ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
টঙ্গীতে কুখ্যাত মাদক সম্রাট বিএনপি’র নেতা সাজা প্রাপ্ত আসামী শাহাবুদ্দিন এর ডিগবাজী প্রশাসন নিরব জলসুখায় শ্যামানন্দ আশ্রমের সেবায়েত গোপীকা রঞ্জন চক্রবর্ত্তী কে অপসারণ ভৈরবে প্রতিবেশীর ওয়ার্ডপের ভিতর এক শিশুর মরদেহ কোস্ট গার্ডের অভিযানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে ০৫ টি ড্রেজারসহ ১৪ জন আটক অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান, জরিমানা কটিয়াদীর মন্ডলভোগে গুণীজন সম্মাননা, সাহিত্য ও বই উৎসব- ২০২৪ প্রেমের টানে ইউক্রেনের যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বছরের বাজার: নিত্যপণ্যের দামে অস্থিরতা, মধ্যবিত্তের দুর্ভোগ এক বলে ১৫ রান, বিপিএলে বিশ্বরেকর্ড থার্টি-ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, ফানুস বন্ধে থাকবে মোবাইল কোর্ট: পরিবেশ উপদেষ্টা

জুলাই গণঅভ্যুত্থান মামলা: পুলিশের থেকে ঘুষ নিচ্ছে পুলিশ

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৫ ৫০০০.০ বার পাঠক

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রামপুরায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক অনুপ বিশ্বাস ইটের আঘাতে মাথায় আহত হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দেড় মাস পর তিনি জানতে পারেন যে, ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ে বিক্ষোভে একজন আহত হওয়ার ঘটনায় তাকে ১৭ অক্টোবর দায়ের হওয়া হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে, যদিও তখন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এক সহকর্মী পরে জানান, তাকে এক লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। টাকা না দিলে তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।

অনুপ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এ কারণে ঘুষ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

অনুপ বলেন, ‘আমি যখন হাসপাতালে মৃত্যুর লড়ছি, তখন জানতে পারি আমাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় আসামি করা হয়েছে।’

‘যখন আমি হাসপাতালের বিছানায় অজ্ঞান তখন কিভাবে এই অপরাধ করলাম?’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

অনুপ বলেছেন, টাকা দিতে অস্বীকার করার পরে তাকে একাধিক হত্যা মামলায় আসামি করার হুমকি দেওয়া হয়।

আন্দোলন চলাকালে আহাদুল ইসলাম নামের একজনকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অনুপকে আসামি করা হয়। এই মামলায় মোট ১৭৯ জন আসামির মধ্যে পুলিশ ৩৬ জন। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকেও এই মামলায় আসামি করা হয়। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

সময়ের কন্ঠ এমন সাতটি ঘটনা জানতে পেরেছে যেখানে পুলিশ এবং বিএনপির স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের কাছে টাকা দাবি করার অভিযোগ রয়েছে।

আহত আহাদুলের বাবা মোহাম্মদ বাকের বনশ্রী এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন। বনশ্রী থানায় দায়ের করা মামলাটির বাদী তিনি। মামলায় জেড আই খান পান্নার নাম নিয়ে বিতর্ক উঠলে বাকের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি আসামিদের কাউকে চেনেন না।

বাকের মোবাইলে সময়ের কন্ঠকে বলেন, ‘জসিম নামে একজন আইনজীবী এবং আরও কয়েকজন আসামিদের তালিকা তৈরি করেছেন। আমি কেবল এফআইআরে সই করেছি। আমি আমার ছেলের জন্য ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম। আমি মামলা করার জন্য তাদের সাহায্য চেয়েছিলাম।’

আইনজীবী জসিমের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি বাকের। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও জসিমের খোঁজ পায়নি দ্য ডেইলি স্টার।

ওই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগ, তাদের কিছু সহকর্মী স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মিলে একটি চাঁদাবাজ চক্র তৈরি করেছেন। সহজে ফাঁসানো যাবে পুলিশের এমন সদস্যদের টার্গেট করছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা ছাত্র আন্দোলন দমনে সক্রিয় ছিল। এখন তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাদের অপকর্ম ঢাকতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও সুবিধা আদায়ের জন্য কিছু পুলিশ কর্মকর্তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সুযোগ নিচ্ছেন। টাকা না দিলে আরও হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন তারা।

মামলার আসামি তালিকায় নাম থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পদবী অনুযায়ী টাকা দাবি করা হচ্ছে। পরিদর্শকদের কাছে দুই লাখ টাকা, উপপরিদর্শক এক লাখ টাকা ও সহকারী উপপরিদর্শকদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।

গত ১৯ জুলাই রামপুরার ঘটনায় যেসব পুলিশ সদস্য গুলি চালিয়েছিলেন অন্য মামলায় তাদের নাম উঠে এসেছে। তবে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বাকেরের দায়ের করা মামলায় তাদের নাম নেই। এ থেকে ধারণা করা যায়, বেছে বেছে কিছু মানুষের বিরুদ্ধেই এই মামলা দেওয়া হয়। এই মামলার প্রথম এফআইআর ও পরে সংশোধিত এফআইআরের কপি রয়েছে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

এই মামলায় অনুপের পাশাপাশি উপপরিদর্শক রাশেদুর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার নথি অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে রাশেদুরের বিরুদ্ধে।

