মিশ্র সমাজ-মধ্যবর্তী পর্যায় নগরীয় বাংলাদেশ
- আপডেট টাইম : ০৮:১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১
- / ২৯৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ-চূড়ান্ত পর্যায়
বাংলাদেশ একসময় কৃষিজ/গ্রামীণ দেশ/সমাজ ছিলো। নগরায়ন দ্বারা ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ একটি গ্রামীণ-নগরীয় দেশ এ উন্নীত হয়; তাতে বাংলাদেশ কৃষি ও
অকৃষি নিয়ে হল একটি মিশ্র দেশ/সমাজ, যা গ্রামীণ-নগরীয় নানা অনুপাতে গঠিত হয়ে থাকে, যেমন ৭৫% গ্রামীণ, ২৫% নগরীয়; ৭০% গ্রামীণ, ৩০% নগরীয়;
৬৫% গ্রামীণ, ৩৫% নগরীয়; ৬০% গ্রামীণ, ৪০% নগরীয়; ২০২০ সালে ৫০% গ্রামীণ, ৫০% নগরীয়। ৪৫% গ্রামীণ, ৫৫% নগরীয়; ৪০% গ্রামীণ, ৬০% নগরীয়;
৩৫% গ্রামীণ, ৬৫% নগরীয়; ৩০% গ্রামীণ, ৭০% নগরীয়; এবং ২৬% গ্রামীণ, ৭৪% নগরীয় ইত্যাদি। এ মিশ্রণটি ২৫% গ্রামীণ ও ৭৫% নগরীয় হলেই বাংলাদেশ
তখন হয়ে যাবে একটি নগরীয় দেশ; তার আগ (২৬% গ্রামীণ, ৭৪% নগরীয়) পর্যন্ত স্ট্যাটাস/মর্যাদা থাকবে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ/সমাজ। প্রতিবর্ষে গ্রামীণ-নগরীয়
শতাংশ দেখে নগরায়নে/উন্নয়নে অগ্রগতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা সহজে বোঝা যাবে। অব্যাহত নগরায়ন প্রক্রিয়ায় ক্রমশ গ্রামীণ শতাংশ কমতে ও নগরীয় শতাংশ
বাড়তে থাকবে। দেশে ইউনিয়নগুলোতে প্রায় ২০,০০০ অকৃষি উন্নয়ন হাব (হাট-বাজার) রয়েছে (এসব হাট-বাজারকে জনাব আবু তালেব “অকৃষি উন্নয়ন হাব” বা
“অকৃষি হাব” বলে থাকেন); রেমিট্যান্স প্রবাহ, অর্থনৈতিক গ্রোথ ও অন্যকিছু কারণে আরো অকৃষি হাব ও তাতে আরো সিএমএসএমইস সৃষ্টি হতে থাকবে; এসব
অকৃষি হাব কেন্দ্রিক নগরীয় প্রশাসনিক ইউনিট ও নগরীয় জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে; নগরায়ন বুঝতে হলে এ সাইকেলটি অবশ্যই বুঝতে হবে। বর্তমানে ৩৬০টি
নগরীয় ইউনিট রয়েছে; তা বাড়িয়ে দ্রততায় নগরায়ন ঘটাতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে (৭/২০২০-৬/২০২৫) দ্বিগুণ অর্থাৎ ৭২০টি করা উচিত হবে।
নগরায়ন প্রক্রিয়া মাথায় নিয়ে জনাব আবু তালেব ১৯৯৭ সালে ১৩ জানুয়ারীতে ঢাকায় “গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা” নিয়ে অনুষ্ঠিত এক জাতীয় সেমিনারে
বাংলাদেশকে গ্রামীণ দেশের পরিবর্তে একটি ‘গ্রামীণ-নগরীয় দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সেসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২০ সালেরমধ্যে অর্ধেক মানুষ নগরবাসী
হবেন, ২০৫০ সালেরমধ্যে শতভাগ মানুষ নগরবাসী হবেন, এবং বাংলাদেশ একটি পূর্ণ ‘নগরীয় দেশ’ এ উন্নীত হবে। একেই জনাব তালেব ‘গণস্বপ্ন ২০৫০’ নামে
অভিহিত করেন, এবং তা যেন প্রতিটি মানুষ নিজস্ব স্বপ্ন হিসেবে নেয় সেজন্য ১৯৯৭ সাল থেকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন শুরু করেন; লক্ষ্য হল ‘গ্রামীণ-নগরীয়
