গুল আহমদ জুট মিল এর প্রকল্প প্রধান গাউসুল আজমের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

- আপডেট টাইম : ০৫:৩০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩
- / ২০০ ৫০০০.০ বার পাঠক
সরকারি সম্পদ যেন নিজের বাবার সম্পদ মনে করে নানা রকম দুর্নীতি করছেন গুল আহমদ জুট মিল লিমিটেড এর প্রকল্প প্রধান মোঃ গাউসুল আজম
# সরকারি সম্পদ লুটপাট, অর্থ আত্মসাৎ অনিয়ম প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি
# ওভারটাইম নামে দুর্নীতি
# সরকারের খাতায় ভ্রমণ ভাতা হিসেবে বিমানের ভুয়া বিমানের বোর্ডিং পাস
# কার্টুনে কার্টুনে মূল্যবান মালামাল চুরি, ক্যবল চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ততা
বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব স্বায়ত্বশসিত সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান যা ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সীতাকুণ্ড ছোট কুমিরা চট্টগ্রামে অবস্থিত গুল আহমদ জুট মিলস লিমিটেড। দীর্ঘদিন ধরে চলছে তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীর গার্ড কমান্ডারের সহযোগিতায় প্রকল্প প্রধান মুহাম্মদ গাওছুল আজম এর সরকারি সম্পদ লুটপাট, অর্থ আত্মসাৎ অনিয়ম প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। তথ্য মতে মিল বন্ধ হওয়ার আগে থেকে মিলে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মিলের ভেতর পারিবারিক আবাসিক এলাকায় বসবাস করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে আবাদি জমি লিজ প্রদান করা হত এবং সেখান হতে মিলের খাজনা বাবদ যা আয় হতো তা সরকারি ফান্ডে জমা হতো কিন্তু মিল বন্ধ হওয়ার পর আবাদি জমি লিজ না দিয়ে একাই সব আবাদি জমি নিজে কোন প্রকার খাজনা না দিয়ে ভোগদখল করছেন এই অসাধু কর্মকর্তা, ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন অত্র এলাকাবাসীসহ সকলের । আরো জানা যায়, মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি মিলের এক অংশ জমিতে একটি গবাদী পশুর ফার্ম করেন সেখানে তিনি ২৪টি গরু ১৪ টি ছাগল নিয়ে একটি খামার নির্মাণ করেন এবং তা পরিচালনার কাজে সরকারি নিরাপত্তা প্রহরীকে ব্যবহার করেন। যদি কোন প্রহরী তার কথার অবাদ্ধ হয় তাহলে তাকে করা হয় নানা রকম হয়রানি নির্যাতন এমনকি বদলি করা হয় অন্যত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রহরী জানান মিলে কিছুদিন আগে বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরির একটি ঘটনা ঘটে সে ঘটনায় প্রকল্প প্রধান মুহাম্মদ গাউছুল আজমের সম্পৃক্ততা আছে কারণ যেদিন চুরির ঘটনা ঘটে সেদিন সকল নিরাপত্তা প্রহরীকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রেখেছিলেন তিনি, বিশেষ করে তার গরুঘর নিমার্নের কাজে। এই সুযোগে এক নং এবং দুই নং গেইট ব্যতীত কোন নিরাপত্তা প্রহরী পোস্ট ছিলেন না যার প্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম এক নং মিলের ক্যাবল চুরি হয় এবং এতেই শেষ নয় এই ক্যাবলের মাশুল হিসেবে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন হতে টাকা কর্তন পূর্বক তা সমন্বয় করা হয় যা সম্পূর্ণ অনিয়ম।
