে অপরাজিত আছেন। আজ বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের সুযোগ আসবে নিশ্চিতভাবেই। আর তখন পরীক্ষাটা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ভাল জবাব দেয়ার।
পাল্লেকেলের উইকেট ব্যাটিংস্বর্গ। সেটা প্রথম টেস্টের প্রথমদিন শেষে ২ উইকেটে বাংলাদেশ দল ৯০ ওভারে ৩০২ রান তোলার পরই নিশ্চিত হয়ে যায়। দ্বিতীয়দিন আরও ২ উইকেট হারিয়ে অবশ্য ১৭২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে দু’দিন শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১৫৫ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৭৪। এদিন বৃষ্টির ধাক্কা আর আলোর স্বল্পতায় ২৫ ওভার খেলা হয়নি। একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টেস্টের দু’দিন যেন কার্বনকপি। তবে এবার দল বদলে গেছে। এবার প্রথমদিন শেষে ১ উইকেটে ২৯১ রান তোলা শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয়দিন শেষে ১৫৫.৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৪৬৯ রান করেছে। অর্থাৎ দ্বিতীয়দিনে ১৭৮ রান করতে ৫ উইকেট হারিয়েছে তারা। এখানেই দুই টেস্টের মধ্যে তুলনা করলে এগিয়ে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের দ্বিতীয়দিনে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। একদিনে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন তারা। ১৩১ রানে অপরাজিত লাহিরু থিরিমান্নে ও ৪০ রানে অপরাজিত ওশাদা ফার্নান্দো বেশ সতর্কভাবে শুরু করেন। তাদের কোণঠাসা করে ফেলেন তাসকিন, আবু জায়েদ রাহী ও শরিফুল ইসলামরা। প্রথম ১ ঘণ্টায় তবু মাটি কামড়ে থেকেছেন লঙ্কান দুই ব্যাটসম্যান, ১৪ ওভারে কোন বিপদ ঘটেনি এবং রান উঠেছে মাত্র ২২। দিনের ১৫তম ওভারে গিয়ে থিরিমান্নেকে সাজঘরে পাঠান তাসকিন। ২৯৮ বলে ১৫ চারে ১৪০ রান করেছিলেন তিনি। ১০৪ রানের জুটি ভাঙ্গে তাসকিনের আঘাতে। একই ওভারে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের বিপক্ষে ক্যাচের আবেদন করলে আরেকটি উইকেট পেতে পারতেন। কিন্তু আবেদন না করার কারণে ৪ ওভার পরে তার উইকেটটি পেয়েছেন তাসকিন। ম্যাথুস ৫ রানে ফিরে যান। গত টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেও ২ রানে এবার ফিরিয়ে দেন তাইজুল ইসলাম। ফলে ৪ উইকেটে মাত্র ৩৩৪ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় লঙ্কানরা। ২৬ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ৪৩ রান ওঠে।
দ্বিতীয় সেশনে অবশ্য ৩০ ওভারে ৯১ রান তোলে শ্রীলঙ্কা মূলত ডিকভেলার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। তিনি মাত্র ৪৮ বলেই ক্যারিয়ারের ১৮তম অর্ধশতক হাঁকান। এর আগেও বাংলাদেশী বোলাররাই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
লাঞ্চ বিরতির পর দারুণ জুটি গড়ে উঠছিল ওশাদা ও পাথুম নিশাঙ্কার মধ্যে। ৫৪ রান যোগ করার পর আবার ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন। তিনিই যেন চলতি টেস্টে বাংলাদেশের ত্রাণকর্তার ভূমিকায় বারবার অবতীর্ণ হন। এবার তার শিকার হন নিশাঙ্কা ৮৪ বলে ৩০ রান করা নিশাঙ্কা। পরের ওভারেই সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা ওশাদাকে শিকার করে ম্যাচে দারুণভাবে বাংলাদেশকে প্রত্যাবর্তন করান মেহেদী হাসান মিরাজ। ২২১ বলে ৮ চারে ৮১ রানে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওশাদা। চা বিরতির পর খেলা শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর খেলা শুরু হতেই অর্ধশতক পেয়ে যান ডিকভেলা। দ্রুতগতিতে ফিফটি হাঁকিয়ে তিনি ৬৪ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত আছেন। রমেশ মেন্ডিস তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন ৫৫ বলে ২২ রান করে। আজ ম্যাচের তৃতীয়দিনে দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগী হবে শ্রীলঙ্কা যত কম সময়ে সম্ভব। বাংলাদেশ দলেরও লক্ষ্য দ্রুত লঙ্কানদের অলআউট করে দেয়ার। ইতোমধ্যেই ৪ উইকেটে ৪৬৯ রান তুলে ফেলেছে তারা। তাই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য পরীক্ষাটা কঠিন হয়েই গেছে। সেই রান লঙ্কানরা আরও বাড়িয়ে নিয়ে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য হয়ে উঠবে অগ্নিপরীক্ষা। কারণ ইতোমধ্যেই পাল্লেকেলের উইকেটে বোলাররাও কিছুটা সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। আর প্রতিপক্ষ প্রায় ৫০০ রান করে ফেললে জবাবে দারুণ কিছু করা বেশ কঠিন যে কোন দলের জন্যই। সেই চ্যালেঞ্জে আজ নামবেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা।