ঢাকা ০২:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
ফরজ বিধান পর্দা যেখানে নাই, সেখানে রহমত নাই -ছারছীনার পীর ছাহেব ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে রেস্তোরা মালিক, শ্রমিকের মানববন্ধন টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করায় বিএনপির মহাসচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ! ব্যাংক খাত ধ্বংসের শুরুটা হয় এসকে সুরের হাত দিয়ে গ্যাস-সংকটে চট্টগ্রামে দেশি বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা মাত্র ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলে নতুন বিনিয়োগ বাড়বে ঢাকা রাজধানী শাজাহানপুর ডাকাতি মামলার আসামি গ্রেফতার করেছে পুলিশ গাজীপুরে প্রতিবেশীদের হামলায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ আহত দুই: তদন্তে পুলিশ নাসিরনগরে মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক এ্যাডভোকেসী সভা ভৈরবে আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত অফিস থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার ঠাকুরগাঁওয়ে সীমান্তে বিএসএফ’র হাতে বাংলাদেশী আটক

গাজী টায়ারসের কারখানায় ঢুকে মানুষের খুলি, হাড়সদৃশ বস্তু পেল স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিনিধি , নারায়ণগঞ্জ
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৪:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৫৯ ৫০০০.০ বার পাঠক

গাজী টায়ারসের পোড়া ভবনের ভেতর থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়তলা ভবনটিতে ঢুকে মানুষের মাথার খুলি, হাড়গোড় পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। ভবনটিতে পাওয়া দেহাবশেষ পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।

আজ রোববার নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক গাজী টায়ারসের আগুন নিয়ে গণশুনানি করেন। গণশুনানি শেষে স্বজনরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে ঢুকে পড়েন। তাদের অনেকে ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যান। সেখানে তারা মেঝেতে পুড়ে যাওয়া বেশকিছু হাড় ও মাথার খুলি পান।

গত ২৫ আগস্ট দিনভর লুটপাটের পর রাতে কারখানাটিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন উপজেলার মৈকুলী গ্রামের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি শাহাদাত হোসেন। ভাইয়ের খোঁজে অন্যদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যান সিনথিয়া। সেখানে একটি মাথার খুলি পান তিনি যার অধিকাংশই পুড়ে গেছে।

সিনথিয়া বলেন, ‘সবার সঙ্গে আমিও ফ্যাক্টরিতে ঢুইকা যাই। তিনতলায় হাড়গোড় দেখছি অনেক। অনেকেই হাতে নিয়া গেছে। আমিও একটা খুলি নিয়া আসছি।’

আরও

‘আল্লাগো, আমার মার কোলটা যেন খালি না হয়’

যদিও পরে অন্যদের মতো তিনিও পরে খুলিটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

এর আগে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি কারখানার চত্বরে একটি গণশুনানির আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত চলে গণশুনানি। এই সময় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির লোকজন। তাদের কাছ থেকে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

গণশুনানিতে ৭৮টি পরিবার অংশগ্রহণ করেন বলে জানান কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান।

‘আমরা যখন গণশুনানি শেষে উপজেলা পরিষদে গিয়ে বসি তখন জানতে পারি স্বজনরা ভবনটির ভেতরে ঢুকে পড়েছে এবং সেখানে মানুষের কিছু হাড়গোড় পেয়েছে। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাদের নির্দেশনা দেন। পরে আমরা এসব দেহাবশেষ সংগ্রহ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেই। স্বজনরা খুঁজে পাওয়া দেহাবশেষ জমা দিয়েছেন। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এসব দেহাবশেষ শনাক্তের প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে’, বলেন হামিদুর।

গাজী টায়ার কারখানা
আরও

‘তোমরা তো ভিতরে যাও, আমার বাবার খবরডা লইও’

এদিকে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গণশুনানি চলাকালে স্বজনদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে সামনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় ১০ মিনিট পর তদন্ত কমিটির সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বজনদের নিবৃত্ত করে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।

নিখোঁজ ব্যাটারি কারখানার শ্রমিক আমান উল্লাহর বৃদ্ধা মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘দিনের পর দিন যাইতাছে অথচ কেউ কইতাছে না আমার পোলা কই আছে। এতো লোক এনে আইতাছে কেউ লাশের কোন খোঁজ জানাইতে পারতাছে না। আগুনে পুইড়া গেলে হাড্ডিগুড্ডি অইলেও দিতে অইব। লাশ না পাইলে আমরা কারখানার সামনে থেইকা যামু না।’

আগুনের ঘটনার পাঁচ দিন পর গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় ছয়তলা ভবনটির আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হলে অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম শেষ করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।