তবে ভাসানটেক থানার নথিপত্রে দেখা যায়, ঘটনার ১১ দিন আগে ৮ জুলাই তাকে রামপুরা থেকে ভাসানটেকে বদলি করা হয়।

রাশেদুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ভাসানটেক ও রামপুরার দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ভাসানটেক থেকে রামপুরায় গুলি চালানো বা একই দিনে একজনের পক্ষে দুই জায়গায় দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।

এসআই রাশেদুরও কোনো টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, যে অপরাধ আমি করিনি তার জন্য মামলা থেকে নাম বাদ দিতে কেন টাকা দেব আমি?।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জুলাই গণঅভ্যুত্থান মামলা: পুলিশের থেকে ঘুষ নিচ্ছে পুলিশ

আপডেট টাইম : ০৯:১৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রামপুরায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক অনুপ বিশ্বাস ইটের আঘাতে মাথায় আহত হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দেড় মাস পর তিনি জানতে পারেন যে, ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ে বিক্ষোভে একজন আহত হওয়ার ঘটনায় তাকে ১৭ অক্টোবর দায়ের হওয়া হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে, যদিও তখন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এক সহকর্মী পরে জানান, তাকে এক লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। টাকা না দিলে তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।

অনুপ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এ কারণে ঘুষ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

অনুপ বলেন, ‘আমি যখন হাসপাতালে মৃত্যুর লড়ছি, তখন জানতে পারি আমাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় আসামি করা হয়েছে।’

‘যখন আমি হাসপাতালের বিছানায় অজ্ঞান তখন কিভাবে এই অপরাধ করলাম?’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

অনুপ বলেছেন, টাকা দিতে অস্বীকার করার পরে তাকে একাধিক হত্যা মামলায় আসামি করার হুমকি দেওয়া হয়।

আন্দোলন চলাকালে আহাদুল ইসলাম নামের একজনকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অনুপকে আসামি করা হয়। এই মামলায় মোট ১৭৯ জন আসামির মধ্যে পুলিশ ৩৬ জন। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকেও এই মামলায় আসামি করা হয়। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

সময়ের কন্ঠ এমন সাতটি ঘটনা জানতে পেরেছে যেখানে পুলিশ এবং বিএনপির স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের কাছে টাকা দাবি করার অভিযোগ রয়েছে।

আহত আহাদুলের বাবা মোহাম্মদ বাকের বনশ্রী এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন। বনশ্রী থানায় দায়ের করা মামলাটির বাদী তিনি। মামলায় জেড আই খান পান্নার নাম নিয়ে বিতর্ক উঠলে বাকের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি আসামিদের কাউকে চেনেন না।

বাকের মোবাইলে সময়ের কন্ঠকে বলেন, ‘জসিম নামে একজন আইনজীবী এবং আরও কয়েকজন আসামিদের তালিকা তৈরি করেছেন। আমি কেবল এফআইআরে সই করেছি। আমি আমার ছেলের জন্য ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম। আমি মামলা করার জন্য তাদের সাহায্য চেয়েছিলাম।’

আইনজীবী জসিমের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি বাকের। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও জসিমের খোঁজ পায়নি দ্য ডেইলি স্টার।

ওই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগ, তাদের কিছু সহকর্মী স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মিলে একটি চাঁদাবাজ চক্র তৈরি করেছেন। সহজে ফাঁসানো যাবে পুলিশের এমন সদস্যদের টার্গেট করছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা ছাত্র আন্দোলন দমনে সক্রিয় ছিল। এখন তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাদের অপকর্ম ঢাকতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও সুবিধা আদায়ের জন্য কিছু পুলিশ কর্মকর্তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সুযোগ নিচ্ছেন। টাকা না দিলে আরও হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন তারা।

মামলার আসামি তালিকায় নাম থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পদবী অনুযায়ী টাকা দাবি করা হচ্ছে। পরিদর্শকদের কাছে দুই লাখ টাকা, উপপরিদর্শক এক লাখ টাকা ও সহকারী উপপরিদর্শকদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।

গত ১৯ জুলাই রামপুরার ঘটনায় যেসব পুলিশ সদস্য গুলি চালিয়েছিলেন অন্য মামলায় তাদের নাম উঠে এসেছে। তবে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বাকেরের দায়ের করা মামলায় তাদের নাম নেই। এ থেকে ধারণা করা যায়, বেছে বেছে কিছু মানুষের বিরুদ্ধেই এই মামলা দেওয়া হয়। এই মামলার প্রথম এফআইআর ও পরে সংশোধিত এফআইআরের কপি রয়েছে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

এই মামলায় অনুপের পাশাপাশি উপপরিদর্শক রাশেদুর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার নথি অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে রাশেদুরের বিরুদ্ধে।

তবে ভাসানটেক থানার নথিপত্রে দেখা যায়, ঘটনার ১১ দিন আগে ৮ জুলাই তাকে রামপুরা থেকে ভাসানটেকে বদলি করা হয়।

রাশেদুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ভাসানটেক ও রামপুরার দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ভাসানটেক থেকে রামপুরায় গুলি চালানো বা একই দিনে একজনের পক্ষে দুই জায়গায় দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।

এসআই রাশেদুরও কোনো টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, যে অপরাধ আমি করিনি তার জন্য মামলা থেকে নাম বাদ দিতে কেন টাকা দেব আমি?।