ঢাকা ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
নাসিরনগরে তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত সাবেক সিইসির সঙ্গে মব জাস্টিসের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে ছেলেকে আটক করেছে থানা পুলিশ ঠাকুরগাঁওয়ে পেনশন মেলা উপলক্ষে কর্মশালা গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন ঘুস ছাড়া’ কোনো কাজই করেন না, এলজিইডির জিয়াউর রহমান উপ সহকারী প্রকৌশলী- নিরাব ভূমিকায় উপজেলা প্রকৌশলী পুলিশের জালে আটক সাংবাদিক শহীদুল কে হামলাকারী ৩ জন। দুদকের ৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি সরকারি ভাতা বাড়লো, বিশেষ সুবিধা পাবেন যারা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যেভাবে সামরিক শক্তি অর্জন করেছে ইরান

আওয়ামী তকমা দিয়ে, আদালতের আদেশ অবমাননা. ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচ মাস ধরে গৃহহীন বৃদ্ধা নাজু

নিজস্ব সংবাদদাতা:
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১১৯ ১৫০.০০০ বার পাঠক

আল মামুন, জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও ॥
ভাঙ্গা ঘড়ির কাঁটা থেমে রয়েছে সোয়া ছয় টার ঘরে, পড়ার টেবিলের বইগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যত্রতত্র, কোরআন শরিফটিও পড়ে রয়েছে ভাঙ্গা সোকেশের ওপরের এক কোনায় আর বাড়ির মালিক গালে হাত রেখে বসে রয়েছেন ভাঙ্গা চালের বারান্দায়।

ছবির গল্পটি ঠাকুরগাঁও রুহিয়া থানার ১ নং রুহিয়া ইউনিয়নের বেকামনি গ্রামের মৃত মজিবরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়ষ্কা বৃদ্ধা নাজু বেগমের।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগষ্টে সৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। সেই সাথে পতন হয়েছে সৈরাচার সরকারের অনুসারী ও মদত দাতাদেরও। গত ৫ আগষ্টের পর সারাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ঘটেছে রাজনৈতিক দখল ও লুটপাটের মত ঘটনা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে একটি স্বার্থান্বেষি মহল। ঠাকুরগাঁও রুহিয়ার বৃদ্ধা নাজুর সাথেও ঘটেছে ঠিক তাই। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে গত ২৪ আগষ্ট আওয়ামীলীগ এর রাজনীতির সাথে জরিতরাই নাজু ও তার পরিবারকে আওয়ামীলীগ সমর্থক তকমা লাগিয়ে তার বাড়ি এবং ভিটা লুটপাট, ভাংচুড় ও দখল করে তাকে করে ভিটে ছাড়া ।

জানাযায়, ঠাকুরগাঁও রুহিয়া থানার ১ নং রুহিয়া ইউনিয়নের বেকামি গ্রামের মৃত মজিবরের স্ত্রী বৃদ্ধা নাজু বেগমের সাথে একই গ্রামের খলিল রহমান ও তার ছেলে রুহুল আমিনের সাথে দীর্ঘদিন ধরেই জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এ সংক্রান্ত একটি মামলাও আদালতে চলমান রয়েছে আদালতে। বিরোধীয় জমির ওপরে আদালতের ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও ৫ আগষ্টের পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ২৪ আগষ্ট আদালতের আদেশ অমান্য করে সে জমি এবং বৃদ্ধা নাজুর বাড়িটিও দখল করে নেয় অভিযুক্ত রুহুল আমিন। আর এ কাজে তিনি নাজু বেগমের পরিবারকে আওয়ামীলীগ সমর্থকের তকমা লাগিয়ে দখলে ব্যবহার করেন ভারাটে লোকবল সহ বিএনপির কিছু সমর্থকদের। সে সময় মারপিটে আহত করা হয় নাজু ও তার বিবাহযোগ্যা কন্যাকে এবং কৃষি কাজ করা একমাত্র ছেলেকে। তাদের বের করে দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় তাদের বাড়িতে ঢোকার একমাত্র প্রবেশ পথটিও। এর পর থেকেই সন্তানদের নিয়ে অন্যে বাড়িতে আশ্রিত রয়েছেন বৃদ্ধা নাজু।

নাজু জানান, আমাদের সাথে একটি জমি নিয়ে খলিল ও তার ছেলে রুহুলের ঝামেলা হয়েছিলো। মামলাও চলছে বিষয়টি নিয়ে। আদালত যা রায় দিবে আমরা তাই মাথা পেতে নেবো। তা না করে এবং আদালতের রায়ের অপেক্ষা না করে তারা আমাকে আর আমার সন্তানদের বের করে দেয়। আমি সন্তানদের নিয়ে এ বয়সে অন্যের বাসায় আশ্রিত রয়েছি। বাড়িতে ঢুকতে গেলে তারা বাধা দেয় প্রতিবারই এবং বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়। তালাবদ্ধ ঘরের নানা আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। লোকমুখে শুনছি আমি এবং আমার ছেলে-মেয়ে বাসায় গেলে তারা আমাদের মারপিট করবে। আমার শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
নাজুর ছেলে রাজু হোসেন জানান, বাবা মারা যাবার পর আমাকে সংসারের হাল ধরতে কৃষিকাজ করতে হচ্ছে। আমি আর পরিারকে আওয়ামীলীগ সমর্থক বানিয়ে তারা আমাদের বাড়ি ও ভিটা জবরদখল করে আমার মা বোনের গায়ে হাত তুলে বের করে দেয়। আমিও প্রাণের ভয়ে সে এলাকায় আর যেতে পারিনা। জানিনা আমরা কিভাবে আবার নিজেদের বাড়িতে যেতে পারবো।

নাজু বেগমের প্রতিবেশিরা জানান, দখল করতে তারা এত বেশি লোকজন নিয়ে আসছিলো যে আমাদের নিরব দর্শক হয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। নাজু আর তার পরিবারের ওপর তারা যে অত্যাচার করেছে তা অন্যায়। আদালত যদি নাজু আর তার পরিবারকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিতো, তখন না হয় তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিতো। নাজুর বাড়ির রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়ায় তারা আর বাড়িতেও ঢুকতে পারেনা। এটা অমানবিক । আমরা প্রতিবেশিরা আশা করছি সকল সমস্যা কাটিয়ে নাজু তার পরিবার নিয়ে আবারো নিজ বাড়িতে বসবাস করবে।

অভিযুক্ত রুহুল আমিনের বাবা খলিল রহমান বলেন “নাজু বেগমরা একমসয় আমাদের জমিতেই আশ্রিত ছিলো। তারাই আমাদের জমি দখল করে এতদিন ছিলো।” তবে বাড়ি ভিটা জবর দখল এবং নাজু ও তার পরিবারের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্ত্বোর দিতে পারেননি।

রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম নাজমুল কাদের জানান, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। তবে নতুন করে বাসার মালামাল লুট বা চুরির বিষয়ে জানিনা। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আওয়ামী তকমা দিয়ে, আদালতের আদেশ অবমাননা. ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচ মাস ধরে গৃহহীন বৃদ্ধা নাজু

আপডেট টাইম : ০৩:২৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

আল মামুন, জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও ॥
ভাঙ্গা ঘড়ির কাঁটা থেমে রয়েছে সোয়া ছয় টার ঘরে, পড়ার টেবিলের বইগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যত্রতত্র, কোরআন শরিফটিও পড়ে রয়েছে ভাঙ্গা সোকেশের ওপরের এক কোনায় আর বাড়ির মালিক গালে হাত রেখে বসে রয়েছেন ভাঙ্গা চালের বারান্দায়।

ছবির গল্পটি ঠাকুরগাঁও রুহিয়া থানার ১ নং রুহিয়া ইউনিয়নের বেকামনি গ্রামের মৃত মজিবরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়ষ্কা বৃদ্ধা নাজু বেগমের।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগষ্টে সৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। সেই সাথে পতন হয়েছে সৈরাচার সরকারের অনুসারী ও মদত দাতাদেরও। গত ৫ আগষ্টের পর সারাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ঘটেছে রাজনৈতিক দখল ও লুটপাটের মত ঘটনা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে একটি স্বার্থান্বেষি মহল। ঠাকুরগাঁও রুহিয়ার বৃদ্ধা নাজুর সাথেও ঘটেছে ঠিক তাই। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে গত ২৪ আগষ্ট আওয়ামীলীগ এর রাজনীতির সাথে জরিতরাই নাজু ও তার পরিবারকে আওয়ামীলীগ সমর্থক তকমা লাগিয়ে তার বাড়ি এবং ভিটা লুটপাট, ভাংচুড় ও দখল করে তাকে করে ভিটে ছাড়া ।

