ঢাকা ১১:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
ভৈরবে সুইচ গিয়ার এক ছিনতাইকারী কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৪ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের বিশুদ্ধানন্দ – শুভানন্দ অডিটোরিয়াম অনুষ্ঠিত ২০২৫ সাজেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক কটেজ ও রেস্টুরেন্টে রমজানে সরকারি অফিসের সময়সূচি ঘোষণা মুসলিম ‘গণহত্যা’র জন্য ক্ষমা চাইলেন সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী সাবেক আইজিপিসহ ১০৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিপিএম-পিপিএম পদক প্রত্যাহার এবার বিপ্লব কুমার সরকার ও মেহেদি হাসান বরখাস্ত ছাত্রীনিবাস থেকে ঢাবি ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার আজমিরীগঞ্জে সিএনজি স্ট্যান্ড দখল নিয় সংঘর্ষ। আহত অর্ধ শতাধিক টঙ্গীতে ডেভিল হান্ট এর অভিযানে আ.লীগের নেত্রী ও তার পাঁচ সহযোগীকে ১৭৫১ পিস ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার

দিলিপ কুমার আগরওয়ালাসহ ৪০৮ মামলার ফের তদন্তে দুদক ক্স বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে দায়মুক্তি দেওয়ায় নানা প্রশ্ন ক্স হাজার কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবার সম্পদ থাকার পরও দিলিপকে দায়মুক্তি দিয়েছিল দুদক

অনুসন্ধান প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৪৬১ ৫০০০.০ বার পাঠক

নামে বেনামে বেশুমার সম্পক্তি থাকার পরও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয় বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলিপ কুমার আগরওয়ালাকে। যার বিরুদ্ধে সোনা ও হিরা চোরাচালসহ বিস্তর অভিযোগ। দেশে বিদেশে হাজার কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি থাকা এই ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দেন দুকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কমিশন। ইকবাল মাহমুদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৫ মাসে নিস্পত্তি হওয়া ৪০৮ নথি নতুন করে তদন্ত শুরু করছে দুদক। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক বিতর্কিত ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার আগরওলসহ চার শতাধিক ব্যক্তির বেশুমার দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে দুদক কমিটিও গঠন করেছ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, হাইকোর্ট যে ৪০৮ মামলার নথি তলব করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডায়মন্ড ওয়াল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগারওয়াল, পিপল্স লিজিংয়ের পরিচালক ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদল ইসলাম, রাউজকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক কফিল উদ্দিনের মামলা ও অভিযোগ।
দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের অবসরে যাওয়ার মাত্র ৫ মাসে মামলা দায়ের ও অতিদ্রুততার সঙ্গে নিস্পত্তি করা সকল মামলার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন আকারে মামলাগুলোর নথি দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। আদালতে এদিন দুদকের পক্ষে শুনানী করেন দুদকের প্রধান আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।
শুনানীতে বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কমিশন তার শেষ ৫ মাসে ৪০৮টি অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলার তদন্ত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে মামলা দায়ের না করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে দুদক। এই সংক্রান্ত মোট ৪০৮ প্রতিদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওইসব নথির মধ্যে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি দিলিপ কুমার আগরওয়ালার নথি রয়েছে। ওই নথির তথ্য এবং দুদকের জমা হওয়া অভিযোগ মতে মাত্র দ্ইু দশকের ব্যবধানে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। ’৯০-এর দশকে ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের দীলিপ নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। রাজধানী ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিপুল সংখ্যক শোরুম। তার সামগ্রিক উপার্জনের বৈধতা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। অভিযোগে বলা হয়, মূলত সোনা ও হিরা চোরাচালানের মাধ্যমে বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন তিনি। তাছাড়া দিলিপের বৈধ আয়ের চেয়ে অবৈধ সম্পদের পরিমানই বেশি। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সোনা এবং হিরা চোরাচালান এবং বিদেশে অর্থ পারের ব্যাপক তথ্য পাওয়া যায়। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দিলিপ কুমার আগারওয়ালের পাহাড় সমান সম্পদ শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও রয়েছে। রাজধানীর গুলশানে একটি হোল্ডিংয়েই তার নামে কেনা হয় সাতটি ফ্ল্যাট। এছাড়া দেশের বাইরে: কোলকাতার পার্ক স্ট্রিট রোডের পান্না ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, ২৫৩ রবীন্দ্র স্বরনী, বিবেকানন্দ রোডের বড়বাজার, ধর্মতলার গোল্ডেন মল, ডবসন রোডের রাঘব প্লাজা মল, অস্ট্রেলিয়ার ২৯, রেলডল্প স্ট্রিটে রয়েছে মিরোরা বাই ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের শোরুম।
দিলিপের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দুদকের উপ পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন মৃধার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের টিম অনুসন্ধান শুরু হয়। টিমের অপর দুই সদস্য ছিলেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান সিকদার ও উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুজ জামান। অভিযোগটি দুদক বিধিমালা ২০০৭ মোতাবেক অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। দুদক থেকে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ পাঠানোসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা চিঠি দেয়া হয় দীলিপ কুমারকে। অনুসন্ধান দলের এক সদস্য জানান, দিলিপের বিরুদ্ধে সোনা ও হিরা চোরাচালানসহ বিদেশে অর্থ পাচারের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রমান পাওয়া যায়। এইসব তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে যথাযথ প্রমানা হাতে নিয়েই ২০১৭ সালের গত ২৮ অক্টোবর নথিপত্রসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। কিন্তু নথিপত্রসহ দুদকে হাজির হতে দুইমাসের সময় চান দিলীপ। তবে পরবর্তী সময়ে পুনরায় চিঠি দিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দিলিপ কুমার আগরওয়ালার সম্পদের তথ্য বিবরনী আর দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া যায়। দীলিপ কুমারের স্থাবর অস্থাবর তথ্য উপাত্ত চেয়ে দুদকের টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা বিভাগ, বিভিন্ন তফশীলি ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ববোর্ড, ডাক সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে চিঠি দেয়। শুধু দিলিপই নয় চুয়াডাঙ্গার আগারওয়ালা সম্প্রদায়ের প্রায় সকলেরই কোলকাতায় ‘গদিঘর’ নামে ব্যবসায়িক ঠিকানা পাওয়া যায়। বংশানুক্রমেই তারা সীমান্তের ওপারে যাতায়াত আর নানা পণ্য সরবরাহ ও বেচার কেনায় সম্পৃক্ততা পাওয়াযায়।
তথ্য উপাত্ত পাওয়ার পর যাচাই বাছাই শেষে মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু তিনি তদন্তকে প্রভাবিত করে সমক্ষেপণ করান। প্রায় তিন বছর দুদক ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর দুদক হাঠাৎ করেই করেই অভিযোগ নথিভুক্ত (দায় মুক্তি) করে। ওই দায় মুক্তির ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন দুদকের ওই সময়কার মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাইদ মাহবুব খান। দিলিপের দায়মুক্তির নথি নম্বর ঢাকার নথি নং ০০.০১.০০০০.৫০২.০১.১৭২.১৭। দিলিপকে দায়মুক্তি দেয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে দুদকের কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে। এছাড়া ইকবাল মাহমুদ অবসরে যাওয়ার আগে যেসব দায়মুক্তি দেন সেগুলো নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র আইনজীবি ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘ওই সময়টায় আমরা দেখেছি দুদক দুর্নীতি দমনের পরীবর্তে দায়মুক্তি দেয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। তাদের সব ধরনের সক্ষমতা থাকার পরও তারা সেটা ইউটিলাইজ করেনি। অস্বচ্ছ পক্রিয়ায় অনেক ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দেওয়ার খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি।
দিলিপ কুমার আগারওয়াল ও উচ্চ আদালেতের নির্দেশে ৪০৮ নথির পুন:তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশ পেয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা পুন:তদন্তসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করবো।
