দেশের আপামর জনতা জানতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েমের কি সত্যিই তদন্ত করে বিচার করা হবে ? নাকি পূর্বের বিভিন্ন ঘটনার মতো এই ঘটনাকেও ধামাচাপা দেয়া হবে?
- আপডেট টাইম : ১০:১৪:৫২ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১
- / ৪৬৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েমের অপরাধ প্রমাণ করার দায়িত্ব কার?
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
শিল্পপতি এবং বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর এখন আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার পলাতক আসামি৷
তার দেশত্যাগেও আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে৷
কিন্তু মামলার পর দুইদিন চলে গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ সায়েম সোবহানেরও দেশ ত্যাগের গুজব থাকলেও পুলিশ বলছে সে দেশেই আছে৷ আইনজীবীরা বলছেন, যে ধারায় মামলা হয়েছে তাতে সায়েম সোবহানকে গ্রেপ্তারে কোনো ওয়ারেন্টের প্রয়োজন নাই৷ সাধারণ কেউ হলে পুলিশ হয়ত গ্রেপ্তার করে ফেলত৷
গত সোমবার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়৷ সায়েম সোবহান আনভীর ওই বাসায় আসা যাওয়া করতেন৷ মামলার এজাহারে নিহতের বড় বোন নুশরাত জাহান অভিযোগ করেছেন সায়েম সোবহানের সাথে মুনিয়ার সম্পর্ক ছিলো৷ সায়েম সোবহানই তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন৷
দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে৷ আর এই ধারায় বলা হয়েছে কাউকে যদি কেউ আত্মহত্যায় প্ররোচনার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড৷ এর সঙ্গে অর্থ দণ্ডও হতে পারে৷ সুপ্রিম কের্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, দন্ডবিধির ১০৭ ধারায় এই প্ররোচনার ব্যাখ্যা আছে৷ আর তা হলো-১. কোনো অপরাধমূলকাজে হুকুম দেয়া বা অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করা৷ ২. কোনো একটি অপরাধের ষড়যন্ত্র করা এবং ৩. কাউকে কোনো অপরাধ করতে ইচ্ছাকৃতভাকে সহায়তা করা৷
দণ্ডবিধির ৩০৯ ধরায় কোনো ব্যক্তি যদি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তাহলে তার শাস্তির বিধান আছে৷ সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড৷ এর সঙ্গে অর্থদণ্ডও হতে পারে৷ তবে কেউ আত্মহত্যা করে ফেললে তাকে আর শাস্তির আওতায় আনার সুযোগ থাকে না৷ সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন আইনজীবী ইশরাত হাসান জানান,‘‘ কোনো ব্যক্তিকে যদি এমনভাবে অপমান করা হয় বা চাপ প্রয়োগ করা হয় যা তাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে তাহলে সেটা প্ররোচনা হিসেবে গণ্য করা হবে৷”
ইশরাত হাসান জানান,” যদি কোনো নারী যৌন হয়রানি, সম্ভ্রমহানি ও ধর্ষণের শিকার হয়ে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেন তাহলে এর বিচার হবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(ক) ধারায়৷ এখানেও সর্বোচ্চ শান্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড৷ কিন্তু সর্বনিম্ন শাস্তি পাঁচ বছরের কম কারাদণ্ড হতে পারবেনা৷”
আইনজীবীরা বলছেন,” মামলাটি আত্মহত্যার প্ররোচনার না হয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর হতে পারত৷ কারণ এটা আত্মহত্যা না হয়ে হত্যাও তো হতে পারে৷ তাই ময়না তদন্ত ,ফরেনসিক প্রতিবেদন ও ভিসেরা প্রতিবেদন দেখে সিদান্ত নেয়া যেত এটা হত্যা না আত্মহত্যা৷ আর তখন আত্মহত্যা হলে প্ররোচনার বিষয়টি এমনিতেই আসত৷”
মামলার এজাহারটি কৌশলে দুর্বল করা হয়েছে বলে মনে করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান৷
কিন্তু ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী দাবি করেন,” আত্মহত্যা ও প্ররোচনার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় ওই মামলা নেয়া হয়েছে৷ তবে ভিসেরা, ময়না তদন্ত ও সুরতহাল মিলিয়ে হত্যা প্রমাণ হলে চার্জশিটে ধারা পরিবর্তন করে হত্যা মামলায় রূপান্তর করা যাবে৷ আইনে কোনো বাধা নেই৷”
সায়েম সেবহানকে গ্রেপ্তারে আইনে কেনো বাধা নেই স্বীকার করে তিনি বলেন,” আমরা চাচ্ছি শক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে৷ আমরা সে কাজ করছি৷ তাই সময় নেয়া হচ্ছে৷ মুনিয়ার ছয়টি ডায়েরি পেয়েছি৷ তার ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ছবিসহ আরো অনেক আলামত আছে আমাদের হাতে৷ আর তার বাসা ভাড়া এক লাখ টাকা কে দিত? সব মিলিয়ে সে কেন আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছে তা আমরা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি৷” সায়েম সোবহান যদি দেশের বাইরে পালিয়ে যান? এর জবাবে তিনি বলেন,” আমরা সব কিছু চেক করে দেখছি তিনি দেশেই আছেন৷ আশা করি পালাতে পারবেন না৷”
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,” মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় কারুর কোনো অপরাধ থাকলে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷”
সায়েম সোবহান বা তার পক্ষ থেকে কেউ এখনও এই বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি৷
তবে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে এই বিষয় নিয়ে বেশ ঝড় বইছে।
দেশের আপামর জনতা জানতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েমের কি সত্যিই তদন্ত করে বিচার করবে আইন নাকি।