ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইতি টানলেন রাজ্জাক-নাফীস
- আপডেট টাইম : ১০:৫১:০৭ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
- / ৩২২ ৫০০০.০ বার পাঠক
স্পোর্টস রিপোর্টার ॥
বাংলাদেশ জাতীয় দলে ১২ বছর আর ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৯ বছর খেলেছেন বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা ২০১৮ সালে শেষ হয়ে গেলেও
ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে সম্প্রতিই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে জাতীয় নির্বাচক প্যানেলে পদ দিয়েছে। ৮ বছর জাতীয় দলে খেলা ওপেনার শাহরিয়ার নাফীসও ২০১৩ সালের পর থেকে সুযোগ পাননি। তিনিও বিসিবির একটি পদে আসীন হতে চলেছেন। তাই আজ তারা আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরে গেলেন। আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে উভয় ক্রিকেটার অবসর ঘোষণা করেছেন এবং সেজন্য আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।
বাংলাদেশের হয়ে ১৩ টেস্ট, ১৫৩ ওয়ানডে ও ৩৪টি টি২০ খেলেছেন রাজ্জাক। বাঁহাতি এই স্পিনার ওয়ানডেতে ২০৭টি, টি২০-তে ৪৪টি ও টেস্টে ২৮টি উইকেট শিকার করেছেন। দেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে ২০০’র বেশি ওয়ানডে উইকেটের মালিক হন রাজ্জাক। ঠিক ৪ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে ফিরেছিলেন তিনি। সেটিই ছিল তার বাংলাদেশের পক্ষে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
জাতীয় দলে আর সুযোগ না হলেও ৩৮ বছর বয়সী রাজ্জাক ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছিলেন। ১২৭টি প্রথম শেণীর ম্যাচে ৬৩৪ উইকেট এবং ২৮০টি লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও ৪১২ উইকেট তার ঝুলিতে। আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া- কোন ধরণের ক্রিকেট থেকেই অবসরে যাননি রাজ্জাক। তবে এখন জাতীয় নির্বাচক হওয়ার পর খেলোয়াড়ি অধ্যায় শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আজ অবসর ঘোষণার অনুষ্ঠানে জাতীয় নির্বাচক হওয়া রাজ্জাক বলেন,‘আমার এই ক্যারিয়ার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ জিনিস। এটা আসলে ভোলার মত না। প্রত্যেক ধাপে ধাপে মনে পড়বে… মিস করব না ঠিক, স্মরণীয় থাকবে। মিস তখন করতাম যদি জোরপূর্বক হয়ে যেত। এটা জোরপূর্বক না, আমারই সিদ্ধান্ত। মিস করা মানে এই নয় যে থাকলে ভাল হত। থাকলে ভাল হত এটা আমি আর বলব না, ইনশাআল্লাহ।’
অপরদিকে, নাফীস ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন। বাংলাদেশের জার্সিতে ২৪ টেস্ট, ৭৫ ওয়ানডে ও একটি টি২০ খেলেছেন তিনি। তার খেলা একমাত্র টি২০ ম্যাচটি ছিল এই ফরমেটে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। নাফীসের নেতৃত্বে সেই ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে ৪৩ রানে হারায় বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্ট খেলার পর আর দলে জায়গা হয়নি।
ওয়ানডেতে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪ সেঞ্চুরি ও ১৩ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩১.৪৪ গড়ে ২ হাজার ২০১ রান করেছেন। ২৪ টেস্টে একটি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৬.৩৯ গড়ে ১ হাজার ২৬৭ রান করেছেন নাফিস। একমাত্র টি২০ ম্যাচে ২৫ রান করেছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও উজ্জ্বল ছিলেন নাফীস। চালিয়ে যাচ্ছিলেন খেলা। ১২৪টি প্রথম শেণীর ম্যাচে ১৫ সেঞ্চুরি ও ৪৮ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৮.৪০ গড়ে ৮ হাজার ১৪১ রান করেছেন তিনি। আর ১৮০টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৯ সেঞ্চুরি ও ৩০ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩২.৩২ গড়ে ৫ হাজার ২৬৯ রান আছে এ বাঁহাতির। ৬০টি স্বীকৃত টি২০ ম্যাচ খেলে ২৪.৯৬ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৬ হাফ সেঞ্চুরিতে ১২৪৮ রান আছে তার।
উভয় ক্রিকেটারের খেলোয়াড়ি জীবনে ইতি ঘটেছে আজ। আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এরপর ভালভাবেই শুরু হবে রাজ্জাক-নাফীসের বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন অধ্যায়। নির্বাচক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন রাজ্জাক। আর ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন নাফীস। তিনি নিজেই সে কথা জানিয়েছেন আজ।
অবসর ঘোষণার সময় নাফীস তার ক্যারিয়ার নিয়ে বলেন,‘আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া বাংলাদেশ মানুষের ভালবাসা। আমি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আরেকটু বেশি খেলতাম হয়ত পরিসংখ্যান আরও ভাল হত। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে তৃপ্তি বিচার করি না। বাংলাদেশের মানুষ ও মিডিয়ার যে ভালবাসা পেয়েছি এর চেয়ে বেশি ভালবাসা পাওয়া একজন খেলোয়াড়ের জন্য সম্ভব না। আমার ক্যারিয়ার নিয়ে কোন অতৃপ্তি নেই।