ঢাকা ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
পুলিশ প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন হলেও এসআই মিজানের অসাধু নীতির পরিবর্তন হয়নি ঠাকুরগাঁওয়ে নারীদের ভূমি অধিকার ও কৃষি ভূমি সংষ্কার বিষয়ক সমাবেশ কালিয়াকৈরে ধর্ষণের অভিযোগে বাড়ির মালিক গ্রেফতার পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত কঠিন সময়ে কীভাবে পাশে ছিলেন স্ত্রী, জানালেন কোহলি ইতালিতে জি৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনার তালিকায় নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে আরো যা ‘পদক্ষেপ’ নিতে বললেন নূরুল কবির মেগা মানডে’: ৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী অর্থের লোভ দেখিয়ে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ ব্যর্থ চেষ্টা, নেপথ্যে কারা? ইমরান খানের হাজারো সমর্থক গ্রেপ্তার

গ্রেনেডের নিহতদের স্মরণ দেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৫:৫০ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০২৩
  • / ১১৪ ৫০০০.০ বার পাঠক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে ‘খুনি পরিবার’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এ দেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। তিনি বলেন, জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার। এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। বিদেশে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তারেক রহমান সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক। বাংলাদেশের মানুষ এই খুনিদের ছাড়বে না।

১৯ বছর আগের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা এ হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি (শেখ হাসিনা) গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার স্থানে আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ হামলায় নিজের জীবন বেঁচে যাওয়াকে ‘অবাক বিস্ময়’ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন তো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, তার কি ভূমিকা ছিল? আহতদের চিকিৎসায়ও বাধা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় এই হামলার সঙ্গে খালেদা-তারেক গং জড়িত। এতে কোনো সন্দেহ নেই। মামলার তদন্ত রিপোর্টও বেরিয়েছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত। খুনিদের জবানবন্দিতে ফুটে উঠেছে। আর ২১ আগস্টে খালেদা-তারেক জড়িত, এটাও প্রমাণ হয়েছে।

ওই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেতাদের মানবঢাল প্রাণ বাঁচায় তার। কিন্তু নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী নিহত এবং প্রায় এক হাজার জন আহত হন। যার মধ্যে ৫ শতাধিক ছিল গুরুতর আহত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিক সামনেই রাস্তার ওপর একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও র‌্যালির জন্য।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৪ সালে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটা র‌্যালি করছিলাম ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর সিলেটে হামলা এবং বিএনপি সন্ত্রাসীদের হাতে আমাদের অগণিত নেতাকর্মীর মারধর ও হত্যার প্রতিবাদে। প্রকাশ্য দিবালোকে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ, সেখানে আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হলো।

তিনি বলেন, আর্জেস গ্রেনেড সাধারণত রণক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। আর সেটা ব্যবহার হলো আওয়ামী লীগের ওপর, আমরা যখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিছিল করছি, সেই র‌্যালির ওপর আক্রমণ করা হলো। একটা-দুইটা নয়, ১৩টা গ্রেনেড, আর কত তাদের হাতে ছিল কে জানে। সেদিন যে বেঁচে গিয়েছিলাম, সেটাই অবাক বিস্ময়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে মানবাধিকার লংঘন বারবার হয়েছে, যার মূল হোতাই হচ্ছে জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়া-তারেক রহমানসহ তাদের দোসর জামায়াতে ইসলামী এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীরা এখনো সে কাজই করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। আর জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার। যারা এখনো শরীরে গ্রেনেডের স্পি­ন্টার বয়ে নিয়ে বেদনাময় জীবনযাপন করছেন তাদের তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে গিয়ে জিয়া পরিবারের এই অপকর্ম তুলে ধরার আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অন্যায়-অবিচার আল্লাহতায়ালাও সহ্য করবেন না। তারা চেষ্টা করেছে হত্যা করতে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে। ওই ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল তারা এবং তাদের চেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। কিন্তু ‘আল্লাহর মার দুনিয়ার মার’-এটাই সত্যি কথা। আল্লাহ আমাকে বারবার রক্ষা করে সুযোগ দিয়েছেন এ দেশের মানুষের সেবা করার। তাই ওই তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করায় জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরও বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না, কোনো মামলা পর্যন্ত করা যায়নি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। সেই কষ্টের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, তাহলে তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল?

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা দেখি মাঝে মাঝে বাংলাদেশে মানবাধিকারের কথা বলে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কাদের শেখানো বুলি তারা বলেন? জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে তাদের দীর্ঘ ৩৩টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছে। মানুষ ন্যায়বিচার পায়, কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হচ্ছে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্তদের কিছু কারাগারে থাকলেও তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, এর মূল হোতা তো বাইরে (বিদেশে পলাতক)। সে তো আর রাজনীতি করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাইরে চলে গেছে।

তিনি তারেক রহমানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, তার সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি তার সুযোগ নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলে। আর কত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে সেই টাকা খরচ করে। সাহস থাকে তো বাংলাদেশে আসুক, বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না, ওদের ছাড়বে না।

তিনি বলেন, শুধু এটুকুই চাই এ দেশের মানুষ সজাগ থাকবে। ওই খুনিদের হাতে যেন এ দেশের মানুষকে আর নিগৃহীত হতে না হয়। আর অগ্নিসন্ত্রাস ও জুলুমবাজি করে যেন এ দেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে সেটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা। বাংলাদেশ আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং সেভাবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ওই খুনি, দুষ্কৃতকারী, চোর, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, ঘুসখোর যেন আর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাদের প্রতি ঘৃণা বাংলাদেশের জনগণের। আমি চাই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ তাদের ঘৃণা জানাক, সেটাই আমি আজ বলব।

