ঢাকা ১১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে. ড. রেজাউল করিম মঠবাড়ীয়া আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫ইং ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের হস্তক্ষেপে মামলা প্রত্যাহার হওয়া টাঙ্গাইলবাসী খুশি! সভাপতি/সম্পাদকের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অনিয়মের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান সিইসির পুলিশ, র‌্যাব, আনসারের নতুন পোশাক চুড়ান্ত নাইজেরিয়ায় ট্যাংকার ট্রাক বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ৮৬ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের যুবদল নেতাকে পিটিয়ে আহত করেছে স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা বরগুনার, পাথরঘাটায় সাবেক ইউপি সদস্যকে হুমকি ও মারধর চার প্রদেশে দেশ ভাগ করার কথা ভাবছে সংস্কার কমিশন

যশোরের ঐতিহ্য যশ, খেজুরের রস

যশোর প্রতিনিধি: 
  • আপডেট টাইম : ০৫:৩৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৩৫৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
শীতের আগমনী বার্তায় খেজুরের রস একটু চুমুক দিতে পাগলপারা থাকে সবার প্রাণ।যশোরের খেজুরের রস ও গুড় স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয়। যশোরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলের চৌগাছা এবং কোটচাঁদপুরের আশপাশে প্রায় ৫০০ চিনি কারখানা গড়ে উঠেছিল। তখন কলকাতা বন্দর দিয়ে খেজুর গুড় থেকে উৎপাদিত চিনি রপ্তানি করা হতো। মূলত ১৮৯০ সালের দিকে আখ থেকে সাদা চিনি উৎপাদন শুরু হলে খেজুর গুড় থেকে চিনির উৎপাদনে ধস নামে। একে একে কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। খেজুরের গুড় থেকে চিনি তৈরি না হলেও এখন পর্যন্ত বাঙালির কাছে খেজুর গুড় পাটালির কদর কমেনি।
শীতে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ কাটেন গাছিরা। খেজুরগাছ থেকে রস বের করার উপযোগী করে কাটা শুরু হয় হেমন্তের প্রথমেই। প্রথম গাছ কাটার পর দ্বিতীয়বার চাঁছ দিয়ে সেখানে বসানো হয় কঞ্চির বিশেষভাবে তৈরি নলি। তার পাশে বাঁশের তৈরি ছোট শলাকা পোঁতা হয় ভাঁড় (কলস) টাঙানোর জন্য। চোখ বেয়ে নলি দিয়ে রস পড়ে ভাঁড়ে। খেজুরগাছ কাটা ও তা থেকে রস বের করার মধ্যেও কিছু কৌশল আছে। যে কেউ ভালো করে গাছ কাটতে কিংবা রস বের করতে পারেন না।
কখন, কিভাবে, কোনখানে কেমন করে কাটতে দিতে হবে এবং যার ফলে গাছ মারা যাবে না, অথচ বেশি রস পাওয়া যাবে তা একজন দক্ষ গাছিই ভালোই জানেন। একবার গাছকাটার পর ২-৩ দিন পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়। প্রথম দিনের রসকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় জিরেন। এ জিরেন রস স্বাদে ও মানে অনন্য। জিরেন রস দিয়ে তৈরি হয় উন্নত মানের গুড় ও পাটালি। দ্বিতীয় দিনের রসকে বলা হয় দোকাট এবং তৃতীয় দিনের রসকে বলা হয় তেকাট ওলা। যা দিয়ে তৈরি হয় ঝোল গুড়।
রসের জন্য একবার কাটার পর ৫-৬ দিন বিরাম থাকে কাটা জায়গা শুকানোর জন্য। শুকিয়ে গেলে আবার রস সংগ্রহ চলে। এ সময় সুমিষ্ট, সুগন্ধে মৌ মৌ চারদিক। এর সুবাস আর স্বাদে ভিড় জমাতে থাকে পিঁপড়া, মৌমাছি, পাখি ও কাঠবিড়ালি। এ অঞ্চলের মানুষ রস ও গুড় দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের পিঠা, পায়েস। বানানো হয় নানা ধরনের পাটালি। তাই গাছ শুকানোর জন্য বছরে বছরে ঘুরিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কাটা হয়। যাতে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে কাটা অংশে। তাই যশোর এলাকায় দক্ষ গাছির কদর বরাবরই বেশি।
যশোরের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত এলেই গাছিরা গাছ পরিষ্কার ও রস জ্বাল করার জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। যশোরের চৌগাছার চাঁদপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাস, বাদেখানপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দীন ও সিংহঝুলি গ্রামের রহিদুল ইসলাম জানান, গাছকাটা, রস জ্বালানো ও গুড় পাটালি তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গত বছরের তুলনায় গুড় পাটালির দাম দ্বিগুণ হবে। এ অঞ্চলে খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের বন বিভাগের উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে খেজুরগাছ রোপণের কাজ চলছে। ‘বৃহত্তর যশোর জেলার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে রোপিত হয়েছে কয়েক লাখ খেজুরগাছের চারা।
যশোরের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি সাধারণত দোআঁশ, আর পানিতে লবণাক্ততা নেই। শিকড় অনেক নিচে যেতে পারে। সব মিলিয়ে জলবায়ু উপযোগী হওয়ার কারণে যশোরের খেজুরের রস ও গুড় স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়।
আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

যশোরের ঐতিহ্য যশ, খেজুরের রস

আপডেট টাইম : ০৫:৩৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩
শীতের আগমনী বার্তায় খেজুরের রস একটু চুমুক দিতে পাগলপারা থাকে সবার প্রাণ।যশোরের খেজুরের রস ও গুড় স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয়। যশোরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলের চৌগাছা এবং কোটচাঁদপুরের আশপাশে প্রায় ৫০০ চিনি কারখানা গড়ে উঠেছিল। তখন কলকাতা বন্দর দিয়ে খেজুর গুড় থেকে উৎপাদিত চিনি রপ্তানি করা হতো। মূলত ১৮৯০ সালের দিকে আখ থেকে সাদা চিনি উৎপাদন শুরু হলে খেজুর গুড় থেকে চিনির উৎপাদনে ধস নামে। একে একে কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। খেজুরের গুড় থেকে চিনি তৈরি না হলেও এখন পর্যন্ত বাঙালির কাছে খেজুর গুড় পাটালির কদর কমেনি।
শীতে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ কাটেন গাছিরা। খেজুরগাছ থেকে রস বের করার উপযোগী করে কাটা শুরু হয় হেমন্তের প্রথমেই। প্রথম গাছ কাটার পর দ্বিতীয়বার চাঁছ দিয়ে সেখানে বসানো হয় কঞ্চির বিশেষভাবে তৈরি নলি। তার পাশে বাঁশের তৈরি ছোট শলাকা পোঁতা হয় ভাঁড় (কলস) টাঙানোর জন্য। চোখ বেয়ে নলি দিয়ে রস পড়ে ভাঁড়ে। খেজুরগাছ কাটা ও তা থেকে রস বের করার মধ্যেও কিছু কৌশল আছে। যে কেউ ভালো করে গাছ কাটতে কিংবা রস বের করতে পারেন না।
কখন, কিভাবে, কোনখানে কেমন করে কাটতে দিতে হবে এবং যার ফলে গাছ মারা যাবে না, অথচ বেশি রস পাওয়া যাবে তা একজন দক্ষ গাছিই ভালোই জানেন। একবার গাছকাটার পর ২-৩ দিন পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়। প্রথম দিনের রসকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় জিরেন। এ জিরেন রস স্বাদে ও মানে অনন্য। জিরেন রস দিয়ে তৈরি হয় উন্নত মানের গুড় ও পাটালি। দ্বিতীয় দিনের রসকে বলা হয় দোকাট এবং তৃতীয় দিনের রসকে বলা হয় তেকাট ওলা। যা দিয়ে তৈরি হয় ঝোল গুড়।
রসের জন্য একবার কাটার পর ৫-৬ দিন বিরাম থাকে কাটা জায়গা শুকানোর জন্য। শুকিয়ে গেলে আবার রস সংগ্রহ চলে। এ সময় সুমিষ্ট, সুগন্ধে মৌ মৌ চারদিক। এর সুবাস আর স্বাদে ভিড় জমাতে থাকে পিঁপড়া, মৌমাছি, পাখি ও কাঠবিড়ালি। এ অঞ্চলের মানুষ রস ও গুড় দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের পিঠা, পায়েস। বানানো হয় নানা ধরনের পাটালি। তাই গাছ শুকানোর জন্য বছরে বছরে ঘুরিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কাটা হয়। যাতে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে কাটা অংশে। তাই যশোর এলাকায় দক্ষ গাছির কদর বরাবরই বেশি।
যশোরের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত এলেই গাছিরা গাছ পরিষ্কার ও রস জ্বাল করার জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। যশোরের চৌগাছার চাঁদপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাস, বাদেখানপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দীন ও সিংহঝুলি গ্রামের রহিদুল ইসলাম জানান, গাছকাটা, রস জ্বালানো ও গুড় পাটালি তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গত বছরের তুলনায় গুড় পাটালির দাম দ্বিগুণ হবে। এ অঞ্চলে খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের বন বিভাগের উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে খেজুরগাছ রোপণের কাজ চলছে। ‘বৃহত্তর যশোর জেলার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে রোপিত হয়েছে কয়েক লাখ খেজুরগাছের চারা।
যশোরের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি সাধারণত দোআঁশ, আর পানিতে লবণাক্ততা নেই। শিকড় অনেক নিচে যেতে পারে। সব মিলিয়ে জলবায়ু উপযোগী হওয়ার কারণে যশোরের খেজুরের রস ও গুড় স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়।