ঢাকা ১২:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
রায়পুরে দেশীয় শিল্প ও পণ্য মেলায় ভ্রাম্যমান আদালত, নগদ অর্থদণ্ড কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উঠান বৈঠক ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  মোংলায় জলবায়ু ন্যায্যতার গণসংলাপে বক্তারা : সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা দিন অভিনব কায়দায় কুমড়া শাকের আড়ালে গাঁজা পাচারকালে ডিএনসি- কুমিল্লার হাতে ১৩ কেজি গাঁজাসহ আটক ০২ নারী মঠবাড়ীয়া সাফলেজা কচুবাড়ীয়া বসত ঘর ভাঙচুর লুটপাট ও যখম এর অভিযোগ আঃ খালেক হাওলাদার গংদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আখড়া বরগুনার পাসপোর্ট অফিস, দালাল ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট কাশেমপুর থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে বিট্টিমরাই স্কুল ছাত্র মোঃ রাব্বি নিজ খালাকে আটকিয়ে ? ওসি সাইফুল ইসলাম মোটা অংকের টাকার বিনিময় তাদের আসামি করে গ্রেফতার দেখান আনন্দবাজারকে ডা. শফিকুর রহমান কোনও রাজনৈতিক দলকে খারিজ বা সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই রাজনৈতিক দলগুলো যদি বলে যে তারা সংস্কার চায় না, তাহলে এখনই নির্বাচন দিয়ে দেবো: ড. ইউনূস দেশবাসীকে ফের কাঁদালেন শহিদ নাফিজের মা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মৃত্যু যন্ত্রণায় দিন কাটছে গুলিবিদ্ধ জব্বারের

বগুড়ার সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : ১১:৩০:০০ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩০ ৫০০০.০ বার পাঠক

মৃত্যু যন্ত্রণায় দিন কাটছে গুলিবিদ্ধ জব্বারের
নর্দান ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুল জব্বার। কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়। সরকার পতনের আগের দিন গত ৪ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনরত অবস্থায় বুকে, মাথায় ও কোমরে গুলিবিদ্ধ হন। পাশে থাকা বন্ধুরা প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অপারেশনের মাধ্যমে তার মাথা ও বুক থেকে গুলি বের করা হলেও কোমরেরটা বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। দুদিন হাসপাতালে রাখার পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে।

জব্বারের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কালিপুর কালীবাড়ি গ্রামে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। মা প্রবাসে থাকেন। একমাত্র বোনকে নিয়ে আশুলিয়ায় থাকতেন জব্বার। বোন সেখানে কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাবা আবুল কালাম আজাদ ব্যবসায়ী ছিলেন, এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।

চিকিৎসার সবশেষ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, যত দ্রুত সম্ভব গুলি বের করা না হলে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হতে পারেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটের কারণে দুই মাস পার হলেও কোমরের গুলি বের করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে আমার দিন কাটছে।

গত ৪ আগস্ট ঘটে যাওয়া নির্মমতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন সকালে আশুলিয়া থেকে শাহবাগে যেতে চেয়েছিলাম। পরে কিছুক্ষণ ওখানে থেকে বাসায় চলে আসি। আবার কিছুক্ষণ পর বাসা থেকে ইপিজেডের সামনে যাই। সেখানে প্রচুর ছাত্র-জনতা জড়ো হচ্ছিলো। আমি তাদের সঙ্গে মিছিলে যাই। আশুলিয়া থানার সামনে যাওয়ার পরে দেখি পুলিশের গুলিতে অনেকে আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল। এ সময় পুলিশ সদস্যরা মসজিদের দিকে চলে যায়। তখন তারা আমাদের ওপরে কিছু করবে না বলে জানায়। আমরা এ সময় মিছিল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। তখন পুলিশ আমাদের একদম কাছাকাছি। এ সময় তারা আমাদের থানার দিকে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং গুলি ছুড়তে থাকে। বেশিরভাগ গুলি ছুড়েছে ছাদ এবং টাওয়ারের ওপর থেকে। আমরা কখনো বুঝতে পারিনি এভাবে গুলি করবে। জীবন বাঁচাতে সবাই এদিকে-সেদিকে ছোটাছুটি শুরু করে। এ সময় আমার শরীরে গুলি লাগে।

জব্বার বলেন, আহত হওয়ার পর আশুলিয়ার একটি হাসপাতালে নিলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। ব্যথা কমলে পরের দিন সকালে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে দুইদিন রেখে১৪ দিন পরে আবার হাসপাতালে যেতে বলা হয়। পরে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক জানান, অপারেশন করার দরকার নেই, যেভাবে আছে সেভাবেই থাকুক। অপারেশন করলে অনেক ঝুঁকি হয়ে যাবে।

এরপর নিজ উদ্যোগে পিজিতে ভর্তি হই। সেখানে প্রায় ১০-১১ দিনের মতো ভর্তি ছিলাম। চিকিৎসকরা একটি বোর্ড গঠন করেছিলেন। তারা জানান, অপারেশন করলে প্যারালাইজড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নাহলে বুলেট যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে। আমার এখন চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। হাঁটা-চলা বেশি করলে পায়ে অনেক ব্যথা হয়। যদি বিদেশে যাওয়া লাগে তাহলে তো অনেক অর্থের প্রয়োজন। আর অপারেশনটি করলে যদি আরও খারাপ কিছু হয় সেজন্য চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আমার যদি কিছু হলে মা-বোনকে দেখবে কে।

