ঢাকা ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচনা করুন

  • জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দলমত নির্বিশেষে দেশের হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দলমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। মুজিববর্ষে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

সোমবার জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দশদিনের আয়োজনের ষষ্ঠদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক দল যখন সততা, আন্তরিকতা দিয়ে জনস্বার্থে কাজ করে তখন জাতির উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন, ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শনের মর্মার্থ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে দশদিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বঙ্গবব্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। মঙ্গলবারের আয়োজনের থিম ছিল- ‘বাংলার মাটি আমার মাটি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছি। এ দীর্ঘ সময়ে দেশের চেহারা অনেক বদলে গেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে সেই বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার পথে দ্রুত অগ্রসরমান।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, জলে-স্থলে-আকাশে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করেছেন, বাংলাদেশের স্থল ও সমুদ্রসীমা স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করেছেন। ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে যা সফলভাবে কাজ করছে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার। তারই দেখানো পথে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে অযুত বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হতে পারে, তার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধু চেয়ে অন্তরালের বঙ্গবন্ধু আরও বেশি শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালী থাকবে, এদেশের জনগণ থাকবে, ততদিনই বঙ্গবন্ধু সকলের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি বিশ্বকে করেছেন আলোকময়। তাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আস্থা, ভালবাসা ও বিশ্বাস ছিল অপরিসীম। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি বাংলার মানুষের ভালবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন। ঋণী করে গেছেন বাঙালী জাতিকে। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে।

জাতির পিতার সান্নিধ্য লাভ করা দেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও রাষ্ট্রপতি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে ইতিহাস। যে ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহুকুমার নিভৃত পল্লী টুঙ্গিপাড়া থেকে। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে অন্যকে নিয়ে ভাবতেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আরও বলেন, দেশ বিভাগের কিছুদিন পরই তরুণ নেতা শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন, ব্রিটিশ পরাধীনতার কবল থেকে মুক্তি পেলেও বাঙালী নতুন করে পশ্চিমাদের শোষণের কবলে পড়েছে। শুরু করেন বাঙালীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন। ১৯৫৭ সালের ৩০ মে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার স্বার্থে জোট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন বঙ্গবন্ধু। দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর কতটা আনুগত্য, আন্তরিকতা ও টান ছিল মন্ত্রিপরিষদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণ সভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-‘জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি আমাদের আবাসভূমির নাম পূর্ব পাকিস্তান নয়, হবে বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনে কাজ শুরু করেন। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলে দেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম। দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তিনি ১১৬টি দেশের স্বীকৃতি ও ২৭টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধুকে বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামে অনবদ্য ত্যাগ ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদান করা হয়।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন, ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শনের মর্মার্থ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে মুজিববর্ষ পালন একটি যথাযথ পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে।

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

ভৈরবে আগানগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচনা করুন

আপডেট টাইম : ০৪:৪৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১
  • জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দলমত নির্বিশেষে দেশের হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দলমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। মুজিববর্ষে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

সোমবার জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দশদিনের আয়োজনের ষষ্ঠদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক দল যখন সততা, আন্তরিকতা দিয়ে জনস্বার্থে কাজ করে তখন জাতির উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন, ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শনের মর্মার্থ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে দশদিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বঙ্গবব্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। মঙ্গলবারের আয়োজনের থিম ছিল- ‘বাংলার মাটি আমার মাটি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছি। এ দীর্ঘ সময়ে দেশের চেহারা অনেক বদলে গেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে সেই বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার পথে দ্রুত অগ্রসরমান।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, জলে-স্থলে-আকাশে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করেছেন, বাংলাদেশের স্থল ও সমুদ্রসীমা স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করেছেন। ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে যা সফলভাবে কাজ করছে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার। তারই দেখানো পথে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে অযুত বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হতে পারে, তার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধু চেয়ে অন্তরালের বঙ্গবন্ধু আরও বেশি শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালী থাকবে, এদেশের জনগণ থাকবে, ততদিনই বঙ্গবন্ধু সকলের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি বিশ্বকে করেছেন আলোকময়। তাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আস্থা, ভালবাসা ও বিশ্বাস ছিল অপরিসীম। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি বাংলার মানুষের ভালবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন। ঋণী করে গেছেন বাঙালী জাতিকে। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে।

জাতির পিতার সান্নিধ্য লাভ করা দেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও রাষ্ট্রপতি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে ইতিহাস। যে ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহুকুমার নিভৃত পল্লী টুঙ্গিপাড়া থেকে। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে অন্যকে নিয়ে ভাবতেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আরও বলেন, দেশ বিভাগের কিছুদিন পরই তরুণ নেতা শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন, ব্রিটিশ পরাধীনতার কবল থেকে মুক্তি পেলেও বাঙালী নতুন করে পশ্চিমাদের শোষণের কবলে পড়েছে। শুরু করেন বাঙালীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন। ১৯৫৭ সালের ৩০ মে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার স্বার্থে জোট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন বঙ্গবন্ধু। দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর কতটা আনুগত্য, আন্তরিকতা ও টান ছিল মন্ত্রিপরিষদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণ সভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-‘জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি আমাদের আবাসভূমির নাম পূর্ব পাকিস্তান নয়, হবে বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনে কাজ শুরু করেন। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলে দেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম। দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তিনি ১১৬টি দেশের স্বীকৃতি ও ২৭টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধুকে বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামে অনবদ্য ত্যাগ ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদান করা হয়।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন, ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শনের মর্মার্থ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে মুজিববর্ষ পালন একটি যথাযথ পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে।