জকিগঞ্জে পুলিশি তান্ডবে মানসিক নির্বাক বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা; তদন্ত শুরু
- আপডেট টাইম : ০১:৫৮:৩৪ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৭ জানুয়ারি ২০২৩
- / ১৭৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
জকিগঞ্জের যুদ্ধাহত বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী কানন ব্রত পালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত ঘরে পুলিশি তল্লাশির নামে তছনছ ও মানসিক নির্যাতনে নির্বাক হওয়ার বহুল আলোচিত ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুফিয়ান আহমদ ও জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির আহমদের সমন্বয়ে সরেজমিনে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত টিম ঘটনাস্থল কালিগঞ্জ বাজারের সুমন মিষ্টান্ন ভান্ডার ও তার বসত ঘরে গিয়ে ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে আসেন। তদন্ত টিমের কাছে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও ছেলেরা নারকীয় ঘটনার স্বাক্ষী প্রমাণ দেন। যে ঘটনায় যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্বাক হয়ে যান সে ঘটনাটির বিবরণ প্রত্যক্ষভাবে শুনে আসেন তদন্ত টিম। তখন নির্বাক কানন পালকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনি কি চান? তিনি কিছু না বলেই অশ্রসিক্ত নয়নে চেয়ে চেয়ে থাকেন। আবার তদন্ত টিমের প্রধান বলেন আপনি বিচার চান কি না? জানতে চাইলে তিনি মাথা নেড়ে অশ্রুশিক্ত নয়নে বিচার চাওয়ার সম্মতি প্রকাশ করেন। এদিকে সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি জকিগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন এর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধাও সরেজমিন তদন্ত করেন। ঘটনার স্বাক্ষী প্রমাণ সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা ধৈর্য ধরুন। ন্যায় বিচার পাবেন। তখন শত শত লোকে এলাকা লোকারণ্য হয়ে গেলে উৎসুক জনতাকেও শান্তনা দিয়ে আসেন। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল কালিগঞ্জ বাজারে একটি মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, প্রধান মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পুলিশকেই দিয়েছেন। জকিগঞ্জ থানা পুলিশের এই বুঝি মুক্তিযোদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নমুনা! এতসব করেও জকিগঞ্জের অফিসার ইনচার্জ গতকালও পুলিশ পদকও পেয়েছেন! উল্লেখ্য বুধবার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিপ্লব কুমার পালের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি সিলেটের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট মহলে দায়ের করলে, বিষয়টি নিয়ে তুলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযোগপত্রে বিপ্লব কুমার পাল উল্লেখ করেন, তিনির পিতা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত পালের বসত বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গত ২২ নভেম্বর ২০২২ ইংরেজী তারিখে জকিগঞ্জ থানার একদল পুলিশ তল্লাশির নামে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বসত বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তছনছ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি-ধমকি দিলে, বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত পাল প্রথমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরলেও এপর্যন্ত তিনি নির্বাক রয়েছেন। তাছাড়া তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুমন মিষ্টান্ন ভান্ডর থেকে ৩০ বস্তা চিনি জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যান এবং সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্য জোরপূর্বক ডিলিট করে যান। সিলেট শহর থেকে বৈধ কাগজপত্রসহ ক্রয় করার ডকুমেন্ট থাকলেও এসব চিনি নাকি ভারতীয় বলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রেকর্ড করেন। রাতে দালাল মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাজন কুমার পালকে চিনি ফেরত দেয়ার কথা বলে থানায় নিয়ে আটক ও মামলায় জড়ানোর হুমকি ধমকি দিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করেন জকিগঞ্জ থানার ওসি মোশাররফ হোসেন। পুলিশের হুমকি ধমকিতে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে এতদিন তারা মূখ খোলেনি। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে আরও টাকা দাবী করা হয়। না দিলে মামলার চার্জশীটে ঢুকানোর হুমকি দিলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিপ্লব কুমার পাল বুধবার লিখিত অভিযোগ করেন।