ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিমা ভাংচুর; এক সপ্তাহেও শনাক্ত হয়নি কেউ
- আপডেট টাইম : ১১:১৫:২১ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
- / ১৯২ ৫০০০.০ বার পাঠক
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এক রাতে ১৪ মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের এক সপ্তাহেও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করা যায়নি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত সময়ে বালিয়াডাঙ্গীর তিন ইউনিয়নের ১৪টি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করে অজ্ঞাত হামলাকারীরা। এ ঘটনায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিন্দুরপিন্ডি মন্দির কমিটির সভাপতি জোতিময় সিংহ গত রোববার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা করেন বালিয়াডাঙ্গী থানায় ।
এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের পক্ষ থেকে মন্দির ও মন্দিরের প্রতিমা গুলি সংষ্কারের জন্য ১২ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন তার ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন।
মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার বাংলাদেশ উদিচী শিল্পীগোষ্ঠী ঠাকুরগাঁও জেলা সংসদের আয়োজনে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শহরের চৌরাস্তায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ঘন্টাব্যাপি প্রতিবদিী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার দিন থেকে গত কদিনে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতারা সহ, পূজা উদযাপন কমিটি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ , বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের স্থানীয় ও জাতীয় নেতারা, মানবাধিকার বিভিন্ন সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক নানা সংগঠনের নেতা কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সভা সাবেশ সহ সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করেন ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম বলেন, বালিয়াডাঙ্গির এই তিনটি এলাকা একেবারে ভারতের সীমান্তঘেঁষা। এই কারণে আমার সবসময় মনে হত, এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সুরক্ষিত, নিরাপদ। কিন্তু এমন একটা ঘটনায় আমি নিজেও খুব মর্মাহত। কোনো একটা বিশেষ গোষ্ঠী হয়তো নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে যারাই এটা ঘটিয়ে থাকুক না কেন- আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি, তারা যেন দ্রুত এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনে।
গত মঙ্গলবার মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু । এসময় তিনিও এ বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক হামলা বা ঘটনা নয় বলে জানান। একটি বিশেষ মহল নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এ ঘটনা গুলি ঘাটাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ বলেন, আমারা সে এলাকায় মন্দির গুলো পরিদর্শণ করেছি এবং ভাঙ্গা প্রতিমা গুলি দেখেছি। ওই এলাকার মানুষের মধ্যে একটা ত্রাস সৃষ্টি এবং মানুষের মাঝে অশান্তি তৈরী করতেই একটা ক’চক্রি মহল এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করেছে। অপরাধিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি ।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দুই সম্প্রদায়ের লোকেরাই সেখানে মিলেমিশে আছে। এ দুই সম্প্রদায়ের সম্পর্ক নিয়ে এটা হয়েছে এমনটা আমার কাছে মনে হয় না। তবে যারা এই কাজটা করেছে তারা এখানকার সুন্দর একটা পরিবেশকে নষ্ট করার জন্যই এমনটা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে এখনও কোনো বা কারো বিরুদ্ধে প্রমান পাইনি। এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, কাজ চলছে। আমরা আশা করি, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের হয়তো অচিরেই আইনের আওতায় আমরা আনতে পারব। বাংলাদেশে বর্তমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও নির্দেশ রয়েছে অপরাধীদের শনাক্ত দ্রুত সময়ে করতে হবে এছাড়াও গোয়েন্দার সংস্থা গুলিও তাদের নিজেদের মত নজরদারি করছে বিষয়টিতে।