নিজের নথিভুক্ত অভিযোগের পুন: তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে দিলিপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, অভিযোগ ছিল, দুদক অনুসন্ধান করে সত্যতা না পাওয়ায় আমাকে দায়মুক্তি দিয়েছে। উচ্চ আদালত পুনরায় তদন্তে নির্দেশ দুদকে দিয়েছে। সে অনুযায়ী তারা কাজ করবে। এতে আমার কি বলার আছে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দিলিপ কুমার আগরওয়ালাসহ ৪০৮ মামলার ফের তদন্তে দুদক ক্স বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে দায়মুক্তি দেওয়ায় নানা প্রশ্ন ক্স হাজার কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবার সম্পদ থাকার পরও দিলিপকে দায়মুক্তি দিয়েছিল দুদক

আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নামে বেনামে বেশুমার সম্পক্তি থাকার পরও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয় বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলিপ কুমার আগরওয়ালাকে। যার বিরুদ্ধে সোনা ও হিরা চোরাচালসহ বিস্তর অভিযোগ। দেশে বিদেশে হাজার কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি থাকা এই ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দেন দুকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কমিশন। ইকবাল মাহমুদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৫ মাসে নিস্পত্তি হওয়া ৪০৮ নথি নতুন করে তদন্ত শুরু করছে দুদক। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক বিতর্কিত ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার আগরওলসহ চার শতাধিক ব্যক্তির বেশুমার দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে দুদক কমিটিও গঠন করেছ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, হাইকোর্ট যে ৪০৮ মামলার নথি তলব করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডায়মন্ড ওয়াল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগারওয়াল, পিপল্স লিজিংয়ের পরিচালক ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদল ইসলাম, রাউজকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক কফিল উদ্দিনের মামলা ও অভিযোগ।
দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের অবসরে যাওয়ার মাত্র ৫ মাসে মামলা দায়ের ও অতিদ্রুততার সঙ্গে নিস্পত্তি করা সকল মামলার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন আকারে মামলাগুলোর নথি দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। আদালতে এদিন দুদকের পক্ষে শুনানী করেন দুদকের প্রধান আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।
শুনানীতে বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কমিশন তার শেষ ৫ মাসে ৪০৮টি অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলার তদন্ত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে মামলা দায়ের না করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে দুদক। এই সংক্রান্ত মোট ৪০৮ প্রতিদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওইসব নথির মধ্যে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি দিলিপ কুমার আগরওয়ালার নথি রয়েছে। ওই নথির তথ্য এবং দুদকের জমা হওয়া অভিযোগ মতে মাত্র দ্ইু দশকের ব্যবধানে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। ’৯০-এর দশকে ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের দীলিপ নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। রাজধানী ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিপুল সংখ্যক শোরুম। তার সামগ্রিক উপার্জনের বৈধতা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। অভিযোগে বলা হয়, মূলত সোনা ও হিরা চোরাচালানের মাধ্যমে বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন তিনি। তাছাড়া দিলিপের বৈধ আয়ের চেয়ে অবৈধ সম্পদের পরিমানই বেশি। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সোনা এবং হিরা চোরাচালান এবং বিদেশে অর্থ পারের ব্যাপক তথ্য পাওয়া যায়। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দিলিপ কুমার আগারওয়ালের পাহাড় সমান সম্পদ শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও রয়েছে। রাজধানীর গুলশানে একটি হোল্ডিংয়েই তার নামে কেনা হয় সাতটি ফ্ল্যাট। এছাড়া দেশের বাইরে: কোলকাতার পার্ক স্ট্রিট রোডের পান্না ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, ২৫৩ রবীন্দ্র স্বরনী, বিবেকানন্দ রোডের বড়বাজার, ধর্মতলার গোল্ডেন মল, ডবসন রোডের রাঘব প্লাজা মল, অস্ট্রেলিয়ার ২৯, রেলডল্প স্ট্রিটে রয়েছে মিরোরা বাই ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের শোরুম।
