ঢাকা ০৮:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
বাড়ির উঠানে ধান শুকানোর সময় বজ্রপাতে গৃহবধূর মৃত্যু পটুয়াখালী আমখোলা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ রাজধানীর কালশীতে ট্রাফিক পুলিশের বক্সে আগুন দিয়েছে আন্দোলনরত অটোরিকশা চালকরা জামালপুরে পাট চাষে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নতুন পরিবেশবান্ধব আসবাবপত্র তৈরি হচ্ছে পরিত্যক্ত সুপারির খোলসে পার্বতীপুরে সেচ মৌসুম গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, বিপাকে কৃষকরা মোংলায় ফ্যামিলি সাইকেল র‍্যালি নরসিংদীতে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় মা-ছেলেসহ ৪ জনের মৃত্যু জামালপুরে ধানের বাজার মধ্যস্বত্বভোগীরদের দখলে রানীশংকৈলে জিপিএ—৫ পাওয়া ৪ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের বাধা অর্থিক সংকট

নাক ডুবিয়ে খাচ্ছেন গাজীপুর সদর এসি ল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আবদুল আলীম

গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিস কে ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে চিহ্নিত দুর্নীতির মাস্টার পুত্র সার্ভেয়ার আলীম কতিপয় দালালদের সমন্বয়ে গড়েছে সংঘবদ্ধ চক্র।

সার্ভেয়ার আলীম সদর এসি ল্যান্ড অফিসে যোগদানের পর থেকেই জনসাধারণের কাছ থেকে জমির নামজারি ও জমাভাগ বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের নজরদারির অভাবে সার্ভেয়ার আলীম চক্রটি এখন বেপরোয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের অধীন তহশিল অফিস সাতটি। অফিসগুলো হল পৌর ভূমি অফিস, সালনা ভূমি অফিস, মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বাসন ভূমি অফিস, কোনাবাড়ী ভূমি অফিস, পূবাইল ভূমি অফিস ও বাড়ীয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস।

তহশিল অফিসগুলো থেকে এসিল্যান্ড অফিসে শত শত খারিজের প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর মধ্যে মাসে প্রায় এক হাজার নথি অনুমোদন হয়।

” ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে, অনুমোদনপ্রাপ্ত নথিগুলো থেকে সার্ভেয়ার আলীম বিভিন্ন হারে ঘুষ আদায় করেন।

সার্ভেয়ার আলীমের লেনদেনের ধরন:

সেবাপ্রার্থী অনলাইনে খারিজের আবেদন করার পর এসিল্যান্ড অফিস থেকে প্রতিবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট তহশিল অফিসে পাঠানো হয়। সেখানে আবেদনে উল্লেখিত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে আবেদনকারীকে কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়। আবেদনকারী ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা উপ-সহকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলে তারা অফিসের কর্মচারী বা উমেদার নামধারী দালাল দেখিয়ে কথা বলতে বলেন।

পরে অফিস খরচের কথা বলে কাজভেদে বিভিন্ন অঙ্কের ঘুষ নেওয়া হয়। এর মধ্যে নির্দিষ্ট একটি অংশ এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার ও ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ার আলীমের কাছে জমা দেওয়া হয়। সেবাপ্রার্থী টাকা না দিলে নানা কারণ দেখিয়ে বিপক্ষে প্রতিবেদন প্রেরণ ও প্রস্তাব নামঞ্জুর করে হয়রানি করা হয়।

ডগরী মৌজায় স্ত্রী রাহেল খাতুন ও তার চার স্বজনের নামে ৪০ শতাংশ জমির খারিজের জন্য মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করেন স্বামী মোফাজ্জল হোসেন। অফিসের ভেতরে নিয়মিত কাজ করা দালাল শফিকুল ১০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের আবেদন করে দেন। সেখান থেকে প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়।

কিন্তু শফিকুল এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আলীমকে খরচ না দেওয়ায় হালসন ওয়ারিশান সনদ না থাকার কথা উল্লেখ করে প্রস্তাব বাতিল করা হয়। অথচ এসিল্যান্ড অফিস থেকে আবেদনকারীকে কিছুই জানানো হয়নি।

পরে খবর পেয়ে আবারও অনলাইনে আবেদন করা হয়। এবার শফিকুল ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ার সার্ভেয়ার আলীমের সাথে লেনদেন ঠিক রাখায় খারিজ দ্রুত অনুমোদন হয়। নথি নম্বর ১১৩৫০/২০২২-২৩।

আবেদনকারীর এক স্বজন খারিজের কপির জন্য এসিল্যান্ড অফিসে গেলে সার্ভেয়ার আলীমের পালিত দালাল শফিকুলের মাধ্যমে তাকে খারিজের কপি দেওয়া হয়।

