ঢাকা ০২:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
অসহায় ও দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ সরিষাবাড়ীতে ৪’ শতাধিক হতদরিদ্র পেল শীতবস্ত্র কম্বল বাবা ছিল আওয়ামী লীগ ছেলে যুবলীগের নেতা কে এই মামুন চৌধুরী তারা এই বিগত দিনে কোটার দালালি কড়ে গেছেন এবং ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাষ্ট্র প্রধানের কাছে অভিযোগ তদন্তে গিয়ে বিএনপি নেতার মারধরের শিকার পুলিশ ওসি পরিচয়ে হিন্দু পিতা পুত্রকে অপহরণ,পরে চাঁদা দাবীর অভিযোগে দিনাজপুরে ছাত্রদল নেতা আটক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুলতানপুর ব্যাটালিয়ন ৬০ বিজিবির অভিযানে ৫২,৮২,৯৫০/-টাকা মূল্যের বিপুল পরিমান মাদক ও বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মালামাল জব্দ শিগগিরই রোডম্যাপ, দ্রুত নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বিদ্যমান, সংস্কারের দাবি নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট চায় না বিএনপি মাসুদ মোল্লার টিস্টল ও বেকারি তে হামলা ভাংচুরে জড়িত মোস্তাফিজুর রহমান কালু ও রেনু খানম

কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা: একাধিক মালিকের স্বত্ব থাকা খতিয়ান অনুমোদনে চরম ভোগান্তি

সাইয়েদ ইকরাম শাফী
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩
  • / ২৫৫ ৫০০০.০ বার পাঠক

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে খাজনা আদায়ের পদ্ধতি চালু করে। এ বিষয়ে মনোমুগ্ধকর ইন্টারফেসযুক্ত একটি সার্ভার চালু করে ভূমি মন্ত্রণালয়। বিগত ২৭ অক্টোবর ২০২০ইং তারিখের জারিকৃত ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৩.০০.০০০০.০৪২.৬৮.০১১.২০.৬৯৭ নং পরিপত্রে বলা হয় যে,
১. দক্ষ, স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভিশন। একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দূনীতিমুক্ত, দেশপ্রেমিক, গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। উক্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও এবং মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের ৩০ এপ্রিল ২০১৭ইং তারিখের ০৪.০০.০০০০.৮৩১.০০১. ০১৭.১৩.১৪৯ নম্বর প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয় বিশেষ ভাবে ২০০৯ সন থেকে ধারাবাহিক ভাবে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বহু জনমুখী উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছে। জনগণের দোরগোড়ায় ভূমি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে “হাতের মুঠোয় ভূমি সেবা” নামের মোবাইল অ্যাপস প্রস্তুত করা হয়েছে। সারাদেশে ই-নামজারী সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমানে ভূমি উন্নয়র কর ইলেকট্রনিক পদ্ধতি আদায়ের জন্য অনলাইনে সিস্টেম (Online System) তৈরী করা হয়েছে।
২. ভূমি উন্নয়ন কর আদায় সংক্রান্ত সেবাটি স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প সময়ে ও সহজে জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ইলেকট্রনিক সিস্টেম চালু করা হয়েছে। উক্ত সিস্টেমের মাধ্যমে নাগরিকগণ ঘরে বসেই মোবাইল বা অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন করের অর্থ জমা প্রদান করতে পারবেন। ফলে নাগরিককে আর ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিসে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে হবে না। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান/পরিশোধ করলে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতেই দাখিলা পাওয়া যাবে। অনলাইনে প্রাপ্ত দাখিলা বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রাপ্ত দাখিলার মতোই গ্রহণযোগ্য ও আইনসিদ্ধ হবে। ইলেকট্রনিত পদ্ধতিতে প্রাপ্ত দাখিলাতে QR Code বা বারকোড দেয়া হবে। প্রয়োজনে উক্ত কোড স্ক্যান করে অনলাইনে প্রাপ্ত দাখিলার সঠিকতা যাচাই করা যাবে।
৩. ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভূমি উন্নয়ন করের অর্থ অথবা ভূমি সংক্রান্ত বিবিধ অর্থ জমা প্রদান করা হলে উক্ত অর্থ জমা প্রদানের পর ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে প্রাপ্ত দাখিলা অথবা Duplicate Carbon Receipt (DCR) ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে প্রদত্ত বা বিজি প্রেস হতে ছাপানো দাখিলা ও DCR এর সমপর্যায়ের এবং আইনগত ভাবে বৈধ ও সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য হবে।