দেশ’ ও ‘নগরীয় দেশ তথা গণস্বপ্ন ২০৫০’ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা; সমাজ ও প্রশাসনকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও নগরীয় দেশ উপযোগী করা। উন্নত
গণতান্ত্রিক দেশ (গণস্বপ্ন ২০২০), গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও নগরীয় দেশ (গণস্বপ্ন ২০৫০) ভিত্তিক প্রণীত গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় জনগণ ও সরকারকে
তা বাস্তবায়নে একতাবদ্ধ করা; অন্যান্য বিষয়েও গণস্বপ্ন ২০২০ (৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় শেষাংশ দেখুন) ও গণস্বপ্ন ২০৫০ ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা,
এ্যাডহকভিত্তিক চিন্তাভাবনা ও কর্মকান্ডকে ভিশনভিত্তিক করা ইত্যাদি। ১৯৯৭ সাল হতে সরকারগুলো গ্রামীণ দেশ থেকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ হওয়া এবং তা থেকে
নগরীয় দেশ হয়ে ওঠতে থাকার বিষয়টি আমলে নেননি; অনেকে ‘গণস্বপ্ন ২০৫০’ নিয়ে হাসাহাসি করেছেন ও একে একটি অলীক স্বপ্ন বলেছেন; সেটি এখন দৃশ্যমান
বাস্তবতায় পাল্টাচ্ছে। অনেক সময় চলে গেল; একাদশ সংসদীয় নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঘোষিত দলীয় মেনিফেস্টোতে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ অঙ্গীকার
ব্যক্ত করা হল; কিন্তু তাতে ‘গ্রামীণ-নগরীয় দেশ’ ও ‘গণস্বপ্ন ২০৫০’ বিষয়দ্বয় উল্লেখ করল না; এতে অনুধাবনটা/প্রকাশটা খন্ডিত হয়ে উপস্থাপিত হলেও নগরীয়
বিষয়ে গুরুত্ব দেয়াতে আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানাই; এ বিষয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে; তাদেরকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও গণস্বপ্ন
২০৫০ বিষয়দ্বয় ভাবনায় নিতে হবে। সেসঙ্গে মনে রাখতে হবে গ্রামীণ দেশ থেকে নগরীয় দেশ লক্ষ্যমুখী পথযাত্রায় গ্রামীণ-নগরীয় দেশ হল একটি মধ্যবর্তী পর্যায়; এ
সময়ে, বাংলাদেশকে একদিকে গ্রামীণ দেশ থেকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ উপযোগী হয়ে চলতে হবে; প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রামীণ-নগরীয় দেশ
উপযোগী হতে হবে; সে লক্ষ্য পূরণ করতে সরকারকে প্রথমে বাংলাদেশকে একটি গ্রামীণ-নগরীয় দেশ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; প্রশাসন ও মানুষকে গ্রামীণতা
থেকে গ্রামীণ-নগরীয়তায় নিতে হবে; গ্রামীণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে গ্রামীণ-নগরীয় জটিল সমস্যা সমাধান করা কঠিনতর কাজ, গ্রামীণ-নগরীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া সমাধান প্রক্রিয়া