তিনি আরও বলেন, থার্ড সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে দিতে পারছি না। পড়াশোনায়ও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এক সময় চিন্তা করতাম বিদেশ যাবো। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর মনে হচ্ছে দেশে থেকেই ভালো কিছু করবো। তবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে হচ্ছে। মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা চলে এসেছে যে, গুলিটা শরীরে থাকলে ভবিষ্যতে বড় কোনো সমস্যা হবে কিনা। আগে একটা স্বাভাবিক শরীর নিয়ে চলাফেরা করেছি, এখন ভিন্ন। সবসময় মনে হয় আমার হিপ জয়েন্টের মধ্যে কিছু একটা আছে।

জব্বারের বোন স্বর্ণা বলেন, ভাইকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। বাবা নেই, ভেবেছিলাম ভাইয়া লেখাপড়া করে সংসারে হাল ধরবে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না দিতে পারলে তো ভাইয়া আর ভালো হতে পারবে না। ভাইয়া যেন চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সেজন্য সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মৃত্যু যন্ত্রণায় দিন কাটছে গুলিবিদ্ধ জব্বারের

আপডেট টাইম : ১১:৩০:০০ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

মৃত্যু যন্ত্রণায় দিন কাটছে গুলিবিদ্ধ জব্বারের
নর্দান ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুল জব্বার। কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়। সরকার পতনের আগের দিন গত ৪ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনরত অবস্থায় বুকে, মাথায় ও কোমরে গুলিবিদ্ধ হন। পাশে থাকা বন্ধুরা প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অপারেশনের মাধ্যমে তার মাথা ও বুক থেকে গুলি বের করা হলেও কোমরেরটা বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। দুদিন হাসপাতালে রাখার পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে।

জব্বারের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কালিপুর কালীবাড়ি গ্রামে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। মা প্রবাসে থাকেন। একমাত্র বোনকে নিয়ে আশুলিয়ায় থাকতেন জব্বার। বোন সেখানে কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাবা আবুল কালাম আজাদ ব্যবসায়ী ছিলেন, এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।

চিকিৎসার সবশেষ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, যত দ্রুত সম্ভব গুলি বের করা না হলে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হতে পারেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটের কারণে দুই মাস পার হলেও কোমরের গুলি বের করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে আমার দিন কাটছে।

গত ৪ আগস্ট ঘটে যাওয়া নির্মমতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন সকালে আশুলিয়া থেকে শাহবাগে যেতে চেয়েছিলাম। পরে কিছুক্ষণ ওখানে থেকে বাসায় চলে আসি। আবার কিছুক্ষণ পর বাসা থেকে ইপিজেডের সামনে যাই। সেখানে প্রচুর ছাত্র-জনতা জড়ো হচ্ছিলো। আমি তাদের সঙ্গে মিছিলে যাই। আশুলিয়া থানার সামনে যাওয়ার পরে দেখি পুলিশের গুলিতে অনেকে আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল। এ সময় পুলিশ সদস্যরা মসজিদের দিকে চলে যায়। তখন তারা আমাদের ওপরে কিছু করবে না বলে জানায়। আমরা এ সময় মিছিল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। তখন পুলিশ আমাদের একদম কাছাকাছি। এ সময় তারা আমাদের থানার দিকে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং গুলি ছুড়তে থাকে। বেশিরভাগ গুলি ছুড়েছে ছাদ এবং টাওয়ারের ওপর থেকে। আমরা কখনো বুঝতে পারিনি এভাবে গুলি করবে। জীবন বাঁচাতে সবাই এদিকে-সেদিকে ছোটাছুটি শুরু করে। এ সময় আমার শরীরে গুলি লাগে।

জব্বার বলেন, আহত হওয়ার পর আশুলিয়ার একটি হাসপাতালে নিলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। ব্যথা কমলে পরের দিন সকালে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে দুইদিন রেখে১৪ দিন পরে আবার হাসপাতালে যেতে বলা হয়। পরে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক জানান, অপারেশন করার দরকার নেই, যেভাবে আছে সেভাবেই থাকুক। অপারেশন করলে অনেক ঝুঁকি হয়ে যাবে।

এরপর নিজ উদ্যোগে পিজিতে ভর্তি হই। সেখানে প্রায় ১০-১১ দিনের মতো ভর্তি ছিলাম। চিকিৎসকরা একটি বোর্ড গঠন করেছিলেন। তারা জানান, অপারেশন করলে প্যারালাইজড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নাহলে বুলেট যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে। আমার এখন চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। হাঁটা-চলা বেশি করলে পায়ে অনেক ব্যথা হয়। যদি বিদেশে যাওয়া লাগে তাহলে তো অনেক অর্থের প্রয়োজন। আর অপারেশনটি করলে যদি আরও খারাপ কিছু হয় সেজন্য চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আমার যদি কিছু হলে মা-বোনকে দেখবে কে।

তিনি আরও বলেন, থার্ড সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে দিতে পারছি না। পড়াশোনায়ও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এক সময় চিন্তা করতাম বিদেশ যাবো। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর মনে হচ্ছে দেশে থেকেই ভালো কিছু করবো। তবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে হচ্ছে। মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা চলে এসেছে যে, গুলিটা শরীরে থাকলে ভবিষ্যতে বড় কোনো সমস্যা হবে কিনা। আগে একটা স্বাভাবিক শরীর নিয়ে চলাফেরা করেছি, এখন ভিন্ন। সবসময় মনে হয় আমার হিপ জয়েন্টের মধ্যে কিছু একটা আছে।

জব্বারের বোন স্বর্ণা বলেন, ভাইকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। বাবা নেই, ভেবেছিলাম ভাইয়া লেখাপড়া করে সংসারে হাল ধরবে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না দিতে পারলে তো ভাইয়া আর ভালো হতে পারবে না। ভাইয়া যেন চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সেজন্য সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।