ইমাদ পরিবহনের দূর্ঘটনায় মাকে আর দেখা হলো না ৫ মাসের শিশু আনাহিতা
- আপডেট টাইম : ১২:৪৭:৩২ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩
- / ২০৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
৫ মাসের কন্যাশিশু আনাহিতা মাকে খুঁজছে। আনাহিত জানে না মা কী জিনিস। মায়ের আদর-যত্ন, স্নেহ-ভালবাসা তো দূরের কথা, মা শব্দটির মানে বোঝার আগেই আনাহিতার মা দূর আকাশের তারা। মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে এই ছোট্ট শিশুটির মা সুরভী আলম সুইটি। আনাহিতা মায়ের জন্য অপেক্ষা করলেও মা আর কখনো ফিরবে না।
আনাহিতা আর কখনো পাবে না মা সুরভীর আদর। ওই সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওই এলাকার কাউন্সিলর ওয়ার্ড নম্বর ১২ মোঃ আল আমিন ইসলাম ছুটে যায় এবং শিশুটিকে কোলে নেয় এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পাশে থাকে এবং বলে আমি আপনাদের পাশে আগেও ছিলাম এখনো আছি ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাআল্লাহ।
২২ বছরের সুরভী মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বিকেলে সুরভীর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে গোপালগঞ্জ শহরের পাঁচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
মাত্র দেড় বছর আগে রংপুরের রেজাউর রহমানের সাথে বিয়ে হয় সুরভীর। রেজাউর ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেন। পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন এই স্বপ্ন নিয়ে, মেয়ের যেন কোনো অযত্ন না হয় সেজন্য আনাহিতাকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকার মিরপুরে স্বামীর সাথে থাকতেন সুরভী। ঢাকার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি।
মেয়েকে একটু দেখতে, মেয়েকে একটু আদর করতেই দুতিনদিন আগে গোপালগঞ্জে আসেন সুরভী। মেয়েকে নানির কাছে রেখে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সকালে বাবা মাসুদ আলম তার মেয়ে সুইটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকায় পৌঁছে দিতে। কিন্তু ফিরলেন মেয়ের মরদেহ নিয়ে। ছোট মেয়ে আত্মহত্যা করেছে ৪ বছর আগে, আর আজ বড় মেয়ের মৃত্যু শোকে নির্বাক সুরভীর মা বিউটি খানম। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর কথা যেন মেনে নিতে পারছে না নিহত সুইটির মা। মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে গোপালগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মৃত্যুর কথা মনে করে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।
এদিকে বাবা মাসুদ আলম আহত হয়ে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মাসুদ আলমের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মেরী গোপীনাথপুর গ্রামে হলেও শহরের পাঁচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে স্থায়ী হন তারা।
নিহত সুইটির মামা নুরু মিয়া বলেন, আমার দুলাভাই এসেনশিয়াল ড্রাগসে নিরাপত্তরক্ষীর চাকরি করেন। ওর বাবা সকালে মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। সকালে আমাদের কাছে ফোন আসে সুরভী আর নাই।
এ দুর্ঘটনায় গোপালগঞ্জ শহরের সামচুল হক রোডের মাসুদ আলমের মেয়ে সুরভী আলম সুইটিসহ ৯ জন নিহত হন। তারা হলেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী আফসানা মিমি, গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক অনাদীরঞ্জন মজুমদার (৫৩), গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া বাহার (৪২), গোপালগঞ্জ সদরে বনগ্রামের সামচুল শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৩০), গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নওশের আলী শেখের ছেলে সজিব শেখ, গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কাঞ্চন শেখের ছেলে মো. কবির শেখ, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার আমজাদ আলীর খানের ছেলে মাসুদ খান (৩২), বাসের সুপারভাইজার সদর উপজেলার মানিকদাহ গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস। এমন মৃত্যুতে নিহতদের স্বজন, প্রতিবেশি ও এলাকাবাসীসহ পুরো গোপালগঞ্জ শহরজুড়েই চলছে শোকের মাতম