পুলিশকে না জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের দোহায় দিয়ে লাশ দাফন
- আপডেট টাইম : ০৯:০৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪
- / ১৬৬ ৫০০০.০ বার পাঠক
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের টাটকপুর গ্রামের পূর্ব মাঠে অগভীর নলকুপের পাশ থেকে ২৭ জানুয়ারি সকালে তরিকুল ইসলাম(৪০) নামে এক ব্যক্তি মৃত দেহ উদ্ধার করে পুলিশকে অবহিত না করেই ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে দাফন সম্পন্ন করেছে নিহতের পরিবার ও অগভীর নলকুপের মালিকসহ স্থানীয় লোকজন।
নিহত তরিকুল টাটকপুর নয়াপাড়া মহল্লার অগভীর নলকুপের মালিক মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আব্দুল খালেক (৬০) এর অগভীর নলকুপের পানির লাইনম্যান ছিলেন।
এ বিষয়ে অগভীর নলকুপের মালিক আব্দুল খালেকে সাথে কথা বলতে গেলে, তাঁর বড় ছেলে সুমন হোসেন(৩৫) জানান, বাবা অসুস্থ, ওনি কথা বলতে পারবেন না। তাঁর বাবার সাথে কথার বলতে জোরাজুরি করলে আব্দুল খালেক আসেন। এরপর আব্দুল খালেক বাইরে কথা না বলে বাড়িতে আসার জন্য অনুরোধ করেন। তার অনুরোধে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে তরিকুলের মৃত্যুর বিষয় কথা বলার সময় তিনি অস্বাভাবিক কথা বার্তা বলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে উক্ত খালেকের ছেলে সুমন হোসেন বলেন, মৃত তরিকুল বিগত ৮/১০ বছর ধরে আমাদের অগভীর নলকুপের পানির লাইনম্যান হিসেবে কাজ করে আসছেন। এসময় সুমনের মা ও বাবা বলেন, শুক্রবারে সকালে তরিকুল কাজে আসবেন না বলে জানিয়ে চলে যান। এর পর থেকে আর তাকে আমার গভীর নলকুপের কাছে দেখতে পাইনি। তারা আরও জানান, প্রতিবেশিদের নিয়ে তরিকুলের মৃত দেহ উদ্ধার করে প্রলিপ্রয়াগপুর ইউপি চেয়ারম্যান রহমত আলীকে অবগত করে। চেয়ারম্যান রহমত আলী ‘কি হবে তিনিই দেখবেন’ বলে আশস্ত করে মৃত দেহ দাপনের নির্দেশ দিলে আমরা থানায় অবগত না করেই প্রতিবেশিদের নিয়ে বাদ আসর দাফন সম্পন্ন করেছি। এ বিষয়ে পলিপ্রয়াগপুর ইউপি চেয়ারম্যান রহমত আলীর ০১৭২৫০১২২৪৬ নং মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বিরামপুর পল্লবী মোড়ে এসে সাংবাদিকদের সাথে মুখোমুখি দেখা করে লাশ দাফনের অনুমতির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মৃত তরিকুলের লাশ দেখে তার পরিবারকে বলেছি, কোন অভিযোগ থাকলে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। একথা বলে আমি ঘটনাস্থল থেকে চলে এসেছি । তথ্য সংগ্রহ করে ফেরার পথে অগভীর নলকুপের মালিকের ছেলে সুমন হোসেন সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
ঘটনার বিষয়ে সরজমিনে গিয়ে তাঁর স্ত্রী সবজান বিবি (৩৭) এ প্রতিনিধিকে জানান, তাঁর স্বামী তরিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের অগভীর নলকুপ মালিক আব্দুল খালেকের বাড়িতে পানির লাইনম্যান হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ২৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টার পর বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে কাজে যান। এরপর সারারাত আর ফিরে আসেননি। পরদিন সকালে প্রতিবেশিদের মুখে শোনেন তার স্বামী তরিকুল ইসলাম মৃত অবস্থায় আব্দুল খালেকের অগভীর নলকুপের পূর্ব পার্শে সরিষাক্ষেতে পড়ে রয়েছে। এ সংবাদ শুনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
নিহত তরিকুলে বড় মেয়ে তাসলিমা (২৫) জানান, আমার বাবার কোন অসুখ বিসুখ ছিলনা। তিনি সুস্থ ছিলেন। মেজ মেয়ে তন্নি (২০) ও তাঁর স্বামী হোসাইন (২৩) জানান, আমরা গাজীপুরে দীপ গার্মেন্টে চাকরি করি । বাবার তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে তড়িঘড়ি করে এসে তাঁকে শেষ দেখাটা দেখতে পাইনি। তিনকন্যা সন্তানের জননী মৃত তরিকুলে স্ত্রী সবজান বিবি কথা বলতে বলতে কেদে বলেন, আমার স্বামী সম্পন্ন সুস্থ ছিল। সুস্থ মানুষটি বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে আর ফিরে এলোনা। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচবো বলেই তিনি হাউমাউ করে কেদে উঠলেন। তরিকুলের মৃত্যু স্বাাভাবিক না অস্বাভাবিক বলে জানতে চাইলে মা মেয়েরা সহ উপস্থিত সকলেই কোন সদোত্তর দিতে পারেনি।
এ সময় প্রতিবেশি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মৃত আলম হোসেনের ছেলে মানিক হোসেন (৪৫) জানান, মৃত তরিকুল ইসলাম, জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাদুরিয়া ইউনিয়নের রঞ্জায়পুর গ্রামের মৃত ছমিস উদ্দিনের ছেলে। সে ১৯৯৮সাল থেকে দুই বছর আমার বাড়িতে কামলা হিসেবে থাকেন। এরপর এ গ্রামেই এ বাড়ি ওবাড়ি কাজ করতেন। আমরাই সকলে মিলে গ্রামের মৃত গফুরের মেয়ে সবজানের সাথে বিয়ে দেই। সেই থেকে তিন কন্যা সন্তান ও স্ত্রী সবজানকে নিয়ে এই গ্রামে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতেন। মৃত তরিকুলের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে কথা বলতে গেলে তাঁর মোবাইলে সাংবাদিকদের ধমক দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন।
অত্র গ্রামের নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, অগভীর নলকুপ মালিক আব্দুল খালেকও একজন মাদসেবী। আব্দুল খালেকের অগভীর নলকুপ ঘরে দীর্ঘদিন ধরে তাসের জুয়া ও মাদকের আসর চলে আসছিল। ওর পাশেই ঘটনার দিন তরিকুল ইসলামের মৃত দেহ পড়ে থাকতে দেখে তাঁর মৃত্যুটি রহস্যজনক বলে মনে করছেন এলাকাবাসি। একজন মৃত ব্যক্তির লাশ মাঠের মধ্যে পড়ে থাকার বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে দাফনের বিষয়টি সচেতন মহলের সংশয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে বিরামপুর থানা অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) সুব্রত কুমার সরকারের সাথে কথা বললে, তিনি জানান, টাটকপুর মাঠের মধ্যে শনিবারে কোন মৃত ব্যক্তির লাশ পড়ে রয়েছে এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ হয়নি বা পুলিশ অবগত নয়। তবে অভিযোগ বা এ সংক্রান্ত তথ্য পেলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এলাকার সর্বস্তরের সচেতন মহল তরিকুল ইসলামের মৃত্যুটিকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে করছেন। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কশন করছেন।