ছাত্রশিবির এখন ছাত্রসমাজের সবচেয়ে আপন: ডা. শফিকুর রহমান
- আপডেট টাইম : ১০:১২:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ২ ৫০০০.০ বার পাঠক
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ছাত্রশিবির এখন ছাত্রসমাজের কাছে সবচেয়ে আপন সংগঠন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক আয়োজিত শাখা দায়িত্বশীল কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জামায়াতের আমির।
তিনি বলেন, ‘বিগত সাড়ে পনেরো বছর ধরে ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি, এমনকি মাদরাসাগুলোতেও তাদের স্বনামে দাওয়াত দেওয়ার পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল। ছাত্রসমাজ থেকে দূরে রাখতে ছাত্রশিবিরের নামে নানা রকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে তাদের নেগেটিভ চরিত্রের সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা বাসা থেকে তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করেছিল শিবিরকে তারা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, শিবিরের নাম-নিশানা মুছে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ছাত্রশিবির এখন ছাত্রসমাজের কাছে সবচেয়ে আপন সংগঠন। সাধারণ ছাত্রসমাজ শিবিরকে সভ্য, ভদ্র এবং মেধাবী ছাত্রদের ঠিকানা হিসেবে দেখে।’
ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় ও কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সারা দেশে শাখা দায়িত্বশীল কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জানুয়ারি (সোমবার) রাজধানীর শহীদ আব্দুল মালেক মিলনায়তনে সকাল ৮টায় দারসুল কুরআনের মাধ্যমে কর্মশালা শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আলমগীর মোহাম্মদ ইউসুফ।
প্রধান অতিথি ডা. শফিকুর রহমান যোগ করেন, ‘ছাত্ররা শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি চরিত্রে বিকাশ লাভ করুক, আর এ দায়িত্ব ছাত্রশিবিরকেই নিতে হবে, যা অন্য কোনো সংগঠনের পক্ষে সম্ভব নয়। কিছু সংগঠন নিজেদের বড় মনে করলেও তাদের কর্মসূচিতে চরিত্র গঠনের কার্যক্রম নেই, বরং চারিত্রিকভাবে দেউলিয়া সংগঠনগুলো ছাত্রশিবিরকে প্রতিপক্ষ মনে করে। আর কিছু ইসলামী সংগঠন এখনো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঠিক অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। এ অবস্থায় ছাত্রশিবিরকেই ছাত্রসমাজের চরিত্রগঠন ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্রসমাজের প্রিয় ও আস্থায় যে জায়গা তৈরি হয়েছে, সেটাকে নিয়ামত ও বাড়তি সুযোগ মনে করে অন্তরে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বেশি বেশি কাজের মাধ্যমে তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা জরুরি। দীর্ঘ প্রতিকূল সময়ে সংগঠনটি টিকে ছিল, জনসংখ্যা আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি হয়নি। কিন্তু এখন অনুকূল পরিবেশে এক মুহূর্তও নষ্ট না করে ছাত্রসমাজের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে এবং তাদের চরিত্রগঠনের গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছাত্রশিবির নামক বাগানের মালি। আমাদের সামনে শহীদদের রক্তের উত্তরাধিকার ও বিপুল দায়িত্ব রয়েছে। এই পথ ফুল বিছানো নয়; বরং এটি কণ্টকাকীর্ণ। সংগঠনের প্রতিটি দায়িত্বশীলের উচিত এ দায়িত্বকে আমানত হিসেবে বিবেচনা করা।’ তিনি সূরা আহজাবের ৭২ নং আয়াত উল্লেখ করে বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতসমূহের কাছে আমানত পেশ করেছিলেন, কিন্তু তারা তা বহন করতে অপারগ হয়। অথচ মানুষ তা বহন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটি কাজ ইসলামের নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত হতে হবে। দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদের উচিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্নেহশীলতা ও করুণার গুণাবলি অর্জন করা। সহজ-সরল জীবনে অভ্যস্ত হওয়া এবং অহংকার থেকে মুক্ত থাকা একজন দায়িত্বশীলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।