তখন নারায়ণগঞ্জ জোন-২ এর উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মন্নান জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি। তবে, ভবনের বেজমেন্টে তল্লাশি চালানো হয়েছে, ড্রোন ও টিটিএলের (উঁচু মই) মাধ্যমে ভবনটির ভেতরেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে কিন্তু কোনো ভিক্টিম বা তাদের দেহাবশেষ মেলেনি।

আরও

গাজী টায়ারস: মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে লুটপাট-আগুন, নিখোঁজ অন্তত ১৭৪

 

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

গাজী টায়ারসের কারখানায় ঢুকে মানুষের খুলি, হাড়সদৃশ বস্তু পেল স্বজনরা

আপডেট টাইম : ০৪:৫৪:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গাজী টায়ারসের পোড়া ভবনের ভেতর থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়তলা ভবনটিতে ঢুকে মানুষের মাথার খুলি, হাড়গোড় পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। ভবনটিতে পাওয়া দেহাবশেষ পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।

আজ রোববার নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক গাজী টায়ারসের আগুন নিয়ে গণশুনানি করেন। গণশুনানি শেষে স্বজনরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে ঢুকে পড়েন। তাদের অনেকে ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যান। সেখানে তারা মেঝেতে পুড়ে যাওয়া বেশকিছু হাড় ও মাথার খুলি পান।

গত ২৫ আগস্ট দিনভর লুটপাটের পর রাতে কারখানাটিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন উপজেলার মৈকুলী গ্রামের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি শাহাদাত হোসেন। ভাইয়ের খোঁজে অন্যদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যান সিনথিয়া। সেখানে একটি মাথার খুলি পান তিনি যার অধিকাংশই পুড়ে গেছে।

সিনথিয়া বলেন, ‘সবার সঙ্গে আমিও ফ্যাক্টরিতে ঢুইকা যাই। তিনতলায় হাড়গোড় দেখছি অনেক। অনেকেই হাতে নিয়া গেছে। আমিও একটা খুলি নিয়া আসছি।’

আরও

‘আল্লাগো, আমার মার কোলটা যেন খালি না হয়’

যদিও পরে অন্যদের মতো তিনিও পরে খুলিটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

এর আগে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি কারখানার চত্বরে একটি গণশুনানির আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত চলে গণশুনানি। এই সময় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির লোকজন। তাদের কাছ থেকে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

গণশুনানিতে ৭৮টি পরিবার অংশগ্রহণ করেন বলে জানান কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান।

‘আমরা যখন গণশুনানি শেষে উপজেলা পরিষদে গিয়ে বসি তখন জানতে পারি স্বজনরা ভবনটির ভেতরে ঢুকে পড়েছে এবং সেখানে মানুষের কিছু হাড়গোড় পেয়েছে। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাদের নির্দেশনা দেন। পরে আমরা এসব দেহাবশেষ সংগ্রহ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেই। স্বজনরা খুঁজে পাওয়া দেহাবশেষ জমা দিয়েছেন। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এসব দেহাবশেষ শনাক্তের প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে’, বলেন হামিদুর।

গাজী টায়ার কারখানা
আরও

‘তোমরা তো ভিতরে যাও, আমার বাবার খবরডা লইও’

এদিকে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গণশুনানি চলাকালে স্বজনদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে সামনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় ১০ মিনিট পর তদন্ত কমিটির সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বজনদের নিবৃত্ত করে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।

নিখোঁজ ব্যাটারি কারখানার শ্রমিক আমান উল্লাহর বৃদ্ধা মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘দিনের পর দিন যাইতাছে অথচ কেউ কইতাছে না আমার পোলা কই আছে। এতো লোক এনে আইতাছে কেউ লাশের কোন খোঁজ জানাইতে পারতাছে না। আগুনে পুইড়া গেলে হাড্ডিগুড্ডি অইলেও দিতে অইব। লাশ না পাইলে আমরা কারখানার সামনে থেইকা যামু না।’

আগুনের ঘটনার পাঁচ দিন পর গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় ছয়তলা ভবনটির আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হলে অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম শেষ করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।

তখন নারায়ণগঞ্জ জোন-২ এর উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মন্নান জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি। তবে, ভবনের বেজমেন্টে তল্লাশি চালানো হয়েছে, ড্রোন ও টিটিএলের (উঁচু মই) মাধ্যমে ভবনটির ভেতরেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে কিন্তু কোনো ভিক্টিম বা তাদের দেহাবশেষ মেলেনি।

আরও

গাজী টায়ারস: মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে লুটপাট-আগুন, নিখোঁজ অন্তত ১৭৪