ঢাকা ১১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগ নেতার দখলের চেষ্টা।এই বিষয়ে সময়ের কন্ঠস্বরে নিউজ প্রকাশের পর এসিল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞা ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সমগ্র বাংলাদেশ) পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখা কমিটির সকলকে সনদ প্রদান ও আলোচনা সভা ২৫২ বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রামে এই প্রথম নারী ডিসি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পদায়ন ফরিদা খানম গাজীপুর জেলা মহানগর কাশিমপুরে স্বাধীন মত প্রকাশের জেরে থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার গন্জেরহাটি গ্রামের সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রনব বনিকের দখলের চেষ্টা নরসিংদীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে আহত সাংবাদিকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চট্টগ্রামে জনতা ব্যাংক সিবিএ নেতা আফসার আ.লীগের আমলে দাপট দেখিয়ে এখন বিএনপি নিয়োগ, বদলি, চাঁদাবাজি করে কামিয়েছেন টাকা মহারাষ্ট্রে ভূমিধস জয়ের পথে বিজেপি জোট, ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’ পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু জুলাই বিপ্লবে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে মো. বাবুকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড

কিশোরগঞ্জের হাওরের জলরাশি সৌন্দর্য উপভোগে দর্শনার্থীরা ছুটছে নৌকায়

মোঃ আলমগীর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট টাইম : ০২:০৮:৩৭ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩
  • / ২০৭ ৫০০০.০ বার পাঠক

কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত নিকলী হাওর। এ হাওরের সৌন্দর্যে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের স্বকীয়তা।

হাওর নয় যেন বড় কোনো নদীর অথৈ জলরাশি। জলরাশিতে ছুটে চলছে নৌকা।
হাওরের মাঝে মাছ ধরার উৎসব চলে। এই সব মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করে থাকেন। কিশোরগঞ্জের এসব হাওরের মানুষ বছরের প্রায় ছয় মাস পানিবন্দি থাকে।

হাওর বৈচিত্রময় ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে অনন্য এক স্বতন্ত্র সত্তা। এমন বিচিত্র প্রকৃতি ও জীবনধারা বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না। শুকনো মৌসুমে দিগন্ত বিস্তৃর্ত মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ আর অতিথি পাখির মেলা। বর্ষায় চারদিক থৈ থৈ করা পানি। যেন সৌদর্যের বিপুল পসরা সাজিয়ে বসে আছে হাওরের প্রকৃতি।

উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর-মাছে ভরা – এটাই কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচয় বহন করে। হাওরাঞ্চল হওয়ায় মাছ চাষই এখানকার বাসিন্দাদের মূল পেশা। তারা সমন্বিত পদ্ধতিতে জলাশয়ে মাছের সঙ্গে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে এসব এলাকা চোখে পড়ে।

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে চাই না আর’ কবি জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে মিলে বলতে হয়, প্রকৃতির অকৃত্রিম, অনাবিল ও অফুরন্ত সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। আর বাংলার এই অবিচ্ছেদ্য সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীর হাওর। এই জেলার সব হাওর আকর্ষণীয় স্পট।

এই ভাটির দেশ কিশোরগঞ্জে রয়েছে অসংখ্য হাওর ও বিল। কিশোরগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের মেঘনা, কালনী, ধনু, নরসুন্দা, মুগড়া আর বাওলাই নদী। মনে হবে কোনো চিত্রকর এসে যেন প্রকৃতিকে এমনভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা। হাওর এলাকায় সবুজ শ্যামল বাংলার আসল চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। দেশের অন্যতম হাওর সমৃদ্ধ জেলা কিশোরগঞ্জ। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন।

হাওরের মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার জন্য ট্রলার ব্যবহার করে থাকে। নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় ট্রলারেই নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা।
হাওরের মৎস্য জীবন। ছোট নৌকায় জাল ফেলে মাছ ধরা হচ্ছে। হাওরের থৈ থৈ পানির মাঝে ঘর-বাড়ি। মনে হচ্ছে ছোট দুইটি দ্বীপ।
হাওরের জীবন ও প্রকৃতির এমন বৈচিত্রই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হতে পারে। ফলে হাওরের পর্যটন খাতের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি জেলার ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪২৩টি হাওর নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ ১৩৩টি, কিশোরগঞ্জ জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২২টি, নেত্রকোনায় ৮০টি, সিলেটে ৪৩টি, হবিগঞ্জে ৩৮টি, মৌলভীবাজারে ৪টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩টি হাওর রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার ৪৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ এই হাওরাঞ্চলের আয়তন প্রায় ২৪ হাজার বগর্ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত ধানের এক-পঞ্চমাংশ আসে এই হাওরাঞ্চল থেকে। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক মাছের বিশাল ভান্ডার। শীত-বর্ষার হাওরের স্বতন্ত্র রূপ প্রকৃতি প্রেমীদের দুর্নিবার আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায় হাওরের মাঠে-ঘাটে-বাঁকে। হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে প্রতিদিন ভীড় করেন ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থী এবং পর্যটক।
বর্ষাকালে হাওর এলাকায় অবস্থিত গ্রামগুলোকে দূর থেকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। মনে হয় যেন হাওরের পানিতে ভাসছে সেই সব গ্রাম। এ সময় হাওরে চলাচল করে শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এগুলোই বর্ষাকালে হাওর এলাকার বাসিন্দাদের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র বাহন। শত শত রঙ্গিন পাল তোলা নৌকাও বর্ষায় চোখে পড়ে। জাহাজ আকৃতির মালামাল পরিবহনকারী বড় বড় কার্গো, দাঁড় বেয়ে চলা নৌকা ও মাঝিদের কন্ঠের সুরেলা গান এসবই হাওরের অনুসঙ্গ। ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা তো নিত্যদিনকার চিত্র। রাতে নৌকায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখে দূর থেকে মনে হবে যেন গ্রাম্য কুলবধূরা শত শত প্রদীপ জ্বালিয়ে হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। হাওরের পানিতে হাঁসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরা সারাদিন সাঁতার কাটায় মেতে থাকে। চাঁদনী রাতে জোসনার আলোর সঙ্গে ঢেউয়ের মাতামাতি দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। বর্ষাকালে হাওরে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যিই মনোরম! আমাদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতেও হাওরের রয়েছে অনন্য অবদান। হাছন রাজা, উকিল মুন্সী, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের হাত ধরে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে হাওরাঞ্চলের সংগীত ভান্ডার। প্রাচীন আখড়া, মন্দির-মসজিদের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে হাওরের সুপ্রাচীন ও গৌরবময় অতীতে স্মৃতিচিহ্ন। এখানকার হিজল-তমাল বন আকৃষ্ট করে সৌন্দর্য পিপাসুদের। বিখ্যাত চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত পর্যটকরা মোহিত হয়েছেন হাওরের সৌন্দর্যে। হাওরকে ‘উড়াল পঙ্খির দেশ’ হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়। ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার ধবল বক হাওরে চোখে পড়ে। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সাঁঝের বেলায় মুক্তোর মালার মত সেইসব বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় মুখরিত কল কাকলির কান ফাটানো শব্দ একমাত্র হাওর এলাকাতেই শোনা সম্ভব। হাওরে পর্যটনের এ বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে ওঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এ ক্ষেত্রে হাওরে পর্যটকদের জন্য অবকাঠামো, আবাসন, পর্যটকদের পথ নির্দেশনা, পর্যটক আকর্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনই উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে পারে বলে হাওরবাসীরা মনে করেন। হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দযের্র ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতের মতো হাওর এলাকাও একদিন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদ ভারে মুখরিত হয়ে উঠবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কিশোরগঞ্জের হাওরের জলরাশি সৌন্দর্য উপভোগে দর্শনার্থীরা ছুটছে নৌকায়

আপডেট টাইম : ০২:০৮:৩৭ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩

কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত নিকলী হাওর। এ হাওরের সৌন্দর্যে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের স্বকীয়তা।

হাওর নয় যেন বড় কোনো নদীর অথৈ জলরাশি। জলরাশিতে ছুটে চলছে নৌকা।
হাওরের মাঝে মাছ ধরার উৎসব চলে। এই সব মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করে থাকেন। কিশোরগঞ্জের এসব হাওরের মানুষ বছরের প্রায় ছয় মাস পানিবন্দি থাকে।

হাওর বৈচিত্রময় ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে অনন্য এক স্বতন্ত্র সত্তা। এমন বিচিত্র প্রকৃতি ও জীবনধারা বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না। শুকনো মৌসুমে দিগন্ত বিস্তৃর্ত মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ আর অতিথি পাখির মেলা। বর্ষায় চারদিক থৈ থৈ করা পানি। যেন সৌদর্যের বিপুল পসরা সাজিয়ে বসে আছে হাওরের প্রকৃতি।

উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর-মাছে ভরা – এটাই কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচয় বহন করে। হাওরাঞ্চল হওয়ায় মাছ চাষই এখানকার বাসিন্দাদের মূল পেশা। তারা সমন্বিত পদ্ধতিতে জলাশয়ে মাছের সঙ্গে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে এসব এলাকা চোখে পড়ে।

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে চাই না আর’ কবি জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে মিলে বলতে হয়, প্রকৃতির অকৃত্রিম, অনাবিল ও অফুরন্ত সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। আর বাংলার এই অবিচ্ছেদ্য সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীর হাওর। এই জেলার সব হাওর আকর্ষণীয় স্পট।

এই ভাটির দেশ কিশোরগঞ্জে রয়েছে অসংখ্য হাওর ও বিল। কিশোরগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের মেঘনা, কালনী, ধনু, নরসুন্দা, মুগড়া আর বাওলাই নদী। মনে হবে কোনো চিত্রকর এসে যেন প্রকৃতিকে এমনভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা। হাওর এলাকায় সবুজ শ্যামল বাংলার আসল চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। দেশের অন্যতম হাওর সমৃদ্ধ জেলা কিশোরগঞ্জ। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন।

হাওরের মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার জন্য ট্রলার ব্যবহার করে থাকে। নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় ট্রলারেই নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা।
হাওরের মৎস্য জীবন। ছোট নৌকায় জাল ফেলে মাছ ধরা হচ্ছে। হাওরের থৈ থৈ পানির মাঝে ঘর-বাড়ি। মনে হচ্ছে ছোট দুইটি দ্বীপ।
হাওরের জীবন ও প্রকৃতির এমন বৈচিত্রই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হতে পারে। ফলে হাওরের পর্যটন খাতের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি জেলার ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪২৩টি হাওর নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ ১৩৩টি, কিশোরগঞ্জ জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২২টি, নেত্রকোনায় ৮০টি, সিলেটে ৪৩টি, হবিগঞ্জে ৩৮টি, মৌলভীবাজারে ৪টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩টি হাওর রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার ৪৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ এই হাওরাঞ্চলের আয়তন প্রায় ২৪ হাজার বগর্ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত ধানের এক-পঞ্চমাংশ আসে এই হাওরাঞ্চল থেকে। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক মাছের বিশাল ভান্ডার। শীত-বর্ষার হাওরের স্বতন্ত্র রূপ প্রকৃতি প্রেমীদের দুর্নিবার আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায় হাওরের মাঠে-ঘাটে-বাঁকে। হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে প্রতিদিন ভীড় করেন ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থী এবং পর্যটক।
বর্ষাকালে হাওর এলাকায় অবস্থিত গ্রামগুলোকে দূর থেকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। মনে হয় যেন হাওরের পানিতে ভাসছে সেই সব গ্রাম। এ সময় হাওরে চলাচল করে শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এগুলোই বর্ষাকালে হাওর এলাকার বাসিন্দাদের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র বাহন। শত শত রঙ্গিন পাল তোলা নৌকাও বর্ষায় চোখে পড়ে। জাহাজ আকৃতির মালামাল পরিবহনকারী বড় বড় কার্গো, দাঁড় বেয়ে চলা নৌকা ও মাঝিদের কন্ঠের সুরেলা গান এসবই হাওরের অনুসঙ্গ। ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা তো নিত্যদিনকার চিত্র। রাতে নৌকায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখে দূর থেকে মনে হবে যেন গ্রাম্য কুলবধূরা শত শত প্রদীপ জ্বালিয়ে হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। হাওরের পানিতে হাঁসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরা সারাদিন সাঁতার কাটায় মেতে থাকে। চাঁদনী রাতে জোসনার আলোর সঙ্গে ঢেউয়ের মাতামাতি দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। বর্ষাকালে হাওরে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যিই মনোরম! আমাদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতেও হাওরের রয়েছে অনন্য অবদান। হাছন রাজা, উকিল মুন্সী, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের হাত ধরে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে হাওরাঞ্চলের সংগীত ভান্ডার। প্রাচীন আখড়া, মন্দির-মসজিদের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে হাওরের সুপ্রাচীন ও গৌরবময় অতীতে স্মৃতিচিহ্ন। এখানকার হিজল-তমাল বন আকৃষ্ট করে সৌন্দর্য পিপাসুদের। বিখ্যাত চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত পর্যটকরা মোহিত হয়েছেন হাওরের সৌন্দর্যে। হাওরকে ‘উড়াল পঙ্খির দেশ’ হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়। ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার ধবল বক হাওরে চোখে পড়ে। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সাঁঝের বেলায় মুক্তোর মালার মত সেইসব বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় মুখরিত কল কাকলির কান ফাটানো শব্দ একমাত্র হাওর এলাকাতেই শোনা সম্ভব। হাওরে পর্যটনের এ বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে ওঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এ ক্ষেত্রে হাওরে পর্যটকদের জন্য অবকাঠামো, আবাসন, পর্যটকদের পথ নির্দেশনা, পর্যটক আকর্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনই উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে পারে বলে হাওরবাসীরা মনে করেন। হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দযের্র ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতের মতো হাওর এলাকাও একদিন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদ ভারে মুখরিত হয়ে উঠবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।