৪. কাজের সুবিধার্থে নাগরিক কর্তৃক অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতির ধাপসমূহ এই সাথে সংযুক্ত করা হল।
৫. জনস্বার্থে এই আদেশ জারি করা হল এবং অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর হবে।
মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী, সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়, ২৭ অক্টোবর, ২০২০ইং।
ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এ পরিপত্র জারি করার প্রায় ৩ বছর হতে চললো। কিন্তু সাধারণ জনগণ তাদের কাঙ্খিত ভূমি সেবা পাচ্ছেন না। এর প্রধান কারণ স্থানীয়/পৌর ভূমি অফিস সমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতা। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতি পদে পদে হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ ভূমি মালিকরা।
অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সিস্টেমটি অত্যন্ত সুন্দর ও কার্যকর যে কোন ব্যক্তি নিজে বা দক্ষ একজন কম্পিউটার অপারেটরের সাহায্যে সহজেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন।
তবে যে কোনো ব্যক্তি তার এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) দিয়ে ভূমি উন্নয়ন সেবা সিস্টেম থেকে রেজিস্ট্রেশন করলেও অনুমোদনের জন্য স্থানীয় ভূমি অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এখানেই শুরু হয় বিপত্তি। রেজিস্ট্রিশন অনুমোদনের জন্য ভূমি অফিসে গেলে সেখানে শুরু করা হয় নানারকম টালবাহানা। ঘুষ (খরচের টাকা) না দিলে ভূমি অফিসের কর্মচারীদের কাছ থেকে কোনো সেবাই পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন করতে গেলে ঘুষ (খরচের টাকা) না দিলে বলা হয়, এখন ব্যস্ত আছি, পরে আসুন। এসব নানারকম টালবাহানা করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে ভূমি অফিসের কর্মচারীরা। যদিওবা অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য রেজিস্ট্রেশন করার পর সাথে সাথেই ভূমি অফিস থেকে অনুমোদন পাবার কথা।
বাস্তবে ভূমি অফিসে থেকে অনুমোদন নিতে গিয়ে মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ চরম হয়রানীর শিকার হবার পাশাপাশি তাদের মূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে।
১৯৭৫/৭৬ সালের বি.এস ভূমি সার্ভে রেকর্ডের ভিত্তিতে একটি খতিয়ানে একাধিক মালিকের মালিকানা স্বত্ব রয়েছে। মূলত একাধিক মালিকের স্বত্ব থাকা খতিয়ানগুলো অনুমোদন দিতে ভূমি অফিসের কর্মচারীরা ভূমি মালিকদের সীমাহীন হয়রানী করছে। তাদের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ ভূমি মালিকরা।
অনলাইন ভূমি উন্নয়ন সেবা সিস্টেমের সার্ভারটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, আকর্ষণীয় ও সাবলীল। এ সিস্টেমটিতে একটি খতিয়ানে একাধিক ভূমি মালিকের মালিকানা স্বত্ব থাকা ভূমি অনুমোদনের সুন্দর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভূমি অফিসের কর্মচারীদের কারণে সাধারণ ভূমি মালিকরা ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রবর্তিত অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না।
জাতীয় পর্যায়ের এক সিনিয়র সাংবাদিক জানালেন, তার নিজের, বড় ভাই ও মাতার নামে ৩ খতিয়ানে এবং ৩ দাগে ভূমি রয়েছে। সে খতিয়ান গুলোতে অন্য মালিকের মালিকানা স্বত্ব রয়েছে। তিনি নিজে, তার বড় ভাই ও মাতার নামে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের জন্য অনলাইন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন ৩ বছর পূর্বে। ৩ বছর পার হলেও এখনো পর্যন্ত কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে সেগুলো অনুমোদন করা হয়নি। ভূমি অফিস থেকে বলা হচ্ছে নামজারী করে নিতে। কি আশ্চর্য! ভূমি হস্তান্তর, বিক্রয়, দান, হেবা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হলেই শুধু নামজারী করতে হয়। খতিয়ানে মালিকানা স্বত্ব ও অংশ স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকলে কেন নামজারী করতে হবে? এ প্রশ্নের কোনো জবাব কুমিরা ভূমি অফিসের তহশীলদার ও কর্মচারীরা দিতে পারেননি। এসব আজগুবি কথা বলা হচ্ছে শুধুমাত্র ঘুষ (খরচের টাকা) না পাওয়ার কারণে। কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বহীনতার কারণে এ সাংবাদিকের ভূমির নতুন করে অতিরিক্ত ৩ বছরের খাজনা যোগ হয়েছে। একজন সাংবাদিকের যখন এ অবস্থা! সাধারণ মানুষ কি পরিমাণে অনিয়ম ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। তিনি জানালেন, এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।
সারাদেশের ভূমি অফিসগুলোর এ রকম অবস্থা হলেও সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি, অনিয়ম, দায়িত্বহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা হচ্ছে সীতাকুন্ড উপজেলাধীন কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। কারণ চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলায় শিপ ব্রেকিং ও ভারী শিল্প-কারখানা থাকায় এখানে জায়গার দাম অনেক বেশি। জানা যায় যে, কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীদের নিজস্ব কতিপয় দালাল আছে। ভূমি অফিসের কর্মচারী, দালাল, স্থানীয় ভূমি জালিয়াত ও ভূমি দস্যুদের একটি অঘোষিত সিন্ডিকেট রয়েছে। এ সিন্ডিকের দৌরাত্মে সাধারণ ভূমি মালিকরা অসহায় ও জিম্মি হয়ে আছে। সাধারণ ভূমি মালিকরা ভূমি অফিসে গিয়ে সেবা না পেয়ে হয়রানীর শিকার হলে ভূমি অফিসের দালাল চক্র ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয় হয়। তখন তারা সাধারণ মানুষকে বলে চলেন, আমি আপনার কাজ করিয়ে দেব। সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে দালাল চক্র ও সিন্ডিকেট সদস্যদের টাকা দেয়। দালাল চক্রের মাধ্যমেই কাজ করে ভূমি অফিসের কর্মচারীরা।
সরকারি পরিপত্র ও আদেশ অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করলে অফিস চলাকালীন সময়ে সাথে সাথে তা অনুমোদন পাবার কথা। কিন্তু বাস্তবে মানুষকে টাকা দিয়ে অনলাইন সিস্টেমের রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন করাতে হয়। অনেক ভূমি মালিক টাকা খরচ করেও অনুমোদন করাতে পারছেন না। ভূমি অফিসের কর্মচারীদের স্বেচ্চাচারিতার কারণে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ ভূমি মালিকদের প্রশ্ন, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের জন্য অনলাইন সার্ভার সিস্টেম প্রবর্তন করে কি লাভ হলো? আমরা তো অনলাইনের কোনো সেবাই পাচ্ছি না। ইতিপূর্বে আমরা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অনেক সহজেই এক খতিয়ানের একাধিক মালিক ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করেছি।
এখন অনলাইন সিস্টেম থেকে আরো বেশি সুবিধা পাবার কথা। সে জায়গায় সুবিধা পাবার বিপরীতে আমরা আরো বেশি হয়রানীর শিকার হচ্ছি।
ভূমি অফিসগুলোর এ অবস্থা চলতে থাকলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের গণমুখী উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়বে। সাধারণ ভূমি মালিকরা তাদের কাঙ্খিত ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারও ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনার) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এ বিষয়গুলোর দিকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া দরকার।
এ বিষয়ে হয়রানীর শিকার ভুক্তভোগী ভূমি মালিকরা জরুরি ভিত্তিতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা: একাধিক মালিকের স্বত্ব থাকা খতিয়ান অনুমোদনে চরম ভোগান্তি

আপডেট টাইম : ০৬:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে খাজনা আদায়ের পদ্ধতি চালু করে। এ বিষয়ে মনোমুগ্ধকর ইন্টারফেসযুক্ত একটি সার্ভার চালু করে ভূমি মন্ত্রণালয়। বিগত ২৭ অক্টোবর ২০২০ইং তারিখের জারিকৃত ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৩.০০.০০০০.০৪২.৬৮.০১১.২০.৬৯৭ নং পরিপত্রে বলা হয় যে,
১. দক্ষ, স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভিশন। একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দূনীতিমুক্ত, দেশপ্রেমিক, গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। উক্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও এবং মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের ৩০ এপ্রিল ২০১৭ইং তারিখের ০৪.০০.০০০০.৮৩১.০০১. ০১৭.১৩.১৪৯ নম্বর প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয় বিশেষ ভাবে ২০০৯ সন থেকে ধারাবাহিক ভাবে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বহু জনমুখী উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছে। জনগণের দোরগোড়ায় ভূমি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে “হাতের মুঠোয় ভূমি সেবা” নামের মোবাইল অ্যাপস প্রস্তুত করা হয়েছে। সারাদেশে ই-নামজারী সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমানে ভূমি উন্নয়র কর ইলেকট্রনিক পদ্ধতি আদায়ের জন্য অনলাইনে সিস্টেম (Online System) তৈরী করা হয়েছে।
২. ভূমি উন্নয়ন কর আদায় সংক্রান্ত সেবাটি স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প সময়ে ও সহজে জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ইলেকট্রনিক সিস্টেম চালু করা হয়েছে। উক্ত সিস্টেমের মাধ্যমে নাগরিকগণ ঘরে বসেই মোবাইল বা অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন করের অর্থ জমা প্রদান করতে পারবেন। ফলে নাগরিককে আর ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিসে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে হবে না। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান/পরিশোধ করলে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতেই দাখিলা পাওয়া যাবে। অনলাইনে প্রাপ্ত দাখিলা বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রাপ্ত দাখিলার মতোই গ্রহণযোগ্য ও আইনসিদ্ধ হবে। ইলেকট্রনিত পদ্ধতিতে প্রাপ্ত দাখিলাতে QR Code বা বারকোড দেয়া হবে। প্রয়োজনে উক্ত কোড স্ক্যান করে অনলাইনে প্রাপ্ত দাখিলার সঠিকতা যাচাই করা যাবে।
৩. ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভূমি উন্নয়ন করের অর্থ অথবা ভূমি সংক্রান্ত বিবিধ অর্থ জমা প্রদান করা হলে উক্ত অর্থ জমা প্রদানের পর ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে প্রাপ্ত দাখিলা অথবা Duplicate Carbon Receipt (DCR) ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে প্রদত্ত বা বিজি প্রেস হতে ছাপানো দাখিলা ও DCR এর সমপর্যায়ের এবং আইনগত ভাবে বৈধ ও সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য হবে।
৪. কাজের সুবিধার্থে নাগরিক কর্তৃক অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতির ধাপসমূহ এই সাথে সংযুক্ত করা হল।
৫. জনস্বার্থে এই আদেশ জারি করা হল এবং অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর হবে।
মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী, সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়, ২৭ অক্টোবর, ২০২০ইং।
ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এ পরিপত্র জারি করার প্রায় ৩ বছর হতে চললো। কিন্তু সাধারণ জনগণ তাদের কাঙ্খিত ভূমি সেবা পাচ্ছেন না। এর প্রধান কারণ স্থানীয়/পৌর ভূমি অফিস সমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতা। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতি পদে পদে হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ ভূমি মালিকরা।
অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সিস্টেমটি অত্যন্ত সুন্দর ও কার্যকর যে কোন ব্যক্তি নিজে বা দক্ষ একজন কম্পিউটার অপারেটরের সাহায্যে সহজেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন।
তবে যে কোনো ব্যক্তি তার এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) দিয়ে ভূমি উন্নয়ন সেবা সিস্টেম থেকে রেজিস্ট্রেশন করলেও অনুমোদনের জন্য স্থানীয় ভূমি অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এখানেই শুরু হয় বিপত্তি। রেজিস্ট্রিশন অনুমোদনের জন্য ভূমি অফিসে গেলে সেখানে শুরু করা হয় নানারকম টালবাহানা। ঘুষ (খরচের টাকা) না দিলে ভূমি অফিসের কর্মচারীদের কাছ থেকে কোনো সেবাই পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন করতে গেলে ঘুষ (খরচের টাকা) না দিলে বলা হয়, এখন ব্যস্ত আছি, পরে আসুন। এসব নানারকম টালবাহানা করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে ভূমি অফিসের কর্মচারীরা। যদিওবা অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য রেজিস্ট্রেশন করার পর সাথে সাথেই ভূমি অফিস থেকে অনুমোদন পাবার কথা।
বাস্তবে ভূমি অফিসে থেকে অনুমোদন নিতে গিয়ে মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ চরম হয়রানীর শিকার হবার পাশাপাশি তাদের মূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে।
১৯৭৫/৭৬ সালের বি.এস ভূমি সার্ভে রেকর্ডের ভিত্তিতে একটি খতিয়ানে একাধিক মালিকের মালিকানা স্বত্ব রয়েছে। মূলত একাধিক মালিকের স্বত্ব থাকা খতিয়ানগুলো অনুমোদন দিতে ভূমি অফিসের কর্মচারীরা ভূমি মালিকদের সীমাহীন হয়রানী করছে। তাদের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ ভূমি মালিকরা।
অনলাইন ভূমি উন্নয়ন সেবা সিস্টেমের সার্ভারটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, আকর্ষণীয় ও সাবলীল। এ সিস্টেমটিতে একটি খতিয়ানে একাধিক ভূমি মালিকের মালিকানা স্বত্ব থাকা ভূমি অনুমোদনের সুন্দর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভূমি অফিসের কর্মচারীদের কারণে সাধারণ ভূমি মালিকরা ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রবর্তিত অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না।
জাতীয় পর্যায়ের এক সিনিয়র সাংবাদিক জানালেন, তার নিজের, বড় ভাই ও মাতার নামে ৩ খতিয়ানে এবং ৩ দাগে ভূমি রয়েছে। সে খতিয়ান গুলোতে অন্য মালিকের মালিকানা স্বত্ব রয়েছে। তিনি নিজে, তার বড় ভাই ও মাতার নামে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের জন্য অনলাইন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন ৩ বছর পূর্বে। ৩ বছর পার হলেও এখনো পর্যন্ত কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে সেগুলো অনুমোদন করা হয়নি। ভূমি অফিস থেকে বলা হচ্ছে নামজারী করে নিতে। কি আশ্চর্য! ভূমি হস্তান্তর, বিক্রয়, দান, হেবা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হলেই শুধু নামজারী করতে হয়। খতিয়ানে মালিকানা স্বত্ব ও অংশ স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকলে কেন নামজারী করতে হবে? এ প্রশ্নের কোনো জবাব কুমিরা ভূমি অফিসের তহশীলদার ও কর্মচারীরা দিতে পারেননি। এসব আজগুবি কথা বলা হচ্ছে শুধুমাত্র ঘুষ (খরচের টাকা) না পাওয়ার কারণে। কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বহীনতার কারণে এ সাংবাদিকের ভূমির নতুন করে অতিরিক্ত ৩ বছরের খাজনা যোগ হয়েছে। একজন সাংবাদিকের যখন এ অবস্থা! সাধারণ মানুষ কি পরিমাণে অনিয়ম ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। তিনি জানালেন, এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।
সারাদেশের ভূমি অফিসগুলোর এ রকম অবস্থা হলেও সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি, অনিয়ম, দায়িত্বহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা হচ্ছে সীতাকুন্ড উপজেলাধীন কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। কারণ চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলায় শিপ ব্রেকিং ও ভারী শিল্প-কারখানা থাকায় এখানে জায়গার দাম অনেক বেশি। জানা যায় যে, কুমিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীদের নিজস্ব কতিপয় দালাল আছে। ভূমি অফিসের কর্মচারী, দালাল, স্থানীয় ভূমি জালিয়াত ও ভূমি দস্যুদের একটি অঘোষিত সিন্ডিকেট রয়েছে। এ সিন্ডিকের দৌরাত্মে সাধারণ ভূমি মালিকরা অসহায় ও জিম্মি হয়ে আছে। সাধারণ ভূমি মালিকরা ভূমি অফিসে গিয়ে সেবা না পেয়ে হয়রানীর শিকার হলে ভূমি অফিসের দালাল চক্র ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয় হয়। তখন তারা সাধারণ মানুষকে বলে চলেন, আমি আপনার কাজ করিয়ে দেব। সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে দালাল চক্র ও সিন্ডিকেট সদস্যদের টাকা দেয়। দালাল চক্রের মাধ্যমেই কাজ করে ভূমি অফিসের কর্মচারীরা।
সরকারি পরিপত্র ও আদেশ অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করলে অফিস চলাকালীন সময়ে সাথে সাথে তা অনুমোদন পাবার কথা। কিন্তু বাস্তবে মানুষকে টাকা দিয়ে অনলাইন সিস্টেমের রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন করাতে হয়। অনেক ভূমি মালিক টাকা খরচ করেও অনুমোদন করাতে পারছেন না। ভূমি অফিসের কর্মচারীদের স্বেচ্চাচারিতার কারণে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ ভূমি মালিকদের প্রশ্ন, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের জন্য অনলাইন সার্ভার সিস্টেম প্রবর্তন করে কি লাভ হলো? আমরা তো অনলাইনের কোনো সেবাই পাচ্ছি না। ইতিপূর্বে আমরা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অনেক সহজেই এক খতিয়ানের একাধিক মালিক ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করেছি।
এখন অনলাইন সিস্টেম থেকে আরো বেশি সুবিধা পাবার কথা। সে জায়গায় সুবিধা পাবার বিপরীতে আমরা আরো বেশি হয়রানীর শিকার হচ্ছি।
ভূমি অফিসগুলোর এ অবস্থা চলতে থাকলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের গণমুখী উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়বে। সাধারণ ভূমি মালিকরা তাদের কাঙ্খিত ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারও ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনার) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এ বিষয়গুলোর দিকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া দরকার।
এ বিষয়ে হয়রানীর শিকার ভুক্তভোগী ভূমি মালিকরা জরুরি ভিত্তিতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।