হত্যা মামলার আসামির দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসা। এত টাকার মালিক হলো কীভাবে, গ্ৰামবাসির প্রশ্ন
- আপডেট টাইম : ০১:৩৯:১৮ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
- / ১৬৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় আশুতিয়া গ্রামে রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ খানের বাড়ি।
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার ফেরারি আসামি রবিউল ইসলাম আপনকে ঘিরে নানা প্রশ্ন ঘুরছে তার গ্রামের বাড়ির লোকজনের মুখে মুখে। দুবাইয়ে তার কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তারা। দরিদ্র পরিবারের এই সন্তান কীভাবে বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন, তা নিয়েও কৌতূহলের শেষ নেই তাদের। তবে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পাওয়া যায়নি তার বাবা-মা বা অন্য কোনো আত্মীয়-স্বজনকে। এলাকাবাসী জানান, গ্রামের বাড়িতে এখন আর কেউই থাকে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেছেন, আপন অবৈধভাবে এই অর্থ-সম্পদ অর্জন করে থাকলে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
রবিউল ইসলাম আপনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায়।
উপজেলার আশুতিয়া গ্রামে আপনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাকা ওয়ালের টিনশেডের বাড়িটি তালাবদ্ধ। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া গেল না তার কোনো আত্মীয়-স্বজনকে। তবে কথা হলো স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। তাদেরই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আতীয়ার রহমান মোল্লা। পরিচয় দিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে শুরুতে কিছুক্ষণ তিনি নীরব থাকেন। একপর্যায়ে বলেন, ’পত্রিকায় তাকে নিয়ে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, তা পড়ার পর আপনদের নিয়ে কথা বলাটা বিব্রতকর।’
তিনি আরও জানান, আপনের বাবা মতিউর রহমান মোল্লা একসময় খুলনায় ফেরি করতেন। তবে জীবিকার প্রয়োজনে তিনি কোটালীপাড়ায় চলে আসেন। এরপর কৃষিকাজ ও মাছ ধরাই ছিল মূলত তার পেশা। পরে এখানে তিনি জমি কিনে বাড়ি করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিল আপন। লেখাপড়ায় সে ছিল অমনোযোগী। যতদূর জানি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সে পড়ালেখা করেছে। এরপরই জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে। পরে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেটাও ১৮-১৯ বছর আগে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ’এই বাড়িতে আপনের স্ত্রী-সন্তান শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন। তবে কয়েক মাস হলো বাড়িতে তাদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত তারা বিদেশে চলে গেছেন।’
‘কার ডাকে দুবাই গেলেন সাকিব আল হাসান’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আপনকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিউল ইসলাম আপনই দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান। তিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি। ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি দুবাইয়ে কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছেন। তার পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। শুধু আরাভ খানই নন, তার স্ত্রী সাজেমা নাসরিন এবং কথিত বাবা-মায়ের পাসপোর্টও ভারতীয়।
দুবাইয়ে তার জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে বাংলাদেশ থেকে গেছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, গায়ক নোবেল, রুবেল খন্দকার, বেলাল খান, জাহেদ পারভেজ পাভেল, ভিডিওবার্তায় আলোচিত কনটেন্ট নির্মাতা হিরো আলমসহ আরও অনেকে।
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘হঠাৎ করে আমরা জানতে পেরেছি সে কোটি কোটি টাকার মালিক। দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান রয়েছে। কিন্তু তার পরিবারের যে অবস্থা…. এত অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, অবৈধ পথেই এই টাকা তিনি আয় করেছেন। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সে দোষী হলে তার বিচার হওয়া উচিত।’
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না বলেন, ‘প্রায় এক যুগ অগে আপন একবার বাড়ি এসেছিল। এরপর তাকে গ্রামে আর দেখা যায়নি। তাই তার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। তবে পত্রিকা পড়ে আমরা অনেক কিছু জেনেছি