সিএনজি চালকের হত্যার গোপন রহস্য উন্মোচন গ্রেফতার – ৬
- আপডেট টাইম : ০৮:৩১:৪১ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ৯ জুন ২০২৩
- / ১৪৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
মুক্তাগাছার সিএনজি-অটোরিকশা চালক কামালকে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থানাধীন এলাকায় হত্যা করে সিএনজি ছিনতাই এর ক্লুলেস ঘটনার রহস্য উন্মোচনপূর্বক ছিনতাইকৃত সিএনজি-অটোরিকশা উদ্ধার এবং হত্যার সাথে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব -১৪, ব্যাটালিয়ন সদর, ময়মনসিংহ।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে র্যাব অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো আনোয়ার হোসেন এর নেতৃত্ব র্যাবের একটি চৌকস অভিযানিক দল ১০ এপ্রিল ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দে ঈশ্বরগঞ্জ এর গোল্লা জয়পুর এলাকায় নিজ বাড়ি হতে আসামী মো. ইসলাম উদ্দিন ফকির (৩০)গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আসামী ইসলাম উদ্দিন ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জয়পুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন ফকিরের ছেলে। অতঃপর ধৃত আসামীর তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে গত ৬ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দে সকাল অনুমান ৬ টার সময় ঢাকা জেলার পূর্ব মানিকনগর এলাকা থেকে মো. শফিকুল ইসলাম (৪৫)কে এবং একই দিন দুপুর অনুমান ১২ টার সময় মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় আকিজ ফ্যাক্টরীর সামনে থেকে মো. আবুল কাশেম (৫২)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। শফিকুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার বরুকা গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের ছেলে এবং আবুল কাশেম নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার চৈতনগর গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে। ধৃত আসামী ত্রয়ের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে ৮ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ সকাল অনুমান ৬ টার সময় মো. জালাল (৪৬) কে ঢাকা জেলার মহাখালী এলাকা হতে ১০ টা ৩০ মিনিটের সময় মো. আব্দুস ছত্তার (৩৮) কে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রাগামারা এলাকা থেকে এবং বিকাল অনুমান ৩টা ১৫ মিনিটের সময় মো. কামাল হোসেন (২৮) কে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ধৃত আসামী জালাল ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার লাঙ্গুনিয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে, আব্দুস ছত্তার ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার বাগান গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে এবং আসামী কামাল হোসেন ময়ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুর গ্রামের গিয়াসউদ্দিনের ছেলে। আসামী কামালের কাছ থেকে ভিকটিমের থ্রি হুইলার সিএনজিটি জব্দ করা হয়।
গত ২৮ মার্চ ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ সকালে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার ছাতারকান্দি নাথেরপাড়া এলাকার ঢাকা -জামালপুর মহাসড়কের পাকা রাস্তার উপর জনৈক এক ব্যাক্তিকে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। পরবর্তীতে, পুলিশ মারফত সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের ছোট ভাই নাজমুল ভিকটিমের লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে সনাক্ত করে।
পরবর্তীতে ভিকটিমের ছোট ভাই মো. নাজমুল হোসেন (৩৪), পিতা-মো. আ. জব্বার, গ্রাম – রঘুনাথপুর নতুন বাজার, উপজেলা – মুক্তাগাছা, জেলা- ময়মনসিংহ বাদী হয়ে ধনবাড়ী থানার মামলা নং-০১, তারিখঃ ০১ এপ্রিল ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ, ধারা- ৩০২/৩৯৪/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ দায়ের করেন।
উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পর থেকে র্যাব-১৪, ময়মনসিংহ উক্ত ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
সন্ধা ৬ টায় এক প্রেস ব্রিফিং এ র্যাব অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, মুক্তাগাছা থানাধীন রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে মো. কামাল হোসেন ভাড়ায় সিএনজি অটো রিকশা চালাতেন। ঘটনার আগের দিন শফিক এবং কাসেম মোল্লা মিলে হঠাৎ বড়লোক হওয়ার পরিকল্পনা করে এবং সেই মোতাবেক তারা শর্টকাট টেকনিক হিসেবে সিএনজি ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে একটি মোবাইল ফোন এবং একটি বেনামী সিম সংগ্রহ করে। ঘটনার দিন গত ২৭ মার্চ ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ বিকালে মুক্তাগাছা থেকে ইসলাম ও কাসেম সিএনজি চালক কামালকে ফোন করে ভাড়ায় সরিষাবাড়ি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এতে ভিকটিম রাজি হলে তারা তাকে নিয়ে সরিষাবাড়ী যায়। পথিমধ্যে, আসামীরা অপর আসামী শফিকুলকেও সিএনজিতে উঠিয়ে নেয়। সেখানে কালক্ষেপণ করলে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসলে সবাই মিলে ইফতার করার সুযোগে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিম কামাল এর জুসের মধ্যে বিষাক্ত নেশা জাতীয় ঔষধ মিশিয়ে ভিকটিমকে খাওয়ায়। ভিকটিম অচেতন হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে নিশ্চিত হয়ে ঘাতকরা তাকে সিএনজিতে উঠিয়ে নির্জনে ফেলে রেখে সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘাতকরা সিএনজিটি মো. জালাল নামের দালালের কাছে বিক্রয়ের জন্য দেয় এবং জালাল ৩,৮০,০০০ টাকার বিনিময়ে কামালের কাছে বিক্রি করে। পরবর্তীতে, কামাল ৪,৩৫,০০০ টাকার বিনিময়ে ছত্তারের কাছে বিক্রি করে। উল্লেখ্য, এ ঘটনার মূলহোতা শফিকুল ইসলাম এর নামে আরো চারটি মামলা রয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, উপরোক্ত ঘটনার মতো যাতে আর কোন ঘটনার না ঘটে সে প্রেক্ষিতে র্যাবের টহল তৎপরতা ও গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত থাকবে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।