নিরাপত্তা প্রহরী আরো বলেন, দিনের বেলায় যেসব প্রহরী দিয়ে প্রকল্প প্রধান তার নিজের ব্যাক্তিগত কাজ করান, তাদেরকে আবার রাতে পোষ্ট খালি রেখে তাদের নামে ভূয়া উপস্হিতি/ ওভারটাইম দেখান।যা রেজিষ্টার খাতা দেখলে প্রতীয়মান। কোথাও কাঁটা-ছেঁড়া, অবৈধ ফ্লুইড কালির ব্যবহার, হাজিরা বাড়ানো-কমানো। সরকারি খাতায় অবৈধভাবে উপস্থিত দেখিয়ে সেই পারিশ্রমিক বা বেতন এর টাকা কমান্ডারদের যোগসাজেসে তাদের এবং প্রকল্প প্রধানের পকেটে ঢুকে। মিলের নিরাপত্তা মনিটরিং টিমের সকল সদস্য, মিলের নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সকলে এ বিষয়ে অবগত আছেন। তাদের নিকট হতে মাসিক মাসোহারা গ্রহনের ফলে তিন বছরে ৭২ লক্ষ টাকা সরকারের আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি যানবাহন তিনি ব্যবহার করেন তার পারিবারিক কাজে।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক আরেক কর্মরত কর্মকর্তা বলেন, দিনের পর দিন তিনি তার গবাদী- পশু, ফসলাদি, জমি নিরাপত্তা কর্মীদেরকে দিয়ে আবাদ করান, প্রায় সময় দেখা যায় প্রহরীকে সরকারি ডিউটি না করিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীর পোশাক বিহীন গরু-ছাগল লালন ও আবাদি জমিতে কাজ করানো আদেশ করেন। যা সম্পূর্ণ নিয়মের বাইরে যদি কেউ রাজি না হয় তাহলে তার বেতন এবং ছুটি কোন কিছুই হয় না। হতে হয় অনেক হয়রানির শিকার। গত ০৯ এপ্রিল তারিখে আনুমানিক ভোর ৬টা থেকে ৭:৩০ মিনিট এর মধ্যে গার্ড কমান্ডারের যোগসাজেসে অত্র মিলে ২ নম্বর গেট দিয়ে গার্ড কমান্ডার জিয়াউদ্দিন মিলের পাঁচটি কার্টুনে মূল্যবান মালামাল সাইকেলের সাহায্যে পাচার/চুরি করেন, যা মিলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে মিলের সকল কর্মকর্তারা অবগত আছেন। মিলের ভেতর চারটি পুকুরের মাছ নিরাপত্তা প্রহরীদের দিয়ে জাল টেনে আত্মসাৎ করছেন এই অসাধু কর্মকর্তা ফলে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি মিলের মসজিদের পেশ ইমামকে দিয়ে জোর করে গাভীর দুধ দোহনের কাজ করিয়ে থাকেন তিনি।
কিছুদিন আগে মিলে ভবন নির্মাণের কাজে ৬ হাজার ইটের লাগানো হয় যা মিলের ভেতরের অংশ থেকে নিয়ে মিলের ব্যবহৃত হয়, কিন্তু তিনি ভাউচার করেন ৬ হাজার ইট বাইরে থেকে ক্রয় করা হয়েছে যার মূল্য ৬০ হাজার টাকা যা তিনি সরকারি খাত থেকে অনিয়ম করে আত্মসাৎ করেন।
একজন মিল গার্ড কমান্ডারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গাউসুল আজমের দুর্নীতিতে যেন শেষ নেই! পদে পদে দুর্নীতি আছে তার শুধু তাই নয় সরকারের খাতায় ভ্রমণ ভাতা হিসেবে ভুয়া বিমানের বোর্ডিং পাস বা টিকিট প্রদান দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন যা সম্পূর্ণ দুর্নীতি অনিয়ম তার এই অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিভিন্ন প্রশাসন এবং মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করিয়েছেন। সাম্প্রতিক ২৯ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি দরখাস্ত করা হয়েছে যাতে লিখা ছিল বন্ধ মিলে সরকারি সম্পদ লুটপাট ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে।
তার বাসায় ৩ টা ফ্রিজ,২ টা এসি,২৪ টি গরুর গোসল করানো এবং রাতের বেলায় গরুর খামারে পাখা এবং বাতি জ্বালালেও বিদ্যুৎ বিল ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, অপরদিকে যেকোনো কর্মকর্তার আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকলে মাসিক বিদ্যুৎ বিল আসে ১৫০০-২০০০ টাকা।বিদ্যুতের বিল না দিয়ে চুরি করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করছে।