জানাযায়, ঠাকুরগাঁও রুহিয়া থানার ১ নং রুহিয়া ইউনিয়নের বেকামি গ্রামের মৃত মজিবরের স্ত্রী বৃদ্ধা নাজু বেগমের সাথে একই গ্রামের খলিল রহমান ও তার ছেলে রুহুল আমিনের সাথে দীর্ঘদিন ধরেই জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এ সংক্রান্ত একটি মামলাও আদালতে চলমান রয়েছে আদালতে। বিরোধীয় জমির ওপরে আদালতের ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও ৫ আগষ্টের পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ২৪ আগষ্ট আদালতের আদেশ অমান্য করে সে জমি এবং বৃদ্ধা নাজুর বাড়িটিও দখল করে নেয় অভিযুক্ত রুহুল আমিন। আর এ কাজে তিনি নাজু বেগমের পরিবারকে আওয়ামীলীগ সমর্থকের তকমা লাগিয়ে দখলে ব্যবহার করেন ভারাটে লোকবল সহ বিএনপির কিছু সমর্থকদের। সে সময় মারপিটে আহত করা হয় নাজু ও তার বিবাহযোগ্যা কন্যাকে এবং কৃষি কাজ করা একমাত্র ছেলেকে। তাদের বের করে দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় তাদের বাড়িতে ঢোকার একমাত্র প্রবেশ পথটিও। এর পর থেকেই সন্তানদের নিয়ে অন্যে বাড়িতে আশ্রিত রয়েছেন বৃদ্ধা নাজু।

নাজু জানান, আমাদের সাথে একটি জমি নিয়ে খলিল ও তার ছেলে রুহুলের ঝামেলা হয়েছিলো। মামলাও চলছে বিষয়টি নিয়ে। আদালত যা রায় দিবে আমরা তাই মাথা পেতে নেবো। তা না করে এবং আদালতের রায়ের অপেক্ষা না করে তারা আমাকে আর আমার সন্তানদের বের করে দেয়। আমি সন্তানদের নিয়ে এ বয়সে অন্যের বাসায় আশ্রিত রয়েছি। বাড়িতে ঢুকতে গেলে তারা বাধা দেয় প্রতিবারই এবং বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়। তালাবদ্ধ ঘরের নানা আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। লোকমুখে শুনছি আমি এবং আমার ছেলে-মেয়ে বাসায় গেলে তারা আমাদের মারপিট করবে। আমার শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
নাজুর ছেলে রাজু হোসেন জানান, বাবা মারা যাবার পর আমাকে সংসারের হাল ধরতে কৃষিকাজ করতে হচ্ছে। আমি আর পরিারকে আওয়ামীলীগ সমর্থক বানিয়ে তারা আমাদের বাড়ি ও ভিটা জবরদখল করে আমার মা বোনের গায়ে হাত তুলে বের করে দেয়। আমিও প্রাণের ভয়ে সে এলাকায় আর যেতে পারিনা। জানিনা আমরা কিভাবে আবার নিজেদের বাড়িতে যেতে পারবো।

নাজু বেগমের প্রতিবেশিরা জানান, দখল করতে তারা এত বেশি লোকজন নিয়ে আসছিলো যে আমাদের নিরব দর্শক হয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। নাজু আর তার পরিবারের ওপর তারা যে অত্যাচার করেছে তা অন্যায়। আদালত যদি নাজু আর তার পরিবারকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিতো, তখন না হয় তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিতো। নাজুর বাড়ির রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়ায় তারা আর বাড়িতেও ঢুকতে পারেনা। এটা অমানবিক । আমরা প্রতিবেশিরা আশা করছি সকল সমস্যা কাটিয়ে নাজু তার পরিবার নিয়ে আবারো নিজ বাড়িতে বসবাস করবে।

অভিযুক্ত রুহুল আমিনের বাবা খলিল রহমান বলেন “নাজু বেগমরা একমসয় আমাদের জমিতেই আশ্রিত ছিলো। তারাই আমাদের জমি দখল করে এতদিন ছিলো।” তবে বাড়ি ভিটা জবর দখল এবং নাজু ও তার পরিবারের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্ত্বোর দিতে পারেননি।

রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম নাজমুল কাদের জানান, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। তবে নতুন করে বাসার মালামাল লুট বা চুরির বিষয়ে জানিনা। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।