এসিল্যান্ড অফিসের ঘুষের ক্যাশিয়ার আলীম কর্তৃক নির্ধারণ করা রেট :

গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে আগে সাধারণ খারিজে ঘুষের রেট ছিল নথিপ্রতি ১৬০০ টাকা। সার্ভেয়ার আলীম যোগদানের পর তা এক লাফে বেড়ে ৩৫০০ টাকা হয়। এ নিয়ে খোদ ভূমি অফিসের অনেকেও ক্ষুব্ধ।

এ ছাড়া অবমুক্ত হওয়া অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ তফসিলভুক্ত জমির খারিজে সার্ভেয়ার আলীম কে নয় হাজার টাকা করে দিতে হয়। জমির পরিমাণ বেশি হলে বা কাগজপত্রে কোন ত্রুটি থাকলে ৫০ হাজার টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকা লেনদেন হয় সার্ভেয়ার আলীমের সাথে এসব এখন ওপেন সিক্রেট।

প্রতি মাসে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় এক হাজার নথির মধ্যে বিশেষ কিছু বাদে বাকিগুলো থেকে সার্ভেয়ার আলীম কে ঘুষ দিতে হয়। সাধারণ খারিজের ন্যূনতম ৩৫০০ টাকা করে হিসাব ধরলেও নথিগুলো থেকে মাসে আদায়কৃত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ৩০ লাখ টাকা।

গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে আছেন সার্ভেয়ার আবদুল আলীম। অফিসের ভেতরে কাজ করা একাধিক উমেদারের মাধ্যমে তার কাছে টাকা জমা হয়। তিনি আগে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ের এসএ শাখায় ছিলেন।

কয়েকটি অফিসের বেশ কয়েকজন দালালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভূমি অফিসগুলোতে যত খারিজ হয়, তার বেশির ভাগই উমেদারদের মাধ্যমে হয়। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু করেন অফিসের কর্মচারীরা আর কিছু করেন ব্যক্তি নিজে। এসিল্যান্ড অফিসের রেট বেশি থাকায় লোকজনের কাছ থেকে টাকা বেশি নিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি আবেদনে আবেদনকারী বা তার নিকটজনের মোবাইল নম্বর উল্লেখ থাকে। কতৃর্পক্ষ এই সূত্র ধরে তদন্ত করলেই কোন খারিজ কার মাধ্যমে হচ্ছে ও কী পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে-বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে। হয়তো কিছু লোক ভয়ে কিছু বলতে চাইবেন না, তবে অনেকে সত্য বলে দিবেন।সময়ের অনুসন্ধানে চোখ রাখুন

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাড়ির উঠানে ধান শুকানোর সময় বজ্রপাতে গৃহবধূর মৃত্যু

নাক ডুবিয়ে খাচ্ছেন গাজীপুর সদর এসি ল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আবদুল আলীম

আপডেট টাইম : ০৩:২৩:৩২ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিস কে ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে চিহ্নিত দুর্নীতির মাস্টার পুত্র সার্ভেয়ার আলীম কতিপয় দালালদের সমন্বয়ে গড়েছে সংঘবদ্ধ চক্র।

সার্ভেয়ার আলীম সদর এসি ল্যান্ড অফিসে যোগদানের পর থেকেই জনসাধারণের কাছ থেকে জমির নামজারি ও জমাভাগ বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের নজরদারির অভাবে সার্ভেয়ার আলীম চক্রটি এখন বেপরোয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের অধীন তহশিল অফিস সাতটি। অফিসগুলো হল পৌর ভূমি অফিস, সালনা ভূমি অফিস, মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বাসন ভূমি অফিস, কোনাবাড়ী ভূমি অফিস, পূবাইল ভূমি অফিস ও বাড়ীয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস।

তহশিল অফিসগুলো থেকে এসিল্যান্ড অফিসে শত শত খারিজের প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর মধ্যে মাসে প্রায় এক হাজার নথি অনুমোদন হয়।

” ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে, অনুমোদনপ্রাপ্ত নথিগুলো থেকে সার্ভেয়ার আলীম বিভিন্ন হারে ঘুষ আদায় করেন।

সার্ভেয়ার আলীমের লেনদেনের ধরন:

সেবাপ্রার্থী অনলাইনে খারিজের আবেদন করার পর এসিল্যান্ড অফিস থেকে প্রতিবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট তহশিল অফিসে পাঠানো হয়। সেখানে আবেদনে উল্লেখিত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে আবেদনকারীকে কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়। আবেদনকারী ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা উপ-সহকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলে তারা অফিসের কর্মচারী বা উমেদার নামধারী দালাল দেখিয়ে কথা বলতে বলেন।