প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠছে; সেটি জনগণ প্রতিনিয়ত দেখছে। প্রশাসন ও মানুষকে প্রবল প্রয়াসে মানসিক ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তনে/অভিযোজনে যেতে হবে; তা নিয়ে
ক্যাম্পেইন ও ডাইরেক্ট নিবেদন থাকলেও বিষয়গুলো সামনে নিয়ে পরিপ্রেক্ষণ প্লান, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বাজেট ইত্যাদি প্রণীত হচ্ছেনা; সেটি চলতি বাজেটবর্ষে
(৭/২০২০-৬/২০২১) নেই; ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) ও পরিপ্রেক্ষণ প্লানে (২০৩০, ২০৩৫, ২০৪০, ২০৪৫, ২০৫০) কতটুকু
আছে/থাকে ভা খতিয়ে দেখা হচ্ছে/হবে। সরকারকে গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও ‘গণস্বপ্ন ২০৫০’ নিয়ে উচ্চকণ্ঠ হতে হবে; এটি এখন একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা, তাতে
জনগণ ও প্রশাসনকে সচেতনভাবে একাত্ব হতে হবে; এখন নগরীয় এলাকায় প্রায় ৫০% মানুষ বসবাস করছেন; ২০৩০ সালে প্রায় ৭০%, ২০৪০ সালে প্রায় ৮০%
ও ২০৫০ সালে ১০০% মানুষ নগরবাসী হবেন; নগরায়নে এই ভবিষ্যত অগ্রগতি হিসাবে নিয়ে কাজ করতে হবে। নগরবাসীকে নগরীয় মননে ও নগরীয় কৃষিতে নিতে
হবে; সেজন্য প্রশাসন ও মানুষকে মানসিক ও শিক্ষাগত প্রস্তুতি দ্বারা নগরীয়তায় উন্নীত হতে হবে। নগরায়ন দ্রুতময় করতে কৃষিতে শ্রমশক্তি ৪০% থেকে কমিয়ে
২০% করতে হবে; কেবল ২০% শ্রমশক্তি দিয়েই এখন খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব; সেঅর্থে কৃষিতে ২০% শ্রমশক্তির অপচয় হচ্ছে; তা রোধ করতে ২০% কৃষি
শ্রমশক্তিকে অকৃষি পেশায়/কর্মে নিতে হবে; ভবিষ্যতে কৃষিতে মাত্র ১০% শ্রমশক্তি দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হবে, ফলে কৃষি থেকে আরো ১০% শ্রমমক্তি
অকৃষি কাজে নিয়ে যেতে হবে;তা করতে না পারলে শুধু কথায় কৃষি লাভজনক হবেনা। জিডিপিতে এখন কৃষিরঅবদান হচ্ছে ১৩%, ২০২৫ এ ১০% ও তা একপর্যায়ে
৫শতাংশে এসে যাবে; এটি মাথায় রেখে অর্ধবেকারকৃষক-কর্মী, কর্মহীন মাইগ্রেন্ট কর্মী ও কর্মসন্ধানী যুবসমাজকে কর্ম যোগাতে ২০,০০০ অকৃষি উন্নয়ন হাব ও
৩৬০টি নগরীয় ইউনিটে অকৃষি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করতে হবে; নতুন প্রজন্ম, শিক্ষিত জনশক্তি চায় অকৃষি পেশায় কর্মসংস্থান; নতুন প্রজন্ম প্রবল আগ্রহে গ্রামীণ-
নগরীয় দেশ ও গণস্বপ্ন ২০৫০ তথা নগরায়নকে স্বাগত জানিয়ে আসছে; ভবিষ্যত প্রজন্মে নগরীয় সংস্কৃতি ও নগরীয় সভ্যতাই হবে মূল কথা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে
৩৬০টি নগরীয় ইউনিট ও ২০,০০০ অকৃষি উন্নয়ন হাবে নগরীয় কৃষিতে গুরুত্ব দিতে হবে; সেজন্য নগরীয় ইউনিট ও ইউনিয়নগুলোকে দায়িত্ব দিয়ে বাজেটে গ্রামীণ
কৃষি ও নগরীয় কৃষিতে আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে; সে আহ্বানটি ১৯৯৭ সাল থেকেই জনাব আবু তালেব জানিয়ে আসছেন। নারীরক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলে গ্রামীণ
ও নগরীয় ইউনিটদ্বয়ে অভিজ্ঞ, দক্ষ নারী নেতৃত্ব গড়তে আবু তালেব প্রণীত এমপো (৭ম পৃষ্ঠায় দেখুন) ও ১১ দফার ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ দফাগুলো বাস্তবায়ন করতে
হবে (৮ম-১১তম পৃষ্ঠায় দেখুন); তাহলে উভয় তৃণমূলে একসঙ্গে নারী জাগরণ সৃষ্টি হবে, গণতন্ত্র মজবুত হবে। গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও নগরীয় দেশ উপযোগী
প্রশাসনিক ইউনিট গঠন ও তা স্তরীয় সংখ্যায় সাজাতে জনাব আবু তালেব প্রণীত স্তরবিন্যাসকরণ (১ বা ২) বাস্তবায়ন করতে হবে (৪র্থ, ৩য় ও ২য় পৃষ্ঠাগুলো দেখুন)।
দেশে স্থানীয় প্রশাসনিক ইউনিট ও স্তরীয় সংখ্যা অনেক বেশী; স্তরীয়সংখ্যা কমিয়ে এনে চারস্তরীয় হতে দু’স্তরীয় ও ইউনিট সংখ্যা প্রথম পর্যায়ে ৫,৪৯৪টি থেকে
কমিয়ে ২,০০০-৩,০০০টি করতে হবে, সে কৌশল স্তরীয়করণ ১ ও ২ এ প্রথম অংশে রয়েছে; তাতে ছোট্ট ও দক্ষ সরকার পাওয়া যাবে; পরিচালন ব্যয় কমবে, উন্নয়ন
ব্যয় বাড়ানো যাবে। বিদ্যমান গ্রামীণ-নগরীয় দেশ ও ভবিষ্যৎ নগরীয় দেশে পরিবেশ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে জনাব তালেব ১৯৯৭ সালে “পরিবেশবান্ধব” টার্মটি
“পরিকল্পিত” শব্দটিরআগে জুড়ে দেন; অনেক সময় নিলেও এখন ”পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত” শব্দযুগলটি বেশ পরিচিতি নিয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে; এটি খুবই আশাব্যঞ্জক।
এসব বিষয়সহ গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে সিডিএলজি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাম্পেইন চালিয়ে আসছে, এসব বিষয়সহ তৃণমূলীয় নগর সংসদ ও সরকারের
রূপরেখা, ইউনিয়ন সংসদ ও সরকারের রূপরেখা, নাম ও পদ্ধতি পরিবর্তন বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সাল থেকে জেনে, শুনে, বুঝে আসছেন; ১৩ জানুয়ারী
২০২১ এ ক্যাম্পেইনটি ২৪বর্ষ পূর্ণ করেছে; তা স্মরণে নিয়েই আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, গ্রামীণ-নগরীয়
দেশ ও নগরীয় দেশ তথা গণস্বপ্ন ২০৫০ ভিত্তিক শাসনকাঠামো, নীতিমালা, ভিশন-মিশন, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, আইন-বিধি, পরিপ্রেক্ষণ পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা,
বাজেট ইত্যাদি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবেন; উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ (৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় শেষাংশ দেখুন) নির্মাণকরণে নতুন সময়সীমা (২০৩০, ২০৩৫, ২০৪০ বা ২০৪৫)
ঠিক করবেন; এবং সঠিকভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রচনার্থে স্বাধীনতা থেকে মার্চ/২০২১ নাগাদ নানা খাতে অর্জনগুলো ৫০ বর্ষপূর্তি উৎসবে সঠিক সংখ্যায় উপস্থাপিত।চলবে