এ বিষয়ে গুল আহমদ জুট মিলস লিমিটেড এর দায়িত্বরত প্রকল্প প্রধান মুহাম্মদ গাউছুল আজম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিককে জমি লিজ প্রদানের বিষয়ে বলেন মিল বন্ধ হয়েছে ২০২০ সালের ১জুলাই, তখন থেকে লিজ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতিপূর্বে তিনটি টেন্ডার হয়েছে সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে। সরকারের একটি প্রোগ্রাম ছিল জুট মিল গুলো বন্ধ হলে জুট মিল গুলো পুনরায় চালু করা হবে সে চালু হবে সরকারি ভাবে নয় পাবলিকের মাধ্যমে হবে তার প্রেক্ষিতে আমাদের বলা হল মিলে অব্যবহৃত জায়গা আছে সেগুলো আপনারা ব্যবহার করেন। এখানে চাষাবাদের যে অবস্থা এখানে চাষাবাদ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় এটি একটি লস প্রজেক্ট কিন্তু আমাকে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো এই জমি ব্যবহার করতেই হবে। ২৪টি গরু গবাদি পশু আমাদের জমির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন আপনি যে সব কথা বলছেন তা নিয়ে আমাদের হেড অফিসে রিপোর্ট দিয়েছে সেখান থেকে একটি অনুসন্ধান টিম আসবে অনুসন্ধান করবে ইট বা রাস্তার ব্যবহারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার পূর্ববতী যে জিএম ছিলেন তিনি এই টেন্ডার গুলো করে গিয়েছেন এ টেন্ডার গুলো দুটো জাতীয় পত্রিকা এবং একটি ইংলিশ জাতীয় পত্রিকার প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদকের সকল প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সকল বন্ধ জুট মিলে এসব কাজ সকলে করছেন। আমার বিরুদ্ধে কেউ এটি ষড়যন্ত্র করছে আপনি নিউজ করেন আমাদের এখানে কমিটি আছে কমিটি তা দেখবে।
এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (গবেষণা ও মাননিয়ন্ত্রণ) বিজেএমসি কর্মকর্তা ড.মোঃ গোলাম কবীর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমার কাছে তো কোন রকমের কাগজ বা অভিযোগ আসে নাই। তাই আমি জানতে পারি নাই। অভিযোগটি আমার কাছে আসলে আমি এটি তদন্ত কমিটি করে এটি তদন্ত করে দেখবো। অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এর সচিব মোঃ আব্দুর রউফ এর সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি প্রথমে বলেন, আমাকে জানানোর তো কিছু নেই অভিযোগ যেহেতু আপনাদের কাছে এসেছে তাহলে আপনাদের অথরিটি থাকলে আপনারা তদন্ত করে দেখুন অসুবিধা নেই তো, কেনো, আমি কি বলবো আপনারা ব্যবস্থা নিয়েন না আর যদি আমার কাছে আসে তাহলে আমি অবশ্যই সেটি তদন্ত করে দেখব আমার কাছে এভাবে টেলিফোন করে তো বলার দরকার নেই। এদেশে কেউ দুর্নীতি করবে আপনারা তা প্রতিবেদন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আমিও চাই এটা হোক। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যর প্রশ্রয় দেই না অন্যায়ের পক্ষে আমি নেই অভিযোগটি আমার কাছে আসলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে একটি সু নামধন্য রাষ্ট্র এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছেন সেখানে এরকম গাউছুল আজম এর মত দূর্নীতিবাজরা সরকারি সম্পদকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে লুটপাট ও অর্থ আত্মসাৎ অনিয়ম দুর্নীতি করে সরকারকে জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তাই ভুক্তভোগী নিরাপত্তা কর্মীসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর অনুরোধ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন বিষয়টি আমলে নেয় এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করনসহ কর্মচারীদেরকে গাওছুল আজমের এই অমানবিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করনসহ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।