সভায় আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্ট শহিদদের স্মরণে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহিদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকেও আরেকবার সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপরই সেদিনে নিহতদের স্বজন এবং আহতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

গ্রেনেডের নিহতদের স্মরণ দেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট টাইম : ০৪:৩৫:৫০ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে ‘খুনি পরিবার’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এ দেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। তিনি বলেন, জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার। এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। বিদেশে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তারেক রহমান সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক। বাংলাদেশের মানুষ এই খুনিদের ছাড়বে না।

১৯ বছর আগের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা এ হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি (শেখ হাসিনা) গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার স্থানে আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ হামলায় নিজের জীবন বেঁচে যাওয়াকে ‘অবাক বিস্ময়’ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন তো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, তার কি ভূমিকা ছিল? আহতদের চিকিৎসায়ও বাধা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় এই হামলার সঙ্গে খালেদা-তারেক গং জড়িত। এতে কোনো সন্দেহ নেই। মামলার তদন্ত রিপোর্টও বেরিয়েছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত। খুনিদের জবানবন্দিতে ফুটে উঠেছে। আর ২১ আগস্টে খালেদা-তারেক জড়িত, এটাও প্রমাণ হয়েছে।

ওই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেতাদের মানবঢাল প্রাণ বাঁচায় তার। কিন্তু নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী নিহত এবং প্রায় এক হাজার জন আহত হন। যার মধ্যে ৫ শতাধিক ছিল গুরুতর আহত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিক সামনেই রাস্তার ওপর একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও র‌্যালির জন্য।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৪ সালে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটা র‌্যালি করছিলাম ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর সিলেটে হামলা এবং বিএনপি সন্ত্রাসীদের হাতে আমাদের অগণিত নেতাকর্মীর মারধর ও হত্যার প্রতিবাদে। প্রকাশ্য দিবালোকে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ, সেখানে আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হলো।

তিনি বলেন, আর্জেস গ্রেনেড সাধারণত রণক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। আর সেটা ব্যবহার হলো আওয়ামী লীগের ওপর, আমরা যখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিছিল করছি, সেই র‌্যালির ওপর আক্রমণ করা হলো। একটা-দুইটা নয়, ১৩টা গ্রেনেড, আর কত তাদের হাতে ছিল কে জানে। সেদিন যে বেঁচে গিয়েছিলাম, সেটাই অবাক বিস্ময়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে মানবাধিকার লংঘন বারবার হয়েছে, যার মূল হোতাই হচ্ছে জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়া-তারেক রহমানসহ তাদের দোসর জামায়াতে ইসলামী এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীরা এখনো সে কাজই করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। আর জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার। যারা এখনো শরীরে গ্রেনেডের স্পি­ন্টার বয়ে নিয়ে বেদনাময় জীবনযাপন করছেন তাদের তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে গিয়ে জিয়া পরিবারের এই অপকর্ম তুলে ধরার আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অন্যায়-অবিচার আল্লাহতায়ালাও সহ্য করবেন না। তারা চেষ্টা করেছে হত্যা করতে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে। ওই ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল তারা এবং তাদের চেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। কিন্তু ‘আল্লাহর মার দুনিয়ার মার’-এটাই সত্যি কথা। আল্লাহ আমাকে বারবার রক্ষা করে সুযোগ দিয়েছেন এ দেশের মানুষের সেবা করার। তাই ওই তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করায় জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরও বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না, কোনো মামলা পর্যন্ত করা যায়নি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। সেই কষ্টের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, তাহলে তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল?

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা দেখি মাঝে মাঝে বাংলাদেশে মানবাধিকারের কথা বলে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কাদের শেখানো বুলি তারা বলেন? জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে তাদের দীর্ঘ ৩৩টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছে। মানুষ ন্যায়বিচার পায়, কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হচ্ছে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্তদের কিছু কারাগারে থাকলেও তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, এর মূল হোতা তো বাইরে (বিদেশে পলাতক)। সে তো আর রাজনীতি করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাইরে চলে গেছে।

তিনি তারেক রহমানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, তার সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি তার সুযোগ নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলে। আর কত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে সেই টাকা খরচ করে। সাহস থাকে তো বাংলাদেশে আসুক, বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না, ওদের ছাড়বে না।

তিনি বলেন, শুধু এটুকুই চাই এ দেশের মানুষ সজাগ থাকবে। ওই খুনিদের হাতে যেন এ দেশের মানুষকে আর নিগৃহীত হতে না হয়। আর অগ্নিসন্ত্রাস ও জুলুমবাজি করে যেন এ দেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে সেটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা। বাংলাদেশ আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং সেভাবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ওই খুনি, দুষ্কৃতকারী, চোর, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, ঘুসখোর যেন আর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাদের প্রতি ঘৃণা বাংলাদেশের জনগণের। আমি চাই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ তাদের ঘৃণা জানাক, সেটাই আমি আজ বলব।

সভায় আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্ট শহিদদের স্মরণে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহিদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকেও আরেকবার সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপরই সেদিনে নিহতদের স্বজন এবং আহতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।