পরে অফিস খরচের কথা বলে কাজভেদে বিভিন্ন অঙ্কের ঘুষ নেওয়া হয়। এর মধ্যে নির্দিষ্ট একটি অংশ এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার ও ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ার আলীমের কাছে জমা দেওয়া হয়। সেবাপ্রার্থী টাকা না দিলে নানা কারণ দেখিয়ে বিপক্ষে প্রতিবেদন প্রেরণ ও প্রস্তাব নামঞ্জুর করে হয়রানি করা হয়।

ডগরী মৌজায় স্ত্রী রাহেল খাতুন ও তার চার স্বজনের নামে ৪০ শতাংশ জমির খারিজের জন্য মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করেন স্বামী মোফাজ্জল হোসেন। অফিসের ভেতরে নিয়মিত কাজ করা দালাল শফিকুল ১০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের আবেদন করে দেন। সেখান থেকে প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়।

কিন্তু শফিকুল এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আলীমকে খরচ না দেওয়ায় হালসন ওয়ারিশান সনদ না থাকার কথা উল্লেখ করে প্রস্তাব বাতিল করা হয়। অথচ এসিল্যান্ড অফিস থেকে আবেদনকারীকে কিছুই জানানো হয়নি।

পরে খবর পেয়ে আবারও অনলাইনে আবেদন করা হয়। এবার শফিকুল ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ার সার্ভেয়ার আলীমের সাথে লেনদেন ঠিক রাখায় খারিজ দ্রুত অনুমোদন হয়। নথি নম্বর ১১৩৫০/২০২২-২৩।

আবেদনকারীর এক স্বজন খারিজের কপির জন্য এসিল্যান্ড অফিসে গেলে সার্ভেয়ার আলীমের পালিত দালাল শফিকুলের মাধ্যমে তাকে খারিজের কপি দেওয়া হয়।

এসিল্যান্ড অফিসের ঘুষের ক্যাশিয়ার আলীম কর্তৃক নির্ধারণ করা রেট :

গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে আগে সাধারণ খারিজে ঘুষের রেট ছিল নথিপ্রতি ১৬০০ টাকা। সার্ভেয়ার আলীম যোগদানের পর তা এক লাফে বেড়ে ৩৫০০ টাকা হয়। এ নিয়ে খোদ ভূমি অফিসের অনেকেও ক্ষুব্ধ।

এ ছাড়া অবমুক্ত হওয়া অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ তফসিলভুক্ত জমির খারিজে সার্ভেয়ার আলীম কে নয় হাজার টাকা করে দিতে হয়। জমির পরিমাণ বেশি হলে বা কাগজপত্রে কোন ত্রুটি থাকলে ৫০ হাজার টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকা লেনদেন হয় সার্ভেয়ার আলীমের সাথে এসব এখন ওপেন সিক্রেট।

প্রতি মাসে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় এক হাজার নথির মধ্যে বিশেষ কিছু বাদে বাকিগুলো থেকে সার্ভেয়ার আলীম কে ঘুষ দিতে হয়। সাধারণ খারিজের ন্যূনতম ৩৫০০ টাকা করে হিসাব ধরলেও নথিগুলো থেকে মাসে আদায়কৃত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ৩০ লাখ টাকা।

গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে আছেন সার্ভেয়ার আবদুল আলীম। অফিসের ভেতরে কাজ করা একাধিক উমেদারের মাধ্যমে তার কাছে টাকা জমা হয়। তিনি আগে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ের এসএ শাখায় ছিলেন।

কয়েকটি অফিসের বেশ কয়েকজন দালালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভূমি অফিসগুলোতে যত খারিজ হয়, তার বেশির ভাগই উমেদারদের মাধ্যমে হয়। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু করেন অফিসের কর্মচারীরা আর কিছু করেন ব্যক্তি নিজে। এসিল্যান্ড অফিসের রেট বেশি থাকায় লোকজনের কাছ থেকে টাকা বেশি নিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি আবেদনে আবেদনকারী বা তার নিকটজনের মোবাইল নম্বর উল্লেখ থাকে। কতৃর্পক্ষ এই সূত্র ধরে তদন্ত করলেই কোন খারিজ কার মাধ্যমে হচ্ছে ও কী পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে-বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে। হয়তো কিছু লোক ভয়ে কিছু বলতে চাইবেন না, তবে অনেকে সত্য বলে দিবেন।সময়ের অনুসন্ধানে চোখ রাখুন