প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে বাবুইপাখি
- আপডেট টাইম : ০২:৫১:০৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১২৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হলো বাবুই পাখির বাসা আর আজ সেই বাবুইপাখিই হারিয়ে যেতে বসেছে।
তালের পাতায়, নারকেলের পাতায় নিপুণ কারুকার্য করে বাবুই পাখি তার অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা তৈরি করে। এক সময় প্রকৃতি দাবিয়ে বেড়ানো এ পাখি গুলো আজ কালের বিবর্তনে বাংলার আবহমান চির চেনা সবুজ প্রকৃতি থেকে একেবারেই বিলুপ্তির পথে। বাংলার এখানে ওখানে তাল,আর নারকেল গাছের পাতায় কত না মেধা শক্তি খাটিয়ে নিজেদের থাকার আবাসস্থল গড়তো বাবুই পাখি।
কবির ভাষায় তিনি বলেছেন, বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ্ বৃষ্টি ঝরে আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা ঝরে বাবুই ডাকি বলে চড়ুই কুঁড়ে ঘরে বসে কর শিল্পের বড়াই। হ্যাঁ আবহমান গ্রাম বাংলার বাসা তৈরির যে নিঁখুত কারিগর, কবির কালজয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার নায়ক সেই বাবুই পাখি শিল্পের বড়াই করতেই পারে। তবে তাল,নারকেল গাছের স্বল্পতা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বাবুই পাখি আজ নিজেই অস্তিত্ব সংকটে আছে বলে মনে করেন অনেকেই। সকলের ধারণা একই, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে একেবারেই বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির চিরচেনা বাবুই পাখির বাসা। অথচ আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগেও আমাদের গ্রামে তাল,নারকেল গাছে দেখা মিলতো বাবুই পাখির বাসা।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো এখন আর চোখেই পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। বাবুই পাখির নিখুঁত বুননে এ বাসা টেনে ছেঁড়াও কষ্টসাধ্য। প্রতি তাল,নারকেল গাছে ১শ’ থেকে ১১০টি বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ৮-১০ দিন। খড়, কুটা, তালপাতা, খেজুর পাতা, ঝাউ ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তাল,নারকেল গাছে তাদের বাসা বাঁধে।
এ বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় লাগে, ঠিক তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ছিড়ে নিচে পড়ে না,। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির কাজ শেষ হলে সঙ্গী খুঁজতে বের হয়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করতে বাসার ভিতর এক চিমটি গোবর রেখে জোনাকি পোকা ধরে এনে তার উপর বসিয়ে দেয় এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া বাবুই পাখির গায়ে ও পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। ঠোঁট পুরো মোসাকার ও লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। অন্য সময় বাবুই পাখির পিঠের পালকের মতই বাদামি হয়।
আমরা ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার পাশে,বাড়ির উঠনের কোনে,নারকেল, তালগাছ, আর সেই তাল,নারকেল গাছের মধ্যেই অনেক বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু আগের মতো এখন আর বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ে না। একসময় পাখির কিচিরমিচির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙত। কিন্তু এখন আর পাখির সেই কিচিরমিচি শব্দও শুনা যায় না।
বাসস্থান সংকটের কারণে এ পাখি ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বাবুইপাখির বাসস্থানের প্রধান দুটি গাছ হচ্ছে তালগাছ ও নারকেল গাছ। কিন্তু এখন আর ঐ গাছগুলো বেশী নেই বললেই চলে। এজন্য পাখি গুলো চরম অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় পরিবেশ থেকে আজ বিলুপ্তির পথে এ বাবুইপাখি। এখন আমাদের সকলের উচিৎ বেশি করে তাল গাছও নারকেল গাছ লাগানো। তাল গাছ হলে যেমন আমরা বজ্রপাত থেকে অনেক টা নিরাপদে থাকবো ঠিক তেমনি নারকেল গাছ হলে আবার আমাদের অনেক রকমের চাহিদাও মিটে যাবে।
শুধু বাবুই পাখি না, জাতীয় পাখি দোয়েল, চড়ুই, শালিক, চিল, কাক, কোকিল প্রভৃতি সকল পাখিই আজ অস্তিত্ব সংকটে আছে, এখনোই যদি এ সব পাখি সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেয়া যায়, হয়তো অদুর ভবিষ্যতে এসব পাখি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে।