অবৈধ ড্রেজিংয়ে বালু উত্তোলন চলছে, বাড়ছে ভাঙন

- আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩
- / ১৫০ ১৫০.০০০ বার পাঠক
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে-মেঘনা নদী এবং নদী উপকূলীয় এলাকায় ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে ভাঙনের শিকার হচ্ছে চরাঞ্চলের হাজার-হাজার পরিবার। একইসঙ্গে বর্তমানে হুমকিতে রয়েছে রক্ষা বাঁধসহ আশপাশের বিশাল চর এলাকা।
হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতভিটা বাঁচাতে সরকারের কাছে অবৈধ ড্রেজার বন্ধের দাবি ছিন্নমূল পরিবারগুলোর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর ও দক্ষিন চরবংশী ইউপির মেঘনা নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার নৌ সীমানা। মেঘনার পশ্চিমে প্রায় ১০টিরও বেশি চর রয়েছে।
যেসব স্থানে যারা বালু উত্তোলন করছেন, রায়পুরের দক্ষিন চরবংশী ইউপির মোল্লারহাট বাজারের পানির ঘাট ও ভাংগাটেক জায়গায় ইউপি সদস্য দিদার মোল্লা ও দুলাল চৌয়াল, হাজিমারা সুইজগেইট খালপার এলাকায় জামাল, জুলহাস মোল্লা, ফারুখ চৌয়াল, দক্ষিণ চরবংশী ইউপির মিয়ারহাট (রাহুলঘাট) দক্ষিণে হাসেম চৌকিদার, উত্তরে বাবুল বেপারি, চৌয়ালগো বাজারে মোতালেব সৈয়াল, ভায়রা ঘাটে মামুনসহ উত্তর চরবংশী ইউপির আলতাফ মাষ্টারের ঘাটের পশ্চিম পাড়ে দুই বালু দস্যু।।
এসব চরের লোকজন বহুবার-মেঘনার ভাঙনের শিকার। এছাড়াও মেঘনার ভাঙনের শিকার বাঁধ নির্মাণ করেছেনা বর্তমান সরকার। কিন্তু মেঘনা নদীর ডুবোচর খননের নামে এক শ্রেণীর অসাধু ড্রেজার ব্যবসায়ী গত কয়েকমাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চরাঞ্চল ও শহর রক্ষা বাঁধকে ভাঙন হুমকিতে রেখেছে। সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য তারা ইচ্ছেমত নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে।
মেঘনার মিয়ারহাট ও আলতাফ মাষ্টারের ঘাটের পশ্চিম পাড়ের চরাঞ্চলের ছিন্নমূল পরিবারগুলো ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানাযায়।
দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজি বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজিং করার কারণে মারাত্মক ভাঙন হুমকিতে ইউনিয়নসহ আশপাশের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। এসব এলাকায় মেঘনার ভাঙন অব্যাহত। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ফসলি জমিগুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ছিন্নমূল হয়ে পড়ছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার। গত ১৩ মে আমারই পরিষদের সদস্য (মেম্বার ) দিদার মোল্লা সহ দুইজকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেচেন ইউএনও ও এসিল্যান্ড।।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা সফিক চৌয়াল ও নিজাম বেপারি বলেন, আমরা বহুবার-মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়েছি। নতুন করে বাড়ি করার টাকাও নেই আর জায়গাও নেই। এখন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা দরকার। আমাদের বেঁচে থাকার মতো উপায় দেখছি না।
মেঘনার বালু দস্যু জুলহাস মোল্লা মুঠোফোনে জানান, আমি ছাড়াও অনেকে বালু তুলছে। সেটা দেখেন না। দূরে আছি, সন্ধায় কথা বলবো। কিছু সম্মানি করবো, রিপোটের দরকার নাই।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী (রায়পুরের দায়িত্বে) ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ড্রেজিং না করলে পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে রায়পুরের তিনটি ইউনিয়ন ভাঙন হুমকিতে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা প্রশাসনেরে কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। নদী রক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনজন দাস বলেন, গত ১৩ মে দক্ষিণ চরবংশী ইউপি সদস্য দিদার মোল্লাসহ দুই জনের ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগেও কয়েকটা অভিযান কয়েকজনের জরিমানাও করা হয়েছে। আবারও অভিযান চালানো হবে।