দিলিপের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দুদকের উপ পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন মৃধার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের টিম অনুসন্ধান শুরু হয়। টিমের অপর দুই সদস্য ছিলেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান সিকদার ও উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুজ জামান। অভিযোগটি দুদক বিধিমালা ২০০৭ মোতাবেক অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। দুদক থেকে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ পাঠানোসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা চিঠি দেয়া হয় দীলিপ কুমারকে। অনুসন্ধান দলের এক সদস্য জানান, দিলিপের বিরুদ্ধে সোনা ও হিরা চোরাচালানসহ বিদেশে অর্থ পাচারের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রমান পাওয়া যায়। এইসব তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে যথাযথ প্রমানা হাতে নিয়েই ২০১৭ সালের গত ২৮ অক্টোবর নথিপত্রসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। কিন্তু নথিপত্রসহ দুদকে হাজির হতে দুইমাসের সময় চান দিলীপ। তবে পরবর্তী সময়ে পুনরায় চিঠি দিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দিলিপ কুমার আগরওয়ালার সম্পদের তথ্য বিবরনী আর দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া যায়। দীলিপ কুমারের স্থাবর অস্থাবর তথ্য উপাত্ত চেয়ে দুদকের টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা বিভাগ, বিভিন্ন তফশীলি ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ববোর্ড, ডাক সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে চিঠি দেয়। শুধু দিলিপই নয় চুয়াডাঙ্গার আগারওয়ালা সম্প্রদায়ের প্রায় সকলেরই কোলকাতায় ‘গদিঘর’ নামে ব্যবসায়িক ঠিকানা পাওয়া যায়। বংশানুক্রমেই তারা সীমান্তের ওপারে যাতায়াত আর নানা পণ্য সরবরাহ ও বেচার কেনায় সম্পৃক্ততা পাওয়াযায়।
তথ্য উপাত্ত পাওয়ার পর যাচাই বাছাই শেষে মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু তিনি তদন্তকে প্রভাবিত করে সমক্ষেপণ করান। প্রায় তিন বছর দুদক ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর দুদক হাঠাৎ করেই করেই অভিযোগ নথিভুক্ত (দায় মুক্তি) করে। ওই দায় মুক্তির ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন দুদকের ওই সময়কার মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাইদ মাহবুব খান। দিলিপের দায়মুক্তির নথি নম্বর ঢাকার নথি নং ০০.০১.০০০০.৫০২.০১.১৭২.১৭। দিলিপকে দায়মুক্তি দেয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে দুদকের কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে। এছাড়া ইকবাল মাহমুদ অবসরে যাওয়ার আগে যেসব দায়মুক্তি দেন সেগুলো নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র আইনজীবি ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘ওই সময়টায় আমরা দেখেছি দুদক দুর্নীতি দমনের পরীবর্তে দায়মুক্তি দেয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। তাদের সব ধরনের সক্ষমতা থাকার পরও তারা সেটা ইউটিলাইজ করেনি। অস্বচ্ছ পক্রিয়ায় অনেক ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দেওয়ার খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি।
দিলিপ কুমার আগারওয়াল ও উচ্চ আদালেতের নির্দেশে ৪০৮ নথির পুন:তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশ পেয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা পুন:তদন্তসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করবো।
নিজের নথিভুক্ত অভিযোগের পুন: তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে দিলিপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, অভিযোগ ছিল, দুদক অনুসন্ধান করে সত্যতা না পাওয়ায় আমাকে দায়মুক্তি দিয়েছে। উচ্চ আদালত পুনরায় তদন্তে নির্দেশ দুদকে দিয়েছে। সে অনুযায়ী তারা কাজ করবে। এতে আমার কি বলার আছে।