পীরগঞ্জে সিনুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত
- আপডেট টাইম : ০৪:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
- / ২ ৫০০০.০ বার পাঠক
পীরগঞ্জে সিনুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত। ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার এই বালিকা বিদ্যালয়টি ঘিরে প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগম অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্য ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠানরুপে গড়ে তোলা সহ সহকারি একজন শিক্ষককে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ভুক্তভোগীগন লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিনে তদন্ত করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুল্লাহ। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় বিদ্যালয়ের সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধান মালা-২০২৪ এর (৫৩)১ অনুচ্ছেদ মতে প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগমকে বরখাস্ত করা হযেছে। তথ্য বিবরনি মতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও অভিযোগের পর এবার খোদ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি, বৈষম্য, স্বজনপ্রীতি, সহকারী একজন শিক্ষককে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করায় এবং অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ৭ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ের সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে ১৫/০৯/২৪ ইং তারিখে লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন সিনুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার একান্ত পারিবারিক স্কুল হিসেবে পরিচালনা করে আসা সহ ১৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাছাড়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে দীর্ঘ ১৪ বছর নিয়োজিত ছিলেন প্রধান শিক্ষকের চাচা শশুর ইসাহাক আলী। ৫ আগস্টের পর নির্বাহী আদেশে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম। গত ১৭/১১/২৪ ইং তারিখে সরজমিনে গিয়ে জানা যায় প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগম তার স্বামী রশিদুল হককে অফিস সহকারী পদে, দেবর মাসুদ রানাকে সহকারী শিক্ষক পদে, নাতি তাজেল রানাকে অফিস সহায়ক পদে, নাতি রবিউল ইসলাম কে নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়া অনান্য পদে নিয়োগ বানিজ্য ও বেশ কয়েকটি গাছ বিক্রয় করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে মাঠে গো-চারণ ভুমিতে পরিনত হওয়া সহ মাঠে ধান শুকানো ও খরকুটা শুকানোর দৃশ্য চোখে পড়েছে। মাঠের চারপাশ বন জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। মুল গেটের সামনে পথচারীর যাতায়াতের রাস্তায় পরিনত হয়েছে। বিদ্যালয়ের ঘরের বারান্দা কোনমতো খুটির ওপরে থাকলেও শ্রেণিকক্ষ জরাজির্ন অবস্থা। বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ-দশম শ্রেণী পর্যন্ত কাগজ কলমে শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও ক্লাসে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থীর দেখা মেলে। দেখলে মনে হয় না এটি একটি এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব নিয়ে প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগমের নিকট জানতে চাইলে তাকে পাওয়া যায় নি। বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক এর নিকট জানতে চাইলে জানান প্রধান শিক্ষক হচ্ছে তার স্ত্রী। তিনি বহিষ্কার আদেশ পাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসেন না। অনিয়ম দুনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন এসব অনিয়ম হবেই সকল পর্যায় কমবেশি হচ্ছে। আরো বলেন বিদ্যালয়টি তারাই গড়ে তোলেছেন তাই খেয়াল খুশি কোন ব্যপার না। এসময় অফিস সহায়ক তাজেল রানা জানান বিদ্যালয়ের এসব ঘটনার পর বহু রকম মানুষজন আসছে এবং জেনে কিছুই করতে পারেনি। কেননা উপর মহলের শক্ত হাত রয়েছে তাই ম্যানেজ করেই চলছেন তারা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেবেন চন্দ্র রায় জানান বিদ্যালয়টি পারিবারিক ভাবে কাজ করেন প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগম। কোন কিছু বললে হুমকি প্রদান করেন তিনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুল্লাহ এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে এলাকার গুণীজনেরা আপাদমস্তক দুর্নীতিতে জড়িত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও বিদ্যালয়ের সমুদয় আর্থিক কেলেঙ্কারির হিসাবাদি নিষ্পত্তি করা সহ বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ পূর্বক তা দ্রুত বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা ঝড় বইছে।