ডিসি পদে পদায়ন প্রক্রিয়ায় গলদ!
- আপডেট টাইম : ০৬:২৩:২৯ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
# ৯ ডিসির নিয়োগ বাতিল, চার ডিসি রদবদল # পদবঞ্চিতদের হট্টগোলে তদন্ত কমিটি গঠন
# ডিসি হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি: স্বাস্থ্যসচিব
জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই গলদ দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে দেশের ৫৯ জেলা প্রশাসক পদায়ন করা হয়। মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালনকালে এসব কর্মকর্তার বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় পদায়নের পর থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আওয়ামীপন্থী দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া দক্ষ ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে ৯ জেলা প্রশাসকের পদায়ন বাতিল করা হয়। রদবদল করা হয় চারটি জেলার জেলা প্রশাসককে। এক দিনের ব্যবধানে ১৩ ডিসির নিয়োগে এমন পরিবর্তন করায় পদায়ন-প্রক্রিয়াতেই গলদ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক পরিবর্তনের জন্য ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের ৬১৮ জন কর্মকর্তার মৌখিক পরীক্ষা নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর গত দুই দিনে ৫৯ জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আট জন রয়েছেন, যারা শেখ হাসিনার শাসনামলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে কাজ করেছেন। আট জন রয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। যদিও এই দুই মন্ত্রণালয়ে পদায়নের সময় তাদের রাজনৈতিক অবস্থান কঠিনভাবে পর্যালোচনা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক না হলে এই দুই মন্ত্রণালয়ে পদায়ন পাওয়া সম্ভব হয় না। অথচ স্বৈরাচারী পতনের পর সেই সরকারের সমর্থক ও সুবিধাভোগী এই ১৬ কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীর একান্ত সচিব, স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতির মেয়ে ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নেতার স্ত্রীকে জেলা প্রশাসক পদায়ন করা হয়েছে। বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করেছেন, এমন কর্মকর্তাও রয়েছেন কয়েক জন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে এই পদায়ন-প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এটি অনুসরণ করলে আগের সরকারের দলীয় বিবেচনায় যারা ফিটলিস্টে ছিলেন, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ফিটলিস্টে আসার কথা না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, জেলা প্রশাসক পদায়নের জন্য যে তালিকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হচ্ছে, তা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে। সেখানে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা এই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন।
৯ ডিসির নিয়োগ বাতিল, চার ডিসির রদবদল :জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আট জন জেলা প্রশাসকের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া চার জন জেলা প্রশাসকের জেলা রদবদল করা হয়েছে। নিয়োগ ও বদলি চলমান প্রক্রিয়া; বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পদায়ন ও বদলি চলমান থাকবে। জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ী জেলা ডিসির নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার সিলেটের ডিসি নিয়োগ বাতিল করা হয়। এছাড়া টাঙ্গাইলের ডিসিকে পঞ্চগড়, নীলফামারীর ডিসিকে টাঙ্গাইল, নাটোরের ডিসিকে লক্ষ্মীপুর এবং পঞ্চগড়ের ডিসিকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়েছে।
সচিবালয়ে ডিসি হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি: সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি বলে মনে করেন ডিসি নিয়োগ নিয়ে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের হট্টগোল তদন্তে গঠিত কমিটির একমাত্র সদস্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার প্রত্যাহার: ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাবিরুল ইসলাম ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. জাকির হোসেনকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশের আট বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার আট জন বিভাগীয় কমিশনার রয়েছেন। অন্যদেরও সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।